দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার উপনিবেশগুলিতে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের এক বিশেষ পর্যায় দেখা গিয়েছিল| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী দুই দশকের মধ্যে একের পর এক উপনিবেশগুলি ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল| এই প্রবণতাকেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড ম্যাকমিলান "wind of changing" বলে উল্লেখ করেছেন| উপনিবেশিকবাদের দ্রুত অবসানের কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণ ছিল|
সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির মধ্যে তীব্র বিরোধ উপনিবেশবাদ এর অবসানে বিশেষ সহায়ক ছিল| ব্রিটেন, ফ্রান্স, পর্তুগাল, বেলজিয়াম, ইত্যাদি রাষ্ট্রগুলি নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার জন্য একে অপরের উপনিবেশের জন্য মুক্তি আন্দোলনকে উৎসাহিত ও সমর্থন করে বরং নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছিল|
ব্রিটেনের মত পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে উদারনৈতিক শিক্ষা-চেতনার দ্রুত প্রসার মানুষের মনে উপনিবেশ বিরোধীতার জন্ম দেয়| উপনিবেশ বাসীর একটা অংশ যারা ব্রিটেনের মতো উন্নত দেশ গিয়ে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তিবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করেছিল এবং এরা পশ্চিমী স্বাধীনতা সাম্য, স্বতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিল| স্বদেশে ফিরে এই শিক্ষিত জনতা সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং উপনিবেশবাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল| এভাবে আধুনিক শিক্ষা ও উদারতান্ত্রিক নীতি-আদর্শ উপনিবেশগুলিতে স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিল|
ব্রিটেনের মত পশ্চিম ইউরোপের অনেক দেশের শীর্ষ স্থানীয় বুদ্ধিজীবীরা অনেক ক্ষেত্রে উপনিবেশবাদের চরম বিরোধী ছিলেন| এরফলে পশ্চিমী শক্তিগুলির ওপর চাপ তৈরি হয়েছিল| উপনিবেশগুলিতে স্বাধীনতা দানের বিষয়ে তারা জনমতকে প্রভাবিত করেছিল ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে|
জাতীয়তাবাদ এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের তত্ত্ব উপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদের অবসানের বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেক আগে থেকে আধুনিক জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন উপনিবেশ ও অধীনস্থ দেশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, ফলে দেশে জাতীয়তাবাদী সংগঠন ও রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে| এগুলি নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জাতীয় আন্দোলনের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় স্বাধীনতা অর্জন| প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বিশ্ব রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছিল|
উপনিবেশিক কারণের পিছনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভূমিকা ছিল প্রশ্নাতীত| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মিত্রশক্তি জোট তাদের অধীনে উপনিবেশগুলির কাছে যুদ্ধের শেষে তাদের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক স্বায়ত্ত শাসন প্রদান করবে| এইজন্য যুদ্ধ শেষে উপনিবেশ বাসিরা স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার লাভের জোরদার দাবি তুলেছিল| এছাড়া যুদ্ধে মিত্রশক্তি জোট জয়লাভ করলেও ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মত বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল| ফলে বিধ্বস্ত পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলির কাছে আর উপনিবেশগুলির বোঝা বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না| এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েছিল উপনিবেশগুলিতে স্বাধীনতা দান করতে|
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর দুনিয়াতে মহাশক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবসান ও সাবেকী উপনিবেশিক শক্তিগুলির অবক্ষয় উপনিবেশবাদের অবসানের বিশেষ সাহায্য করেছিল| Super power মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে পশ্চিমী উপনিবেশ রাষ্ট্রগুলির ওপর চাপ দিয়েছিল তাদের উপনিবেশগুলিকে স্বাধীনতা প্রদানের জন্য| এক্ষেত্রে আমেরিকার উদ্দেশ্য ছিল-
জাতীয়তাবাদ এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের তত্ত্ব উপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদের অবসানের বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেক আগে থেকে আধুনিক জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন উপনিবেশ ও অধীনস্থ দেশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, ফলে দেশে জাতীয়তাবাদী সংগঠন ও রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে| এগুলি নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জাতীয় আন্দোলনের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় স্বাধীনতা অর্জন| প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বিশ্ব রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছিল|
