ইউরোপের ষোড়শ শতকে পোপতন্ত্র ও গির্জার স্বৈরাচার দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু হয় তাকে "রিফর্মেশন"(Reformation) বা আক্ষরিক অর্থে "ধর্ম সংস্কার আন্দোলন" বলা হয়, কিন্তু প্রকৃত অর্থে একে "ধর্ম বিপ্লব" বলাই সঙ্গত|
প্রোটেস্ট্যান্ট(Protestant) ধর্মমত বা লুথারবাদের প্রসারের ফলে জার্মানি ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলির জনগণ পোপ তথা রোমের গির্জার প্রতি আনুগত্য অস্বীকার করেন| সুজারল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে ক্যালভিনবাদ জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং ইংল্যান্ডে রাষ্ট্রিয় গির্জা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পোপকে অস্বীকার করে| লুথারবাদ ও ক্যালভিনবাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এক নতুন প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মমতের সৃষ্টি করে|
গির্জা |
ইউরোপের ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন মার্টিন লুথার(1483-1546 খ্রিঃ) এবং তিনি উত্তর জার্মানির এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন| তাঁর চরিত্র ও চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে এই আন্দোলন গভীরভাবে সম্পৃক্ত ছিল এবং ধর্মভাবনা থেকে Reformation এর সূচনা হয়েছিল| পরে জার্মানির রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গী হয়ে এক বিরাট আন্দোলনের রূপ নিয়েছিল|
1510 খ্রিস্টাব্দে মার্টিন লুথার ক্যাথলিক ধর্মের কেন্দ্রস্থল রোম পরিদর্শনে গিয়ে ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের দুর্নীতি দেখে তিনি মর্মাহত হন এবং এর দুর্নীতি থেকে খ্রিস্ট ধর্মকে রক্ষা করার জন্য তিনি সংকল্প গ্রহণ করেন|
মধ্যযুগে খ্রিস্টানদের পাপ মোচনের জন্য দুরকমের বিধি প্রচলিত ছিল- প্রথমত- অনুতাপ এবং দ্বিতীয়ত- কোনরকম দন্ড স্বীকার করে প্রায়শ্চিত্ত করা| পাপের গুরুত্ব অনুসারে গির্জা অর্থ দণ্ডের পরিমাণ স্থির করে দিত| অর্থের বিনিময় গির্জার যাজকেরা "Indulgence" বা "মার্জনা পত্র" বিক্রি করতেন এবং এই অর্থ পোপ ও যাজকেরা ভোগ বিলাসে ব্যায়িত করত|
পাশাপাশি লুথার "95 থিসিস" বা প্রশ্ন রচনা করে পোপকে জবাব দেবার জন্য দাবি জানান| এটি ছিল পোপের স্বর্গীয় ক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ| এর ফলে সমগ্র জার্মানির শিক্ষিত শ্রেণী লুথারের থিসিসের প্রভাবিত হন এবং জার্মান জনমত আলোড়িত হয়ে উঠে| এরপর লুথার পোপকে উদ্দেশ্য করে "প্রস্তাবসমূহ"(Resolution) নামে একটি পুস্তিকা রচনা করেন| 1519 খ্রিস্টাব্দে তাঁকে রোমান চার্চ থেকে বহিষ্কার করা হলে, তিনি সর্বজন সম্মুখে সেই বহিষ্কার সংক্রান্ত পোপের আদেশ ও তাঁর অনুলিপি আগুনে নিক্ষেপ করতে দ্বিধাবোধ করেননি|
এরপর মার্টিন লুথার তিনটি পুস্তিকা প্রকাশ করে পোপের ক্ষমতাকে আক্রমণ করে-
Elton জানিয়েছেন যে, এই তিনটি রচনাকে কেন্দ্র করে লুথারীয় দর্শন রূপ পরিগ্রহ করেছিল| তাঁর ঐতিহাসিক ভূমিকা এগুলির উপরই নির্ভরশীল ছিল| প্রথম পুস্তিকাতে বলেন- পোপ, ধর্মযাজক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে কোন তারতম্য নেই| ধর্মশাস্ত্রে যা আছে, জনগণ তাকেই মানবে, পোপের আদেশ মানে না| লুথার দাবি করেন, শীঘ্রই একটি ধর্মসভা ডেকে গির্জা ও পোপতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত এবং জার্মানির অর্থ কোন একটি বিদেশী গির্জা অর্থাৎ পাপের জন্য ব্যায়িত হবে কিনা তা বিচার করা উচিত|
