আফ্রিকার নবজাগরণ এবং মুক্তি সংগ্রাম বিংশ শতাব্দীর এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা| অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিভিন্ন ইউরোপীয় রাষ্ট্র আফ্রিকা মহাদেশে উপনিবেশ স্থাপন করে সেখানকার জনগণের উপর সাম্রাজ্যবাদী শোষণ চালায়|
পাশাপাশি এই পাশ্চাত্য রাষ্ট্রশক্তি আফ্রিকার জনগণের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তন, শিল্প কলকারখানা স্থাপন ইত্যাদির মাধ্যমে এক সভ্যতার আলো বয়ে নিয়ে আসে| এই সকল সংস্কার সমূহ ও অন্যদিকে শ্বেতাঙ্গ জাতি কর্তৃক কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্য ও শোষণমূলক আচরণ ইত্যাদির ফলে আফ্রিকা বাসীদের মধ্যে এক জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হয়েছিল, যা ধীরে ধীরে তাদের মুক্তি সংগ্রামের পথ প্রশস্ত করেছিল|
ইউরোপীয় শাসন আফ্রিকার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি অনিচ্ছাকৃত উপকার করেছিলো| উপনিবেশবাদীদের যুদ্ধ থেকে ইউরোপীয় শাসন আফ্রিকাকে রক্ষা করেছিল| ইউরোপীয় কৃষি খামারগুলিতে উন্নতি পদ্ধতিতে কৃষি কার্য পরিচালনা আফ্রিকার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছিল| পাশাপাশি আফ্রিকা পাশ্চাত্যের অনুকরণে কারিগরি ও সাধারণ শিক্ষার প্রসার ঘটলে শিক্ষিত আফ্রিকানরা স্বাধীনতা সম্পর্কে সচেতন হয়েছিল|
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আফ্রিকার উপনিবেশিক শক্তিগুলি দুর্বল হয়ে পড়ায় তাদের পক্ষে আফ্রিকার মতো সুবিশাল মহাদেশ সাম্রাজ্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে| আবার ঠান্ডা লড়াই চলাকালীন আফ্রিকাবাসীর একটা বড় অংশ কমিউনিস্ট ভাবধারায় উদ্ভূত হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী প্রচার তাদের উৎসাহিত করে| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ব্রিটেনের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ায় আফ্রিকার জাতীয়তাবাদের সামান্য চাপের ফলেই ব্রিটেন আফ্রিকার উপনিবেশগুলি ত্যাগ করেছিল|
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তিকালে আফ্রিকাবাসীদের এক বিরাট অংশ ব্রিটেন, আমেরিকাসহ পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলিতে উচ্চশিক্ষার্থে গিয়ে গণতন্ত্র জাতীয়তাবাদের আদর্শের দ্বারা গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল| তারা বিশ্বের পরিবর্তিত ঘটনার পটভূমিকায় আফ্রিকা স্বাধীনতার দাবিকে আরও জোরালো করে তুলেছিল| সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির সাম্রাজ্য রক্ষার শক্তি না থাকায় 1957-77 সালের মধ্যে আফ্রিকার 39 টি রাষ্ট্র স্বাধীনতা লাভ করেছিল|
স্বাধীনতাপ্রাপ্ত আফ্রিকার বিভিন্ন রাষ্ট্র বেশ কিছু সাধারন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল| এই রাষ্ট্রগুলি একাধিক উপজাতীয় গোষ্ঠীর থাকায় প্রতিটি উপজাতীয় গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করা অনেক সময় সম্ভব হতো না| বিভিন্ন সময়ে এই উপজাতি গোষ্ঠীগুলি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তো| অনেক সময় সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ অপেক্ষায় উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলোর স্বার্থ বেশি গুরুত্ব পেতে|
আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ছিল অনুন্নত প্রকৃতির| মূলত একটি বা দুটি দ্রব্যের উপর ভিত্তি করে তারা তাদের অর্থনীতি পরিচালনা করত| কোন কারণে বিশ্ববাজারে সেই দ্রব্যের দাম হ্রাস পেলে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসত|
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, নাইজেরিয়ায় অর্থনীতি 80 শতাংশ তাদের খনিজ তেল রপ্তানির উপর নির্ভরশীল|পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যা সম্মিলিত মানব সম্পদের অভাব, পর্যাপ্ত উদ্বৃত্ত উৎপাদনের অভাব ইত্যাদির ফলে এই রাষ্ট্রগুলিতে ঋণগ্রস্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে| মূলত এই আর্থিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তারা পাশ্চাত্যের উন্নত রাষ্ট্রগুলির ওপর আরো বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে|
আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলিতে সংসদীয় তান্ত্রিক পরিকাঠামোর অভাব থাকায় এখানকার সরকারগুলির মধ্যে প্রায় স্বৈরাচারিতা, দুর্নীতিগ্রস্ততা সামরিক অভ্যত্থান ইত্যাদি নিয়মিতভাবে পরিলক্ষিত হয়| হিংসা ও সন্ত্রাসবাদের কারণ সরকারগুলির মধ্যে স্থিতিশীলতা পরিলক্ষিত হয় না|
এর পাশাপাশি প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আফ্রিকা মহাদেশের রাষ্ট্রগুলিতে অনাবৃষ্টি এবং অতিবৃষ্টি জনিত কারণে শস্য হানি, দুর্ভিক্ষ, মহামারী এবং খনিজ সম্পদের হানি ঘটে| ক্রমবর্ধমান ঋণগ্রস্ততার কারণে রাষ্ট্রগুলির মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটে| বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং মজুরি হ্রাস আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলির এক নিয়মিত ঘটনা|
.......................................
