মুঘল বা মোগল সম্রাটরা সিংহ ও বাঘ শিকার করতেন, এর মাধ্যমে তাদের রাজকীয় পরিচয় পাওয়া যায়| সাধারণত আকবরের সময়কাল থেকে শিকারের কথা জানা যায়| বাবরনামাতে মুঘলদের বিভিন্ন পশু শিকারের কথা জানা যায়|
শাহাজান ও ওরঙ্গজেব এর সময়কালে প্রাণী শিকার বিষয়ক তথ্য পাওয়া যায়| শিকার বিষয়ে লিখতে গেলে বাবরনামা ছাড়াও মুঘল চিত্র ও বিভিন্ন পর্যটকের বিবরণ থেকে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়|
তবে হুমায়ুনের সময় থেকে miniature চিত্র চালু হয় এবং তিনি চিত্রকারদের পারস্য থেকে নিয়ে এনেছিলেন| সেই সময় শিয়ালকোট, লাহোর, দৌলতাবাদ থেকে পেপার আনা হতো এবং এগুলিতে ছবি আঁকা হতো| আকবরের সময় চিত্রকারখানা তৈরি হয়| আকবরের সময়কালে শিকারের উল্লেখ পাওয়া যায়, কিন্তু বাবরের সময় সেরকম কিছু তথ্য পাওয়া যায় না|
Thomas roe বলেছেন যে, "সেই সময় যখন তারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতেন, তখন পথে জঙ্গল দেখতে পেলে সেখানে ক্যাম্প করে সেখান থেকে শিকার করতেন"|
আগ্রার পাশে রাজস্থান, পাঞ্জাব, জয়পুর, ভাটিণ্ডা, যোধপুর প্রভৃতি জায়গায় সিংহ থাকত এবং মুঘল শাসকরা শিকার করতে যেতেন এবং এসব জায়গায়গুলি ছিল সিংহের জন্য বিখ্যাত| Qamargha, method of hunting, shakhbandh ছিল এক ধরনের শিকার পদ্ধতি| সম্রাট যখন শিকারে যেতেন, তখন সৈন্যরা তার সঙ্গে যেত এবং সম্রাটের অনুমতি ছাড়া কেউই শিকার করতে পারত না|
বার্নিয়ার লিখেছেন, "মোগল সম্রাট ও যুবরাজ ছাড়া কেউই এটি করতে পারত না এবং তারা সিংহ শিকার করতে যেতেন ঘোড়ার পিঠে চড়ে"|
আকবর যে শিকারের যেতেন, তার সমস্ত বিষয়কে নথিবদ্ধ করে রাখতেন| জাহাঙ্গীরও আকবরের মত হিসাব রাখতেন, তিনি রেকর্ড করেছেন 39 বছরে কতগুলি পাখি ও পশু শিকার করেছেন| তার রেকর্ড অনুযায়ী মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর 17167 টি পাখি এবং 86 টি সিংহ শিকার করেছেন|
জয়পুরের মিউজিয়ামে একটি চিত্র পাওয়া যায়, যেখানে সিংহ যখন জল পান করছে সেই সময় জাহাঙ্গীর তাকে হত্যা করেন| বার্নিয়ার বলেছেন যে, "শিকারের পর সিংহের কত ওজন, কত লম্বা, চামড়া কত ভাল, দাঁত কত লম্বা এগুলি রাজা পরীক্ষা করতেন| এইভাবে সিংহকে শিকার করে এনে পরীক্ষা করা মুঘলদের একটি প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছিল"| পার্শিয়ান ভাষাতে সিংহকে বলা হতো shir এবং উর্দু ভাষাতে Sher মানে বুঝাতো Tiger.
