জ্যোতির্বিদ্যা অষ্টাদশ শতকে ভারতবর্ষে চরম শিখরে আরোহণ করেছিল| জ্যোতির্বিদ্যা উন্নয়নে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন জয়পুরের মহারাজা জয় সিং| তিনি ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞ জ্যোতির্বিদ| তিনি তার সমকালীন বহু জ্যোতির্বিদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন| তার পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া বিশাল পর্যবেক্ষণমূলক স্তম্ভ নির্মাণ করা সম্ভব হত না|
ভারতের মানচিত্র |
জয় সিং ছিলেন একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ| তিনি 1688 খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং এই সময় থেকেই মোগল সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়েছিল| তিনি মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পেরেছিলেন|
তিনি 13 বছর বয়সে অম্বরের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন| 1760 খ্রিস্টাব্দে আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্যে তীব্র সংকট ঘনীভূত হয়| শেষ পর্যন্ত মোহাম্মদ শাহ 1719 খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন| এরপর তিনি 20 বছর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত থাকেন|
এই সংকটজনক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জয় সিং কেবলমাত্র তার রাজনৈতিক অবস্থা সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তা নয়, তিনি একজন জ্যোতির্বিদ এবং স্থপতি হিসেবে নিজের কৃতিত্বের প্রমাণ রেখেছেন| 1727 খ্রিস্টাব্দে জয় সিং জয়পুরের নতুন নকশা ও পরিকল্পনা নির্মাণ করেন| মারাঠা ব্রাহ্মণ পণ্ডিত জগন্নাথ, যিনি ছিলেন একাধারে সংস্কৃত এবং আরবি ভাষায় পণ্ডিত তাকে গুরুর পদে নিযুক্ত করেন|
জয় সিং নাসিরুদ্দিন, গুরগানি, জামসিদ কাশি এবং উলুগ বেগ রচনা সংস্কৃতিতে অনুবাদ করার নির্দেশ দেন| তিনি ইউরোপ থেকে দূরবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে আসেন| তিনি জ্যোতির্বিদ্যায় বিভিন্ন উপকরণের ব্যবহার জানতেন এবং জ্যোতির্বিদ্যায় দক্ষ হওয়ায় তিনি তারা মণ্ডলীয় অবস্থান সম্পর্কে ভ্রান্তি নির্দিষ্ট করতে পারতেন|
1728 খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে প্রথম "যন্তর মন্তর" নির্মিত হয়েছিল| 1738 খ্রিস্টাব্দে জয় সিং "জিজ মোহাম্মদ শাহী" নাম দিয়ে প্রথম তার নিরীক্ষণের তালিকা প্রদান করেন| যন্তর মন্তরের সংস্কৃত মানে হলো উপকরণ এবং উপকরণ এবং সূত্র| এই বিশাল যন্ত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে জয় সিং পন্ডিত বিদ্যাধর ভট্টাচার্যের সহযোগিতা গ্রহণ করেন|
জয় সিং দিল্লি, উজ্জয়নী, বেনারস, জয়পুর এবং মথুরাতে 1722-1739 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পাঁচটি বৃহদাকারে নিরীক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেন| এই কেন্দ্রগুলি থেকে অসংখ্য যন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন নিরীক্ষণ চালানো হতো এবং তা লিপিবদ্ধ রাখা হতো|
জয় সিং এর পাঁচটি নিরীক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে দিল্লি এবং জয়পুরের কেন্দ্র দুটি অবিকৃত অবস্থায় টিকে আছে, অন্যগুলি ধ্বংসের মুখে| দিল্লি এবং জয়পুরের নিরীক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে তিনটি বিশাল আকার যন্ত্র আছে, যেগুলি ছিল সম্পূর্ণভাবে জয় সিং এবং তার জ্যোতির্বিদদের নির্মাণ| এগুলি হলো-
তিনি 13 বছর বয়সে অম্বরের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন| 1760 খ্রিস্টাব্দে আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্যে তীব্র সংকট ঘনীভূত হয়| শেষ পর্যন্ত মোহাম্মদ শাহ 1719 খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন| এরপর তিনি 20 বছর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত থাকেন|
এই সংকটজনক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জয় সিং কেবলমাত্র তার রাজনৈতিক অবস্থা সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তা নয়, তিনি একজন জ্যোতির্বিদ এবং স্থপতি হিসেবে নিজের কৃতিত্বের প্রমাণ রেখেছেন| 1727 খ্রিস্টাব্দে জয় সিং জয়পুরের নতুন নকশা ও পরিকল্পনা নির্মাণ করেন| মারাঠা ব্রাহ্মণ পণ্ডিত জগন্নাথ, যিনি ছিলেন একাধারে সংস্কৃত এবং আরবি ভাষায় পণ্ডিত তাকে গুরুর পদে নিযুক্ত করেন|