লুথার এর প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে জার্মানিতে জাতীয় জাগরণ ঘটে| তাঁর "ব্যাবিলনীয় বন্দীত্ব"(babylonish captivity) শীর্ষক পুস্তিকার মাধ্যমে লুথার ঘোষণা করেন যে, "ইহুদী জাতি যেমন দীর্ঘকাল পরে ব্যাবিলনের বন্দীত্ব থেকে মুক্ত হয়েছে, জার্মান জাতিও শীঘ্রই রোমান পোপের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হবে"| তিনি বলেন, ক্যাথলিক গির্জা বিবাহ প্রথাকে ঈশ্বরের আদেশ বলে যা প্রচার করে তা ঠিক নয়, এমনকি খিষ্টান ও অ-খ্রিস্টানদের বিবাহকে তিনি পবিত্র বলে ঘোষণা করেন|
লুথার এর অনুগামীরা শুধু পোপের আধিপত্যকে অমান্য করে থেকে থাকেননি| পোপগণ সেন্ট পিটার এর বংশধর এই তত্ত্বেও তারা বিশ্বাসী ছিলেন না| বহু জার্মান ক্যাথলিক ধর্মমত ত্যাগ করে লুথার প্রবর্তিত ধর্ম গ্রহণ করেন| 1929 খ্রিস্টাব্দে পোপ লুথারবাদ অবৈধ ঘোষণা করলে সমগ্র জার্মানি এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে| এই সময় থেকে লুথারের অনুগামীরা "প্রোটেস্ট্যান্ট" নামে পরিচিত হন এবং জার্মানির এই আন্দোলনে "রিফর্মেশন"(Reformation) নামে অভিহিত হয়|
ওয়ার্মস এর ঘোষণাপত্র প্রচলিত হওয়ার পর জার্মানিতে পোপ বিরোধী আন্দোলন আরো প্রসারিত এবং আরো অনেক সামন্ত প্রভূ লুথারের পক্ষ অবলম্বন করলে জার্মানিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়| ছাত্র, কৃষক ও কারিগর শ্রেনী ক্যাথলিক গির্জার ওপর আক্রমণ চালায়| জার্মানির দক্ষিণ-পূর্ব আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয়| দীর্ঘকালব্যাপী খাদ্যের অভাব, কৃষির অনগ্রসরতার এবং সামন্তদের শোষণ কৃষকদের অবস্থা দুর্বিষহ করে তুলেছিল|
এই পরিস্থিতিতে মার্টিন লুথারের সংস্কার আন্দোলন কৃষকদের মনে আশার আলো সঞ্চার করে ছিল| "ঈশ্বরের কাছে সকল মানুষ সমান"- লুথার এই বাণী প্রচার করলে কৃষকেরা মনে করেন যে, ধর্ম সংস্কারের উদ্দেশ্য হল সামন্তদের অর্থনৈতিক দাসত্ব থেকে কৃষকদের মুক্ত করা, কিন্তু লুথার প্রথম থেকেই সামন্তপ্রভুদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন|
জার্মানিতে যখন গৃহযুদ্ধ শুরু হতে থাকে, তখন লুথার ধর্মমতকে বিশেষ রূপ দান করেন| তিনি একথা বলেন যে, প্রকৃত ধর্ম রক্ষার জন্য জনসাধারণ রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অধিকার আছে| তবে যেক্ষেত্রে রাজা ধর্ম অনুযায়ী কাজ করে, সেক্ষেত্রে লুথার প্রতিরোধের অধিকার স্বীকার করেননি|
পরিশেষে জার্মানিতে ধর্ম যুদ্ধ চলাকালীন 1546 খ্রিস্টাব্দে মার্টিন লুথারের মৃত্যু হয়|
পোপ তথা ক্যাথলিক গির্জার আধিপত্যের বিরুদ্ধে লুথারের প্রতিবাদ আন্দোলন ইউরোপের অন্যান্য দেশে প্রভাব ফেলে| প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মবাদ জার্মানি থেকে উত্তরে নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন, পশ্চিমে ফ্রান্স, ইতালি প্রভৃতি দেশে ছড়িয়ে পড়ে| লুথারের নতুন ধর্মমত ধর্মশাস্ত্র চর্চার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়|
সার্বজনীন শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং ঈশ্বর প্রেমে অবিচল থেকে সব প্রতিবেশীর সেবা করার কথা বলা হয়| প্রকৃতপক্ষে রেনেসাঁ এবং মার্টিন লুথারের নেতৃত্বে "রিফর্মেশন" ইউরোপে নতুন যুগের সূচনা করে| মধ্যযুগ থেকে পোপতন্ত্র যেভাবে ব্যক্তির অধিকার অবদমিত করেছিল, তা থেকে ইউরোপ মুক্তি লাভ করে| ধর্ম বিপ্লবের ফলে দুর্নীতি মুক্ত হয়ে গির্জা পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র নীতি গ্রহণ করতে হয় এবং ক্যাথলিক গির্জার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা জন্মায় এবং ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তার ব্যাপক প্রসার ঘটে|
.......................................
