সাম্প্রদায়িকতার অর্থ সহজেই ব্যক্ত করা সম্ভব নয়| পশ্চিমী লেখকদের মতে, "বহুত্ববাদী সমাজ ব্যবস্থায় একটি জনসম্প্রদায় নিজেদের অভিন্ন পরিচয় অভিব্যক্তির জন্য রাজনীতির ক্ষেত্রে দৃঢ়তার সঙ্গে নিজেদের জাহির করতে উদ্যোগী হয়, এই উদ্যোগী হল সাম্প্রদায়িকতা"|
বিপান চন্দ্র তার "communalism in Modern Indian" শীর্ষক গ্রন্থে সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছেন| তাঁর মতানুসারে সাম্প্রদায়িকতার ধারণা একটা বিশেষ বিশ্বাস বা প্রত্যয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত|
এই বিশ্বাস অনুসারে বলা যায় যে, সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় পার্থক্য হলো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক|অর্থাৎ একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর লাভ এবং অপর একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর ক্ষতি হিসেবে প্রতিপন্ন হয়| বিপান চন্দ্রের ব্যাখ্যা থেকে মনে হয় যে, ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলির মধ্যে পারস্পরিক বিরোধিতায় হলো সাম্প্রদায়িকতা|
সাম্প্রদায়িকতা ধারণার মধ্যে রাজনৈতিক বঞ্চনা বর্তমান এবং ধ্যান-ধারণার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আনুগত্যের বিষয়টি জাতি রাষ্ট্রের পরিবর্তে ধর্মীয় সম্প্রদায়গত বিচার-বিবেচনার ভিত্তিতে নির্ধারিত, নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়| এককথায় সাম্প্রদায়িকতা মানুষের মধ্যে একটা ভ্রান্ত চেতনা বা উন্মাদনার সৃষ্টি করে|
সাম্প্রদায়িকতা বিপান চন্দ্রের কথায় বিভিন্ন সম্ভাবনা এবং অনুমান বিষয়ক| এই শব্দটি রাজনীতিকীকরণ ঘটেছে এবং সময়ের সাথে সাথে এই শব্দটি অন্তত সংকীর্ণ এবং অনমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত হয়েছে| যদিও সম্পর্কটা ধর্মনিরপেক্ষ উদ্দেশ্য সমন্বিত হতে পারে না| উনিশ শতকের শেষের দিকে বিভিন্ন সম্প্রদায় তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন স্তরের উন্নতির জন্য বিভিন্ন স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়েছে| সাম্প্রদায়িকতার এই স্তর উদারনৈতিক সাম্প্রদায়িকতা নামে পরিচিত| যাইহোক এই শব্দের মূল আদর্শ পূর্ব থেকে প্রচলিত|
সুতরাং উনিশ শতকের শেষ দিক থেকে 1937 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এবং 1937 খ্রিস্টাব্দে পরবর্তী সময়গুলিতে ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতা স্বতন্ত্র আকৃতি এবং আদর্শ গ্রহণ করেছে ঔপনিবেশিক পরিস্থিতিতে|
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে যে, ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক আদর্শ মুখ্যত বিকশিত হয়েছিল রাজনীতির অংশ হিসেবে এবং এটি বিকশিত হয়েছিল মুসলিম লীগ ও হিন্দু মহাসভা প্রতিষ্ঠার অনেক পূর্বে| এই আদর্শ গড়ে উঠেছিল সাধারণ স্বার্থের উপর ভিত্তি করে এবং একই সময় অন্যের স্বার্থ থেকে স্বতন্ত্র সাধারণ স্বার্থের উপর নির্ভর করে|
সুতরাং সাম্প্রদায়িকতা ভারতের একটি আদর্শ হিসেবে বিকশিত হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক বিষয়কে কেন্দ্র করে এবং শেষ পর্যন্ত উপনিবেশিক ভারতে শেষের দিকে একটি রাজনৈতিক ধারণায় পরিনত হয়েছে|
ভারতে সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছিল স্বাধীনতার অনেক আগে| ভারতের শাসন কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ নীতি ছিল "বিভাজন ও শাসন"| তারা হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছিল| এরপর 1875 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত আলিগড় অ্যাংলো ওরিয়েন্টালটি সাম্প্রদায়িকতার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল|
এরপর 1909 খ্রিস্টাব্দে মর্লি মিন্টো শাসন সংস্কার ও ভারতীয় পরিষদ আইনের মাধ্যমে সমকালীন ভারতে মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য প্রথম স্বতন্ত্র প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা হয়| পরবর্তীকালে 1921 খ্রিস্টাব্দে ভারতশাসন আইন এবং 1935 খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইনের ভিত্তিতে এদেশের মুসলমান ও অমুসলমান ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সমূহের মধ্যে সাম্প্রদায়িক চেতনাকে জাগ্রত করা হয়|