পাশাপাশি এই পাশ্চাত্য রাষ্ট্রশক্তি আফ্রিকার জনগণের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তন, শিল্প কলকারখানা স্থাপন ইত্যাদির মাধ্যমে এক সভ্যতার আলো বয়ে নিয়ে আসে| এই সকল সংস্কার সমূহ ও অন্যদিকে শ্বেতাঙ্গ জাতি কর্তৃক কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্য ও শোষণমূলক আচরণ ইত্যাদির ফলে আফ্রিকা বাসীদের মধ্যে এক জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হয়েছিল, যা ধীরে ধীরে তাদের মুক্তি সংগ্রামের পথ প্রশস্ত করেছিল|
আফ্রিকান মানুষ |
ইউরোপীয় শাসন আফ্রিকার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি অনিচ্ছাকৃত উপকার করেছিলো| উপনিবেশবাদীদের যুদ্ধ থেকে ইউরোপীয় শাসন আফ্রিকাকে রক্ষা করেছিল| ইউরোপীয় কৃষি খামারগুলিতে উন্নতি পদ্ধতিতে কৃষি কার্য পরিচালনা আফ্রিকার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছিল| পাশাপাশি আফ্রিকা পাশ্চাত্যের অনুকরণে কারিগরি ও সাধারণ শিক্ষার প্রসার ঘটলে শিক্ষিত আফ্রিকানরা স্বাধীনতা সম্পর্কে সচেতন হয়েছিল|
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আফ্রিকার উপনিবেশিক শক্তিগুলি দুর্বল হয়ে পড়ায় তাদের পক্ষে আফ্রিকার মতো সুবিশাল মহাদেশ সাম্রাজ্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে| আবার ঠান্ডা লড়াই চলাকালীন আফ্রিকাবাসীর একটা বড় অংশ কমিউনিস্ট ভাবধারায় উদ্ভূত হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী প্রচার তাদের উৎসাহিত করে| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ব্রিটেনের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ায় আফ্রিকার জাতীয়তাবাদের সামান্য চাপের ফলেই ব্রিটেন আফ্রিকার উপনিবেশগুলি ত্যাগ করেছিল|
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তিকালে আফ্রিকাবাসীদের এক বিরাট অংশ ব্রিটেন, আমেরিকাসহ পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলিতে উচ্চশিক্ষার্থে গিয়ে গণতন্ত্র জাতীয়তাবাদের আদর্শের দ্বারা গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল| তারা বিশ্বের পরিবর্তিত ঘটনার পটভূমিকায় আফ্রিকা স্বাধীনতার দাবিকে আরও জোরালো করে তুলেছিল| সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির সাম্রাজ্য রক্ষার শক্তি না থাকায় 1957-77 সালের মধ্যে আফ্রিকার 39 টি রাষ্ট্র স্বাধীনতা লাভ করেছিল|
স্বাধীনতাপ্রাপ্ত আফ্রিকার বিভিন্ন রাষ্ট্র বেশ কিছু সাধারন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল| এই রাষ্ট্রগুলি একাধিক উপজাতীয় গোষ্ঠীর থাকায় প্রতিটি উপজাতীয় গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করা অনেক সময় সম্ভব হতো না| বিভিন্ন সময়ে এই উপজাতি গোষ্ঠীগুলি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তো| অনেক সময় সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ অপেক্ষায় উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলোর স্বার্থ বেশি গুরুত্ব পেতে|
আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ছিল অনুন্নত প্রকৃতির| মূলত একটি বা দুটি দ্রব্যের উপর ভিত্তি করে তারা তাদের অর্থনীতি পরিচালনা করত| কোন কারণে বিশ্ববাজারে সেই দ্রব্যের দাম হ্রাস পেলে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসত|
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, নাইজেরিয়ায় অর্থনীতি 80 শতাংশ তাদের খনিজ তেল রপ্তানির উপর নির্ভরশীল|পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যা সম্মিলিত মানব সম্পদের অভাব, পর্যাপ্ত উদ্বৃত্ত উৎপাদনের অভাব ইত্যাদির ফলে এই রাষ্ট্রগুলিতে ঋণগ্রস্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে| মূলত এই আর্থিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তারা পাশ্চাত্যের উন্নত রাষ্ট্রগুলির ওপর আরো বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে|
আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলিতে সংসদীয় তান্ত্রিক পরিকাঠামোর অভাব থাকায় এখানকার সরকারগুলির মধ্যে প্রায় স্বৈরাচারিতা, দুর্নীতিগ্রস্ততা সামরিক অভ্যত্থান ইত্যাদি নিয়মিতভাবে পরিলক্ষিত হয়| হিংসা ও সন্ত্রাসবাদের কারণ সরকারগুলির মধ্যে স্থিতিশীলতা পরিলক্ষিত হয় না|
এর পাশাপাশি প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আফ্রিকা মহাদেশের রাষ্ট্রগুলিতে অনাবৃষ্টি এবং অতিবৃষ্টি জনিত কারণে শস্য হানি, দুর্ভিক্ষ, মহামারী এবং খনিজ সম্পদের হানি ঘটে| ক্রমবর্ধমান ঋণগ্রস্ততার কারণে রাষ্ট্রগুলির মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটে| বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং মজুরি হ্রাস আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলির এক নিয়মিত ঘটনা|
তথ্যসূত্র
- Dante Fortson, "God Couldn't Have Done It Without Africa: Earth's Final Great Awakening"
- Janet Green, "African Awakening: The saga of a strong woman who seeks adventure in Africa"
সম্পর্কিত বিষয়
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময় উপনিবেশবাদের পতন তথা এর গুরুত্ব (আরো পড়ুন)
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মানির বিভাজন তথা বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব (আরো পড়ুন)
- ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থানের কারণ (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|