ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আমেরিকার 13টি উপনিবেশ 1776 খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং 1781 খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার লোকেরা এই যুদ্ধে জয়লাভ করে| 1783 খ্রিস্টাব্দে 3 রা সেপ্টেম্বরে প্যারিস চুক্তির দ্বারা ইংরেজ সরকার আমেরিকার স্বাধীনতা স্বীকার করে নেই| এর ফলে আমেরিকা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র রূপে আত্মপ্রকাশ করে এবং ইউরোপীয় রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে থাকে|
18 শতকের স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র যুগে আমেরিকা প্রজাতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্র হিসেবে গঠিত হয়| আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভ, রাজার ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা এবং সমাজে যাজক ও অভিজাত শ্রেণীর সংক্রান্ত ধারণায় চরম আঘাত এনেছিল| আমেরিকাবাসীদের সাফল্য ইউরোপে সুদূর প্রসারি প্রভাব বিস্তার করেছিল| অধ্যাপক হেজ বলেন যে, "আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ আমেরিকা তথা সমগ্র বিশ্বে গণতন্ত্রের পথ সুগম করেছিল"|
আমেরিকার মানচিত্র |
এই স্বাধীনতা যুদ্ধের দ্বারা ইংল্যান্ড সর্বাধিক প্রভাবিত হয়েছিল| এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে ইংল্যান্ডের সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধ জয়ের গৌরব ম্লান হয়ে যায় এবং তার আন্তর্জাতিক মর্যাদা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়| আমেরিকা হাত ছাড়া হওয়ায় ইংল্যান্ডের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কাঁচামাল আমদানি ও উৎপন্ন শিল্পপণ্য রপ্তানির প্রক্রিয়া নষ্ট হয়| এই ক্ষতিপূরণের জন্য ইংল্যান্ড নতুন উদ্যোমে ভারতে উপনিবেশ গড়ে তুলতে তৎপর হয়|
ইংল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির উপর এই যুদ্ধের প্রভাব পড়েছিল| ইংল্যান্ডের শাসক টোরিদল ও লর্ড নর্থের মন্ত্রিসভা পদত্যাগে দিতে বাধ্য হয় এবং হুইগ দল ক্ষমতায় আসার ফলে ইংল্যান্ডের সাংবিধানিক ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসে| হুইগ দল মনে করে যে, রাজা দ্বিতীয় জর্জের হস্তক্ষেপের ফলেই যুদ্ধে ইংল্যান্ড ব্যর্থ হয়েছিল| তাই রাজার ব্যাক্তিগত শাসন ক্ষমতার পরিবর্তে পার্লামেন্টের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা শাসন প্রতিষ্ঠা করে| এই সময় থেকে রাজা সাংবিধানিক প্রধান হবে, তবে তিনি শাসন-কার্যে হস্তক্ষেপ করবে না|
যুদ্ধের পরাজয়ের ফলে ব্রিটিশ সরকার তার উপনিবেশিক নীতি পরিবর্তন করেন এবং মার্কেনটাইল মতবাদ(আরো পড়ুন) ত্যাগ করে সহিষ্ণুতার নীতি গ্রহণ করে| কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড ইত্যাদি শ্বেতাঙ্গ জাতির বসতিযুক্ত দেশগুলোকে স্বায়ত্ব শাসন দান করে|
এই স্বাধীনতা যুদ্ধে ফ্রান্সের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে ছিল| ফ্রান্স সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে উপনিবেশিকদের পক্ষ গ্রহণ করে এবং অর্থ, সেনাসহ নানাভাবে তাদের সাহায্য করে| এর ফলে ফ্রান্সের আর্থিক সংকট তীব্র হয়ে উঠে এবং ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই পরিস্থিতির চাপে দীর্ঘদিন পর State General এর অধিবেশন ডাকতে বাধ্য হয়| এর ফলে শুরু হয় ফরাসি বিপ্লব| যুদ্ধে যোগদানকারী ফরাসি সেনারা স্বাধীনতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয় এবং ফ্রান্সের ফিরে এসে গণতান্ত্রিক ভাবধারা প্রচার করে, ফলে ফরাসি বিপ্লবের পথ তৈরি হয়|
স্পেন এই স্বাধীনতা যুদ্ধে সেনা দিয়ে মিনরকো ও ফ্লোরিডা পুনরুদ্ধারে সমর্থ হয়| হল্যান্ডের দেশপ্রেমিকরা নিজেদের দেশে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে ব্যর্থ হলে বসবাসের জন্য আমেরিকায় চলে যায়|
