ঔপনিবেশিক যুগে মেয়েদের জীবন সম্পর্কে এবং আইনগত ধারণা বা সম্মতি বিবাহ বা অন্যান্য ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল| 1862 সালে সম্মতি বিষয়ক বিতর্ক ভারতবর্ষে জনগণের চর্চার একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, কেননা ওই বছর "সম্মতিসূচক বিল" পাস হয়| এই বিলে মেয়েদের বিবাহের বয়স এবং যৌনতা বিষয়ক সম্মতি বয়স 10 বছর ধার্য করা হয়|
ভারতীয় বিবাহ ব্যবস্থা অনুযায়ী বয়স কোন আইনগত বৈধতার বিষয় ছিল না| বিভিন্ন কারণে সুদূর অতীত থেকে আজ পর্যন্ত বিবাহের আয়োজন করা হয়ে থাকে| বাল্যবিবাহের প্রসারের পেছনে বিবাহের জন্য নির্দিষ্ট সংশ্লিষ্ট পুরুষ বা নারীর সম্মতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, বরং গুরুত্বপূর্ণ ছিল পাত্র পাত্রীর বাবা, ভাই বা অভিভাবকদের সম্মতি| এই অবস্থায় সম্মতি সম্পর্কিত ব্রিটিশ প্রশাসনিক আইনের সূত্রপাত বিবাহ এবং যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, এপ্রসঙ্গে 1887 খ্রিস্টাব্দে রুখমাবাঈ মামলা গুরুত্বপূর্ণ ছিল|
ভারতীয় বিবাহ ব্যবস্থা অনুযায়ী বয়স কোন আইনগত বৈধতার বিষয় ছিল না| বিভিন্ন কারণে সুদূর অতীত থেকে আজ পর্যন্ত বিবাহের আয়োজন করা হয়ে থাকে| বাল্যবিবাহের প্রসারের পেছনে বিবাহের জন্য নির্দিষ্ট সংশ্লিষ্ট পুরুষ বা নারীর সম্মতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, বরং গুরুত্বপূর্ণ ছিল পাত্র পাত্রীর বাবা, ভাই বা অভিভাবকদের সম্মতি| এই অবস্থায় সম্মতি সম্পর্কিত ব্রিটিশ প্রশাসনিক আইনের সূত্রপাত বিবাহ এবং যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, এপ্রসঙ্গে 1887 খ্রিস্টাব্দে রুখমাবাঈ মামলা গুরুত্বপূর্ণ ছিল|
বর্তমানে ভারতের মানচিত্র |
বিবাহ |
সংক্ষেপে রুকমা বাঈ মামলার ইতিহাস হল, রুখমা বাঈ ছিলেন নিম্নবর্ণের সুতার শ্রেণীর এবং তিনি ছিলেন জয়ন্তী বাঈ এর প্রথম কন্যা| রুখমা বাঈ এর পিতা ছিলেন জনার্দন পান্ডু রঙ্গ| তার বয়স যখন আড়াই বছর, তখন তার বয়স ছিল 17| এই সময় জনার্দন মারা যায় এবং তিনি তার সম্পত্তি তার বিধবা স্ত্রী জয়ন্তীবাঈ এর নামে করে দেন|
6 বছর পর জয়ন্তীবাঈ ডা: শাখারাম অর্জুনকে বিবাহ করেন| মহারাষ্ট্রের সুতার শ্রেণীর মধ্যে পুনঃ বিবাহ প্রচলিত ছিল| বিবাহের পূর্বে শাখারাম এবং জয়ন্তীবাঈ তাদের সম্পত্তি রুখমাবাঈ এর নামে করে দেন, তখন রুখমাবাঈ এর বয়স ছিল সাড়ে আট বছর| আড়াই বছর পর তার বয়স যখন এগার তখন তার বিয়ে হয় দাদাজি ভিকাজি নামে শাখারামের গরিব ভাইপোর সাথে| দাদাজি প্রচলিত পিতৃতান্ত্রিক আইনের বাইরে এসে রুখমাবাঈ পরিবারের ঘর জামাই হিসেবে থাকতেন|
বিবাহের সাত মাস পর রুখমাবাঈ ঋতুমতী হন| ফলে প্রচলিত আচার অনুযায়ী গর্ভধান অনুষ্ঠান হয়| কিন্তু শাখারাম চিকিৎসক হওয়ায় তিনি জানতেন এই বয়সে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে অনুপযুক্ত, যা দাদাজি ভিকাজিকে অসন্তুষ্ট করছিল, তখন তার বয়স ছিল 20 বছর| কিন্তু শীঘ্রই মাতৃবিয়োগ ঘটলে শাখারাম গর্ভধান অনুষ্ঠান আয়োজনে সম্মত হয়|
ইতিমধ্যে দাদাজি বিদ্যালয় ছেড়ে কুসঙ্গে পড়ে ছিলেন এবং শাখারামকে ত্যাগ করে তার মামার সঙ্গে থাকতে শুরু করেছিলেন| রুখমাবাই এই অবস্থায় 11 বছর বয়সে তার বিবাহিত স্বামী দাদাজি কাছে যেতে অস্বীকার করে, তখন দাদাজি দাম্পত্য অধিকার আইন অনুযায়ী আদালতে মামলা করেন| বিচারক পিনহে এই মামলায় ঐতিহাসিক রায় দেন| তিনি রুখমাবাঈ এর পক্ষে রায় দিয়ে বলে, তাকে জোর করে দাদাজি কাছে পাঠানো যাবে না, কেননা তার বিবাহ হয়েছিল অসহায় শৈশব অবস্থায়|
