জাতীয়তাবাদী ইতিহাস চর্চা আধুনিক ভারতের ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে এক বিশেষ ধারা হিসেবে প্রচলিত| তবে অবশ্য আধুনিক ভারতের ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে তিনটি ধারা প্রচলিত আছে, এই তিনটি ধারা হল- জাতীয়তাবাদী, সাম্রাজ্যবাদী ও মার্কসবাদী|
পশ্চিমী শিক্ষা ও ভাবধারা ভারতে নব্য শিক্ষিত মানুষের পশ্চিমী ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করেছিল| ইউরোপীয়রা ভারত সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে প্রচুর লিখেছিলেন| তবে অবশ্য তাদের লেখা সবসময় নিরপেক্ষ বা পক্ষপাত শূন্য ছিল না| তাই পশ্চিমী পন্ডিতদের হাতে ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি যে বিকৃতি ঘটেছিল, তা মুছে ফেলার জন্য তারা আগ্রহী হয়ে উঠিছিল|
তাই সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাস চর্চার প্রতিবাদে ধীরে ধীরে দেশীয় পন্ডিত সক্রিয় হয়| উনবিংশ শতকের শেষ দিক থেকে এর প্রয়াস দেখা যায়| বিংশ শতকের গোড়ায় বঙ্গভঙ্গের ফলে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন স্বদেশকে বিশেষভাবে জানার আগ্রহ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়|ভারতের অতীত দিনের গৌরবময় ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে তাগিদ অনুভব করেছিল|
পশ্চিমী শিক্ষা ও ভাবধারা ভারতে নব্য শিক্ষিত মানুষের পশ্চিমী ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করেছিল| ইউরোপীয়রা ভারত সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে প্রচুর লিখেছিলেন| তবে অবশ্য তাদের লেখা সবসময় নিরপেক্ষ বা পক্ষপাত শূন্য ছিল না| তাই পশ্চিমী পন্ডিতদের হাতে ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি যে বিকৃতি ঘটেছিল, তা মুছে ফেলার জন্য তারা আগ্রহী হয়ে উঠিছিল|
আধুনিক ভারতের মানচিত্র |
তাই সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাস চর্চার প্রতিবাদে ধীরে ধীরে দেশীয় পন্ডিত সক্রিয় হয়| উনবিংশ শতকের শেষ দিক থেকে এর প্রয়াস দেখা যায়| বিংশ শতকের গোড়ায় বঙ্গভঙ্গের ফলে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন স্বদেশকে বিশেষভাবে জানার আগ্রহ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়|ভারতের অতীত দিনের গৌরবময় ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে তাগিদ অনুভব করেছিল|
প্রথমে যারা এগিয়ে এসেছিলেন তারা হলেন রাজেন্দ্রলাল মিত্র, রামকৃষ্ণ গোপাল ভান্ডারকর প্রমুখ| অক্ষয় কুমার দত্তের প্রায় সমসাময়িক অথচ ইতিহাস তত্ত্বের ক্ষেত্রে বহুলাংশে পৃথক ধারার অন্যতম প্রথম ও প্রধান প্রবক্তা ছিলেন রাজেন্দ্রলাল মিত্র| এই ধারা প্রাচ্যবাদী জ্ঞান চর্চার ধারা ও উপনিবেশিক প্রাচ্যের প্রতিনিধি রাজেন্দ্রলাল মিত্রের সঙ্গে প্রাচ্য বিদ্যাচর্চার সম্পর্ক দ্বান্দ্বিক| তিনি প্রাচ্যবাদী জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পাশ্চাত্য গবেষণা পদ্ধতি ও প্রাতিষ্ঠানিক আনুকূল্য লাভ করেন|
অথচ তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাচ্যবাদের নিরিখে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির মূল্যায়ন করতে পারলেন না| তাঁর উপনিবেশিক সত্তা ও প্রাচ্যবাদী গবেষক সত্তা এই দুই-এর টানাপোড়নের গড়ে ওঠে তাঁর ইতিহাস তত্ত্ব| তাঁর সর্বপ্রথম গ্রন্থ হল 'The Antiquities of Orissa'
অথচ তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাচ্যবাদের নিরিখে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির মূল্যায়ন করতে পারলেন না| তাঁর উপনিবেশিক সত্তা ও প্রাচ্যবাদী গবেষক সত্তা এই দুই-এর টানাপোড়নের গড়ে ওঠে তাঁর ইতিহাস তত্ত্ব| তাঁর সর্বপ্রথম গ্রন্থ হল 'The Antiquities of Orissa'
