চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসন ব্যবস্থা এবং অশোকের সংযোজন- উভয়ের সংযোজনে মৌর্য সাম্রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল| মৌর্য শাসন ব্যবস্থার মূল কাঠামোটি চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য রচনা করলেও পরবর্তীতে সম্রাট অশোক এই কাঠামো অপরিবর্তিত রেখে এতে কিছু সংযোজন ঘটান|
মৌর্য শাসন ব্যবস্থার সম্পর্কে জানার জন্য মূল উপাদান গুলি হল- কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, মেগাস্থিনিসের ইন্ডিকা, সম্রাট অশোকের লিপি সমূহ, শকরাজ রুদ্রদামনের জুনাগড় শিলালিপি, বিদেশি ঐতিহাসিক স্টাবো, প্লিনি, জাস্টিন প্রমুখের রচনা সমূহ|
সুবিশাল মৌর্য সাম্রাজ্য কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত ছিল, যেগুলিকে জেলা বা জনপদ নামে পরিচিত ছিল| প্রশাসনিক বিভাগে সর্বনিম্ন স্তরে ছিল গ্রাম| মৌর্য শাসন ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন রাজা| রাষ্ট্রের প্রধান শাসক, প্রধান আইন প্রণেতা, প্রধান বিচারক এবং প্রধান সেনাপতি হিসেবে তিনি অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন|
মৌর্য রাজারা এক "প্রজাহিতৈষী স্বৈরাচারী" ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল| বংশানুক্রমিক রাষ্ট্রের উপর প্রতিষ্ঠিত মৌর্য শাসন ব্যবস্থায় রাজাগণ দৈবসত্বে বিশ্বাসী না হলেও নিজেদের দেবনাম প্রিয় বা দেবতার প্রিয় বলে অভিহিত করতো|
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র থেকে জানা যায়, রাজার পরে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ক্ষমতার প্রধান ছিলেন সচিবগণ| মেগাস্থিনিস তাদের "উপদেষ্টা ও রাজস্ব সংগ্রাহক" বলে অভিহিত করেছেন| দক্ষ সচিবরা মন্ত্রী পদে নিযুক্ত হতেন, যারা শাসন নীতি ও পররাষ্ট্র বিষয়ে পরামর্শ দিতেন| ড. হেমচন্দ্র রায় চৌধুরী এদের অশোকের আমলে মহাপাত্রদের সঙ্গে তুলনা করেছেন| মন্ত্রিপরিষদ নামে একটি গোষ্ঠীর উল্লেখ পাওয়া যায় কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, যারা মূলত রাজাকে পরামর্শের জন্য নিযুক্ত হতেন, এই পরিষদের পরামর্শ গ্রহণ করা বা না করা রাজার ইচ্ছাধীন ছিল|
সময় সামরিক রচনা থেকে মৌর্য শাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়| অমাত্য নামে কর্মচারীদের উপর রাজস্ব, অর্থ, বিচার ও প্রশাসন প্রভৃতি বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হতো| বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় তারা ওই পদ পেতেন এবং অপরিক্ষিতরা নিচু পদে নিযুক্ত হতেন|
সরকারি কাজে নানা বিভাগ বা Department ছিল| এসব বিভাগের প্রধানকে বলা হতো অধ্যক্ষ| খনি, গোশালা ও অশ্বশালা প্রভৃতি তদারকির দায়িত্ব ছিল অধ্যক্ষদের উপর| অর্থশাস্ত্রে 32 জন অধ্যক্ষ এবং তাদের কার্যাবলীর বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়| অর্থশাস্ত্রে সমাহর্তা এবং সন্নিধাতা নামে দুই শ্রেণীর কর্মচারীর উল্লেখ পাওয়া যায়| সমাহর্তা ছিলেন রাজ্যের রাজস্ব বিভাগের প্রধান এবং সন্নিধাতা ছিলেন রাজার কোষাধক্ষ্য| চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের আমলে মৌর্য সাম্রাজ্য চারটি সুবিশাল প্রদেশে বিভক্ত ছিল- প্রাচ্য, উত্তরাপথ, অবন্তী, দক্ষিণাপথ|