আকবরনামাতে দুটি ঘটনার কথা উল্লেখ রয়েছে| একটি ঘটনা হলো, আকবর 1562 খ্রিস্টাব্দে সাতটি সিংহের সম্মুখীন হয়েছিলেন মথুরাতে| সাতটি মধ্যে পাঁচটিকে তীর দিয়ে হত্যা করেন এবং একটিকে জ্যান্ত এবং অন্যটিকে সভাসদদের সাহায্যে ধরেন| কিভাবে ধরা হয়েছে তা বিশদ বর্ণনা আকবরনামাতে পাওয়া যায়নি|
আরেকটি ঘটনা হলো, আকবর রাজস্থানের অজমের থেকে আলোয়ায় যাবার পথে হঠাৎ করে সামনে সিংহ বেরি এসেছিল এবং তৎক্ষনাত সেটাকে শিকার করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে আরেকটি সিংহ এসে পড়ায় তাকে তীর দিয়ে আঘাত করেন| সাধারনত মুঘল সম্রাটরা শিকারের মাধ্যমে তারা নিজেদের শৌর্যশালী প্রকাশ করত|
জাহাঙ্গীরের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, শিকার তার কাছে ছিল দ্বিতীয় বাড়ির মত এবং শিকারের তিনি খুব আগ্রহী থাকতেন| উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ সম্পর্কেও তার আগ্রহ ছিল যথেষ্ট| মুঘল সম্রাটরা অনেক সময় পায়ে হেঁটে ধারালো অস্ত্র নিয়ে রাত্রিবেলা অন্ধকারে শিকারের যেতেন| বার্নিয়ার বিবরণ থেকে জানা যায় যে, শিকারের জন্য যে সমস্ত পশুকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হতো এবং তাদের আফিম খাওয়ানো হতো, এরফলে বেশি দূরে যেতে পারত না|
শাহজাহানেরও শিকারের প্রতি আগ্রহ ছিল যথেষ্ট| সাধারনত তিনি হাতির পিঠে চেপে শিকারের যেতেন|
বার্নিয়ার উল্লেখ করেছেন যে, একবার আওরঙ্গজেব বন্দুকের লক্ষ্য থেকে একটি সিংহ পালিয়ে যায় এবং সেই সিংহকে ধরার জন্য তিনি সকল সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করেন| এই সিংহটির শেষ পর্যন্ত কি হয়েছিল তা বার্নিয়ার উল্লেখ করেনি|
আলোচনা শেষে বলা যায় যে, মুঘল সম্রাটদের কাছে সিংহ শিকার ছিল একটি রাজকীয় খেলা, তাদের অনুমতি ছাড়া সিংহ শিকার নিষিদ্ধ ছিল| মুঘল শাসকদের বংশধররাও অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত শিকার করেছেন এবং পরবর্তী মুঘল সম্রাট উত্তরাধিকারীরা ছিলেন তাদের পূর্বপুরুষদের ছায়ার মত|
শাহাজান ও ওরঙ্গজেব এর সময়কালে প্রাণী শিকার বিষয়ক তথ্য পাওয়া যায়| শিকার বিষয়ে লিখতে গেলে বাবরনামা ছাড়াও মুঘল চিত্র ও বিভিন্ন পর্যটকের বিবরণ থেকে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়|
তবে হুমায়ুনের সময় থেকে miniature চিত্র চালু হয় এবং তিনি চিত্রকারদের পারস্য থেকে নিয়ে এনেছিলেন| সেই সময় শিয়ালকোট, লাহোর, দৌলতাবাদ থেকে পেপার আনা হতো এবং এগুলিতে ছবি আঁকা হতো| আকবরের সময় চিত্রকারখানা তৈরি হয়| আকবরের সময়কালে শিকারের উল্লেখ পাওয়া যায়, কিন্তু বাবরের সময় সেরকম কিছু তথ্য পাওয়া যায় না|
Thomas roe বলেছেন যে, "সেই সময় যখন তারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতেন, তখন পথে জঙ্গল দেখতে পেলে সেখানে ক্যাম্প করে সেখান থেকে শিকার করতেন"|
আগ্রার পাশে রাজস্থান, পাঞ্জাব, জয়পুর, ভাটিণ্ডা, যোধপুর প্রভৃতি জায়গায় সিংহ থাকত এবং মুঘল শাসকরা শিকার করতে যেতেন এবং এসব জায়গায়গুলি ছিল সিংহের জন্য বিখ্যাত| Qamargha, method of hunting, shakhbandh ছিল এক ধরনের শিকার পদ্ধতি| সম্রাট যখন শিকারে যেতেন, তখন সৈন্যরা তার সঙ্গে যেত এবং সম্রাটের অনুমতি ছাড়া কেউই শিকার করতে পারত না|
বার্নিয়ার লিখেছেন, "মোগল সম্রাট ও যুবরাজ ছাড়া কেউই এটি করতে পারত না এবং তারা সিংহ শিকার করতে যেতেন ঘোড়ার পিঠে চড়ে"|
আকবর যে শিকারের যেতেন, তার সমস্ত বিষয়কে নথিবদ্ধ করে রাখতেন| জাহাঙ্গীরও আকবরের মত হিসাব রাখতেন, তিনি রেকর্ড করেছেন 39 বছরে কতগুলি পাখি ও পশু শিকার করেছেন| তার রেকর্ড অনুযায়ী মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর 17167 টি পাখি এবং 86 টি সিংহ শিকার করেছেন|
জয়পুরের মিউজিয়ামে একটি চিত্র পাওয়া যায়, যেখানে সিংহ যখন জল পান করছে সেই সময় জাহাঙ্গীর তাকে হত্যা করেন| বার্নিয়ার বলেছেন যে, "শিকারের পর সিংহের কত ওজন, কত লম্বা, চামড়া কত ভাল, দাঁত কত লম্বা এগুলি রাজা পরীক্ষা করতেন| এইভাবে সিংহকে শিকার করে এনে পরীক্ষা করা মুঘলদের একটি প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছিল"| পার্শিয়ান ভাষাতে সিংহকে বলা হতো shir এবং উর্দু ভাষাতে Sher মানে বুঝাতো Tiger.
