মুঘল আমলে ভারতীয় অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি ছিল কৃষি| দেশের প্রায় 80 ভাগ মানুষ কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল|
এই আমলে কৃষি সরঞ্জাম, উন্নত সেচ ব্যবস্থা, উন্নত সার পদ্ধতি ও উপযুক্ত বীজ বপনের মাধ্যমে কৃষি ব্যবস্থার যে উন্নতি ঘটেছিল, তা উল্লেখ করেছেন- ইরফান হাবিব, তপন রায় প্রমূখ ঐতিহাসিকগণ| এছাড়াও সমসাময়িক গ্রন্থাদি তথা আবুল ফজলের(আরো পড়ুন) "আইন-ই-আকবরি" থেকে এই যুগের কৃষি ব্যবস্থার সম্পর্কে বহু তথ্য পাওয়া যায়|
এই আমলে কৃষি সরঞ্জাম, উন্নত সেচ ব্যবস্থা, উন্নত সার পদ্ধতি ও উপযুক্ত বীজ বপনের মাধ্যমে কৃষি ব্যবস্থার যে উন্নতি ঘটেছিল, তা উল্লেখ করেছেন- ইরফান হাবিব, তপন রায় প্রমূখ ঐতিহাসিকগণ| এছাড়াও সমসাময়িক গ্রন্থাদি তথা আবুল ফজলের(আরো পড়ুন) "আইন-ই-আকবরি" থেকে এই যুগের কৃষি ব্যবস্থার সম্পর্কে বহু তথ্য পাওয়া যায়|
এই আমলে কৃষকরা কৃষি সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহার করতেন- লাঙ্গল, ভারি লোহার ফোলা, মই, নিড়ানি, কাস্তে ও কোদাল প্রভৃতি| অধ্যাপক জগদীশ নারায়ন সরকার বলেছেন, "মুঘল আমলে নিবিড় চাষ, দো ফসলি, তিন ফসলি উৎপাদন কৃষকের আয়ত্তে ছিল"| এই আমলে সার হিসাবে ব্যবহার করা হতো গোবর ও সামুদ্রিক মাছ|
এই আমলে ফসলের প্রকৃতি ছিল খাদ্যজাত ফসল, অর্থকারী ফসল ও বাণিজ্যিক ফসল| ঐতিহাসিক মোরল্যান্ড বলেছেন- "সপ্তদশ শতকে প্রধানত গৃহস্থালি প্রয়োজনে দড়ি তৈরির জন্য পাট ব্যবহৃত হতো"|
এই আমলে ফসলের প্রকৃতি ছিল খাদ্যজাত ফসল, অর্থকারী ফসল ও বাণিজ্যিক ফসল| ঐতিহাসিক মোরল্যান্ড বলেছেন- "সপ্তদশ শতকে প্রধানত গৃহস্থালি প্রয়োজনে দড়ি তৈরির জন্য পাট ব্যবহৃত হতো"|
মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা
প্রাচীন মধ্যযুগে আধুনিক সেচ ব্যবস্থা সুযোগ ছিল না বটে, তবুও কৃষির সাথে যুক্ত তথা শাসক বর্গের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে জল নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ও সেচের ক্ষেত্রে উন্নয়ন মূলক কাজের বহু চেষ্টা করেছিল| মুঘল আমলে ওয়াটার সিস্টেম এর উল্লেখ পাওয়া যায়|
"আইন-ই-আকবরি"তে নতুন জল আটকানোর বিভিন্ন পদ্ধতি সমূহ এই গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে| বিপাশা, শতদ্রু, চন্দ্রভাগা, ইরাবতী ও সিন্ধু এই পাঁচটি নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কথা মুঘল আমলে পাওয়া যায়| এই যুগে বিভিন্ন কারণে বাঁধ নির্মাণ করা হতো, যেমন-
- বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য|
- এই জল যেন শহরে ঢুকতে না পারে, তা ব্যবস্থা করা|
- এই যুগে যে অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হতো, সেই অঞ্চলে বৃষ্টির জলকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হতো|
প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাঁধ নির্মাণ ব্যবস্থা ছিল খুবই জরুরী| বিভিন্ন এলাকার জমিদাররা বাঁধ নির্মাণ ও তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রচুর অর্থ পেতেন| এই সময় বাঁধ ছাড়াও ধাপ বাঁধ ছিল|
বাঁধ |
ধাপ বাঁধ
পাহাড়ের ঢাল অঞ্চলে ধাপ বাঁধ তৈরি করা হতো| এই ব্যবস্থায় জল পুরোপুরি না আটকে নির্দিষ্ট পরিমাণ জল আটকে রাখে এবং বাকিটা প্রবাহিত হয়ে যায়|
পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকের দুই পাহাড়ের মাঝখানের ফাঁক দিয়ে বিজয়নগর রাজ্যে বাঁধের সাহায্য হ্রদের সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এর দৈর্ঘ্য ছিল 800 ফুট ও প্রস্থ ছিল 100 ফুট| 1650 খ্রিস্টাব্দে সম্রাট শাহাজান 50 হাজার টাকা সরকারি কোষাগার থেকে কৃষকদের বাঁধ নির্মাণের জন্য ঋণ দান করেছিলেন|
