জমিদারি ব্যবস্থার কাঠামোর মধ্যে জমিদারদের সম্পত্তির অবসান এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের উদ্ভব ঘটে| এরফলে আবশ্যিকভাবে রায়তদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়| চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের রায়তদের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়নি এবং জমিদারকে জমির একছত্র মালিক বলে ঘোষণা করা হয়| এরফলে পত্তনির সময়কার নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়|
এই সমস্যা সমাধানের জন্য 1812 সালে 'Regulation 5', 1815 সালে 'Regulation 8', 1819 সালে 'XII' আইন এবং 1845 সালে 'I' আইন ব্যর্থ হয়| কিন্তু কৃষক এবং জমিদারদের মধ্যে সম্পর্ক নিরূপণ করে কোন আইন তৈরি হয়নি| এর ফলে জমির উপর অধিকারকে কেন্দ্র করে কৃষক এবং জমিদারদের মধ্যে গ্রাম অঞ্চলে সম্পর্কের অবহিত করে|
এরফলে সরকার রায়তদের জমির উপর অধিকারের বিষয়টি বিবেচনা করতে বাধ্য হয়| এছাড়া 1793 সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ব্যর্থতাও সরকারকে এবিষয়ে পুনঃবিবেচনা করতে সাহায্য করেছিল| সরকার একশ্রেণীর ধনী কৃষকদের নিয়ে একটি পরিপূরক শ্রেণী সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন কৃষি ক্ষেতে রূপান্তরের জন্য| এর ফলে 1859 সালে তৈরি হয়েছিল 'X'(দশম) আইন|
এই সমস্যা সমাধানের জন্য 1812 সালে 'Regulation 5', 1815 সালে 'Regulation 8', 1819 সালে 'XII' আইন এবং 1845 সালে 'I' আইন ব্যর্থ হয়| কিন্তু কৃষক এবং জমিদারদের মধ্যে সম্পর্ক নিরূপণ করে কোন আইন তৈরি হয়নি| এর ফলে জমির উপর অধিকারকে কেন্দ্র করে কৃষক এবং জমিদারদের মধ্যে গ্রাম অঞ্চলে সম্পর্কের অবহিত করে|
এরফলে সরকার রায়তদের জমির উপর অধিকারের বিষয়টি বিবেচনা করতে বাধ্য হয়| এছাড়া 1793 সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ব্যর্থতাও সরকারকে এবিষয়ে পুনঃবিবেচনা করতে সাহায্য করেছিল| সরকার একশ্রেণীর ধনী কৃষকদের নিয়ে একটি পরিপূরক শ্রেণী সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন কৃষি ক্ষেতে রূপান্তরের জন্য| এর ফলে 1859 সালে তৈরি হয়েছিল 'X'(দশম) আইন|
কৃষক |
কৃষি জমি |
রায়তরা চিরাচরিত ভাবে দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল, 1.খুদ কাস্তা এবং 2.পায় কাস্তা| খুদ কাস্তা রায়তরা ছিলেন গ্রামের দীর্ঘদিনের বাসিন্দার|এদের মধ্যে অনেকেই আবার নির্দিষ্ট কর এর বিনিময় জমির ভোগদখলের অধিকারী ছিলেন| এরা মুকারারি নামে পরিচিত ছিলেন, আবার এদেরকে মিরাসি রায়তও বলা হত| এরা কৃষকদের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদা ভোগ করত|
অন্যদিকে পায় কাস্তারা গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করত না, তারা অস্থায়ীভাবে ভাবে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে ঘুরে চাষাবাদ করতো| তারা খুদ কাস্তা রায়তদের তুলনায় কম মজুরি পেত| প্রত্যেকে কৃষকের নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করতে হতো| কৃষকদের মজুরি নির্ধারিত হতো পরগনা হিসাব অনুযায়ী| চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে কৃষকদের প্রথাগত অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি| এর ফলে জমিদাররা সর্বদায় কৃষকদের উপর রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি করতেন, তাই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে রায়তরা ছিল ইচ্ছার দাস|