এই প্রসঙ্গে আরো কয়েকজন বাঙালি জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকদের নাম করা যেতে পারে| যেমন- অক্ষয় কুমার দত্ত ও রাজেন্দ্রলাল মিত্রের পর উল্লেখযোগ্য বাঙালি হিন্দু জাতীয়তাবাদী ইতিহাস তত্ত্বের প্রবক্তা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বাঙালি ইতিহাস তত্ত্বের আর্থিক জাতীয়তাবাদের উদ্দাতা হলেন রমেশচন্দ্র দত্ত, সিপাহী বিদ্রোহকে ইতিহাস তত্ত্বের আলোকে আলোচনাকারী হলেন রজনীকান্ত গুপ্ত, বাঙালির ইতিহাস চর্চায় বাংলাকে গুরুত্ব দানকারী লেখক হলেন অক্ষয়কুমার মৈত্র এবং নিখিলনাথ রায় ইত্যাদি| এই সকল ঐতিহাসিকদের ইতিহাস তত্ত্বের সব মিলিয়ে এক সংকীর্ণ বাঙালি হিন্দু স্বাজাত্য বোধের জন্ম নিয়েছিল| এর পরবর্তী ধারা রক্ষা করা যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, সতীশচন্দ্র মিত্র, রমাপ্রসাদ চন্দ্র, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, যদুনাথ সরকার প্রমুখের রচনায়|
ড. আর. ভান্ডারকর প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনা করেন লেখমালা ও মুদ্রা তত্ত্বের সাহায্যে| কে. পি. জয়সওয়াল তার 'Hindu policy' গ্রন্থে জোড়ালো ভাবে বলেছেন যে, "প্রাচীন ভারতে যথেষ্ট রাজনৈতিক ঐক্য ছিল এবং রাজনৈতিক ধ্যানধারণাও ছিল"| হেমচন্দ্র রায় চৌধুরী তার 'Political History of Ancient Indian' গ্রন্থে ভিনসেন্ট স্মিথ এর ইতিহাস রচনার উদ্যোগ দিয়েছিলেন| রমেশচন্দ্র মজুমদার ছিলেন জাতীয়তাবাদী ইতিহাস রচনায় মুখ্য উদ্যোক্তা|তার 'History and Culture of the Indian People' অন্তত গুরুত্বপূর্ণ|
বলা হয় যে, জাতীয়তাবাদী ইতিহাস চর্চার অন্যতম ফসল হলো সাম্প্রদায়িকতা| এরা রাজপুত, শিখ এবং মারাঠাদের সংগ্রামকে অতিরঞ্জিত করেছিল|মুসলমানরা এই ধরনের মূল্যায়ন পছন্দ করেনি| জাতীয় আন্দোলনের উপর এই ধরনের ইতিহাস চর্চার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে|
যদিও একথা অস্বীকার করা যায় না যে, জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকের অবদানই জাতীয়তাবাদ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল| জাতীয় রচনা আজও সম্মানের আসন অধিকারী করে আছে|
.......................................
ড. আর. ভান্ডারকর প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনা করেন লেখমালা ও মুদ্রা তত্ত্বের সাহায্যে| কে. পি. জয়সওয়াল তার 'Hindu policy' গ্রন্থে জোড়ালো ভাবে বলেছেন যে, "প্রাচীন ভারতে যথেষ্ট রাজনৈতিক ঐক্য ছিল এবং রাজনৈতিক ধ্যানধারণাও ছিল"| হেমচন্দ্র রায় চৌধুরী তার 'Political History of Ancient Indian' গ্রন্থে ভিনসেন্ট স্মিথ এর ইতিহাস রচনার উদ্যোগ দিয়েছিলেন| রমেশচন্দ্র মজুমদার ছিলেন জাতীয়তাবাদী ইতিহাস রচনায় মুখ্য উদ্যোক্তা|তার 'History and Culture of the Indian People' অন্তত গুরুত্বপূর্ণ|
জাতীয়তাবাদী ইতিহাস চর্চার সমালোচনা
তবে জাতীয়তাবাদী ইতিহাসের অনেক সমালোচনা করা হয়েছে| বলা হয়েছে ভারতে ভারতের স্বাতন্ত্র্য বা জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তারা ইতিহাস দর্শন ও পদ্ধতি থেকে সরে গেছেন| বলা যায় জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকরা দেশ-প্রদেশের জোয়ারে ভেসে গেছেন| অনেক সময় তাদের লেখায় উগ্রজঙ্গি মনোভাবের প্রতিফলন ঘটেছে| প্রাচীন ভারতে গৌরব গাঁথা নিয়ে তারা বাড়াবাড়ি করেছে এবং বিদেশিদের পক্ষপাতিত্বে তারা জবাব দিয়েছে|বলা হয় যে, জাতীয়তাবাদী ইতিহাস চর্চার অন্যতম ফসল হলো সাম্প্রদায়িকতা| এরা রাজপুত, শিখ এবং মারাঠাদের সংগ্রামকে অতিরঞ্জিত করেছিল|মুসলমানরা এই ধরনের মূল্যায়ন পছন্দ করেনি| জাতীয় আন্দোলনের উপর এই ধরনের ইতিহাস চর্চার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে|
যদিও একথা অস্বীকার করা যায় না যে, জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকের অবদানই জাতীয়তাবাদ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল| জাতীয় রচনা আজও সম্মানের আসন অধিকারী করে আছে|
তথ্যসূত্র
- Sherman Sutherland, "Understanding Literary Theory".
- Ishita Banerjee-Dube, "A History of Modern India".
সম্পর্কিত বিষয়
- বয়কট আন্দোলনের উৎপত্তি (আরো পড়ুন)
- বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে মুসলিম মনোভাব (আরো পড়ুন)
- ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন (আরো পড়ুন)
- ঊনবিংশ শতকে নারী সংক্রান্ত সমস্যা (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|