অশোকের সময় আরেকটি সংযোজন ঘটানো হয়েছিল কলিঙ্গ| তাদের রাজধানীগুলি ছিল যথাক্রমে পাটলিপুত্র, উজ্জয়িনী, তক্ষশীলা, তোসালি এবং সুবর্ণগিরি| প্রদেশেগুলির শাসনভার রাজকুমারদের উপর ন্যাস্ত থাকতো| প্রদেশেগুলির উপর কেন্দ্রীয়ভাবে রাজকীয় নিয়ন্ত্রণ বলবৎ থাকতো|
মৌর্য শাসনব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তরে ছিল গ্রাম| গ্রামের শাসক ছিলেন গ্রামিক| অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, গ্রামের উপর গোক নামক কর্মচারী ছিলেন| জেলার শাসনকর্তা ছিলেন সমাহর্তা| মেগাস্থিনিসের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, গ্রাম এবং নগরগুলি স্বায়ত্ত শাসন ভোগ করত|
30 জন সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিষদের মাধ্যমে নগর শাসন পরিচালিত পরিচালিত হতো| এই পরিষদগুলি শিল্প ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ, বিদেশি আগুন্তকদের তত্ত্বাবধান, বাণিজ্য ও শুল্ক পরিচালনা, জন্ম-মৃত্যু হিসাব রক্ষা ইত্যাদি দ্বায়িত্ব পালন করত| ড. এ. এল. ব্যাসাম তার "The wonder that was india" গ্রন্থে মেগাস্থিনিসের বিবরণকে মাপকাঠি ধরে মৌর্য রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে পুলিশি রাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন|
মেগাস্থিনিসের বিবরণ বিবরণ থেকে মৌর্য সেনা ব্যবস্থার কথা জানা যায়| পদাতিক, অশ্বারোহী, হস্তিবাহিনী , রথারোহী এবং নৌবাহিনীর অস্তিত্বের কথা জানা যায়| অর্থশাস্ত্র থেকে মৌর্য যুগের গুপ্তচর ব্যবস্থার কথা জানা যায়| মেগাস্থিনিসের মত, 30 জন সদস্য নিয়ে গঠিত একটি পরিষদের ওপর সামরিক বিভাগের দায়িত্ব অর্পিত ছিল|
অর্থশাস্ত্রে "ধর্মস্থ" এবং "প্রদেষ্টা" নামে দুই শ্রেণীর বিচারকের উল্লেখ আছে| বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ রাজাই ছিলেন সর্বোচ্চ আদালত| নগরে পৌর ব্যবহারিক এবং গ্রামে গ্রামীকগণ বিচারকার্য পরিচালনা করতেন| বিদেশীদের জন্য পৃথক আদালত ছিল| দেওয়ানী বিচারালয়ে ছিল ধর্মস্থ এবং কন্টকশোধন ছিল ফৌজদারি বিচারের কেন্দ্র| এই যুগে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা কার্যকর ছিল|
সম্রাট অশোক চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে কর্তব্যবোধকে যোগ করেছিল| প্রজা কল্যাণের উদ্দেশ্যে তিনি রাজুক, প্রাদেশিক, ধর্ম মহাপাত্র, যুত ইত্যাদি নতুন কর্মচারী নিয়োগ করেন| রাজুকদের হাতে প্রজাকল্যাণের দায়িত্ব অর্পিত ছিল| ধর্ম মহাপাত্রদের হাতে দায়িত্ব ছিল প্রজাদের মনে ধর্মমত জাগ্রত করা| অশোকের পঞ্চম শিলালিপি থেকে তাদের সম্পর্কে জানা যায়|
অশোকের দ্বাদশ শিলালিপি থেকে প্রজাভূমিকদের কথা জানা যায়, যারা দেশের সর্বত্র জনহিতকর কাজ করত| বিচারের ক্ষেত্রে অশোক দন্ড সমতা ও ব্যবহার সমতা নীতির প্রবর্তন করেন করেন| এইভাবে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য প্রবর্তিত শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে অশোক ধর্ম নৈতিকতা, রাজকীয় কর্তব্যবোধের আদর্শ যুক্ত করেন|
মৌর্য শাসন ব্যবস্থায় প্রাচীন ভারতে প্রথম এক উন্নত শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল| ড. ভিনসেন্ট স্মিথ এর মতে, মৌর্য সম্রাট ছিলেন অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী| কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্রে বলেছেন যে, প্রজাদের কাছে রাজার কোন দায় বদ্ধতা ছিল না| এই আমলে কঠোর দন্ড নীতির মাধ্যমে প্রজাদের মধ্যে শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হতো|
