খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে রাজতান্ত্রিক রাজ্যসমূহের পাশাপাশি 'সংঘ' বা 'গন' বা 'গন সংঘ' নামে অরাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল| বৃজি, মল্ল, সাক্য, কোশিয়, ভল্ল, মোরিয় ও লিচ্ছবিরা এই ধরনের অরাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন| এই রাজ্যগুলিকে প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক বা প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা চলে না|
গণতান্ত্রিক বা প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ এর হাতেই রাষ্ট্রের শাসনভার থাকে| সেখানে জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে ধনী, দরিদ্র, শিক্ষিত, অশিক্ষিত সকলেই প্রতিনিধি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে থাকেন| কিন্তু বৃজি, মল্ল, সাক্য ও লিচ্ছবিরা যে রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন, সেই রাষ্ট্রে অভিজাত ক্ষত্রিয়দেরই মুখ্য ভূমিকা ছিল, তারাই রাষ্ট্রের প্রশাসন পরিচালনা করতেন| সেখানে ব্রাহ্মণ গৃহপতি ও অন্যান্য বর্ন ও জাতির লোকেরা উপেক্ষিতই ছিলেন বলা চলে| সেই দিক থেকে বিচার করলে এই রাজ্যগুলোকে ক্ষত্রিয় অভিজাততন্ত্র বলে আখ্যা দেওয়া যায়|
গণতান্ত্রিক বা প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ এর হাতেই রাষ্ট্রের শাসনভার থাকে| সেখানে জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে ধনী, দরিদ্র, শিক্ষিত, অশিক্ষিত সকলেই প্রতিনিধি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে থাকেন| কিন্তু বৃজি, মল্ল, সাক্য ও লিচ্ছবিরা যে রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন, সেই রাষ্ট্রে অভিজাত ক্ষত্রিয়দেরই মুখ্য ভূমিকা ছিল, তারাই রাষ্ট্রের প্রশাসন পরিচালনা করতেন| সেখানে ব্রাহ্মণ গৃহপতি ও অন্যান্য বর্ন ও জাতির লোকেরা উপেক্ষিতই ছিলেন বলা চলে| সেই দিক থেকে বিচার করলে এই রাজ্যগুলোকে ক্ষত্রিয় অভিজাততন্ত্র বলে আখ্যা দেওয়া যায়|
গণ সমাবেশ |
গনসংঘের একজন করে সভাপতি বা মুখ্য প্রশাসক ছিলেন, যিনি 'গনপতি', 'গনজেষ্ঠ্য', 'গনরাজা', বা 'সংঘমুখ্য' নামে পরিচিত ছিলেন | তারা প্রতিনিধি সভা বা পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থে নির্দিষ্ট মেয়াদে নির্বাচিত হতেন | প্রতিনিধি সভার যেসকল প্রস্তাব গৃহীত হতো সভাপতি বা মুখ্য প্রশাসক এর উপর তা রূপায়নের ভার ছিল| এই প্রতিনিধি সভা বা পরিষদের হাতেই রাষ্ট্রের প্রকৃত কর্তৃত্ব ছিল| লিচ্ছবিদের প্রতিনিধি সভার সদস্য ছিল|প্রতিনিধি সভার সদস্যদের রাজা বলা হত| অঞ্চল প্রধানরাই সম্ভবত প্রতিনিধি সভার সদস্য হতেন, এরা সকলেই অভিজাত ক্ষত্রিয় ছিলেন|
বৌদ্ধ সাহিত্যে প্রতিনিধি সভার কাজকর্ম সম্পর্কে বিশদে বলা হয়েছে| প্রতিনিধি সভার কোন প্রস্তাব আনতে হলে তা তিনবার উত্থাপন করতে হতো, উপস্থিতি সদস্যগণ আপত্তি না জানালে প্রস্তাবটি গৃহীত হতো| কোন আপত্তি উঠলে প্রস্তাবটির পক্ষে বিপক্ষে গোপনে ভোট বা জটিল কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে বিষয়টি সালিশি জন্য এক বিশেষ কমিটির কাছে পাঠানো হতো |
বৌদ্ধ লেখক বুদ্ধঘোষ গন সংঘগুলির, বিশেষ করে লিচ্ছবি রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে মূল্যবান তত্ত্ব পরিবেশন করেছেন | নিম্নতম থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় আটটি বিভিন্ন আদালতের উল্লেখ পাওয়া যায়| তার রচনা থেকে জানা যায় যে, নিম্ন আদালতের বিচারক ছিলেন বিনিশ্চয় মহমাত্র এবং উচ্চতম আদালতে বিচার কার্য পরিচালনা করতেন প্রতিনিধি সভার সদস্য| অভিযুক্ত ব্যক্তি যে কোন একটি আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হলে মুক্তি লাভ করতেন| নিম্নতম থেকে উচ্চতম আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলেই তাকে দণ্ড দেওয়া হতো| নাগরিকদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা যথাযথভাবে রক্ষিত হয় তার জন্যই এই ব্যবস্থা ছিল|
গন সংঘের ক্ষত্রিয়দের প্রভাব ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় বুদ্ধদেব ও মহাবীরের জন্ম হয়েছিল ক্ষত্রিয় পরিবারে|যুদ্ধ-বিগ্রহ ও প্রশাসনিক কাজে ক্ষত্রিয়রা অংশগ্রহণ করতেন| তবে সাক্য, কোশিয় গোষ্ঠীর ক্ষত্রিয়রা কৃষি কাজে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন| প্রতিবাদী ধর্মীয় আন্দোলন জনপ্রিয় হওয়ায় বৈদিক যাগযজ্ঞ গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে| উত্তর বৈদিক যুগে পুরোহিত সম্প্রদায় যে দাপট ছিল তার অনেকটাই শিথিল হয়ে পড়ে| ব্রাহ্মণদের প্রধান জীবিকা হয় যাজন ও অধ্যাপনা| পাশাপাশি তারা এই সময় চিকিৎসক, কৃষক, জ্যোতিষ, বনিক ইত্যাদি পেশায় নিযুক্ত হন|
অবশ্য এই সকল গণ রাজ্যগুলির দুর্বলতা ছিল| এসকল অরাজতান্ত্রিক রাজ্যে নাগরিকদের মধ্যে যে বিরোধ দেখা দিত এবং মূলত পারস্পরিক অন্তর কলহের কারণে গন সংঘ রাজ্যগুলির পতন ঘটেছিল|
তথ্যসূত্র
- সুনীল চট্টোপাধ্যায় "প্রাচীন ভারতের ইতিহাস" (প্রথম খন্ড)
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India"
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century"
সম্পর্কিত বিষয়
- ঋক বৈদিক যুগ এবং পরবর্তী বৈদিক যুগের ধর্মীয় ভাবনা (আরো পড়ুন)
- প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................