অন্যদিকে পায় কাস্তারা গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করত না, তারা অস্থায়ীভাবে ভাবে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে ঘুরে চাষাবাদ করতো| তারা খুদ কাস্তা রায়তদের তুলনায় কম মজুরি পেত| প্রত্যেকে কৃষকের নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করতে হতো| কৃষকদের মজুরি নির্ধারিত হতো পরগনা হিসাব অনুযায়ী| চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে কৃষকদের প্রথাগত অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি| এর ফলে জমিদাররা সর্বদায় কৃষকদের উপর রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি করতেন, তাই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে রায়তরা ছিল ইচ্ছার দাস|
1859 সালে 'X'( দশম ) আইন দ্বারা রায়তদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পরিকাঠামো মধ্যে তার পূর্বের মর্যাদাকে পুনঃস্থাপিত করা হয়| কৃষকদের জমির উপরে অধিকারগুলিকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করে বিবেচনা করা হয় যথা-
- রায়ত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় অনুযায়ী নির্ধারিত স্থির রাজস্ব প্রদান করবে|
- রায়ত 12 বছরের অধিক সময়ব্যাপী জমির উপর স্বত্বাধিকার ভোগ করবে|
- স্বত্বাহীন রায়তরা 12 বছরের কম সময় জমির উপর অধিকার ভোগ করবে|
এরফলে মুকারারি এবং মিরাসি গোষ্ঠীর রায়তরা রাজস্ব আইন দ্বারা বিভক্ত হয়ে যায় নির্দিষ্ট রাজস্ব প্রদানকারী রায়ত এবং স্থায়ী স্বত্বভোগী রায়তের| দ্বিতীয় শ্রেণীর রায়তরা পরিচিত হয় স্বত্বাধিকারী রায়ত নামে| যারা পূর্বে পরিচিত ছিল খুদ কাস্তা রায়ত নামে, তারাই এই আইন অনুযায়ী 'পাট্টা' পাই, এই আইনে বলা হয় রায়ত সমহারে রাজস্ব দিবে| কিন্তু রাজস্বের হার কত হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি|
অন্যদিকে স্বত্বহীন রায়তদের ক্ষেত্রে এই আইন ছিল সম্পূর্ণ নীরব| বাস্তবিক পক্ষে এই আইন ও জমি সংক্রান্ত অসন্তোষকে দূর করতে ব্যর্থ হয়| এই আইন জমিদার এবং কৃষকদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতেও ব্যর্থ হয়| এর ফলে সরকার 1879 সালে একটি রাজস্ব কমিশন গঠন করে| এই কমিশনের সুপারিশ মতো 1885 সালে 'বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন' পাশ হয়| এই আইনে রায়তদেরকে কতগুলি অধিকার প্রদান করা হয়| যথা-
1885 সালের "বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন" রায়তদের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সমর্থ হয়েছিল এবং আইন জমির উপরে অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিল| কিন্তু রায়তরা এই আইনের দ্বারা গাছ কাটার অধিকার ও জমি বন্ধক রাখার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়|
এছাড়া জমিদারদের অনুমতি ছাড়া পুকুর কাটার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, এর ফলে 1928 সালে প্রজাস্বত্ব আইন সংস্কার করা হয়| এই আইন দ্বারা রায়ত তার জমি স্থানান্তরের অধিকার পায়, কিন্তু তাদেরকে এই জমি স্থানান্তরের জন্য 'সালামি' দিতে হতো| রায়তরা গাছ কাটার অধিকার এবং পুকুর খননের অধিকার পায় জমিদারদের অনুমতি ছাড়া|
1938 সালে প্রজাস্বত্ব আইন সংস্কারের দ্বারা পুনরায় রায়তদের স্বার্থ সুরক্ষিত করা হয়| এই আইন দ্বারা 'সালামি' প্রথা তুলে দেওয়া হয় এবং রায়তকে জমির স্বত্ব অধিকারী বলে স্বীকার করা হয়| এরপর 1950 সালে জমিদারি ব্যবস্থা বিলোপ ঘটানো হয়| স্থির হয়, এখন থেকে জমিদারদের পরবর্তীতে সরকারকে রায়ত রাজস্ব প্রদান করবে|
এখানে মনে রাখতে হবে যে, প্রজাস্বত্ব আইনে প্রজাদেরকে জমি ক্রয়-বিক্রয় অধিকার দেওয়া হয়নি| কিন্তু পরবর্তীকালে প্রজাস্বত্ব আইনে প্রজাদেরকে এই অধিকার প্রদান করা হয়| যে সকল কৃষকরা ভূমিহীন ছিল, তারা প্রান্তিক কৃষক ছিল| তারা নির্দিষ্ট জমির অংশের ভিত্তিতে অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণ শস্যের বিনিময় অথবা মজুরির বিনিময় চাষ করতে পারতো| কিন্তু পরবর্তীকালে 'plot survey 1944-45' দ্বারা দেখা যায় যে, এইসব এর ফলে রায়তদের অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন ঘটেনি|