1510 খ্রিস্টাব্দে মার্টিন লুথার ক্যাথলিক ধর্মের কেন্দ্রস্থল রোম পরিদর্শনে গিয়ে ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের দুর্নীতি দেখে তিনি মর্মাহত হন এবং এর দুর্নীতি থেকে খ্রিস্ট ধর্মকে রক্ষা করার জন্য তিনি সংকল্প গ্রহণ করেন|
মধ্যযুগে খ্রিস্টানদের পাপ মোচনের জন্য দুরকমের বিধি প্রচলিত ছিল- প্রথমত- অনুতাপ এবং দ্বিতীয়ত- কোনরকম দন্ড স্বীকার করে প্রায়শ্চিত্ত করা| পাপের গুরুত্ব অনুসারে গির্জা অর্থ দণ্ডের পরিমাণ স্থির করে দিত| অর্থের বিনিময় গির্জার যাজকেরা "Indulgence" বা "মার্জনা পত্র" বিক্রি করতেন এবং এই অর্থ পোপ ও যাজকেরা ভোগ বিলাসে ব্যায়িত করত|
মার্টিন লুথারের মতবাদ
1617 খ্রিস্টাব্দে পোপের প্রতিনিধি জার্মানিতে অর্থ সংগ্রহের জন্য "মার্জনা পত্র" বিক্রি করতে গেলে, মার্টিন লুথার এক "manifesto" প্রচার করে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেন| সেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন যে, পাপ মোচন বা স্বস্তি দানের কোন অধিকার নেই চার্চের| প্রকৃত অনুতাপ খ্রিস্টানকে প্রভু অবশ্যই ক্ষমা করবেন| এই জন্য মার্জনা পত্র ক্রয় করে চার্চকে অর্থ প্রদানের কোনো প্রয়োজন নেই, অতএব এই প্রথা নিরর্থক নিপীড়নমূলক এবং অর্থ লুণ্ঠনকারী|পাশাপাশি লুথার "95 থিসিস" বা প্রশ্ন রচনা করে পোপকে জবাব দেবার জন্য দাবি জানান| এটি ছিল পোপের স্বর্গীয় ক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ| এর ফলে সমগ্র জার্মানির শিক্ষিত শ্রেণী লুথারের থিসিসের প্রভাবিত হন এবং জার্মান জনমত আলোড়িত হয়ে উঠে| এরপর লুথার পোপকে উদ্দেশ্য করে "প্রস্তাবসমূহ"(Resolution) নামে একটি পুস্তিকা রচনা করেন| 1519 খ্রিস্টাব্দে তাঁকে রোমান চার্চ থেকে বহিষ্কার করা হলে, তিনি সর্বজন সম্মুখে সেই বহিষ্কার সংক্রান্ত পোপের আদেশ ও তাঁর অনুলিপি আগুনে নিক্ষেপ করতে দ্বিধাবোধ করেননি|
এরপর মার্টিন লুথার তিনটি পুস্তিকা প্রকাশ করে পোপের ক্ষমতাকে আক্রমণ করে-
- An appeal to the christian nobility of the german nation.