গুপ্তচরদের ব্যাপক ব্যবহার এবং সুনিয়ন্ত্রিত গুপ্তচর ব্যবস্থা জনগণের ব্যক্তিগত জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল| মন্ত্রিপরিষদ থাকলেও তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা বা না করা সবই ছিল রাজার ইচ্ছাধীন| এ সকল কারণে মৌর্য শাসন ব্যবস্থাকে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র বললেও অত্যুক্তি হবে না|
মৌর্য শাসন ব্যবস্থায় এক কেন্দ্রিকতা ঝোঁক থাকলেও রাজা স্বৈরাচারিতার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধি নিষেধ ছিল| রাজাকে পুরাণ প্রকৃতি অনুযায়ী দেশ শাসন করতে হতো| মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শ সব সময় রাজা উপেক্ষা করতে পারতেন না| রাজা সেনাবাহিনী প্রধান হলেও যুদ্ধ পরিচালনা, সন্ধি স্থাপন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সেনাপতিদের পরামর্শ গ্রহণ করতেন| গুপ্তচর ব্যবস্থার মাধ্যমে বিদেশী শক্তির সম্পর্কে অবহিত থাকা যে কোন নায়কেরই কর্তব্য|
অশোক তার শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে প্রজাকল্যাণ , পিতৃত্ববোধ ইত্যাদি যুক্ত করে মৌর্য শাসন ব্যবস্থাকে এক উন্নত স্তরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন| তার লক্ষ্যই ছিল প্রজাদের ইহলৌকিক ও পরলৌকিক উন্নত সাধন| মৌর্য আমলে গ্রাম ও শহরগুলিতে স্বশাসনের কথা ভিন্ন ঐতিহাসিক রচনা থেকে পাওয়া যায়| তাই মৌর্য শাসন ব্যবস্থাকে Benevolent despotism হিসেবে অভিহিত করাই শ্রেয়|
মৌর্য শাসন ব্যবস্থার সম্পর্কে জানার জন্য মূল উপাদান গুলি হল- কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, মেগাস্থিনিসের ইন্ডিকা, সম্রাট অশোকের লিপি সমূহ, শকরাজ রুদ্রদামনের জুনাগড় শিলালিপি, বিদেশি ঐতিহাসিক স্টাবো, প্লিনি, জাস্টিন প্রমুখের রচনা সমূহ|
সুবিশাল মৌর্য সাম্রাজ্য কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত ছিল, যেগুলিকে জেলা বা জনপদ নামে পরিচিত ছিল| প্রশাসনিক বিভাগে সর্বনিম্ন স্তরে ছিল গ্রাম| মৌর্য শাসন ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন রাজা| রাষ্ট্রের প্রধান শাসক, প্রধান আইন প্রণেতা, প্রধান বিচারক এবং প্রধান সেনাপতি হিসেবে তিনি অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন|
মৌর্য রাজারা এক "প্রজাহিতৈষী স্বৈরাচারী" ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল| বংশানুক্রমিক রাষ্ট্রের উপর প্রতিষ্ঠিত মৌর্য শাসন ব্যবস্থায় রাজাগণ দৈবসত্বে বিশ্বাসী না হলেও নিজেদের দেবনাম প্রিয় বা দেবতার প্রিয় বলে অভিহিত করতো|
Title- চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য
Author-आशीष भटनागर
Date-6 December 2009
Source- wikipedia (check here)
Modified- colour and background
License- creative Commons
|
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র থেকে জানা যায়, রাজার পরে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ক্ষমতার প্রধান ছিলেন সচিবগণ| মেগাস্থিনিস তাদের "উপদেষ্টা ও রাজস্ব সংগ্রাহক" বলে অভিহিত করেছেন| দক্ষ সচিবরা মন্ত্রী পদে নিযুক্ত হতেন, যারা শাসন নীতি ও পররাষ্ট্র বিষয়ে পরামর্শ দিতেন| ড. হেমচন্দ্র রায় চৌধুরী এদের অশোকের আমলে মহাপাত্রদের সঙ্গে তুলনা করেছেন| মন্ত্রিপরিষদ নামে একটি গোষ্ঠীর উল্লেখ পাওয়া যায় কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, যারা মূলত রাজাকে পরামর্শের জন্য নিযুক্ত হতেন, এই পরিষদের পরামর্শ গ্রহণ করা বা না করা রাজার ইচ্ছাধীন ছিল|
