বর্তমানে ভারতের মানচিত্র |
1827 সালে পুনের এক ক্ষত্রিয় মালি পরিবারে জ্যোতিরাও ফুলের জন্ম হয়| এই পরিবারের লোকেরা মালির কাজ করতেন বলে পরিবারের উপাধি হয় ফুলে| তিনি প্রথমে এক স্থানীয় স্কুলে বিদ্যা শিক্ষা লাভ করে এবং এরপর তিনি স্কটিশ মিশনারি স্কুলে তাঁর শিক্ষা সম্পন্ন করেন| তাঁর জীবনের উপর শিবাজী ও টমাস পেনের প্রভাব পড়েছিল এবং তিনি টমাস পেনের "Rise of Man" পড়ে বুঝতে পারেন যে, "সকল মানুষই ঈশ্বরের সন্তান | জাতিগত ও ধর্মীয় কারণে কোন মানুষের অধিকার কম হতে পারে না"|
সারাজীবন ধরে তিনি অনেকগুলি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন| এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শিবাজীর জীবন, সংসার, জাতিভেদ প্রভৃতি| এই লেখাগুলির মধ্য দিয়ে তিনি মানববাদ, সত্যনিষ্ঠাবাদ, সামাজিক সাম্য ও ন্যায়বাদের প্রতি আস্থা ও জাতিভেদ প্রথার বিরোধিতা প্রকাশ পেয়েছে| তিনি সমাজে জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতার ঘোর বিরোধী ছিলেন| ফুলে মতে, শিক্ষাই এই সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে পারবে|
তাই ফুলে ও তাঁর স্ত্রী সাবিত্রীবাই ফুলে এক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন| আবার তিনি 1860 সালে অনাথ শিশুদের জন্য আবাস আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সামাজিক কুসংস্কারে বিরোধিতা করে 1873 সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন "সত্যশোধক সমাজ" এবং এটাই ছিল গরীব নিচু তলার মানুষদের প্রথম সামাজিক সংগঠন| তিনি সত্যশোধক সমাজের মধ্য দিয়ে সত্য ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন এবং ফুলে সমাজের সেইসব ব্রাহ্মণদের বিরোধিতা করেছিলেন যারা জনগণের বিশ্বাস ও ধর্মকে ব্যবহার করতেন নিজেদের স্বার্থ ও অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যে|
সত্যশোধক সমাজের মূলনীতি
- এটা ছিল সম্পূর্ণ সমাজ সংস্কারমূলক সংগঠন এবং এখানে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হতো না| যেকোন শূদ্র বা অস্পৃশ্যরাও এই সমাজের সদস্য হতে পারতো|
- এর সদস্যরা যদি মনে করতেন যে, উচ্চবর্ণের কোন লোক তার কর্ম ও জীবন দর্শনের দ্বারা তিনি এই সমাজের সদস্য হওয়ার যোগ্য, তবেই সেই উচ্চবর্ণের লোক সমাজের সদস্য হতে পারতেন|
- এই সমাজের সদস্যরা মনে করতেন যে, ঈশ্বরের কাছে পৌঁছাতে হলে কোন মধ্যস্থতাকারী বা কোন ব্রাহ্মণ পুরোহিতের প্রয়োজন নেই| তাই এই সমাজ ভক্ত ও ঈশ্বরের সংযোগকারী বলে শোষিত প্রতারক ব্রাহ্মণদের বিরোধিতা করেছিল|
- সত্যশোধক সমাজ সামাজিক কুসংস্কারের বিরোধিতার পাশাপাশি নিচুতলার দরিদ্র শ্রেণীর মানুষদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে সচেষ্ট হয়| নিচুতলার মানুষের মদ্যপান ও যাবতীয় কুসংস্কার দূর করে তাদের সর্বাঙ্গীন উন্নতিতে এই সমাজ যথেষ্ট সচেষ্ট হয়|
- ভারতে ব্রিটিশ আমলারা ছিল ব্রাহ্মণ নিয়ন্ত্রণাধীন, তাই সরকারি পদের ক্ষেত্রে নিম্ন শ্রেণীর মানুষের নিয়োগের দাবি নিয়ে এই সমাজ ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন জানাই এবং কৃষক ও নিম্ন বর্ণের মানুষের উন্নতিতে সচেষ্ট হয়|
ব্রিটিশ পতাকা |
ফুলের রাজনৈতিক ও সামাজিক দর্শন অন্য সংস্কারকদের মতোই ব্রিটিশ শাসনের অনুগত ছিল| ফুলে মনে করতেন, জাতীয় কংগ্রেস তখনই জাতীয় হবে যখন কংগ্রেস সাধারণ অবহেলিত মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবে| তাই তিনি দলিতদের 1889 সালে জাতীয় কংগ্রেস পরিত্যাগের কথা বলেন| এইভাবে "সত্যশোধক সমাজ" সমাজের নিচু শ্রেণীর শূদ্র ও অস্পৃশ্যদের মধ্যে জাতীয় সচেতনতা জাগিয়ে তুলেছিল, যা প্রাক উপনিবেশিক ভারতে পূর্বে কোথাও পরিলক্ষিত হয়নি|
জনগণ ফুলেকে মহাত্মা উপাধি দিয়েছিল তাঁর কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে| ফুলের জীবনীকার ধনঞ্জয় তাকে "প্রকৃত অর্থে মানবতার পূজারী" বলে আখ্যা দিয়েছে| পরবর্তীতে আম্বেডকর তাঁর আন্দোলনের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন| পরিশেষে একথা বলা যায় যে, সমাজ সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে জ্যোতিরাও ফুলে ও তাঁর সত্য শোধক সমাজের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যদিও শেষ পর্যন্ত দুর্ভাগ্যবশত এই সমাজ জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে মিশে যায়|
তথ্যসূত্র
- সুমিত সরকার, "আধুনিক ভারতের ইতিহাস"
- Om Prakash, "Lord William Bentinck and Metcalfe Era of Reforms".
- Sonali Bansal, "Modern Indian History".
সম্পর্কিত বিষয়
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................