ধর্মনিরপেক্ষ অথবা Secular এই শব্দটি একটি সমস্যার সৃষ্টি করেছে যে, কিভাবে আজকের বিশ্বে পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মীয় বিষয়ে রাজনীতিকে ব্যাখ্যা করা যাবে| ভারতবর্ষে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে বোঝায় সকল ধর্মের প্রতি রাষ্ট্রের সমান আচরণ|
ভারতের মানচিত্র |
ভারতের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা
1976 সালে 42 তম সংবিধান সংশোধনের দ্বারা ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় "ধর্মনিরপেক্ষ" শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে| যাইহোক ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রের সাথে ধর্মের সম্পর্ক সুনির্দিষ্ট নয়| ভারতের কোন সরকারি ধর্ম নেই| আইনগত দিক থেকে বলা যায় যে, ভারত রাষ্ট্র সমস্ত নাগরিকদের সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে| যাইহোক বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, সম্পত্তির অধিকার, ব্যক্তিগত ধর্মীয় কারণে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে|মুসলিম ব্যক্তি |
বিবাহ |
ভারতের মুসলিমরা সৈয়দ নির্ভর মুসলিম ব্যক্তিগত আইন অনুসরণ করে, সেখানে হিন্দু, খ্রিস্টান এবং শিখদের জন্য আছে এক সাধারণ আইন| ভারতবর্ষে ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যবহার পশ্চিমী দেশগুলির তুলনায় অনেকাংশে স্বতন্ত্র| ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার সমর্থকগণ দাবি করেন এক অভিন্ন বিচার ব্যবস্থার, যার অর্থ হলো জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের এক আইন ও বিচার| এরাই দাবি করেন যে, ভারত শরিয়তি আইন এবং ইসলামিক আইন গ্রহণ করলে সমান মানবিক অধিকার এবং নীতিগুলিকে ভঙ্গ করা হবে| একইসঙ্গে ভারতীয় নারীদের প্রতি বৈষম্য করা হবে, যা ভারতের সংবিধানের সমান নাগরিক অধিকারকে ভঙ্গ করবে| আর এরফলে শেষ পর্যন্ত ভারতবর্ষে ধর্মীয় কারণে স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের দাবি জোরালো হবে|
সুতরাং ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ব্যক্তিগত আইন এবং অন্যদিকে অভিন্ন দেওয়ানি আইনের দাবি| 1937 সালে ভারতীয় মুসলিম ব্যক্তিগত আইন প্রয়োগ বিধির পুনর্বহাল ভারতবর্ষে প্রথম ব্যক্তিগত আইনের গঠন করেন, যা 1939 শারে মুসলিম বিবাহ আইনকে সমর্থন করেন| এই আইন অনুযায়ী ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার পথে মূল সমস্যার সৃষ্টি করেছে|
সংখ্যালঘু শিক্ষা বিষয়ে অপর সমস্যার সৃষ্টি হয়|ভারতের সংবিধানে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার দেওয়া হয়েছে| অধ্যাপক রাজীব ভার্গব তার গ্রন্থে আলোচনা করেছেন, কিভাবে স্বাধীনোত্তর ভারতে নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যালঘু বিরোধের ফলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে|
ভারত স্বাধীনতার অধিকার এবং সম্প্রদায়গত চেতনা এই দুইয়ের মধ্যে এবং একটা ধন্দের মধ্যে পড়েছে, কেননা ভারতবর্ষে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার তার মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে| উপনিবেশিক যুগে মত প্রকাশের অধিকারটির ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল যে, এটি ভারতবর্ষের অধিকার সুবিধার নয়| সুতরাং সাংবিধানিক সংশোধন ভারতের মতো একটি বহু ধর্মের দেশে সম্প্রদায়গত চেতনা বা সংবেদনশীলতা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে|
ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে অপর সমস্যাটি হল সংখ্যাগুরু ধর্মীয় বিষয়টি, যা ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং সংখ্যালঘু ধর্মের মধ্যে পার্থক্যের সৃষ্টি করেছে| রাষ্ট্র সংখ্যাগুরু মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেননি| এরফলে ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার মূল কাঠামোটি সমস্যার মুখে পড়েছে| জওহরলাল নেহেরু সংখ্যালঘু ধর্মে নিরাপত্তার বিষয়টি সুরক্ষিত করে ছিলেন সাংবিধানিক ধারার মধ্যে উল্লেখ করে| অনেকে নেহেরুর সংখ্যালঘু বিষয়ের মতামতের সমালোচনা করেননি|