- The babylonish captivity of the church.
- The liberty of a christian man.
পোপ |
Elton জানিয়েছেন যে, এই তিনটি রচনাকে কেন্দ্র করে লুথারীয় দর্শন রূপ পরিগ্রহ করেছিল| তাঁর ঐতিহাসিক ভূমিকা এগুলির উপরই নির্ভরশীল ছিল| প্রথম পুস্তিকাতে বলেন- পোপ, ধর্মযাজক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে কোন তারতম্য নেই| ধর্মশাস্ত্রে যা আছে, জনগণ তাকেই মানবে, পোপের আদেশ মানে না| লুথার দাবি করেন, শীঘ্রই একটি ধর্মসভা ডেকে গির্জা ও পোপতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত এবং জার্মানির অর্থ কোন একটি বিদেশী গির্জা অর্থাৎ পাপের জন্য ব্যায়িত হবে কিনা তা বিচার করা উচিত|
লুথার এর প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে জার্মানিতে জাতীয় জাগরণ ঘটে| তাঁর "ব্যাবিলনীয় বন্দীত্ব"(babylonish captivity) শীর্ষক পুস্তিকার মাধ্যমে লুথার ঘোষণা করেন যে, "ইহুদী জাতি যেমন দীর্ঘকাল পরে ব্যাবিলনের বন্দীত্ব থেকে মুক্ত হয়েছে, জার্মান জাতিও শীঘ্রই রোমান পোপের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হবে"| তিনি বলেন, ক্যাথলিক গির্জা বিবাহ প্রথাকে ঈশ্বরের আদেশ বলে যা প্রচার করে তা ঠিক নয়, এমনকি খিষ্টান ও অ-খ্রিস্টানদের বিবাহকে তিনি পবিত্র বলে ঘোষণা করেন|
লুথারবাদ এর জনপ্রিয়তা
লুথার এর মতবাদ ক্রমে জনপ্রিয়তা লাভ করলে পোপ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে| পোপের চাপে রোমান সম্রাট পঞ্চম চার্লস ওয়ার্মস নামক স্থানে এক সভা আহবান করে লুথারকে তাঁর মতবাদ ত্যাগ করার আদেশ দেন, কিন্তু মার্টিন লুথার এতে অসম্মত হন| ইতিমধ্যে লুথার জার্মান ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করলে জার্মানিতে লুথারবাদ অন্তত জনপ্রিয় হয়ে উঠে| ক্রমশ লুথার তাঁর সমর্থক স্থানীয় সংস্কারকগণ তাদের নিজস্ব সরল খ্রিষ্টীয় মতবাদ প্রচার ও প্রসারে আগ্রহী হয়ে উঠতে থাকে|লুথার এর অনুগামীরা শুধু পোপের আধিপত্যকে অমান্য করে থেকে থাকেননি| পোপগণ সেন্ট পিটার এর বংশধর এই তত্ত্বেও তারা বিশ্বাসী ছিলেন না| বহু জার্মান ক্যাথলিক ধর্মমত ত্যাগ করে লুথার প্রবর্তিত ধর্ম গ্রহণ করেন| 1929 খ্রিস্টাব্দে পোপ লুথারবাদ অবৈধ ঘোষণা করলে সমগ্র জার্মানি এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে| এই সময় থেকে লুথারের অনুগামীরা "প্রোটেস্ট্যান্ট" নামে পরিচিত হন এবং জার্মানির এই আন্দোলনে "রিফর্মেশন"(Reformation) নামে অভিহিত হয়|
পোপ বিরোধী আন্দোলন |
ওয়ার্মস এর ঘোষণাপত্র প্রচলিত হওয়ার পর জার্মানিতে পোপ বিরোধী আন্দোলন আরো প্রসারিত এবং আরো অনেক সামন্ত প্রভূ লুথারের পক্ষ অবলম্বন করলে জার্মানিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়| ছাত্র, কৃষক ও কারিগর শ্রেনী ক্যাথলিক গির্জার ওপর আক্রমণ চালায়| জার্মানির দক্ষিণ-পূর্ব আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয়| দীর্ঘকালব্যাপী খাদ্যের অভাব, কৃষির অনগ্রসরতার এবং সামন্তদের শোষণ কৃষকদের অবস্থা দুর্বিষহ করে তুলেছিল|