জার্মানি, স্কটল্যান্ড ও আইল্যান্ডের বহু জাতীয়তাবাদী মানুষ নিজেদের দেশের স্বৈরাচারী রাজতান্ত্রিক শাসনের প্রতিবাদে আমেরিকায় গিয়ে বসবাস শুরু করে| আমেরিকার যুদ্ধের গণতান্ত্রিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ পোল্যান্ডের রাজা তার পাঠ্য কক্ষে জর্জ ওয়াশিংটনের মূর্তি স্থাপন করেন, আবার হাঙ্গেরিতেও স্থাপিত হয় আমেরিকার আবাস|
এই স্বাধীনতা যুদ্ধের ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে সংঘর্ষে সুযোগ নিয়ে রাশিয়া ও অস্ট্রিয়া বলকান অঞ্চলে আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করলে বলকান সমস্যার সৃষ্টি হয়|
এইভাবে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ এক নতুন ইউরোপের সৃষ্টি করেছিল|
ইংল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির উপর এই যুদ্ধের প্রভাব পড়েছিল| ইংল্যান্ডের শাসক টোরিদল ও লর্ড নর্থের মন্ত্রিসভা পদত্যাগে দিতে বাধ্য হয় এবং হুইগ দল ক্ষমতায় আসার ফলে ইংল্যান্ডের সাংবিধানিক ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসে| হুইগ দল মনে করে যে, রাজা দ্বিতীয় জর্জের হস্তক্ষেপের ফলেই যুদ্ধে ইংল্যান্ড ব্যর্থ হয়েছিল| তাই রাজার ব্যাক্তিগত শাসন ক্ষমতার পরিবর্তে পার্লামেন্টের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা শাসন প্রতিষ্ঠা করে| এই সময় থেকে রাজা সাংবিধানিক প্রধান হবে, তবে তিনি শাসন-কার্যে হস্তক্ষেপ করবে না|
যুদ্ধের পরাজয়ের ফলে ব্রিটিশ সরকার তার উপনিবেশিক নীতি পরিবর্তন করেন এবং মার্কেনটাইল মতবাদ(আরো পড়ুন) ত্যাগ করে সহিষ্ণুতার নীতি গ্রহণ করে| কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড ইত্যাদি শ্বেতাঙ্গ জাতির বসতিযুক্ত দেশগুলোকে স্বায়ত্ব শাসন দান করে|
এই স্বাধীনতা যুদ্ধে ফ্রান্সের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে ছিল| ফ্রান্স সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে উপনিবেশিকদের পক্ষ গ্রহণ করে এবং অর্থ, সেনাসহ নানাভাবে তাদের সাহায্য করে| এর ফলে ফ্রান্সের আর্থিক সংকট তীব্র হয়ে উঠে এবং ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই পরিস্থিতির চাপে দীর্ঘদিন পর State General এর অধিবেশন ডাকতে বাধ্য হয়| এর ফলে শুরু হয় ফরাসি বিপ্লব| যুদ্ধে যোগদানকারী ফরাসি সেনারা স্বাধীনতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয় এবং ফ্রান্সের ফিরে এসে গণতান্ত্রিক ভাবধারা প্রচার করে, ফলে ফরাসি বিপ্লবের পথ তৈরি হয়|
বিদ্রোহ |
ইউরোপের মানচিত্র |
স্পেন এই স্বাধীনতা যুদ্ধে সেনা দিয়ে মিনরকো ও ফ্লোরিডা পুনরুদ্ধারে সমর্থ হয়| হল্যান্ডের দেশপ্রেমিকরা নিজেদের দেশে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে ব্যর্থ হলে বসবাসের জন্য আমেরিকায় চলে যায়|
জার্মানি, স্কটল্যান্ড ও আইল্যান্ডের বহু জাতীয়তাবাদী মানুষ নিজেদের দেশের স্বৈরাচারী রাজতান্ত্রিক শাসনের প্রতিবাদে আমেরিকায় গিয়ে বসবাস শুরু করে| আমেরিকার যুদ্ধের গণতান্ত্রিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ পোল্যান্ডের রাজা তার পাঠ্য কক্ষে জর্জ ওয়াশিংটনের মূর্তি স্থাপন করেন, আবার হাঙ্গেরিতেও স্থাপিত হয় আমেরিকার আবাস|
এই স্বাধীনতা যুদ্ধের ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে সংঘর্ষে সুযোগ নিয়ে রাশিয়া ও অস্ট্রিয়া বলকান অঞ্চলে আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করলে বলকান সমস্যার সৃষ্টি হয়|
এইভাবে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ এক নতুন ইউরোপের সৃষ্টি করেছিল|
তথ্যসূত্র
- John Ferling, "Whirlwind: The American Revolution and the War That Won It".
- John Ferling, "Independence: The Struggle to Set America Free".
- William Gordon, "The History of the Rise, Progress, and Establishment, of the Independence of the United States of America".
সম্পর্কিত বিষয়
- নবজাগরণ বা রেনেসাঁ কাকে বলে এবং ইউরোপীয় সমাজের উপর এর প্রভাব .(আরো পড়ুন)
- মার্টিন লুথার এবং ইউরোপের ধর্ম সংস্কার আন্দোলন (আরো পড়ুন)
- ইতালীয় রেনেসাঁর চিত্রকলা (আরো পড়ুন)
- দাস ব্যবসা এবং ইউরোপের উপর তার প্রভাব (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................