বৈদিক যুগে প্রশাসনিক ক্ষমতার শীর্ষে ছিলেন রাজা| তিনি মূলত ছিলেন জনগোষ্ঠীর পরিচালক| কোথাও তাকে 'বিশপতি', 'গণপতি', বা 'জেষ্ঠ্যো' বলে অভিহিত বলে অভিহিত করা হয়েছে|
অধ্যাপক আপ্তের মতে, 'ঋক বৈদিক যুগে সাধারণ নিয়ম অনুসারে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল'|
বৈদিক রাজতন্ত্র ছিল আর্য সমাজের সাধারণ পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে উদ্ভূত| তার কাজ ছিল মূলত যুদ্ধকালীন সময় জনগণকে রক্ষা করা| এই কারণেই ঋকবেদে রাজাকে 'গোপ', 'জনস্য' বা 'protector of the people' বলে অভিহিত করা হয়েছে| পাশাপাশি ঋকবেদের কোন কোন স্ত্রোতে তাকে 'পুরমভেত্তা' বা 'sacker of cities' বলে উল্লেখ করা হয়েছে|
বৈদিক রাজতন্ত্র ছিল মূলত বংশানুক্রমিক| কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে জনগণ অভিজাত বা রাজকীয় পরিবারের কাউকে রাজা হিসেবে নির্বাচন করতে পারতেন| প্রজাদের রক্ষার জন্য রাজার নিকটে প্রজাদের আনুগত্য প্রকাশ করতে হত| রাজা প্রজাদের কাছ থেকে 'বলি' নামক রাজস্ব আদায় করতেন| রাষ্ট্রীয় জমির উপর রাজার কোন মালিকানা ছিল না| শত্রু পরাজিত হলে তার সম্পত্তির ভাগ রাজা পেতেন|
অনার্য এবং আর্য প্রতিদ্বন্দ্বী উপজাতি আক্রমণ থেকে নিজ গোষ্ঠীকে রক্ষা করা ছিল রাজার প্রধান কাজ, কিন্তু উপজাতির লোকেরা একে অন্যের প্রতি কোনো অপরাধ করলে রাজা কি ভূমিকা গ্রহণ করবে সে বিষয়ে ঋকবেদে কোন উল্লেখ নেই| অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার শাস্তিদানের ব্যবস্থা ছিল| রাজা নিজে সমস্ত শাস্তির উর্ধ্বে ছিলেন, এই কারণে রাজাকে 'অদণ্ড' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে| রাজা বা গোষ্ঠীপতি সমাজের অন্য সকলের চেয়ে স্বতন্ত্র ছিল| 'অর্ধদেবতা' নামক উপাধির মধ্য দিয়ে এই রূপ একটি ধারণা ঋকবৈদিক সমাজে মূর্ত হয়ে উঠে|
ঋকবৈদিক যুগের রাজার কাজ ছিল মূলত সামরিক ও কিছুটা প্রশাসনিক| ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপের রাজার ভূমিকা ছিল মূলত পৃষ্ঠপোষকে| জনগোষ্ঠীর ইহলৌকিক ও পরলৌকিক যাগ যজ্ঞের আবশ্যকতা সম্পর্কে রাজা বা গোষ্ঠীর সদস্যদের মনে কোন সন্দেহ ছিল না| ফলের রাজা পুরোহিতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও নির্ভরতা গড়ে উঠেছিল|
যুদ্ধক্ষেত্রেও রাজা পুরোহিতের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতেন, আবার কখনো কখনো রাজা ও পুরোহিতের মধ্যে বিরোধ দেখা দিত, 'দশরাজার যুদ্ধ' এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ| ছোটখাটো যুদ্ধে রাজা অংশগ্রহণ করতেন না| শান্তির সময় সেনারাই প্রশাসনিক কাজে তাকে সাহায্য করতেন ঋকবেদে সভা ও সমিতির(আরো পড়ুন) দুটি প্রতিষ্ঠানের উল্লেখ আছে|
রাজা সমিতির অধিবেশনে পৌরহিত্য করতেন| সমিতিতে একবার কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তা অমান্য করার অধিকার রাজার ছিল না| রাজা সভা ও সমিতির অধিবেশন আহ্বান করতেন| গোষ্ঠীর সকল সদস্যদের দিকে নজর রাখার জন্য তিনি গ্রামীণদের নিয়োগ করতেন|
ঋক বৈদিক যুগের রাজা ও তার রাজকীয় কর্তব্যগুলি অনুসরণ করলে বোঝা যায় যে, এই সময় বিশ্বজনীন রাজত্বে আদর্শ প্রচলিত হয়েছিল| এই ধরনের আদর্শ প্রচারককে পরবর্তীকালে সংযোজন বলে বাতিল করা যায় না, কারণ এগুলি সংহিতার প্রায় সকল মন্ডলেই উল্লেখ রয়েছে| গোষ্ঠীপতিদের অনেকেই নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্তের আপন গুণে গোষ্ঠীতে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব স্থাপনের মাধ্যমে রাজপদে অভিষিক্ত হয়েছিল|ঋকবেদের এইরূপ বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ আছে যে, নিজ গোষ্ঠীতে দলপতি বা রাজার এই অসীম ক্ষমতা আভাসিত হয়েছে|
অধ্যাপক আপ্তের মতে, 'ঋক বৈদিক যুগে সাধারণ নিয়ম অনুসারে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল'|