এই যুগের সেচ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য একাধিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল, সেই পরিকল্পনাগুলি ছিল, নিম্নরূপ-
দাক্ষিণাত্যের শক্ত মাটিতে কূপ খননের জন্য একদল পেশাদারী খননকারী তৈরি হয়েছিল| কূপ থেকে জল উত্তোলনের জন্য এই ঢেঁকলী পদ্ধতির বহুল প্রচলন ছিল এবং এই পদ্ধতিতে জমির নিকটবর্তী জলাশয় থেকে সেচ দিয়ে জমিতে জল পাঠানো হতো|
পুকুর কেটে বা উঁচু বাঁধ দিয়ে জলাধার তৈরি করে, সেই জল জমিতে সেচ দেওয়ার পদ্ধতি ভারতে বেশ জনপ্রিয় ছিল| কৃষকদের চাষের জন্য জলাশয় খনন করে দেওয়ার পুণ্যকর্ম বলে বিবেচনা করা হতো|
পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকের দুই পাহাড়ের মাঝখানের ফাঁক দিয়ে বিজয়নগর রাজ্যে বাঁধের সাহায্য হ্রদের সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এর দৈর্ঘ্য ছিল 800 ফুট ও প্রস্থ ছিল 100 ফুট| 1650 খ্রিস্টাব্দে সম্রাট শাহাজান 50 হাজার টাকা সরকারি কোষাগার থেকে কৃষকদের বাঁধ নির্মাণের জন্য ঋণ দান করেছিলেন|
এই যুগের সেচ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য একাধিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল, সেই পরিকল্পনাগুলি ছিল, নিম্নরূপ-
ঢেঁকলী পদ্ধতি
কূপ |
চসার পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে কুলির সাহায্যে জল তোলা হতো এছাড়াও চামড়ার বালতি ভরে বলদের সাহায্যে জল বহন করে সেচ দেওয়া হতো|সাঁকিয়া পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে বলদের সাহায্যে বড় চাকা ঘুরিয়ে একসঙ্গে অনেক জল তোলা হতো| এই পদ্ধতি ছিল যথেষ্ট ব্যয়বহুল, তাই কেবল কেবল ধনী চাষিরাই সাঁকিয়া পদ্ধতি গ্রহণ করতেন|পুকুর কেটে বা উঁচু বাঁধ দিয়ে জলাধার তৈরি করে, সেই জল জমিতে সেচ দেওয়ার পদ্ধতি ভারতে বেশ জনপ্রিয় ছিল| কৃষকদের চাষের জন্য জলাশয় খনন করে দেওয়ার পুণ্যকর্ম বলে বিবেচনা করা হতো|
নদী উপত্যকা অঞ্চলে সেচ ব্যবস্থা
জমিতে সেচের কাজে কাজে নদী থেকে খাল কেটে জল সরবরাহ করার ব্যবস্থা ছিল খুবই জনপ্রিয়| গঙ্গা, যমুনা ও সিন্ধু থেকে প্রচুর খাল কাটা হয়েছিল|
ফিরোজ তুঘলকের আমলে তৈরি সাকিদুল খাল মুঘল আমলে শুকিয়ে গিয়েছিল এবং দিল্লির গভর্নর সেই খালটি সংস্কার করে সেচের উপযুক্ত করেছিল| শাহজাহানের আমলে পাঞ্জাবে বেশকিছু খাল কাটা হয়েছিল, যেমন- রাভি থেকে লাহোর পর্যন্ত 200 মাইল লম্বা সেচ খাল, পাঠান কোট খাল, বাটলা খাল প্রভৃতি|
এইভাবে মুঘল আমলে জলসেচ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ ঘটানো হয়েছিল বলে, ইরফান হাবিব, তপন রায় চৌধুরী প্রমুখগণ অভিমত পোষণ করেছেন|
ফিরোজ তুঘলকের আমলে তৈরি সাকিদুল খাল মুঘল আমলে শুকিয়ে গিয়েছিল এবং দিল্লির গভর্নর সেই খালটি সংস্কার করে সেচের উপযুক্ত করেছিল| শাহজাহানের আমলে পাঞ্জাবে বেশকিছু খাল কাটা হয়েছিল, যেমন- রাভি থেকে লাহোর পর্যন্ত 200 মাইল লম্বা সেচ খাল, পাঠান কোট খাল, বাটলা খাল প্রভৃতি|
এইভাবে মুঘল আমলে জলসেচ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ ঘটানো হয়েছিল বলে, ইরফান হাবিব, তপন রায় চৌধুরী প্রমুখগণ অভিমত পোষণ করেছেন|
তথ্যসূত্র
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "অষ্টাদশ শতকের মুঘল সংকট ও আধুনিক ইতিহাস চিন্তা"
- অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস"
সম্পর্কিত বিষয়
- ভারতবর্ষে মুঘল বা মোগল সাম্রাজ্যের প্রকৃতি ও কার্যাবলীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা (আরো পড়ুন)
- মনসবদারি ব্যবস্থা এবং পরবর্তীকালে জায়গির সংকট (আরো পড়ুন)
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................