জয় সিং নাসিরুদ্দিন, গুরগানি, জামসিদ কাশি এবং উলুগ বেগ রচনা সংস্কৃতিতে অনুবাদ করার নির্দেশ দেন| তিনি ইউরোপ থেকে দূরবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে আসেন| তিনি জ্যোতির্বিদ্যায় বিভিন্ন উপকরণের ব্যবহার জানতেন এবং জ্যোতির্বিদ্যায় দক্ষ হওয়ায় তিনি তারা মণ্ডলীয় অবস্থান সম্পর্কে ভ্রান্তি নির্দিষ্ট করতে পারতেন|
1728 খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে প্রথম "যন্তর মন্তর" নির্মিত হয়েছিল| 1738 খ্রিস্টাব্দে জয় সিং "জিজ মোহাম্মদ শাহী" নাম দিয়ে প্রথম তার নিরীক্ষণের তালিকা প্রদান করেন| যন্তর মন্তরের সংস্কৃত মানে হলো উপকরণ এবং উপকরণ এবং সূত্র| এই বিশাল যন্ত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে জয় সিং পন্ডিত বিদ্যাধর ভট্টাচার্যের সহযোগিতা গ্রহণ করেন|
জয় সিং দিল্লি, উজ্জয়নী, বেনারস, জয়পুর এবং মথুরাতে 1722-1739 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পাঁচটি বৃহদাকারে নিরীক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেন| এই কেন্দ্রগুলি থেকে অসংখ্য যন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন নিরীক্ষণ চালানো হতো এবং তা লিপিবদ্ধ রাখা হতো|
জয় সিং এর পাঁচটি নিরীক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে দিল্লি এবং জয়পুরের কেন্দ্র দুটি অবিকৃত অবস্থায় টিকে আছে, অন্যগুলি ধ্বংসের মুখে| দিল্লি এবং জয়পুরের নিরীক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে তিনটি বিশাল আকার যন্ত্র আছে, যেগুলি ছিল সম্পূর্ণভাবে জয় সিং এবং তার জ্যোতির্বিদদের নির্মাণ| এগুলি হলো-
- সম্রাট যাত্রা বা Samrat yantra
- রামযাত্রা বা Rama Yantra
- জয় প্রকাশ বা Jaya Prakasa
সম্রাট যাত্রা বা Samrat yantra
সম্রাট যাত্রা ছিল বিশাল 90 ডিগ্রি কোণে রক্ষিত| এটি স্থানীয় অক্ষরেখার সঙ্গে সমান্তরাল কোণে ঝুঁকে ছিল এবং এটি পৃথিবীর নিরক্ষরেখা সমান্তরাল ছিল| এটি নিখুঁতভাবে সময় নির্ধারণ করত| এটি থেকে সূর্যের অবস্থান ও সূর্যের গ্রহণ সম্পর্কে জানা যেত এবং সূর্যের বার্ষিক গতিবিধি লিপিবদ্ধ করা হতো|
রামযাত্রা বা Rama Yantra
রাম যাত্রা ছিল একটি লম্বা স্তম্ব| এটি দিগন্ত রেখা বা আকাশের শীর্ষবিন্দুর ভেতর দিয়ে কল্পিত চাপ দিগন্তকে পরিমাপ কত|
জয় প্রকাশ বা Jaya Prakasa
এটি ছিল সম্পূর্ণ ভাবে দেশীয় ও জয় সিং এর সৃষ্টি| জয় প্রকাশ ছিল একটি বিশেষ উত্তল গামলাকৃতি| এর দ্বারা ঘড়ির কাটার সাথে সামঞ্জস্য রেখে মহাকাশ ছায়াপথ অবস্থান নির্ণয় করা যেত|
জয় সিং এর প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল এই সকল নিরীক্ষণ কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে সূর্যের গতিবিধি নজর নজর রাখা|তিনি বারবার সৌর বছরের হিসাব করেন| জয় সিং এর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, এই সকল নিরীক্ষণ কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভর করে জ্যোতির্বিদ্যার বিষয়ক টেবিল তৈরি করা, হিসাব অথবা অনুমানের উপর নির্ভর করে নয়| জয়সিং বিখ্যাত জ্যোতির্বিদগণকে রাজসভায় আমন্ত্রণ জানাতেন এবং তাদের সাথে উক্ত বিষয়ে আলোচনা করতেন|
জয় সিং এর আমলে ভারতীয় এবং ইউরোপীয় জ্যোতির্বিদদের মধ্যে জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ে জ্ঞানের আদান-প্রদান ঘটত ভারতবর্ষে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের পূর্বে| তিনি ইউরোপীয় জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ ছিল| সর্বশেষে আমরা এই কথা বলতে পারি যে, জ্যোতির্বিজ্ঞানে জয় সিং এর এক উল্লেখযোগ্য এবং অসামান্য অবদান রয়েছে, তা আমরা কখনোই অস্বীকার করতে পারি|
তথ্যসূত্র
- Anisha Shekhar Mukherji, "Jantar Mantar, Maharaja Sawai Jai Singh’s Observatory in Delhi"
- H.L. Showers, "The Jaipur Observetories Jantar-Mantar"
- Vipul Jain, "Jantar Mantar - Astronomical Observatory of Jaipur"
সম্পর্কিত বিষয়
- সুফিবাদ (আরো পড়ুন)
- গুরু নানক কে ছিলেন (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা (আরো পড়ুন)
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................