মুঘল যুগের জলসেচ ব্যবস্থা এক বিশেষ কর্তৃত্বের দাবি রাখে| এই যুগে প্রায় প্রত্যেক সম্রাটগণই জলসেচ ব্যবস্থার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছিল বলেই দেশের কৃষিজ ব্যবস্থা ও সাধারণ মানুষ উন্নতির চরম শিখরে আহরণ করেছিল|
তবে কৃত্রিম উপায়ে জলসেচ দ্বারা কৃষি উৎপাদনের পদ্ধতি ভারতের প্রাচীন কাল থেকে প্রচলিত ছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে মুঘল শাসকদের আনুগত্যের ফলস্বরূপ কৃত্রিম সেচ ব্যবস্থার আরো সম্প্রসারণ ঘটেছিল|
বৃষ্টি, নদী ও বন্যার জল ছাড়া সেচের প্রধান মাধ্যম ছিল কূপ খনন করে জল সংরক্ষণ ও বিতরণ| দিল্লি, আগ্রা ও দাক্ষিণাত্যে কৃষিতে সেচ দানের জন্য বহু কূপ খনন করা হয়েছিল বলে, বার্নিয়ের প্রমুখ ঐতিহাসিকরা উল্লেখ করেছেন|
কূপ থেকে জল উত্তোলনের জন্য নানা পদ্ধতি প্রচলন ছিল যেমন-
- বহুল প্রচলিত পদ্ধতিকে বলা হতো "ঢেঁকলী"| এই পদ্ধতিতে জমির নিকটবর্তী জলাশয় থেকে সেচ দিয়ে জল জমিতে পাঠানো হতো|
- দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো "চসার"| এই ব্যবস্থায় কুলির সাহায্যে জল তোলা হতো|
- তৃতীয় পদ্ধতি হলো "সাঁকিয়া"| এই পদ্ধতিতে বড় চাকা বলদের সাহায্যে ঘুরিয়ে একসাথে অনেক জল তোলা হতো|
পুকুর কেটে বা উঁচু বাঁধ দিয়ে জলাধার তৈরি করে, সেই জল জমিতে সেচ দেওয়ার পদ্ধতি ভারতে বেশ জনপ্রিয় ছিল| সৃজন রায় প্রমুখ ঐতিহাসিকরা লাহোর ও ঝিলাম নদীর পূর্ব তীরে উন্নত সেচ ব্যবস্থার প্রশংসা করেছেন|
সপ্তদশ শতকের সরকারি অর্থ সাহায্যে উদয় সাগর ও রাজ সাগর নামে আরও দুটি হ্রদ তৈরি করা হয়েছিল| শাহজাহানের আমলে খানদেশ ও বেবারের কৃষকদের 40 থেকে 50 হাজার টাকা অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়েছিল| কৃষকদের চাষের জন্য জলাশয় খনন করে দেওয়াকে তখনকার আমলে পুণ্যকর্ম বলে মনে করা হতো|
জমিতে সেচ দেওয়ার কাজে নদী থেকে খাল কেটে জল সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল| সেচের জন্য নদীর জলকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হতো, তবে আজকের মতো উন্নত ধরনের জলসেচ ব্যবস্থা তখন কিন্তু ছিল না|
শাহজাহানের আমলে ও পরবর্তীকালে কয়েকটি বড় ও দীর্ঘ সেচ খাল খননের উল্লেখ পাওয়া যায়| গঙ্গা,যমুনা ও সিন্ধু নদীর জল সেচ দানের জন্য প্রায় ব্যবহার করা হতো| ফিরোজ তুঘলক যমুনা থেকে যে খালটি কেটে ছিলেন, সেটি সাকিদুল নামে পরিচিত|
শাহজাহানের আমলে পাঞ্জাবের একাধিক সেচ খাল খনন করা হয়েছিল, যেমন- পাঠান কোট খাল, বাটলা খাল ও সিন্ধু উপত্যকা থেকে গাঙ্গেয় বদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তারিত খালগুলির নাম পাওয়া যায়|
মুঘল যুগে ভারতে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সার ব্যবহার করা হতো| সার হিসাবে প্রধানত গোবর সার ও পশুর বিষ্ঠা ব্যবহার করা হতো| আবার গুজরাট উপকূলে সামুদ্রিক মাছকে সার হিসেবে ব্যবহার করা হতো|
কোন কোন জমিতে একবার চাষ করে এক বা দুই বছরের জন্য অনাবাদি রাখা ছিল প্রচলিত নিয়ম| আবার কখনো এই জমিতে খাদ্যশস্য ও অর্থকরী ফসল চক্রাকারে চাষ করে জমির উৎপাদন শক্তির ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হতো|
কৃষক |
জমিতে সেচ দেওয়ার কাজে নদী থেকে খাল কেটে জল সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল| সেচের জন্য নদীর জলকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হতো, তবে আজকের মতো উন্নত ধরনের জলসেচ ব্যবস্থা তখন কিন্তু ছিল না|
শাহজাহানের আমলে ও পরবর্তীকালে কয়েকটি বড় ও দীর্ঘ সেচ খাল খননের উল্লেখ পাওয়া যায়| গঙ্গা,যমুনা ও সিন্ধু নদীর জল সেচ দানের জন্য প্রায় ব্যবহার করা হতো| ফিরোজ তুঘলক যমুনা থেকে যে খালটি কেটে ছিলেন, সেটি সাকিদুল নামে পরিচিত|
শাহজাহানের আমলে পাঞ্জাবের একাধিক সেচ খাল খনন করা হয়েছিল, যেমন- পাঠান কোট খাল, বাটলা খাল ও সিন্ধু উপত্যকা থেকে গাঙ্গেয় বদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তারিত খালগুলির নাম পাওয়া যায়|
মুঘল যুগে ভারতে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সার ব্যবহার করা হতো| সার হিসাবে প্রধানত গোবর সার ও পশুর বিষ্ঠা ব্যবহার করা হতো| আবার গুজরাট উপকূলে সামুদ্রিক মাছকে সার হিসেবে ব্যবহার করা হতো|
কোন কোন জমিতে একবার চাষ করে এক বা দুই বছরের জন্য অনাবাদি রাখা ছিল প্রচলিত নিয়ম| আবার কখনো এই জমিতে খাদ্যশস্য ও অর্থকরী ফসল চক্রাকারে চাষ করে জমির উৎপাদন শক্তির ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হতো|
তথ্যসূত্র
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "অষ্টাদশ শতকের মুঘল সংকট ও আধুনিক ইতিহাস চিন্তা"
- অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস"
সম্পর্কিত বিষয়
- ভারতবর্ষে মুঘল বা মোগল সাম্রাজ্যের প্রকৃতি ও কার্যাবলীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা (আরো পড়ুন)
- আওরঙ্গজেব বা ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................