মুঘল যুগের শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিকদের মধ্যে আবুল ফজল ছিলেন অন্যতম| মুঘল ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তিনি শ্রেষ্ঠ রচনা লিখে গেছেন| আবুল ফজলের পিতা শেখ মুবারক ছিলেন সেই যুগের একজন শ্রেষ্ঠ বিদ্বান, সুফিসন্ত(আরো পড়ুন) ও উদার প্রকৃতির মানুষ|
তিনি পিতার কাছ থেকে শাস্ত্র অধ্যয়ন করে এবং সেই সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় দক্ষতা অর্জন করেন| তিনি লাভ করেছিলেন অতীন্দ্রিয়বাদ ও সহিষ্ণুতা আদর্শ, যা তার চিন্তা ও মনের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল|
যুদ্ধ পতাকা, সাম্রাজ্য সীল, জাতীয় পতাকা
Author- Santosh.mbahrm
Date- 26 September 2015
Source- wikipedia (check here)
License- GNU Free Documentation License
|
মধ্যযুগের সবচেয়ে প্রতিভাবান ঐতিহাসিক আবুল ফজলের দুটি গ্রন্থ হল "আকবরনামা" ও "আইন-ই-আকবরি", 1602 খ্রিস্টাব্দে পাঁচবার সংশোধনের পর তিনি তা প্রকাশ করেন| গ্রন্থখানি প্রথম দুটি অংশ হলো "আকবরনামা" ও দ্বিতীয় অংশটি "আইন-ই-আকবরি"|
এর প্রথম খন্ডে লিপিবদ্ধ আছে তৈমুরের সময় থেকে আকবরের সময় পর্যন্ত ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে| দ্বিতীয় খন্ডে আকবরের রাজত্বকালের 46 বছরের ইতিহাস ধারাবাহিকভাবে তিনি তুলে ধরেছেন| তৃতীয় খন্ডে রাজ্যের আয়তন, সাম্রাজ্যের অবস্থা, শাসন, জনসংখ্যা, কৃষি ও শিল্প ইত্যাদির কথা উল্লেখ আছে|
তবে একথা ঠিক যে, মধ্যযুগের সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত ঐতিহাসিক আবুল ফজল ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রযুক্তিবাদের আলোকে ইতিহাস রচনা করেছেন|
"আকবরনামা" দ্বিতীয় খন্ডে আবুল ফজল ইতিহাস তথ্য সম্পর্কে তার মতামত প্রকাশ করেছেন| পূর্বসূরীদের ইতিহাস তত্ত্ব সমালোচনা করে তিনি বলেছেন- এদের ইতিহাস হল মুসলিমদের ভারত জয় ও তার শাসন কাহিনী, কিন্তু হিন্দু ও মুসলিম এর মধ্যে দ্বন্দ্ব হলো ইতিহাসের মূল বিষয়|
তার মতে ইতিহাস ও দর্শন হলো ধর্মনিরপেক্ষ ও যুক্তিবাদী, যা একে অপরের পরিপূরক| মধ্যযুগের অন্য এক খ্যাতিনামা ঐতিহাসিক বদাউনি ইতিহাস দর্শনের সাথে এখানে ছিল তার প্রধান পার্থক্য|
আবুল ফজল ছিলেন মধ্যযুগের একমাত্র ঐতিহাসিক, যিনি বহুমাত্রিক ইতিহাস রচনার পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন| রাজসভার দৈনন্দিন বিবরণী, অভিজাত, সামরিক অফিসার, প্রভৃতিদের কাছ থেকে তিনি তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং বিভিন্ন উৎস থেকে উৎপাদন সংগ্রহ করে বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা সত্যতা যাচাই করে তিনি ইতিহাস লেখার পক্ষপাতি ছিলেন|
তিনি আকবরের সব সিদ্ধান্তকে নির্বিচারে সমর্থন করেছেন, যার জন্য ইতিহাসের সত্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে| বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আবুল ফজল ছিলেন প্রথম ঐতিহাসিক যিনি যুক্তিবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষতার সূত্রপাত করেছেন| মধ্যযুগের ভারতের আবুল ফজল ছিলেন নতুন ইতিহাস রচনার প্রবর্তক|
বদাউনি আবুল ফজলের সাথে যুক্ত হয়ে আকবরের প্রশাসনে কাজে যোগ দেন| আবুল ফজলের চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে বদাউনির কোনো মিল ছিল না| আকবরের ধর্ম সম্পর্কে তিনি কঠোর সমালোচনা করেছেন| প্রকৃতপক্ষে তিনি ধর্ম ও শরীয়তের জন্য লড়াই করেছিলেন|
আবুল ফজল আকবর সম্পর্কে যেসব বাড়াবাড়ি করে ছিলেন, বদাউনি তা সমাধান করেন| আবুল ফজল আকবর সম্পর্কে এমন কিছু লিখেছেন, যেটি ভাবলে আমাদের অবাক হতে হয়|
আবুল ফজল যেভাবে চেয়েছেন, সেই ভাবে ইতিহাস রচনা করেছেন এবং যে গ্রন্থটি পাঠ করলে আমাদের মধ্যে কিছুটা বিরক্তিভাব আসে| কিন্তু অপরদিকে বদাউনি আমাদের একটি সজীব ও প্রাণবন্ত ইতিহাস উপহার দিয়েছেন| এখানেই আবুল ফজল ও বদাউনির মধ্যে প্রধান পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়|