মুঘল সাম্রাজ্যের মানচিত্র
Author- Santosh.mbahrm
Date- 26 September 2015
|
আকবরনামাতে দুটি ঘটনার কথা উল্লেখ রয়েছে| একটি ঘটনা হলো, আকবর 1562 খ্রিস্টাব্দে সাতটি সিংহের সম্মুখীন হয়েছিলেন মথুরাতে| সাতটি মধ্যে পাঁচটিকে তীর দিয়ে হত্যা করেন এবং একটিকে জ্যান্ত এবং অন্যটিকে সভাসদদের সাহায্যে ধরেন| কিভাবে ধরা হয়েছে তা বিশদ বর্ণনা আকবরনামাতে পাওয়া যায়নি|
আরেকটি ঘটনা হলো, আকবর রাজস্থানের অজমের থেকে আলোয়ায় যাবার পথে হঠাৎ করে সামনে সিংহ বেরি এসেছিল এবং তৎক্ষনাত সেটাকে শিকার করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে আরেকটি সিংহ এসে পড়ায় তাকে তীর দিয়ে আঘাত করেন| সাধারনত মুঘল সম্রাটরা শিকারের মাধ্যমে তারা নিজেদের শৌর্যশালী প্রকাশ করত|
জাহাঙ্গীরের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, শিকার তার কাছে ছিল দ্বিতীয় বাড়ির মত এবং শিকারের তিনি খুব আগ্রহী থাকতেন| উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ সম্পর্কেও তার আগ্রহ ছিল যথেষ্ট| মুঘল সম্রাটরা অনেক সময় পায়ে হেঁটে ধারালো অস্ত্র নিয়ে রাত্রিবেলা অন্ধকারে শিকারের যেতেন| বার্নিয়ার বিবরণ থেকে জানা যায় যে, শিকারের জন্য যে সমস্ত পশুকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হতো এবং তাদের আফিম খাওয়ানো হতো, এরফলে বেশি দূরে যেতে পারত না|
শাহজাহানেরও শিকারের প্রতি আগ্রহ ছিল যথেষ্ট| সাধারনত তিনি হাতির পিঠে চেপে শিকারের যেতেন|
বার্নিয়ার উল্লেখ করেছেন যে, একবার আওরঙ্গজেব বন্দুকের লক্ষ্য থেকে একটি সিংহ পালিয়ে যায় এবং সেই সিংহকে ধরার জন্য তিনি সকল সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করেন| এই সিংহটির শেষ পর্যন্ত কি হয়েছিল তা বার্নিয়ার উল্লেখ করেনি|
আলোচনা শেষে বলা যায় যে, মুঘল সম্রাটদের কাছে সিংহ শিকার ছিল একটি রাজকীয় খেলা, তাদের অনুমতি ছাড়া সিংহ শিকার নিষিদ্ধ ছিল| মুঘল শাসকদের বংশধররাও অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত শিকার করেছেন এবং পরবর্তী মুঘল সম্রাট উত্তরাধিকারীরা ছিলেন তাদের পূর্বপুরুষদের ছায়ার মত|
তথ্যসূত্র
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "অষ্টাদশ শতকের মুঘল সংকট ও আধুনিক ইতিহাস চিন্তা"
- অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস"
- Shireen Moosvi, "People, Taxation and Trade in Mughal India".
সম্পর্কিত বিষয়
- মুঘল মুদ্রা ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
- মুঘল চিত্রকলা (আরো পড়ুন)
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
- মুঘল ভারতের ব্যাংকার এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায় (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................