উপনিবেশিক কারণের পিছনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভূমিকা ছিল প্রশ্নাতীত| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মিত্রশক্তি জোট তাদের অধীনে উপনিবেশগুলির কাছে যুদ্ধের শেষে তাদের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক স্বায়ত্ত শাসন প্রদান করবে| এইজন্য যুদ্ধ শেষে উপনিবেশ বাসিরা স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার লাভের জোরদার দাবি তুলেছিল| এছাড়া যুদ্ধে মিত্রশক্তি জোট জয়লাভ করলেও ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মত বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল| ফলে বিধ্বস্ত পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলির কাছে আর উপনিবেশগুলির বোঝা বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না| এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েছিল উপনিবেশগুলিতে স্বাধীনতা দান করতে|
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর দুনিয়াতে মহাশক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবসান ও সাবেকী উপনিবেশিক শক্তিগুলির অবক্ষয় উপনিবেশবাদের অবসানের বিশেষ সাহায্য করেছিল| Super power মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে পশ্চিমী উপনিবেশ রাষ্ট্রগুলির ওপর চাপ দিয়েছিল তাদের উপনিবেশগুলিকে স্বাধীনতা প্রদানের জন্য| এক্ষেত্রে আমেরিকার উদ্দেশ্য ছিল-
- আমেরিকা চাইতেন ব্রিটেন-ফ্রান্সের মত ইউরোপীয় দেশগুলি নতুন করে তাদের উপনিবেশগুলির সাহায্য নিয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠুক|
- তার দাবি ছিল উপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলো তাদের যুদ্ধকালীন প্রতিশ্রুতি অর্থাৎ স্বাধীনতা প্রদান করে বিশ্বে তারা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করুক| আমেরিকা আশা করেছিল, এরফলে যে মুক্ত দুনিয়া গড়ে উঠবে, তা তার(আমেরিকার) ব্যবসা-বাণিজ্যের সহায়ক হবে|
- উপনিবেশিক রাষ্ট্র অবসানে যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে আমেরিকা তা পূরণ করতে চাইবে| আমেরিকা বলেছিল, দ্বিমেরু বিশ্বে ক্রমবর্ধমান বলয়ের বিপরীত দিকে তার নিজের বলয় প্রসারিত হবে|
দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি জোট সমদূরত্বে থেকে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন উপনিবেশবাদ বিরোধী সংগ্রামে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে এবং স্বাধীনতা লড়াইয়ের পরাধীন জাতিগুলিতে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে|
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ তার কর্মসূচি হিসাবে উপনিবেশিক শাসনের অবসানে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছিল| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে জাগ্রত জনমতের চাপের কাছে নত স্বীকার করে উপনিবেশিক দেশগুলি পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল| এরফলে আত্মপ্রকাশ হয়েছিল স্বাধীন রাষ্ট্রের|
ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদের অবসান এর গুরুত্ব
সাম্রাজ্যবাদের অবসানের ফলে অসংখ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশের ফলে বিশ্ব রাজনীতিতে দিগন্ত প্রসারিত হয়েছিল| নতুন ধরনের সম্পর্ক ও আঞ্চলিক সমস্যাগুলি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্থান করে নিয়েছিল| আফ্রিকা ও এশিয়ার স্বাধীন রাষ্ট্রগুলির উত্থানের সুবাদে সাম্রাজ্যবাদ জাতির বৈধতা হয়ে পড়েছিল| সেই সঙ্গে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বর্ণবৈষম্যবাদ পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল|
সাম্রাজ্যবাদের অবসানে সদ্য স্বাধীন দেশগুলোতে যে আপাতত শক্তির শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, তা পূরণ করতে দুই মহাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন তৎপর হয়েছিল| ফলে এই নতুন রাষ্ট্রগুলির আদর্শগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঠান্ডা লড়াই এর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল|
এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার সদ্য স্বাধীন দেশগুলি নিয়ে তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের উত্থান, জাতিপুঞ্জের পরিধি কাজকর্মে ব্যক্তিত্ব ও গুরুত্ব বিশেষভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল|
নতুন রাষ্ট্রগুলির প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা নতুন কেন্দ্রের জন্ম দিয়েছিল| সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক পতিতা ও বিরোধের জন্ম দিয়েছিল| প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বিরোধী জন্ম দিয়েছিল| ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক আঞ্চলিক সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছিল| এরমধ্যে কোরীয় যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, ভারত-চীন যুদ্ধ, আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য| এইসব সংঘাত সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল এবং জাতিপুঞ্জকে সদা ব্যস্ত রেখেছিল| প্রতিটি সংঘর্ষে বৃহৎ শক্তিগুলি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে|
.......................................
তথ্যসূত্র
- Pavneet Singh, "International Relations".
- Ghosh Peu, "International Relations".
সম্পর্কিত বিষয়
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মানির বিভাজন তথা বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব (আরো পড়ুন)
- ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থানের কারণ (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|