দক্ষিণ আফ্রিকা ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পায় 1934 সালে| ইংরেজরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে স্বাধীন দেশের মর্যাদা দিলেও তারা সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেই|
সেই সময় শ্বেতাঙ্গদের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার 17 শতাংশ| সর্বাপেক্ষা বৃহৎ গোষ্ঠী ছিল বান্টু, এরা ছিল মোট জনসংখ্যার 60 শতাংশ| জনসংখ্যার বাকি অংশ ছিল শ্বেতকায় ও কৃষ্ণকায়দের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা জনগোষ্ঠী এবং নাটান প্রদেশে বসবাসকারী ভারতীয়| দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতকায়রা ছিল Apartheid বা আপার্টহাইট বা বর্ণবাদী নীতির অন্ধ সমর্থক|
মালন এর কর্মসূচিতে শ্বেতকায়দের অভিভাবকত্বে "আপার্টহাইট" বা "বর্ণবাদী নীতি" প্রয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়| বর্ণবাদের ভিত্তিতে অনেক বৈষম্যমূলক আইন প্রণীত হয়, যেমন- population registration act, Group Areas Act প্রভৃতি|
বর্ণবাদ নীতির ভিত্তিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বস্তুত দুটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়| শ্বেতকায়দের জন্য একটি এলাকা এবং কৃষ্ণকায়দের জন্য একটি অন্য এলাকার বাছাই করা হয়েছিল| শ্বেতকায় ও কৃষ্ণকায়দের জন্য পৃথক শিক্ষায়তন, পরিবহন, গির্জা, হোটেল, খেলার মাঠ, চিকিৎসাকেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছিল| এমনকি শ্বেতকায় ও কৃষ্ণকায়দের জন্য স্বতন্ত্র বেতনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল|
আইন, শাসন বিচারের ক্ষেত্রেও পরিচয় জ্ঞাপক একটি পরিচয় পত্র দেওয়া হয়| সরকারি অনুমতি পত্র ছাড়া কোন কৃষ্ণকায় শ্বেতকায়ের এলাকায় যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়| এমনকি শ্বেতকায় ও অশ্বেতকায়দের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ বলে ঘোষিত হয়| কৃষ্ণাঙ্গরা সমস্ত রকম রাজনৈতিক অধিকার হারায় এবং কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিকরা ধর্মঘটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়|
1960 সালে 21 শে র্মাচ শার্পভিলে কৃষ্ণকায়দের প্রতিবাদ আন্দোলনের উপর ভরবের্ড-এর বাহিনীর নৃশংস আক্রমণের ফলে বহু মানুষ নিহত ও আহত হয় এবং এই ঘটনাকে বিশ্ব জনসমাজ তীব্র ধিক্কার জানাই|
যেসব অঞ্চল নিয়ে এই বান্টুস্তান গঠিত হয়, তার আয়তন ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মোট আয়তনের 13 শতাংশ মাত্র| এই অঞ্চলের তিন চতুথাংশ জনসংখ্যাকে জোর করে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়|
জোহানেসবার্গ, প্রিটোরিয়া এবং কেপটাউন অঞ্চলে বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন গড়ে ওঠে| বর্ণবাদী সরকার কঠোর হাতে দমন পীড়ন গ্রেফতার ও গুলি চালনার মাধ্যমে আন্দোলনের তীব্রতা স্তব্ধ করার চেষ্টা চালায়| কিন্তু 1998 সালে সরকার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের ফলে বাধ্য হয়ে কিছু বর্ণবৈষম্যমূলক আইন বাতিল করে|
1990 সালে ফ্রেদেরিক উইলেম ডি ক্লার্ক 27 বছর ধরে কারারুদ্ধ আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দেন এবং population registration act, Group Areas Act প্রভৃতি আইন বাতিল করা হয়| 1993 সালে কৃষ্ণাঙ্গ এবং শ্বেতাঙ্গ 21টি রাজনৈতিক দল বর্ণবাদের অবসান এবং সকলের জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একটি নতুন সংবিধানের প্রতি অঙ্গীকার ঘোষণা করে|
সেই সময় শ্বেতাঙ্গদের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার 17 শতাংশ| সর্বাপেক্ষা বৃহৎ গোষ্ঠী ছিল বান্টু, এরা ছিল মোট জনসংখ্যার 60 শতাংশ| জনসংখ্যার বাকি অংশ ছিল শ্বেতকায় ও কৃষ্ণকায়দের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা জনগোষ্ঠী এবং নাটান প্রদেশে বসবাসকারী ভারতীয়| দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতকায়রা ছিল Apartheid বা আপার্টহাইট বা বর্ণবাদী নীতির অন্ধ সমর্থক|
দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান |
বিভিন্ন বৈষম্যমূলক আইন