বিংশ শতকের প্রথম দুই দশকে ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতাবাদ সম্পর্কিত প্রশ্নটি একটি আকৃতি নিয়েছিল| প্রথম ক্ষেত্রে হিন্দু ও মুসলমানদের সাধারণ স্বার্থ বিষয় ও ভাবনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল এবং একই সাথে উপনিবেশিক সরকারের স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়টি ছিল বিতর্কিত|
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে হিন্দু ও মুসলমানদের স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়টি স্বতন্ত্র হিসেবে দেখা দিয়েছিল এবং উভয় বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের সুরক্ষার অধীনে এসেছিল| এই প্রসঙ্গে এই দিকটি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন যে, এর বহু পূর্বে হরিদ্বারে 1915 খ্রিস্টাব্দে হিন্দু মহাসভা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এবং 1906 খ্রিস্টাব্দে বাংলায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়|
এই দুই সংগঠনে জন্ম এই বিষয়ে পরিষ্কার করেছিল যে, জাতীয় কংগ্রেস হিন্দু ও মুসলিম এই দুই সম্প্রদায়কে পরিচিত করতে ব্যর্থ হয়েছে| যে কারণে গোষ্ঠী স্বার্থে স্বতন্ত্রভাবে রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে এবং সুদূর ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়|
বিপান চন্দ্র তার "communalism in Modern Indian" শীর্ষক গ্রন্থে সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছেন| তাঁর মতানুসারে সাম্প্রদায়িকতার ধারণা একটা বিশেষ বিশ্বাস বা প্রত্যয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত|
এই বিশ্বাস অনুসারে বলা যায় যে, সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় পার্থক্য হলো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক|অর্থাৎ একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর লাভ এবং অপর একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর ক্ষতি হিসেবে প্রতিপন্ন হয়| বিপান চন্দ্রের ব্যাখ্যা থেকে মনে হয় যে, ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলির মধ্যে পারস্পরিক বিরোধিতায় হলো সাম্প্রদায়িকতা|
সাম্প্রদায়িকতা ধারণার মধ্যে রাজনৈতিক বঞ্চনা বর্তমান এবং ধ্যান-ধারণার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আনুগত্যের বিষয়টি জাতি রাষ্ট্রের পরিবর্তে ধর্মীয় সম্প্রদায়গত বিচার-বিবেচনার ভিত্তিতে নির্ধারিত, নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়| এককথায় সাম্প্রদায়িকতা মানুষের মধ্যে একটা ভ্রান্ত চেতনা বা উন্মাদনার সৃষ্টি করে|
Hand puppet politics |
সাম্প্রদায়িকতা বিপান চন্দ্রের কথায় বিভিন্ন সম্ভাবনা এবং অনুমান বিষয়ক| এই শব্দটি রাজনীতিকীকরণ ঘটেছে এবং সময়ের সাথে সাথে এই শব্দটি অন্তত সংকীর্ণ এবং অনমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত হয়েছে| যদিও সম্পর্কটা ধর্মনিরপেক্ষ উদ্দেশ্য সমন্বিত হতে পারে না| উনিশ শতকের শেষের দিকে বিভিন্ন সম্প্রদায় তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন স্তরের উন্নতির জন্য বিভিন্ন স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়েছে| সাম্প্রদায়িকতার এই স্তর উদারনৈতিক সাম্প্রদায়িকতা নামে পরিচিত| যাইহোক এই শব্দের মূল আদর্শ পূর্ব থেকে প্রচলিত|
ঔপনিবেশিক শাসনামলে সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব ও ফলাফল
1937 খ্রিষ্টাব্দের পর ফ্যাসিবাদী সাম্প্রদায়িকতা ভারতবর্ষে বিকাশ লাভ করে, এর ফলে পূর্বে উদারনীতিবাদ প্রতি হিংসা এবং গোষ্ঠীবাদের দ্বারা অপসারিত হয়| এই সময় অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের আবির্ভাব ঘটে, যারা জাতিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে ফেলে| যার একদিকে থাকে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু এবং অন্যদিকে থাকে সংখ্যালঘু বিষয় ও দ্বিজাতি তত্ত্ব|সুতরাং উনিশ শতকের শেষ দিক থেকে 1937 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এবং 1937 খ্রিস্টাব্দে পরবর্তী সময়গুলিতে ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতা স্বতন্ত্র আকৃতি এবং আদর্শ গ্রহণ করেছে ঔপনিবেশিক পরিস্থিতিতে|
সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব ও বিকাশ
সাম্প্রদায়িকতা হলো একধরনের বিশ্বাস, এই প্রসঙ্গে সাম্প্রদায়িক কার্যাবলী অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক আদর্শের প্রসার ঘটে| কিন্তু সাম্প্রদায়িক হিংসা কেবলমাত্র সাম্প্রদায়িক আদর্শ প্রচারের মাধ্যম নয়| সাম্প্রদায়িক আদর্শের উদ্ভব এবং বিকাশ প্রতিহিংসা ছাড়াও আকৃতি লাভ করতে পারে|উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে যে, ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক আদর্শ মুখ্যত বিকশিত হয়েছিল রাজনীতির অংশ হিসেবে এবং এটি বিকশিত হয়েছিল মুসলিম লীগ ও হিন্দু মহাসভা প্রতিষ্ঠার অনেক পূর্বে| এই আদর্শ গড়ে উঠেছিল সাধারণ স্বার্থের উপর ভিত্তি করে এবং একই সময় অন্যের স্বার্থ থেকে স্বতন্ত্র সাধারণ স্বার্থের উপর নির্ভর করে|
সুতরাং সাম্প্রদায়িকতা ভারতের একটি আদর্শ হিসেবে বিকশিত হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক বিষয়কে কেন্দ্র করে এবং শেষ পর্যন্ত উপনিবেশিক ভারতে শেষের দিকে একটি রাজনৈতিক ধারণায় পরিনত হয়েছে|
ভারতের মানচিত্র |
ভারতে সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছিল স্বাধীনতার অনেক আগে| ভারতের শাসন কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ নীতি ছিল "বিভাজন ও শাসন"| তারা হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছিল| এরপর 1875 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত আলিগড় অ্যাংলো ওরিয়েন্টালটি সাম্প্রদায়িকতার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল|
এরপর 1909 খ্রিস্টাব্দে মর্লি মিন্টো শাসন সংস্কার ও ভারতীয় পরিষদ আইনের মাধ্যমে সমকালীন ভারতে মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য প্রথম স্বতন্ত্র প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা হয়| পরবর্তীকালে 1921 খ্রিস্টাব্দে ভারতশাসন আইন এবং 1935 খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইনের ভিত্তিতে এদেশের মুসলমান ও অমুসলমান ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সমূহের মধ্যে সাম্প্রদায়িক চেতনাকে জাগ্রত করা হয়|
বিংশ শতকের প্রথম দুই দশকে ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতাবাদ সম্পর্কিত প্রশ্নটি একটি আকৃতি নিয়েছিল| প্রথম ক্ষেত্রে হিন্দু ও মুসলমানদের সাধারণ স্বার্থ বিষয় ও ভাবনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল এবং একই সাথে উপনিবেশিক সরকারের স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়টি ছিল বিতর্কিত|
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে হিন্দু ও মুসলমানদের স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়টি স্বতন্ত্র হিসেবে দেখা দিয়েছিল এবং উভয় বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের সুরক্ষার অধীনে এসেছিল| এই প্রসঙ্গে এই দিকটি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন যে, এর বহু পূর্বে হরিদ্বারে 1915 খ্রিস্টাব্দে হিন্দু মহাসভা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এবং 1906 খ্রিস্টাব্দে বাংলায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়|
এই দুই সংগঠনে জন্ম এই বিষয়ে পরিষ্কার করেছিল যে, জাতীয় কংগ্রেস হিন্দু ও মুসলিম এই দুই সম্প্রদায়কে পরিচিত করতে ব্যর্থ হয়েছে| যে কারণে গোষ্ঠী স্বার্থে স্বতন্ত্রভাবে রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে এবং সুদূর ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়|
তথ্যসূত্র
- Chandra Bipin, "Communalism in Modern India".
- Hitendra Patel, "Communalism & the Intelligentsia in the 19th".
সম্পর্কিত বিষয়
- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পটভূমি (আরো পড়ুন)
- ক্রিপস মিশন ব্যর্থতার কারণ (আরো পড়ুন)
- সম্পদের বহির্গমন তত্ত্ব এবং এটি কিভাবে বাংলার অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছিল (আরো পড়ুন)
- ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................