সময় সামরিক রচনা থেকে মৌর্য শাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়| অমাত্য নামে কর্মচারীদের উপর রাজস্ব, অর্থ, বিচার ও প্রশাসন প্রভৃতি বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হতো| বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় তারা ওই পদ পেতেন এবং অপরিক্ষিতরা নিচু পদে নিযুক্ত হতেন|
সরকারি কাজে নানা বিভাগ বা Department ছিল| এসব বিভাগের প্রধানকে বলা হতো অধ্যক্ষ| খনি, গোশালা ও অশ্বশালা প্রভৃতি তদারকির দায়িত্ব ছিল অধ্যক্ষদের উপর| অর্থশাস্ত্রে 32 জন অধ্যক্ষ এবং তাদের কার্যাবলীর বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়| অর্থশাস্ত্রে সমাহর্তা এবং সন্নিধাতা নামে দুই শ্রেণীর কর্মচারীর উল্লেখ পাওয়া যায়| সমাহর্তা ছিলেন রাজ্যের রাজস্ব বিভাগের প্রধান এবং সন্নিধাতা ছিলেন রাজার কোষাধক্ষ্য| চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের আমলে মৌর্য সাম্রাজ্য চারটি সুবিশাল প্রদেশে বিভক্ত ছিল- প্রাচ্য, উত্তরাপথ, অবন্তী, দক্ষিণাপথ|
অশোকের সময় আরেকটি সংযোজন ঘটানো হয়েছিল কলিঙ্গ| তাদের রাজধানীগুলি ছিল যথাক্রমে পাটলিপুত্র, উজ্জয়িনী, তক্ষশীলা, তোসালি এবং সুবর্ণগিরি| প্রদেশেগুলির শাসনভার রাজকুমারদের উপর ন্যাস্ত থাকতো| প্রদেশেগুলির উপর কেন্দ্রীয়ভাবে রাজকীয় নিয়ন্ত্রণ বলবৎ থাকতো|
গ্রাম |
নগর |
মৌর্য শাসনব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তরে ছিল গ্রাম| গ্রামের শাসক ছিলেন গ্রামিক| অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, গ্রামের উপর গোক নামক কর্মচারী ছিলেন| জেলার শাসনকর্তা ছিলেন সমাহর্তা| মেগাস্থিনিসের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, গ্রাম এবং নগরগুলি স্বায়ত্ত শাসন ভোগ করত|
30 জন সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিষদের মাধ্যমে নগর শাসন পরিচালিত পরিচালিত হতো| এই পরিষদগুলি শিল্প ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ, বিদেশি আগুন্তকদের তত্ত্বাবধান, বাণিজ্য ও শুল্ক পরিচালনা, জন্ম-মৃত্যু হিসাব রক্ষা ইত্যাদি দ্বায়িত্ব পালন করত| ড. এ. এল. ব্যাসাম তার "The wonder that was india" গ্রন্থে মেগাস্থিনিসের বিবরণকে মাপকাঠি ধরে মৌর্য রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে পুলিশি রাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন|
মেগাস্থিনিসের বিবরণ বিবরণ থেকে মৌর্য সেনা ব্যবস্থার কথা জানা যায়| পদাতিক, অশ্বারোহী, হস্তিবাহিনী , রথারোহী এবং নৌবাহিনীর অস্তিত্বের কথা জানা যায়| অর্থশাস্ত্র থেকে মৌর্য যুগের গুপ্তচর ব্যবস্থার কথা জানা যায়| মেগাস্থিনিসের মত, 30 জন সদস্য নিয়ে গঠিত একটি পরিষদের ওপর সামরিক বিভাগের দায়িত্ব অর্পিত ছিল|
পদাতিক সৈন্য |
অশ্বারোহী সৈন্য |
অর্থশাস্ত্রে "ধর্মস্থ" এবং "প্রদেষ্টা" নামে দুই শ্রেণীর বিচারকের উল্লেখ আছে| বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ রাজাই ছিলেন সর্বোচ্চ আদালত| নগরে পৌর ব্যবহারিক এবং গ্রামে গ্রামীকগণ বিচারকার্য পরিচালনা করতেন| বিদেশীদের জন্য পৃথক আদালত ছিল| দেওয়ানী বিচারালয়ে ছিল ধর্মস্থ এবং কন্টকশোধন ছিল ফৌজদারি বিচারের কেন্দ্র| এই যুগে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা কার্যকর ছিল|