1948 সালে নির্বাচনে ডি. এফ. মালন(D. F. Malan) এর নেতৃত্বে "ন্যাশনাল পার্টি" দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়|মালন এর কর্মসূচিতে শ্বেতকায়দের অভিভাবকত্বে "আপার্টহাইট" বা "বর্ণবাদী নীতি" প্রয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়| বর্ণবাদের ভিত্তিতে অনেক বৈষম্যমূলক আইন প্রণীত হয়, যেমন- population registration act, Group Areas Act প্রভৃতি|
শ্বেতকায় ও কৃষ্ণকায়দের জন্য পৃথক পরিষেবা
কৃষ্ণকায় |
আইন, শাসন বিচারের ক্ষেত্রেও পরিচয় জ্ঞাপক একটি পরিচয় পত্র দেওয়া হয়| সরকারি অনুমতি পত্র ছাড়া কোন কৃষ্ণকায় শ্বেতকায়ের এলাকায় যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়| এমনকি শ্বেতকায় ও অশ্বেতকায়দের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ বলে ঘোষিত হয়| কৃষ্ণাঙ্গরা সমস্ত রকম রাজনৈতিক অধিকার হারায় এবং কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিকরা ধর্মঘটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়|
হেনড্রিক ভরবের্ড
বর্ণবাদী বৈষম্যমূলক নীতি পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হেনড্রিক ভরবের্ড 1958 থেকে 1966 সালে সময়কালের মধ্যে আরও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করেন| পূর্বে অশ্বেতকায়দের জন্য যে নামে মাত্র ভোটাধিকার ছিল, তা আরো সংকোচন করা হয়| Apartheid বা বর্ণবাদী নীতি এভাবে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়|1960 সালে 21 শে র্মাচ শার্পভিলে কৃষ্ণকায়দের প্রতিবাদ আন্দোলনের উপর ভরবের্ড-এর বাহিনীর নৃশংস আক্রমণের ফলে বহু মানুষ নিহত ও আহত হয় এবং এই ঘটনাকে বিশ্ব জনসমাজ তীব্র ধিক্কার জানাই|
বি জে ভরস্টার
কিন্তু এই ঘটনাকে কর্ণপাত না করে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বি জে ভরস্টার কৃষ্ণকায়দের জন্য পৃথক উপজাতীয় অঞ্চল বা বান্টুস্তান গঠনের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেন|যেসব অঞ্চল নিয়ে এই বান্টুস্তান গঠিত হয়, তার আয়তন ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মোট আয়তনের 13 শতাংশ মাত্র| এই অঞ্চলের তিন চতুথাংশ জনসংখ্যাকে জোর করে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়|
বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন
1970 এবং 1974 সালের নির্বাচনে আবার ন্যাশনাল পার্টি জয়ী হয়| এরফলে বর্ণবাদী নীতি আগের মতই অব্যাহত থাকে| কিন্তু সত্তরের দশকে অ্যাঙ্গোলা মোজাম্বিককে স্বাধীনতা আন্দোলনের সাফল্যের সূচনা দক্ষিণ আফ্রিকার বুকে পরিবর্তনে ঢেউ তুলে|জোহানেসবার্গ, প্রিটোরিয়া এবং কেপটাউন অঞ্চলে বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন গড়ে ওঠে| বর্ণবাদী সরকার কঠোর হাতে দমন পীড়ন গ্রেফতার ও গুলি চালনার মাধ্যমে আন্দোলনের তীব্রতা স্তব্ধ করার চেষ্টা চালায়| কিন্তু 1998 সালে সরকার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের ফলে বাধ্য হয়ে কিছু বর্ণবৈষম্যমূলক আইন বাতিল করে|
1990 সালে ফ্রেদেরিক উইলেম ডি ক্লার্ক 27 বছর ধরে কারারুদ্ধ আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দেন এবং population registration act, Group Areas Act প্রভৃতি আইন বাতিল করা হয়| 1993 সালে কৃষ্ণাঙ্গ এবং শ্বেতাঙ্গ 21টি রাজনৈতিক দল বর্ণবাদের অবসান এবং সকলের জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একটি নতুন সংবিধানের প্রতি অঙ্গীকার ঘোষণা করে|
উপসংহার
1994 সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম বর্ণবাদহীন নির্বাচনে "আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস" বিপুল সংখ্যাধিক্যে বিজয়ী হয় এবং জাতীয় সভা কর্তৃক নেলসন ম্যান্ডেলা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন| তিন শতাব্দীর বেশি সময় ধরে শ্বেতাঙ্গ শাসকদের নির্মম উৎপীড়ন ও নির্যাতনের কালরাত্রির দুঃস্বপ্ন পেরিয়ে জন্ম হয় এক নতুন জাতির|তথ্যসূত্র
- Michael Morris, "Apartheid: The History of Apartheid: Race vs. Reason - South Africa from 1948 - 1994".
- Oliver S. Lawrence, "Racism: Stories from South Africa".
- Nelson Mandela, "Long Walk To Freedom".
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|