ইয়াল্টা সম্মেলন
1945 খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারিতে কৃষ্ণ সাগরের পাশে ক্রিমিয়ার ইয়াল্টা প্রদেশের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়| ইয়াল্টা নামে পরিচিত এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিল তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট, ব্রিটিশ প্রধান উইনস্টন চার্চিল, সোভিয়েত রাষ্ট্র নায়ক জোসেফ স্তালিন |
জার্মানির মানচিত্র |
জোসেফ স্তালিন |
এই সম্মেলনে আলোচ্য বিষয় গুলো ছিল-
- জার্মানির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ|
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্রের পুনর্গঠন|
- আন্তর্জাতিক বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এক আন্তর্জাতিক সংগঠন তৈরি করা হয়|
- ভেটো প্রয়োগ ক্ষমতা সংক্রান্ত আলোচনা|
- দূর প্রাচ্যের সোভিয়েত রাশিয়া যোগদানের গুরুত্ব পর্যালোচনা করা|
- পোল্যান্ডের সীমানা ও ভবিষ্যৎ সরকার গঠনে প্রশ্নের সমাধান করা|
এই সম্মেলনের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নাৎসিবাদের কবল থেকে জার্মানিতে মুক্ত করা ও যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি এবং জার্মানির রাজধানী বার্লিনকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়| পশ্চিমাংশ আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে নিয়ন্ত্রণে এবং পূর্বাঞ্চল সোভিয়েত এবং আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে ভাগ থেকে ফ্রান্সকে কিছুটা দেওয়া হয়|জার্মানির অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ থাকবে মিত্র পক্ষ নিযুক্ত কমিশনের হাতে|
এই সম্মেলনে রাষ্ট্র সংঘ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল যে, সংবিধান রচনার জন্য মিত্রপক্ষের দেশ সানফ্রান্সিসকো শহরের মিলিত হবে| নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যগুলি আছিপরিষদ ব্যাপারে আলোচনা করতে পারবে এবং এই সদস্য রাষ্ট্রগুলো ভেটো সংক্রান্ত প্রয়োগের ক্ষমতা পাবে|
তবে এই সম্মেলনে সোভিয়েত রাশিয়ার বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা পেয়েছিল-
- কিউরাইল দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ শাখালিন ও দক্ষিণ মাঞ্চুরিয়া রেলপথ ব্যবহারের অধিকার দিয়েছিল| এছাড়াও পোর্ট আর্থারকে নৌ ঘাটি হিসাবে ব্যবহারের জন্য 91 বছরের লিজের অধিকার দেওয়া হয়েছিল |
- পোল্যান্ডের ক্ষেত্রে বলা হয়, দু টুকরো পোল্যান্ডকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে| পোল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় সীমানা অক্ষুন্ন রাখার জন্য জার্মানির উত্তর-পশ্চিম দিকে ভূখণ্ড পাবে|অবশেষে বলা যায় যে, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে ইয়াল্টা সম্মেলন শান্তির সম্ভাবনাকে অনেকটাই আভাসিত করেছিল|
পটসডাম সম্মেলন
জার্মানির রাজধানী বার্লিন এর পাশে পটসডাম শহরে 17 জুলাই থেকে 2 আগস্ট পর্যন্ত 15 দিন ব্যাপী চলা এই সম্মেলনে যোগদান দিয়েছিল মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি এস. ট্রুম্যান, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট রিচার্ড এটলি ও সোভিয়েত রাষ্ট্রনায়ক জোসেফ স্তালিন |
এই সম্মেলনের আলোচ্য বিষয় ছিল প্রধান চারটি যথা-
- জার্মানির কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ আদায়|
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে জার্মান সমাজ ব্যবস্থার পুনর্গঠন|
- ইয়াল্টা সম্মেলনের ঘোষণাপত্র গুলোর মূল্যায়ন|
- পোল্যান্ডের পশ্চিম সীমানা নির্ধারণ|
এক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলিতে বলা হয়েছিল যে- ব্রিটেন, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের নিয়ে একটি কাউন্সিল গঠন করা হবে| এই কাউন্সিলে জার্মানি ইতালি বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরী ও ফিনল্যান্ড সহ একটি শান্তি চুক্তির খসড়া প্রস্তুত করা হবে| জার্মানির যুদ্ধ অস্ত্র তৈরির কারখানাগুলিতে মিত্রপক্ষ নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন রাখবে| যুদ্ধে মিত্রপক্ষে যে ক্ষতিপূরণ হয়েছিল, তা জার্মানির কাছ থেকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করবে এবং জার্মানির নৌবহরগুলির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও সোভিয়েত রাশিয়া নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিবে|
যদিও এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল জার্মানি ও ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিতে নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা| কিন্তু পরবর্তীকালে জার্মানির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ নিয়ে সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মতবিরোধ শুরু হয়, তার ফলে ঠান্ডা লড়াই এর সূচনা ঘটে এবং জার্মানি দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে|
.......................................
তথ্যসূত্র
- Pavneet Singh, "International Relations".
- Ghosh Peu, "International Relations".
সম্পর্কিত বিষয়
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময় উপনিবেশবাদের পতন তথা এর গুরুত্ব (আরো পড়ুন)
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মানির বিভাজন তথা বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব (আরো পড়ুন)
- ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থানের কারণ (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|