রুখমা সম্পর্কিত এই মামলা বিভিন্ন দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তি বিবাহ সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে বিরাট বিতর্কের জন্ম দেয়| রুখমাবাঈ মামলা বিতর্ক হয়ে দাঁড়ায় অযাচিত বৈবাহিক সম্পর্ক বিষয়ক নারীর স্বাধীনতার অধিকার সম্পর্কিত লড়াই| বিচারক পিনেহের রায়কে কেন্দ্র করে এই বিষয় ক্রমাগত অসন্তোষকে লক্ষ্য করে আপিল আদালত এই মামলায় হিন্দু আইন অনুযায়ী দাম্পত্য অধিকার পুনর্বিবেচনা করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক হয়ে উঠে, যখন এই মামলাটি তাদের সামনে আসে|
শেষ পর্যন্ত আপিল আদালত দাদাজির পক্ষে রায় দান করেন এবং আদালত তাকে তার স্বামীর সাথে বাস করতে হবে অথবা আদালত অবমাননার জন্য তাকে জেলে যেতে হবে| তখন রুখমাবাঈ দ্বিতীয় ধারাটি গ্রহণ করে এবং পাশাপাশি হিন্দু গোড়া পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেই এবং ঔপনিবেশিক আইন ব্যবস্থায় অবিচারকে তুলে ধরে|
শেষ পর্যন্ত এই মামলার পরিসমাপ্তি ঘটে যখন দাদাজি 2000 টাকার বিনিময় এই মামলা তুলে নিতে রাজি হন এবং আদালতের আদেশনামা অনুযায়ী রুখমাবাঈ এর কারাবাস সম্পর্কে রায় প্রয়োগ না করতে সম্মত হয়| এই রায় যদিও বিচার ব্যবস্থায় অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছিল| অসম্মতি বিবাহ এবং স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার এই দুই বিষয় রুখমাবাঈ মামলাকে কেন্দ্র করে পরিলক্ষিত হয়েছিল|
রুকমা মামলাটি বিভিন্ন উদারনৈতিক গোষ্ঠীর কাছ থেকে সমর্থন লাভ করেছিল, কিন্তু দেখা যায় ভারতীয় জাতীয়তাবাদের মেরুদন্ড তিলক এই মামলাটিকে শাস্ত্রবিরোধী বলে ঘোষণা করেছিলেন| বাস্তবিক পক্ষে তিলক রুখমা মামলাটিকে বিরোধিতা করে ছিলেন এবং যুক্তি দিয়েছিলেন শিক্ষা মেয়েদেরকে দুর্নীতি যুক্ত করে দেয়| এর মূল কারণ হলো, রুখমা তার স্বামী দাদাজির সঙ্গে বসবাস করতে প্রত্যাখ্যান করেছেন, কারণ তার স্বামী দাদাজি ছিলেন অশিক্ষিত|
তিলক মনে করেন, এই ধরনের মামলা যেখানে স্বামীর অবস্থা বিষয়ক বিষয়টি মুখ্য, সেখানে মীমাংসা হওয়া উচিত ইংরেজ সাধারণ আইন অনুযায়ী নয়, হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী তিলক চেয়েছিলেন এই মামলাটিকে দেখা হোক ফৌজদারি বিধি ভঙ্গ হিসেবে|
দেওয়ানী বিষয়ক মামলা হিসেবে নয়| তিলক স্বয়ং বিচারক হলে, এই মামলায় বিচার প্রার্থী রুকমাকে শাস্তি দিতেন| তিনি লিখেন, যদি কোন নারী তার স্বামীর কাছে যেতে অস্বীকার করেন, তাহলে তাকে রাজার শাস্তি দেওয়া উচিত, যদি সে রাজাকে অমান্য করেন তাহলে তার কারাবাস হওয়া হওয়া উচিত|
পরিশেষে বলা যায় যে, তৎকালীন প্রচলিত ব্যবস্থায় চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে রুখমাবাঈ ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তার হয়েছিলেন, যদিও তিনি প্র্যাকটিস শুরু হওয়ার আগে তিনি মারা যান|
তথ্যসূত্র
- সুমিত সরকার, "আধুনিক ভারতের ইতিহাস"
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "পলাশি থেকে পার্টিশন"
- Sonali Bansal, "Modern Indian History".
সম্পর্কিত বিষয়
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................