কৃষক |
এই পরিস্থিতিতে মার্টিন লুথারের সংস্কার আন্দোলন কৃষকদের মনে আশার আলো সঞ্চার করে ছিল| "ঈশ্বরের কাছে সকল মানুষ সমান"- লুথার এই বাণী প্রচার করলে কৃষকেরা মনে করেন যে, ধর্ম সংস্কারের উদ্দেশ্য হল সামন্তদের অর্থনৈতিক দাসত্ব থেকে কৃষকদের মুক্ত করা, কিন্তু লুথার প্রথম থেকেই সামন্তপ্রভুদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন|
জার্মানিতে যখন গৃহযুদ্ধ শুরু হতে থাকে, তখন লুথার ধর্মমতকে বিশেষ রূপ দান করেন| তিনি একথা বলেন যে, প্রকৃত ধর্ম রক্ষার জন্য জনসাধারণ রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অধিকার আছে| তবে যেক্ষেত্রে রাজা ধর্ম অনুযায়ী কাজ করে, সেক্ষেত্রে লুথার প্রতিরোধের অধিকার স্বীকার করেননি|
পরিশেষে জার্মানিতে ধর্ম যুদ্ধ চলাকালীন 1546 খ্রিস্টাব্দে মার্টিন লুথারের মৃত্যু হয়|
উপসংহার
মধ্যযুগে ইউরোপের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ইতিহাসে মার্টিন লুথার এক অবিস্মরণীয় চরিত্র| জার্মানিতে লুথারবাদ এর সমর্থন ও চার্চের বিরোধিতা করে যে ধর্মযুদ্ধ শুরু হয়, তার ফলে জার্মানি প্রাশিয়া, স্যাক্সনি প্রভৃতি অঞ্চলে লুথারবাদ স্থায়ী প্রতিষ্ঠা পায়|পোপ তথা ক্যাথলিক গির্জার আধিপত্যের বিরুদ্ধে লুথারের প্রতিবাদ আন্দোলন ইউরোপের অন্যান্য দেশে প্রভাব ফেলে| প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মবাদ জার্মানি থেকে উত্তরে নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন, পশ্চিমে ফ্রান্স, ইতালি প্রভৃতি দেশে ছড়িয়ে পড়ে| লুথারের নতুন ধর্মমত ধর্মশাস্ত্র চর্চার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়|
সার্বজনীন শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং ঈশ্বর প্রেমে অবিচল থেকে সব প্রতিবেশীর সেবা করার কথা বলা হয়| প্রকৃতপক্ষে রেনেসাঁ এবং মার্টিন লুথারের নেতৃত্বে "রিফর্মেশন" ইউরোপে নতুন যুগের সূচনা করে| মধ্যযুগ থেকে পোপতন্ত্র যেভাবে ব্যক্তির অধিকার অবদমিত করেছিল, তা থেকে ইউরোপ মুক্তি লাভ করে| ধর্ম বিপ্লবের ফলে দুর্নীতি মুক্ত হয়ে গির্জা পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র নীতি গ্রহণ করতে হয় এবং ক্যাথলিক গির্জার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা জন্মায় এবং ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তার ব্যাপক প্রসার ঘটে|
তথ্যসূত্র
- অধ্যাপক গোপালকৃষ্ণ পাহাড়ি, "ইউরোপের ইতিবৃত্ত"
- Jacob Burckhardt, "The Civilization of the Renaissance in Italy".
- Roberta J. M., "The Biography of the Object in Late Medieval and Renaissance Italy".
সম্পর্কিত বিষয়
- সাহিত্য ও শিল্পের উপর রেনেসাঁ এর প্রভাব (আরো পড়ুন)
- রেনেসাঁ ও মানবতাবাদ (আরো পড়ুন)
- নবজাগরণ বা রেনেসাঁ কাকে বলে এবং ইউরোপীয় সমাজের উপর এর প্রভাব .(আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|