আবুল ফজলের ইতিহাস ধর্মনিরপেক্ষ এবং যুক্তিবাদী, কিন্তু ধর্মাশ্রয়ী বদাউনির কাছে শরীয়ত হলো আল্লাহ ও পয়গম্বর এর বাণী| আবুল ফজলের রচনায় পক্ষপাতিত্ব আছে এবং তিনি আকবরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তাই ঐতিহাসিক সত্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে| আর বদাউনির লেখা পাতায় পাতায় আকবরের বিরোধিতা করা হয়েছে|
"আকবরনামা" দ্বিতীয় খন্ডে আবুল ফজল ইতিহাস তথ্য সম্পর্কে তার মতামত প্রকাশ করেছেন| পূর্বসূরীদের ইতিহাস তত্ত্ব সমালোচনা করে তিনি বলেছেন- এদের ইতিহাস হল মুসলিমদের ভারত জয় ও তার শাসন কাহিনী, কিন্তু হিন্দু ও মুসলিম এর মধ্যে দ্বন্দ্ব হলো ইতিহাসের মূল বিষয়|
তার মতে ইতিহাস ও দর্শন হলো ধর্মনিরপেক্ষ ও যুক্তিবাদী, যা একে অপরের পরিপূরক| মধ্যযুগের অন্য এক খ্যাতিনামা ঐতিহাসিক বদাউনি ইতিহাস দর্শনের সাথে এখানে ছিল তার প্রধান পার্থক্য|
মুঘল সাম্রাজ্যের মানচিত্র
Author- Santosh.mbahrm
Date- 26 September 2015
|
আবুল ফজল ছিলেন মধ্যযুগের একমাত্র ঐতিহাসিক, যিনি বহুমাত্রিক ইতিহাস রচনার পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন| রাজসভার দৈনন্দিন বিবরণী, অভিজাত, সামরিক অফিসার, প্রভৃতিদের কাছ থেকে তিনি তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং বিভিন্ন উৎস থেকে উৎপাদন সংগ্রহ করে বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা সত্যতা যাচাই করে তিনি ইতিহাস লেখার পক্ষপাতি ছিলেন|
আবুল ফজলের সীমাবদ্ধতা
তবে ঐতিহাসিক হিসেবে আবুল ফজলের মূল্যায়ন করে তার কিছু সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করতে হয়|আকবরের সামাজিক ধারণা, জনকল্যাণমুখী নীতি এবং ধর্ম সহিষ্ণুতার তিনি ছিলেন অন্ধ সমর্থক| এর জন্য তার রচনার হয়েছে পক্ষপাতমূলক|তিনি আকবরের সব সিদ্ধান্তকে নির্বিচারে সমর্থন করেছেন, যার জন্য ইতিহাসের সত্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে| বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আবুল ফজল ছিলেন প্রথম ঐতিহাসিক যিনি যুক্তিবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষতার সূত্রপাত করেছেন| মধ্যযুগের ভারতের আবুল ফজল ছিলেন নতুন ইতিহাস রচনার প্রবর্তক|
বদাউনি
আকবরের রাজত্বকালে আরেকজন অগ্রগণ্য ঐতিহাসিক হলেন মোল্লা আব্দুল কাদির, যিনি ইতিহাসে ঐতিহাসিক বদাউনি নামে পরিচিত| তিনি ছিলেন একজন পন্ডিত ব্যক্তি| শৈশবে বদাউনি খৈজী ও পিতা মুবারকের নিকট শিক্ষা লাভ করেন|বদাউনি আবুল ফজলের সাথে যুক্ত হয়ে আকবরের প্রশাসনে কাজে যোগ দেন| আবুল ফজলের চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে বদাউনির কোনো মিল ছিল না| আকবরের ধর্ম সম্পর্কে তিনি কঠোর সমালোচনা করেছেন| প্রকৃতপক্ষে তিনি ধর্ম ও শরীয়তের জন্য লড়াই করেছিলেন|
আবুল ফজল আকবর সম্পর্কে যেসব বাড়াবাড়ি করে ছিলেন, বদাউনি তা সমাধান করেন| আবুল ফজল আকবর সম্পর্কে এমন কিছু লিখেছেন, যেটি ভাবলে আমাদের অবাক হতে হয়|
আবুল ফজল যেভাবে চেয়েছেন, সেই ভাবে ইতিহাস রচনা করেছেন এবং যে গ্রন্থটি পাঠ করলে আমাদের মধ্যে কিছুটা বিরক্তিভাব আসে| কিন্তু অপরদিকে বদাউনি আমাদের একটি সজীব ও প্রাণবন্ত ইতিহাস উপহার দিয়েছেন| এখানেই আবুল ফজল ও বদাউনির মধ্যে প্রধান পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়|
আবুল ফজলের ইতিহাস ধর্মনিরপেক্ষ এবং যুক্তিবাদী, কিন্তু ধর্মাশ্রয়ী বদাউনির কাছে শরীয়ত হলো আল্লাহ ও পয়গম্বর এর বাণী| আবুল ফজলের রচনায় পক্ষপাতিত্ব আছে এবং তিনি আকবরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তাই ঐতিহাসিক সত্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে| আর বদাউনির লেখা পাতায় পাতায় আকবরের বিরোধিতা করা হয়েছে|
তথ্যসূত্র
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "অষ্টাদশ শতকের মুঘল সংকট ও আধুনিক ইতিহাস চিন্তা"
- অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস"
- V D Mahajan, "History of Medieval India"
সম্পর্কিত বিষয়
- সুফিবাদ (আরো পড়ুন)
- ভারতবর্ষে মুঘল বা মোগল সাম্রাজ্যের প্রকৃতি ও কার্যাবলীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা (আরো পড়ুন)
- মনসবদারি ব্যবস্থা এবং পরবর্তীকালে জায়গির সংকট (আরো পড়ুন)
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................