16 শতাব্দীর ধর্ম সংস্কার আন্দোলন ইউরোপের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা| এই ধর্ম সংস্কারের মূল কারণগুলি ছিল নিম্নরূপ-
চার্চ |
প্রথমত- ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের প্রধান কারণ ছিল ক্যাথলিক চার্চের নৈতিক অধঃপতন| চতুর্দশ শতাব্দী থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত চার্চের মধ্যে যথেষ্ট দুর্নীতি ও কলুষতা প্রবেশ করেছিল| ধর্মযাজকগণ ধর্মচর্চার কাজে অবহেলা করে ভোগ-বিলাস, সুখ-স্বাচ্ছন্দ, রাজনীতি ও নানা প্রকার দুর্নীতি মূলক কাজে লিপ্ত হয়ে উঠেছিল|
পোপ |
দ্বিতীয়ত- খ্রিস্টান জগতে পোপ হলেন সর্বোচ্চ ধর্মযাজক, ধর্মপ্রচারক ও রাজকীয় ক্ষমতার প্রধান| জনগণ তাকেই শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি বলে মনে করত এবং তার নির্দেশ অভ্রান্ত মনে করত| ধর্মের নামে পোপ জনগণের কাছ থেকে নানা প্রকার কর আদায় করতেন| ফলে ধর্মাচরণ শুধু ভ্রান্ত ক্রিয়াকলাপের পরিণত হয়| অন্ধ বিশ্বাসে বশীভূত হয়ে জনগণ পোপের জন্য অর্থ প্রদান করে পোপের নিকট হতে মার্জনা পত্র(Indulgence) ক্রয় করত এবং নিজেকে পাপমুক্ত বলে মনে করত| এই অধঃপতন ইউরোপের জনসাধারণ প্রচলিত ধর্ম ব্যবস্থার উপর শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলেন|
তৃতীয়ত- পোপ ও রাজ শক্তির মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এই সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম কারণ ছিল|পোপের রাজন্য ক্ষমতা সমূহ উত্তরোত্তর রূপে নবজাগ্রত রাজ শক্তিকে ঐশ্বরিক করে তুলে| ধর্ম শাসন, বিচার, আইন-প্রণয়ন ও রোমান সম্রাটের অভিষেক ক্রিয়ায় পোপের অপ্রতিহত ক্ষমতা রাজ শক্তি মেনে নিয়েছিল না| ধর্মের নামে চার্চ জনসাধারণের কাছ থেকে বেআইনি কর আদায় করে প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করতো| এই ভাবে চার্চ এবং পোপেরা জাতীয় স্বার্থ এবং জনগণের স্বার্থে বিরোধী ছিল| এভাবে জনগণের স্বার্থে তৎকালীন উদীয়মান বণিক ও ধণতন্ত্র সম্প্রদায় ধর্ম সংস্কারের সমর্থক হয়ে দাঁড়ায়| ধর্মের নামে চার্চের অর্থ শোষণের ফলে রাজ শক্তির সাথে বণিক, ধণতন্ত্র সম্প্রদায় ধর্ম সংস্কারের সমর্থক হয়ে দাঁড়ায়|
বাইবেল |
চতুর্থত- রেনেসাঁ বা নবজাগরণের ফলে যে যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির উদ্ভব হয়েছিল তার আক্রমণ থেকে ইউরোপের প্রচলিত ধর্ম ব্যবস্থাও মুক্ত রইল না| সকল দেশের সকল ভাষায় বাইবেল গ্রন্থ রচনা হওয়ার ফলে জনসাধারণ ধর্মের উপলব্ধি করেছিল| চার্চ ও ধর্মযাজকদের দুর্নীতি ও কলুষতা সম্পর্কে সজাগ হয়| এর ফলে তারা ক্যাথলিক চার্চের প্রতি রুখে দাঁড়াই|
পঞ্চমত- ইতালিতেও চার্চের দুর্নীতি ও কলুষতার প্রতি ইতালিবাসির দৃষ্টিভঙ্গি আকর্ষণ করেছিল| ওয়াইক্লিফ, ইরাসমাস জনসাধারণকে নতুন পথের দিকে নিয়ে গিয়েছিল| প্রকৃতপক্ষে এরা ছিলেন সংস্কার আন্দোলনের পথিকৃৎ|
মার্টিন লুথার |
ষষ্ঠত- এই সংস্কার আন্দোলনের প্রধান কারণ ছিল জার্মানিতে পোপ কর্তৃক মার্জনা পত্র বিক্রয়ের প্রয়াস| 1617 খ্রিস্টাব্দে পোপের প্রতিনিধি জার্মানিতে অর্থ সংগ্রহের জন্য "মার্জনা পত্র" বিক্রি করতে গেলে, মার্টিন লুথার এক "manifesto" প্রচার করে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেন| সেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন যে, পাপ মোচন বা স্বস্তি দানের কোন অধিকার নেই চার্চের| প্রকৃত অনুতাপ খ্রিস্টানকে প্রভু অবশ্যই ক্ষমা করবেন| এই জন্য মার্জনা পত্র ক্রয় করে চার্চকে অর্থ প্রদানের কোনো প্রয়োজন নেই, অতএব এই প্রথা নিরর্থক নিপীড়নমূলক এবং অর্থ লুণ্ঠনকারী|
ক্রমেই এই প্রতিবাদ থেকেই প্রতিবাদী খ্রিস্টান ধর্মের উৎপত্তি হয় এবং ধর্ম সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়|
ক্রমেই এই প্রতিবাদ থেকেই প্রতিবাদী খ্রিস্টান ধর্মের উৎপত্তি হয় এবং ধর্ম সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়|
তথ্যসূত্র
- অধ্যাপক গোপালকৃষ্ণ পাহাড়ি, "ইউরোপের ইতিবৃত্ত"
- Jacob Burckhardt, "The Civilization of the Renaissance in Italy".
- Roberta J. M., "The Biography of the Object in Late Medieval and Renaissance Italy".
সম্পর্কিত বিষয়
- সাহিত্য ও শিল্পের উপর রেনেসাঁ এর প্রভাব (আরো পড়ুন)
- রেনেসাঁ ও মানবতাবাদ (আরো পড়ুন)
- নবজাগরণ বা রেনেসাঁ কাকে বলে এবং ইউরোপীয় সমাজের উপর এর প্রভাব .(আরো পড়ুন)
- মার্টিন লুথার এবং ইউরোপের ধর্ম সংস্কার আন্দোলন (আরো পড়ুন)
- ইতালীয় রেনেসাঁর চিত্রকলা (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................