খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে যে দুটি ধর্ম ভারতীয় মানস জগতকে প্রভাবিত করেছিল, সেগুলির মধ্যে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম ছিল অন্যতম| বৌদ্ধ ধর্ম সম্প্রসারিত হয়েছিল ভারতের বাইরে এবং এতে বারেবারে মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছিল, কিন্তু জৈন ধর্ম ভারতের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল|
জৈন ঐতিহ্য অনুসারে জৈন তীর্থঙ্করের সংখ্যা 24 এবং জৈন ধর্মের চারটি মূল শিক্ষা ছিল, যথা- হিংসা না করা, মিথ্যা কথা না বলা, চুরি না করা এবং সম্পত্তি অর্জন না করা, এগুলি চতুর্যাম নামে পরিচিত ছিল|
জৈন ঐতিহ্য অনুসারে জৈন তীর্থঙ্করের সংখ্যা 24 এবং জৈন ধর্মের চারটি মূল শিক্ষা ছিল, যথা- হিংসা না করা, মিথ্যা কথা না বলা, চুরি না করা এবং সম্পত্তি অর্জন না করা, এগুলি চতুর্যাম নামে পরিচিত ছিল|
শেষ তীর্থঙ্কর মহাবীর |
জৈন ধর্মের শেষ তীর্থঙ্কর ছিল মহাবীর| 580 খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে তাঁর জন্ম হয়েছিল| 30 বছর বয়সে তিনি সংসার ত্যাগ করেন| মহাবীর দীর্ঘ 30 বছর ধরে গাঙ্গেয় উপত্যকায় ধর্ম প্রচার করেন| 72 বছর বয়সে 468 খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে "পাবা" নামক স্থানে তাঁর মৃত্যু হয়| মহাবীরের মৃত্যু হলে, তাঁর শিক্ষার অপমৃত্যু ঘটে| তাঁর প্রচারিত ধর্ম বৈশিষ্ট্যগুলিকে আমরা আলোচনা করতে পারি|
জৈনরা মনে করেন, বিশ্ব বর্তমানে অবনতির দিকে চলছে| এই অবনতির পর্ব শুরু হয়েছে সুদূর অতীতে "সুষম সুষম" যুগে| মহাবীরের দেহ বিন্যাসের তিন দিন পর থেকে এই যুগ আরম্ভ হয়েছে, চলবে 21 হাজার বছর ধরে| এরপর আসবে "দুষম দুষম" যুগ| এই যুগে মানুষের অবস্থা আরো খারাপ হবে| তারপর আবার আসবে "সুষম সুষম" যুগ| এভাবে কখনো অবরোহন আবার আরোহন| অবরোহন ও আরোহন ধারায় চলবে বিশ্বলীলা|
জীব বা আত্মার মুক্তি হলো জৈন ধর্মের সার কথা| জৈন ধর্মের মতে, আত্মা হলো অনন্ত জ্ঞান, অনন্ত শক্তি| কিন্তু নানারকম বাঁধার জন্য আত্মার এই গুণগুলি বিকশিত হয় না, প্রধান বাধা হলো কর্ম| কর্মের জন্য আত্মার মধ্যে নানারকম আকাঙ্ক্ষা জন্মায়| আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তির জন্য আত্মা দেহ গঠন করে| আত্মাকে বন্ধন করে চারটি অনুভূতি, যথা- ক্রোধ, মান, মায়া এবং লোভ- এদের বন্ধনে পড়ে আত্মা তার সূচিতা হারায়| তাই মোক্ষ দুটি উপায় পাওয়া সম্ভব-
জৈন ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্য হলো ত্রিরত্ন বা তিনটি পথ| এই তিনটি পথ হলো, সৎ জ্ঞান, সৎ বিশ্বাস ও সৎ আচরণ| জৈনদের মতে, ত্রিরত্নের সার্থক অনুশীলনের মধ্য দিয়ে আত্মাকে বন্ধন মুক্ত করা সম্ভব| ত্রিরত্ন অনুযায়ী সৎ বিশ্বাসের অর্থ হল শ্রদ্ধা| কিন্তু এই শ্রদ্ধা বলতে অন্ধ বিশ্বাসকে বুঝায় না|
শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের মূলে থাকবে যুক্তি, বিচার ও মনন| তীর্থঙ্কররা মুক্ত পুরুষ এবং জ্ঞানের আধার| তাদের উপদেশাবলী অধ্যয়ন ও অনুশীলনের দ্বারা জ্ঞান অর্জিত হয়| জ্ঞানের আলোকে জীবন-যাপনই হলো সৎ আচরণ বা সৎ চরিত্র| এজন্য প্রয়োজন 5 টি অনুশীলন, যথা- অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, অপরিগ্রহ ও ব্রক্ষচর্য| সম্যক দর্শন, সম্যক চরিত্রের অনুশীলনের ফলে কর্মের ক্ষয় হয়, ফলে আত্মা মুক্তির পথে এগিয়ে যায়|
গৃহী মানুষদের জন্য জৈন ধর্মে পৃথক আচরণে কথা বলা হয়েছে| এগুলি হল- অনুব্রত, গুনব্রত এবং শিক্ষা ব্রত, এই তিনটি ভাগে বিভক্ত| অনুব্রতগুলি আসলে পঞ্চ মহাব্রতের সহজ রূপ| পাপ, চিন্তা ও অধর্ম থেকে বিরত থাকার জন্য গৃহীদের তিনটি নির্দেশ আছে| এগুলি হল, গৃহীদের প্রতিদিন উপাসনায় বসতে হবে, তাদের কামনা বাসনা কমাতে হবে, উপবাস পালন করতে হবে|
পরমত সহিষ্ণুতা জৈন ধর্মের অপর আরেকটি বৈশিষ্ট্য| এই বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে জীবের জ্ঞানের আপেক্ষিকতার কথা| মানুষের জ্ঞান আপেক্ষিক| জৈনরা জ্ঞানের এই আপেক্ষিকতাকে বোঝার জন্য 7 টি আপেক্ষিক ধারণার কথা বলে, এগুলি হল-
খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের শেষ দিকে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে দরুন জৈন অনুগামী গাঙ্গেয় উপত্যকা পরিত্যাগ করে দাক্ষিণাত্যে চলে আসে| এ সূত্র ধরে জৈনরা দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর এই দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়| দিগম্বররা নগ্ন দেহ ধারনে আস্থাশীল ছিলেন| শ্বেতাম্বররা শ্বেত বস্ত্র পরিধান করতেন|
জৈনরা মনে করেন, বিশ্ব বর্তমানে অবনতির দিকে চলছে| এই অবনতির পর্ব শুরু হয়েছে সুদূর অতীতে "সুষম সুষম" যুগে| মহাবীরের দেহ বিন্যাসের তিন দিন পর থেকে এই যুগ আরম্ভ হয়েছে, চলবে 21 হাজার বছর ধরে| এরপর আসবে "দুষম দুষম" যুগ| এই যুগে মানুষের অবস্থা আরো খারাপ হবে| তারপর আবার আসবে "সুষম সুষম" যুগ| এভাবে কখনো অবরোহন আবার আরোহন| অবরোহন ও আরোহন ধারায় চলবে বিশ্বলীলা|
জীব বা আত্মার মুক্তি হলো জৈন ধর্মের সার কথা| জৈন ধর্মের মতে, আত্মা হলো অনন্ত জ্ঞান, অনন্ত শক্তি| কিন্তু নানারকম বাঁধার জন্য আত্মার এই গুণগুলি বিকশিত হয় না, প্রধান বাধা হলো কর্ম| কর্মের জন্য আত্মার মধ্যে নানারকম আকাঙ্ক্ষা জন্মায়| আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তির জন্য আত্মা দেহ গঠন করে| আত্মাকে বন্ধন করে চারটি অনুভূতি, যথা- ক্রোধ, মান, মায়া এবং লোভ- এদের বন্ধনে পড়ে আত্মা তার সূচিতা হারায়| তাই মোক্ষ দুটি উপায় পাওয়া সম্ভব-
