1915 খ্রিস্টাব্দ থেকে চীনের শহরগুলিতে যে নতুন সংস্কৃতির জোয়ার এসেছিল, তারই অনিবার্য পরিণতি হিসাবে 4 ঠা মে আন্দোলন শুরু হয়েছিল| রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে চীনের ইতিহাসে এই আন্দোলনের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম|
জাতীয় দাবি পূরণের জন্য সংঘর্ষ এবং চিরাচরিত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ -এই দুটি বিষয়ে বিপ্লবীদের কার্যতালিকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান পায়| চীনকে তাদের হাতে পুতুলের পরিণত করার জন্য বিদেশিদের দুর্বার প্রয়াসের বিরুদ্ধে এবং চীনের রাষ্ট্রিয় অখন্ডতা বিনষ্ট করার অপ্রয়াসের বিরুদ্ধে কয়েক সহস্র চীনা ছাত্রের স্বতঃবফূর্ত অভ্যুত্থানের ফলে এই আন্দোলন চীনা বিপ্লবের ইতিহাসে এক বিশিষ্ট স্থান করেছে|
4 ঠা মে-র আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় চীনা বণিক সম্প্রদায় যোগদান করে| চীনের সার্বভৌমত্ব তথা নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে চীনের রাজাদের জাপানি দ্রব্যাদি ক্রয়-বিক্রয় প্রভূতভাবে বিস্তার লাভ করায় চীনা বণিকদের ব্যবসা বহুলাংশে ক্ষতি হয়|
আন্দোলনকালে জাপানি দব্যের বয়কট নীতি অনুসৃত হলে চীনা বণিকদের ব্যবসায় উন্নতি ঘটে| জাপানি বা বিদেশি দ্রব্যের বয়কটের ফলে স্বদেশী দ্রব্যাদি ব্যবহার বৃদ্ধি পায় এবং এর ভিত্তিতে নতুন নতুন কারখানা স্থাপিত হয়|
চীনে শ্রমিক শ্রেণীর কাছে এই আন্দোলনের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম| এই আন্দোলন চীনের শ্রমিক শ্রেণীর কাছে ছিল গৌরবময় রাজনৈতিক লড়াইয়ের সূচনা বিন্দু এবং এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শ্রমিক শ্রেণী রাজনৈতিক সংগ্রামে প্রবেশ করে|
জোসেফ আর লেভেনসন(Joseph R. Levenson) মন্তব্য করেছেন, পুরাতনতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা অবসান ঘটিয়ে চীনের বুদ্ধি জীবীদের মধ্যে অনেকেই মার্কসবাদ গ্রহণ করেছিলেন| আবার কেউ কেউ পশ্চিমী প্রয়োগবাদকে তাদের পথের পাথেয় বলে মনে করেছেন| 4ঠা মে নেতারা 1921 খ্রিস্টাব্দে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠার সময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল|
রক্ষণশীল ব্যক্তিরা মনে করেছিলেন এই আন্দোলন ছিল নেতিবাচক, কারণ এই আন্দোলন চীনের ঐতিহ্যকে আঘাত করেছিল|
চরমপন্থীদের কাছে এই আন্দোলন ছিল চীনের নতুন যুগ উত্তোলনের প্রতীক| লিও চার্লস এই আন্দোলনকে মানব মুক্তির সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন|
চীনের সামাজিক পূনর্গঠনের প্রশ্নে দুটি বিপরীত মতবাদের জন্ম দিয়েছিল| একদিকে ছিল প্রচারিত প্রয়োগবাদী ও বিবর্তনবাদী পথ| আর অন্যদিকে চরমপন্থী বুদ্ধিজীবীরা মার্কসবাদের অনুপ্রেরণায় সোভিয়েত বিপ্লবের ধাঁচে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন| 1920 খ্রিস্টাব্দে পরবর্তী চীনের ইতিহাসে এই দুটি মতাদর্শের লড়াই প্রধান স্থান অধিকার করে আছে|
চীনের মানচিত্র |
রাজনৈতিক দিক থেকে এই আন্দোলনের গুরুত্ব