সম্রাট অশোক চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে কর্তব্যবোধকে যোগ করেছিল| প্রজা কল্যাণের উদ্দেশ্যে তিনি রাজুক, প্রাদেশিক, ধর্ম মহাপাত্র, যুত ইত্যাদি নতুন কর্মচারী নিয়োগ করেন| রাজুকদের হাতে প্রজাকল্যাণের দায়িত্ব অর্পিত ছিল| ধর্ম মহাপাত্রদের হাতে দায়িত্ব ছিল প্রজাদের মনে ধর্মমত জাগ্রত করা| অশোকের পঞ্চম শিলালিপি থেকে তাদের সম্পর্কে জানা যায়|
অশোকের দ্বাদশ শিলালিপি থেকে প্রজাভূমিকদের কথা জানা যায়, যারা দেশের সর্বত্র জনহিতকর কাজ করত| বিচারের ক্ষেত্রে অশোক দন্ড সমতা ও ব্যবহার সমতা নীতির প্রবর্তন করেন করেন| এইভাবে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য প্রবর্তিত শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে অশোক ধর্ম নৈতিকতা, রাজকীয় কর্তব্যবোধের আদর্শ যুক্ত করেন|
মৌর্য শাসন ব্যবস্থায় প্রাচীন ভারতে প্রথম এক উন্নত শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল| ড. ভিনসেন্ট স্মিথ এর মতে, মৌর্য সম্রাট ছিলেন অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী| কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্রে বলেছেন যে, প্রজাদের কাছে রাজার কোন দায় বদ্ধতা ছিল না| এই আমলে কঠোর দন্ড নীতির মাধ্যমে প্রজাদের মধ্যে শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হতো|
গুপ্তচরদের ব্যাপক ব্যবহার এবং সুনিয়ন্ত্রিত গুপ্তচর ব্যবস্থা জনগণের ব্যক্তিগত জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল| মন্ত্রিপরিষদ থাকলেও তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা বা না করা সবই ছিল রাজার ইচ্ছাধীন| এ সকল কারণে মৌর্য শাসন ব্যবস্থাকে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র বললেও অত্যুক্তি হবে না|
মৌর্য শাসন ব্যবস্থায় এক কেন্দ্রিকতা ঝোঁক থাকলেও রাজা স্বৈরাচারিতার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধি নিষেধ ছিল| রাজাকে পুরাণ প্রকৃতি অনুযায়ী দেশ শাসন করতে হতো| মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শ সব সময় রাজা উপেক্ষা করতে পারতেন না| রাজা সেনাবাহিনী প্রধান হলেও যুদ্ধ পরিচালনা, সন্ধি স্থাপন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সেনাপতিদের পরামর্শ গ্রহণ করতেন| গুপ্তচর ব্যবস্থার মাধ্যমে বিদেশী শক্তির সম্পর্কে অবহিত থাকা যে কোন নায়কেরই কর্তব্য|
অশোক তার শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে প্রজাকল্যাণ , পিতৃত্ববোধ ইত্যাদি যুক্ত করে মৌর্য শাসন ব্যবস্থাকে এক উন্নত স্তরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন| তার লক্ষ্যই ছিল প্রজাদের ইহলৌকিক ও পরলৌকিক উন্নত সাধন| মৌর্য আমলে গ্রাম ও শহরগুলিতে স্বশাসনের কথা ভিন্ন ঐতিহাসিক রচনা থেকে পাওয়া যায়| তাই মৌর্য শাসন ব্যবস্থাকে Benevolent despotism হিসেবে অভিহিত করাই শ্রেয়|
তথ্যসূত্র
- সুনীল চট্টোপাধ্যায়, "প্রাচীন ভারতের ইতিহাস"
- Ashok. K Banker, "Ashoka: Lion of Maurya".
- Wytze Keuning, "Ashoka the Great".
সম্পর্কিত বিষয়
- চোল রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
- জুনাগড় লিপি (আরো পড়ুন)
- কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের গুরুত্ব (আরো পড়ুন)
- জৈন ধর্মের বৈশিষ্ট্য (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................