অন্যদিকে স্বত্বহীন রায়তদের ক্ষেত্রে এই আইন ছিল সম্পূর্ণ নীরব| বাস্তবিক পক্ষে এই আইন ও জমি সংক্রান্ত অসন্তোষকে দূর করতে ব্যর্থ হয়| এই আইন জমিদার এবং কৃষকদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতেও ব্যর্থ হয়| এর ফলে সরকার 1879 সালে একটি রাজস্ব কমিশন গঠন করে| এই কমিশনের সুপারিশ মতো 1885 সালে 'বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন' পাশ হয়| এই আইনে রায়তদেরকে কতগুলি অধিকার প্রদান করা হয়| যথা-
- জমির মালিকরা সেই সকল রায়তদের রাজস্ব বৃদ্ধি করতে পারবে যাদের 1791 সালে পর রাজস্ব বৃদ্ধি ঘটেনি|
- রায়ত 12 বছরের বেশি সময় ধরে জমির উপর স্বত্বভোগ করতে পারবে| একমাত্র জমির উন্নতির ঘটলে উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে জমির মালিক রাজস্ব বৃদ্ধি করতে পারবে এবং এই বৃদ্ধির হার নির্ধারিত হবে প্রতিবেশী অঞ্চলের সমপরিমাণ জমির উপর নির্ভর করে|
- স্বল্প মেয়াদী চুক্তি ভিত্তিক রায়ত যারা র্কুফা নামে পরিচিত ছিল, তাদের রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যেতে পারে| কিন্তু চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে কোন প্রকার রাজস্ব বৃদ্ধি করা যাবেনা| র্কুফা রাজস্ব ছাড়া অন্য সমস্ত রায়তদেরকে স্থানান্তরিত মজুরির বিনিময় স্থানান্তরিত করা য়াবে|
গাছ কাটা |
গাছ কাটা |
1885 সালের "বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন" রায়তদের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সমর্থ হয়েছিল এবং আইন জমির উপরে অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিল| কিন্তু রায়তরা এই আইনের দ্বারা গাছ কাটার অধিকার ও জমি বন্ধক রাখার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়|
এছাড়া জমিদারদের অনুমতি ছাড়া পুকুর কাটার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, এর ফলে 1928 সালে প্রজাস্বত্ব আইন সংস্কার করা হয়| এই আইন দ্বারা রায়ত তার জমি স্থানান্তরের অধিকার পায়, কিন্তু তাদেরকে এই জমি স্থানান্তরের জন্য 'সালামি' দিতে হতো| রায়তরা গাছ কাটার অধিকার এবং পুকুর খননের অধিকার পায় জমিদারদের অনুমতি ছাড়া|
1938 সালে প্রজাস্বত্ব আইন সংস্কারের দ্বারা পুনরায় রায়তদের স্বার্থ সুরক্ষিত করা হয়| এই আইন দ্বারা 'সালামি' প্রথা তুলে দেওয়া হয় এবং রায়তকে জমির স্বত্ব অধিকারী বলে স্বীকার করা হয়| এরপর 1950 সালে জমিদারি ব্যবস্থা বিলোপ ঘটানো হয়| স্থির হয়, এখন থেকে জমিদারদের পরবর্তীতে সরকারকে রায়ত রাজস্ব প্রদান করবে|
এখানে মনে রাখতে হবে যে, প্রজাস্বত্ব আইনে প্রজাদেরকে জমি ক্রয়-বিক্রয় অধিকার দেওয়া হয়নি| কিন্তু পরবর্তীকালে প্রজাস্বত্ব আইনে প্রজাদেরকে এই অধিকার প্রদান করা হয়| যে সকল কৃষকরা ভূমিহীন ছিল, তারা প্রান্তিক কৃষক ছিল| তারা নির্দিষ্ট জমির অংশের ভিত্তিতে অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণ শস্যের বিনিময় অথবা মজুরির বিনিময় চাষ করতে পারতো| কিন্তু পরবর্তীকালে 'plot survey 1944-45' দ্বারা দেখা যায় যে, এইসব এর ফলে রায়তদের অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন ঘটেনি|
তথ্যসূত্র
- A. R. Desai, "Peasant Struggles in India".
- Sho Kuwajima, "peasants and peasant leaders in contemporary history".
সম্পর্কিত বিষয়
- আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিষয় হিসেবে কৃষক কেন এবং কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ (আরো পড়ুন)
- ভারতের শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলন এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (আরো পড়ুন)
- ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ভাবাদর্শ (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................