রাজনৈতিক দিক থেকে বিপ্লবীরা স্লোগান তুলেন দেশকে বাঁচাও| এটা ছিল চীনের তৎকালীন হীনাবস্থার বিরুদ্ধে স্বদেশ প্রেম সূচক প্রতিবাদ| চীনা অভ্যন্তরে বিদেশি শক্তিবর্গের সাম্রাজ্যবাদীতা, অসম শর্তের ভিত্তিতে স্বাক্ষরিত সন্ধি সমূহের কার্যকারিতা ও রক্ষণশীল দলের বিদেশিদের প্রতি সমর্থন, এই সব নির্মূল করার উপযোগী কার্যক্রম অনুসারে বিপ্লবীরা কৃতসংকল্প হন|জাতীয় দাবি পূরণের জন্য সংঘর্ষ এবং চিরাচরিত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ -এই দুটি বিষয়ে বিপ্লবীদের কার্যতালিকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান পায়| চীনকে তাদের হাতে পুতুলের পরিণত করার জন্য বিদেশিদের দুর্বার প্রয়াসের বিরুদ্ধে এবং চীনের রাষ্ট্রিয় অখন্ডতা বিনষ্ট করার অপ্রয়াসের বিরুদ্ধে কয়েক সহস্র চীনা ছাত্রের স্বতঃবফূর্ত অভ্যুত্থানের ফলে এই আন্দোলন চীনা বিপ্লবের ইতিহাসে এক বিশিষ্ট স্থান করেছে|
এই আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়
প্রতিরোধ |
আন্দোলনকালে জাপানি দব্যের বয়কট নীতি অনুসৃত হলে চীনা বণিকদের ব্যবসায় উন্নতি ঘটে| জাপানি বা বিদেশি দ্রব্যের বয়কটের ফলে স্বদেশী দ্রব্যাদি ব্যবহার বৃদ্ধি পায় এবং এর ভিত্তিতে নতুন নতুন কারখানা স্থাপিত হয়|
চীনে শ্রমিক শ্রেণীর কাছে এই আন্দোলনের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম| এই আন্দোলন চীনের শ্রমিক শ্রেণীর কাছে ছিল গৌরবময় রাজনৈতিক লড়াইয়ের সূচনা বিন্দু এবং এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শ্রমিক শ্রেণী রাজনৈতিক সংগ্রামে প্রবেশ করে|
জোসেফ আর লেভেনসন(Joseph R. Levenson) মন্তব্য করেছেন, পুরাতনতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা অবসান ঘটিয়ে চীনের বুদ্ধি জীবীদের মধ্যে অনেকেই মার্কসবাদ গ্রহণ করেছিলেন| আবার কেউ কেউ পশ্চিমী প্রয়োগবাদকে তাদের পথের পাথেয় বলে মনে করেছেন| 4ঠা মে নেতারা 1921 খ্রিস্টাব্দে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠার সময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল|
বিভিন্ন মতাদর্শ
বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ নিজেদের মতাদর্শ অনুযায়ী এই আন্দোলনের গুরুত্ব অনুধাবন করার চেষ্টা করেছিলেন| উদার পন্থীদের মধ্যে এই আন্দোলন পুরনো চিন্তাধারা, পুরনো নীতিবোধ, পুরনো মূল্যবোধ থেকে চীনের মানুষকে মুক্ত করেছিল এবং চীনের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল|রক্ষণশীল ব্যক্তিরা মনে করেছিলেন এই আন্দোলন ছিল নেতিবাচক, কারণ এই আন্দোলন চীনের ঐতিহ্যকে আঘাত করেছিল|
চরমপন্থীদের কাছে এই আন্দোলন ছিল চীনের নতুন যুগ উত্তোলনের প্রতীক| লিও চার্লস এই আন্দোলনকে মানব মুক্তির সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন|
উপসংহার
এই আন্দোলন চীনের সাংস্কৃতিক যুগে সুদূর প্রসারী পরিবর্তন এনেছিল| তবে এই 4ঠা মে আন্দোলন চীনে দুটি স্পষ্টভাবে বিপরীতমুখী চিন্তাধারা জন্ম দিয়েছিল|চীনের সামাজিক পূনর্গঠনের প্রশ্নে দুটি বিপরীত মতবাদের জন্ম দিয়েছিল| একদিকে ছিল প্রচারিত প্রয়োগবাদী ও বিবর্তনবাদী পথ| আর অন্যদিকে চরমপন্থী বুদ্ধিজীবীরা মার্কসবাদের অনুপ্রেরণায় সোভিয়েত বিপ্লবের ধাঁচে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন| 1920 খ্রিস্টাব্দে পরবর্তী চীনের ইতিহাসে এই দুটি মতাদর্শের লড়াই প্রধান স্থান অধিকার করে আছে|
তথ্যসূত্র
- অমিত ভট্টাচার্য, "চীনের রূপান্তরের ইতিহাস 1840-1969"
- Jonathan Fenby, "The Penguin History of Modern China".
সম্পর্কিত বিষয়
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................