জনতাপার্টি, সমাজবাদী দল, কমিউনিস্ট পার্টি এই বিরোধিতার সামিল হয়েছে| এরা প্রত্যেকে নেহেরু ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণার সমালোচনা করেছেন| তারা সবাই সমবায়মূলক বোঝাপড়া, সহিষ্ণুতা এবং সমস্ত ধর্মের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান নীতির বিরোধিতা করেছেন| ভারতের সংবিধান নেহেরুর ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণার ওপর ভিত্তিশীল, কিন্তু সংবিধানের ধারাগুলিতে উল্লেখিত সমস্যাগুলি সমাধানের বিষয়ে সংবিধান নিরব| ভারতবর্ষে ধর্ম কখন ব্যক্তিগত বিষয় নয়, অন্যদিকে রাষ্ট্র বিষয়টি যথার্থ বোঝাপড়ার মাধ্যমে আইনগত বিষয় হিসেবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে|
ধর্মনিরপেক্ষতা ও ভারত
যাইহোক 1951 সালে ধর্মীয় এবং দানশীলতা বিষয়ক ভারতীয় আইন হিন্দু মন্দিরগুলির উপর ভারতরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব স্থাপন করে এবং কর সংগ্রহ ও ধর্মীয় বিদ্যালয় স্থাপনের এবং উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গঠনে সাহায্য করে| ইসলাম ধর্মীয় স্কুলগুলি রাষ্ট্রের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সাহায্য গ্রহণ করে| কিন্তু এটি নির্দিষ্ট করা হয় যে, বিদ্যালয়গুলি ধর্ম বা জাতির ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য গঠন করতে পারবে না| সরকারি স্কুলগুলোতে কোন অবস্থাতেই ধর্মীয় মতবাদ শিক্ষা দেওয়া যাবে না| এরফলে ভারতবর্ষে ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে সমস্যাটির উদ্ভব ঘটে| ধর্মীয় অধিকার অনুযায়ী ভারতের সকল স্তরে সমানভাবে ধর্মপালনের অধিকার আছে| সুতরাং এক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়|সংখ্যালঘু শিক্ষা বিষয়ে অপর সমস্যার সৃষ্টি হয়|ভারতের সংবিধানে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার দেওয়া হয়েছে| অধ্যাপক রাজীব ভার্গব তার গ্রন্থে আলোচনা করেছেন, কিভাবে স্বাধীনোত্তর ভারতে নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যালঘু বিরোধের ফলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে|
ভারত স্বাধীনতার অধিকার এবং সম্প্রদায়গত চেতনা এই দুইয়ের মধ্যে এবং একটা ধন্দের মধ্যে পড়েছে, কেননা ভারতবর্ষে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার তার মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে| উপনিবেশিক যুগে মত প্রকাশের অধিকারটির ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল যে, এটি ভারতবর্ষের অধিকার সুবিধার নয়| সুতরাং সাংবিধানিক সংশোধন ভারতের মতো একটি বহু ধর্মের দেশে সম্প্রদায়গত চেতনা বা সংবেদনশীলতা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে|
ভারত কি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র
জওহরলাল নেহেরু |
জনতাপার্টি, সমাজবাদী দল, কমিউনিস্ট পার্টি এই বিরোধিতার সামিল হয়েছে| এরা প্রত্যেকে নেহেরু ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণার সমালোচনা করেছেন| তারা সবাই সমবায়মূলক বোঝাপড়া, সহিষ্ণুতা এবং সমস্ত ধর্মের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান নীতির বিরোধিতা করেছেন| ভারতের সংবিধান নেহেরুর ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণার ওপর ভিত্তিশীল, কিন্তু সংবিধানের ধারাগুলিতে উল্লেখিত সমস্যাগুলি সমাধানের বিষয়ে সংবিধান নিরব| ভারতবর্ষে ধর্ম কখন ব্যক্তিগত বিষয় নয়, অন্যদিকে রাষ্ট্র বিষয়টি যথার্থ বোঝাপড়ার মাধ্যমে আইনগত বিষয় হিসেবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে|
তথ্যসূত্র
- Madhav Godbole, "Secularism"
- Sandeep Balakrishna, "70 Years of Secularism"
- Shabnum Tejani, "Indian Secularism"
সম্পর্কিত বিষয়
- ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস 1885 থেকে 1905 সাল পর্যন্ত (আরো পড়ুন)
- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পটভূমি (আরো পড়ুন)
- সম্পদের বহির্গমন তত্ত্ব এবং এটি কিভাবে বাংলার অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছিল (আরো পড়ুন)
- ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................