বৈদিক রাজতন্ত্র ছিল আর্য সমাজের সাধারণ পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে উদ্ভূত| তার কাজ ছিল মূলত যুদ্ধকালীন সময় জনগণকে রক্ষা করা| এই কারণেই ঋকবেদে রাজাকে 'গোপ', 'জনস্য' বা 'protector of the people' বলে অভিহিত করা হয়েছে| পাশাপাশি ঋকবেদের কোন কোন স্ত্রোতে তাকে 'পুরমভেত্তা' বা 'sacker of cities' বলে উল্লেখ করা হয়েছে|
রাজপ্রাসাদ |
বৈদিক রাজতন্ত্র ছিল মূলত বংশানুক্রমিক| কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে জনগণ অভিজাত বা রাজকীয় পরিবারের কাউকে রাজা হিসেবে নির্বাচন করতে পারতেন| প্রজাদের রক্ষার জন্য রাজার নিকটে প্রজাদের আনুগত্য প্রকাশ করতে হত| রাজা প্রজাদের কাছ থেকে 'বলি' নামক রাজস্ব আদায় করতেন| রাষ্ট্রীয় জমির উপর রাজার কোন মালিকানা ছিল না| শত্রু পরাজিত হলে তার সম্পত্তির ভাগ রাজা পেতেন|
অনার্য এবং আর্য প্রতিদ্বন্দ্বী উপজাতি আক্রমণ থেকে নিজ গোষ্ঠীকে রক্ষা করা ছিল রাজার প্রধান কাজ, কিন্তু উপজাতির লোকেরা একে অন্যের প্রতি কোনো অপরাধ করলে রাজা কি ভূমিকা গ্রহণ করবে সে বিষয়ে ঋকবেদে কোন উল্লেখ নেই| অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার শাস্তিদানের ব্যবস্থা ছিল| রাজা নিজে সমস্ত শাস্তির উর্ধ্বে ছিলেন, এই কারণে রাজাকে 'অদণ্ড' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে| রাজা বা গোষ্ঠীপতি সমাজের অন্য সকলের চেয়ে স্বতন্ত্র ছিল| 'অর্ধদেবতা' নামক উপাধির মধ্য দিয়ে এই রূপ একটি ধারণা ঋকবৈদিক সমাজে মূর্ত হয়ে উঠে|
ঋকবৈদিক যুগের রাজার কাজ ছিল মূলত সামরিক ও কিছুটা প্রশাসনিক| ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপের রাজার ভূমিকা ছিল মূলত পৃষ্ঠপোষকে| জনগোষ্ঠীর ইহলৌকিক ও পরলৌকিক যাগ যজ্ঞের আবশ্যকতা সম্পর্কে রাজা বা গোষ্ঠীর সদস্যদের মনে কোন সন্দেহ ছিল না| ফলের রাজা পুরোহিতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও নির্ভরতা গড়ে উঠেছিল|
যুদ্ধক্ষেত্রেও রাজা পুরোহিতের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতেন, আবার কখনো কখনো রাজা ও পুরোহিতের মধ্যে বিরোধ দেখা দিত, 'দশরাজার যুদ্ধ' এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ| ছোটখাটো যুদ্ধে রাজা অংশগ্রহণ করতেন না| শান্তির সময় সেনারাই প্রশাসনিক কাজে তাকে সাহায্য করতেন ঋকবেদে সভা ও সমিতির(আরো পড়ুন) দুটি প্রতিষ্ঠানের উল্লেখ আছে|
রাজা সমিতির অধিবেশনে পৌরহিত্য করতেন| সমিতিতে একবার কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তা অমান্য করার অধিকার রাজার ছিল না| রাজা সভা ও সমিতির অধিবেশন আহ্বান করতেন| গোষ্ঠীর সকল সদস্যদের দিকে নজর রাখার জন্য তিনি গ্রামীণদের নিয়োগ করতেন|
ঋক বৈদিক যুগের রাজা ও তার রাজকীয় কর্তব্যগুলি অনুসরণ করলে বোঝা যায় যে, এই সময় বিশ্বজনীন রাজত্বে আদর্শ প্রচলিত হয়েছিল| এই ধরনের আদর্শ প্রচারককে পরবর্তীকালে সংযোজন বলে বাতিল করা যায় না, কারণ এগুলি সংহিতার প্রায় সকল মন্ডলেই উল্লেখ রয়েছে| গোষ্ঠীপতিদের অনেকেই নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্তের আপন গুণে গোষ্ঠীতে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব স্থাপনের মাধ্যমে রাজপদে অভিষিক্ত হয়েছিল|ঋকবেদের এইরূপ বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ আছে যে, নিজ গোষ্ঠীতে দলপতি বা রাজার এই অসীম ক্ষমতা আভাসিত হয়েছে|
তথ্যসূত্র
- সুনীল চট্টোপাধ্যায় "প্রাচীন ভারতের ইতিহাস" (প্রথম খন্ড)
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India"
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century"
সম্পর্কিত বিষয়
- ঋক বৈদিক যুগ এবং পরবর্তী বৈদিক যুগের ধর্মীয় ভাবনা (আরো পড়ুন)
- প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................