- আত্মাকে বন্ধন মুক্ত করতে হবে|
- পূর্বের বন্ধন ছিন্ন করতে হবে|
জৈন মন্দির |
জৈন ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্য হলো ত্রিরত্ন বা তিনটি পথ| এই তিনটি পথ হলো, সৎ জ্ঞান, সৎ বিশ্বাস ও সৎ আচরণ| জৈনদের মতে, ত্রিরত্নের সার্থক অনুশীলনের মধ্য দিয়ে আত্মাকে বন্ধন মুক্ত করা সম্ভব| ত্রিরত্ন অনুযায়ী সৎ বিশ্বাসের অর্থ হল শ্রদ্ধা| কিন্তু এই শ্রদ্ধা বলতে অন্ধ বিশ্বাসকে বুঝায় না|
শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের মূলে থাকবে যুক্তি, বিচার ও মনন| তীর্থঙ্কররা মুক্ত পুরুষ এবং জ্ঞানের আধার| তাদের উপদেশাবলী অধ্যয়ন ও অনুশীলনের দ্বারা জ্ঞান অর্জিত হয়| জ্ঞানের আলোকে জীবন-যাপনই হলো সৎ আচরণ বা সৎ চরিত্র| এজন্য প্রয়োজন 5 টি অনুশীলন, যথা- অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, অপরিগ্রহ ও ব্রক্ষচর্য| সম্যক দর্শন, সম্যক চরিত্রের অনুশীলনের ফলে কর্মের ক্ষয় হয়, ফলে আত্মা মুক্তির পথে এগিয়ে যায়|
গৃহী মানুষদের জন্য জৈন ধর্মে পৃথক আচরণে কথা বলা হয়েছে| এগুলি হল- অনুব্রত, গুনব্রত এবং শিক্ষা ব্রত, এই তিনটি ভাগে বিভক্ত| অনুব্রতগুলি আসলে পঞ্চ মহাব্রতের সহজ রূপ| পাপ, চিন্তা ও অধর্ম থেকে বিরত থাকার জন্য গৃহীদের তিনটি নির্দেশ আছে| এগুলি হল, গৃহীদের প্রতিদিন উপাসনায় বসতে হবে, তাদের কামনা বাসনা কমাতে হবে, উপবাস পালন করতে হবে|
পরমত সহিষ্ণুতা জৈন ধর্মের অপর আরেকটি বৈশিষ্ট্য| এই বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে জীবের জ্ঞানের আপেক্ষিকতার কথা| মানুষের জ্ঞান আপেক্ষিক| জৈনরা জ্ঞানের এই আপেক্ষিকতাকে বোঝার জন্য 7 টি আপেক্ষিক ধারণার কথা বলে, এগুলি হল-
- একটি বস্তুর বিদ্যমান|
- একটি বস্তু অবিদ্যমান|
- আপেক্ষিকভাবে একটি বস্তুর সৎ ও অসৎ|
- আপেক্ষিকভাবে একটি বস্তু দেশ ও কাল সাপেক্ষ ও নিরপেক্ষ|
- আপেক্ষিকভাবে একটি বস্তু অব্যক্ত|
- আপেক্ষিকভাবে একটি বস্তু অবর্ণনীয়|
- সত্য বহুমুখী ও আপেক্ষিক|
খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের শেষ দিকে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে দরুন জৈন অনুগামী গাঙ্গেয় উপত্যকা পরিত্যাগ করে দাক্ষিণাত্যে চলে আসে| এ সূত্র ধরে জৈনরা দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর এই দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়| দিগম্বররা নগ্ন দেহ ধারনে আস্থাশীল ছিলেন| শ্বেতাম্বররা শ্বেত বস্ত্র পরিধান করতেন|
তথ্যসূত্র
- সুনীল চট্টোপাধ্যায় "প্রাচীন ভারতের ইতিহাস" (প্রথম খন্ড)
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India"
সম্পর্কিত বিষয়
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................