মুঘল যুগে ভারতের অধিকাংশ গ্রামে ছোট ছোট ব্যাংকার ছিল, এদের শরফ বলা হত| শরফের আসল কাজ মুদ্রা পরীক্ষা করা হলে সেই প্রতীক মুদ্রা প্রদান করতে পারত| কাজটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও অধিকাংশ গ্রামে শরফদের দেখা যেত|
মুদ্রা বিনিময়, টাকা পাঠানো, হুন্ডির ব্যবস্থা তথা হুন্ডির বদলে অর্থ প্রদান ইত্যাদি সমস্ত আর্থিক অর্থাৎ বাণিজ্যিক কাজকর্মে ব্যাংকার তথা শরফদের করতে হতো|
ঋণের ব্যবসা কোন নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের একচেটিয়া ছিল না| শরফ ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী সুদের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল| বানিয়া ও মহাজন শুধু বাণিজ্য করতো না, তারা ব্যাংকার হিসাবেও কাজ করতো| মহাজনদের মধ্যে ধনীরা বড় বড় ব্যবসায়ীদের টাকা ধার দিতো|
মুঘল যুগে ব্যবসা-বাণিজ্য নগদ অর্থে লেনদেনের পরিবর্তে হুন্ডির প্রথা প্রচলিত ছিল| এর ফলে মূলধন সহজলভ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল| ব্যাংকারের কাছে গচ্ছিত টাকার বিনিময় হুন্ডির মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় আর্থিক লেনদেন এবং সরকারি প্রশাসন পর্যন্তও হুন্ডি ব্যবহার করত|
এই যুগে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্য শ্রেণীর বণিক নিয়োজিত থাকতো| এই বণিক শ্রেণীকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-
এই যুগে ব্যাংকার শ্রেণী সবথেকে ঐতিহ্যশালী ব্যক্তি ছিল| সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে সব থেকে বড় ব্যাংকারের মালিক ছিলেন মানিক চাঁদ নামে একজন ব্যক্তি| তিনি আওরঙ্গজেবকে এত টাকা দিয়েছিলেন যে, আওরঙ্গজেব তাতে খুশি হয়ে তাকে "শেট" উপাধিতে ভূষিত করে|
মানিক চাঁদ ও তার পরিবারের সকলেই ব্যাংকার হিসাবে মুঘল যুগে কাজ করেছিল| মানিক চাঁদের পালিত পুত্র ফতে চাঁদ ছিল মুশিদাবাদের ব্যাংকারের মালিক| সম্রাট ফারুকশিয়ারের আর্থিক সংকটকালে তিনি তাকে এত টাকা দিয়েছিলেন যে, তাতে খুশি হয়ে ফারুকশিয়ার ফতে চাঁদকে "জগৎ শেট" উপাধিতে ভূষিত করে|
স্থলপথে ও আঞ্চলিক বাণিজ্যে নিয়োজিত বণিকদের নানা শ্রেণী ছিল| গৌতম ভদ্র লিখেছেন ,উত্তর-পশ্চিম ভারতের শিখ ধর্মাবলম্বী লোহানা ও ক্ষত্রিয়, অন্ধের কোমতি, তামিলনাড়ুর চেট্টিয়া, গুজরাটে খোজা ম্যানন ও বিরজি বহরা, পূর্ব ভারতের আরমেনিয়াম, রাজস্থানের বানিয়া প্রভৃতিরা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল|
সর্বশেষ স্তরে বণিক হলো স্থানীয় বাণিজ্যে নিয়োজিত বণিক| এরা গ্রামের নির্দিষ্ট অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে পণ্য কেনা-বেচা করত| তবে এদের মধ্যে নানা স্তর ছিল এবং আর্থিক দিক থেকে লক্ষণীয় প্রভেদ ছিল| কোন কোন জায়গায় মানুষ এদের সওদাগর বলতো|
মুদ্রা বিনিময়, টাকা পাঠানো, হুন্ডির ব্যবস্থা তথা হুন্ডির বদলে অর্থ প্রদান ইত্যাদি সমস্ত আর্থিক অর্থাৎ বাণিজ্যিক কাজকর্মে ব্যাংকার তথা শরফদের করতে হতো|
মুঘল সাম্রাজ্যের মানচিত্র
Author- Santosh.mbahrm
Date- 26 September 2015
|
ঋণের ব্যবসা কোন নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের একচেটিয়া ছিল না| শরফ ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী সুদের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল| বানিয়া ও মহাজন শুধু বাণিজ্য করতো না, তারা ব্যাংকার হিসাবেও কাজ করতো| মহাজনদের মধ্যে ধনীরা বড় বড় ব্যবসায়ীদের টাকা ধার দিতো|
মুঘল যুগে ব্যবসা-বাণিজ্য নগদ অর্থে লেনদেনের পরিবর্তে হুন্ডির প্রথা প্রচলিত ছিল| এর ফলে মূলধন সহজলভ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল| ব্যাংকারের কাছে গচ্ছিত টাকার বিনিময় হুন্ডির মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় আর্থিক লেনদেন এবং সরকারি প্রশাসন পর্যন্তও হুন্ডি ব্যবহার করত|
এই যুগে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্য শ্রেণীর বণিক নিয়োজিত থাকতো| এই বণিক শ্রেণীকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-
- ইউরোপীয় বণিক
- সামুদ্রিক বাণিজ্যে নিয়োজিত ভারতীয় বণিক
- অন্তর মহাদেশীয় ও আঞ্চলিক বাণিজ্যে নিয়োজিত বণিক
- স্থানীয় বাণিজ্যে নিয়োজিত বণিক
এই যুগে বহির্দেশীয় সামুদ্রিক বাণিজ্যে নিয়োজিত ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে প্রধানত ছিল- পর্তুগিজ, ডাচ, ইংরেজ ও ফরাসিরা|
এই যুগের সামুদ্রিক বাণিজ্যে ভারতীয় বণিকদের কার্যকলাপ ও আধিপত্য উল্লেখযোগ্য ছিল| বাণিজ্য স্বার্থে হিন্দু ও মুসলিম বণিকরা ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল| এই জন্য এরা পরস্পরকে ভাই বলে সম্বোধন করতো| এদের অর্থ-প্রাচুর্য ও প্রতিপত্তি ছিল এক কথায় বিস্ময়কর| অধ্যাপক গৌতম ভদ্র লিখেছেন, সুরাটে বিরজি বহরা 80 লক্ষ টাকার মালিক ছিল|এই যুগে ব্যাংকার শ্রেণী সবথেকে ঐতিহ্যশালী ব্যক্তি ছিল| সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে সব থেকে বড় ব্যাংকারের মালিক ছিলেন মানিক চাঁদ নামে একজন ব্যক্তি| তিনি আওরঙ্গজেবকে এত টাকা দিয়েছিলেন যে, আওরঙ্গজেব তাতে খুশি হয়ে তাকে "শেট" উপাধিতে ভূষিত করে|
মানিক চাঁদ ও তার পরিবারের সকলেই ব্যাংকার হিসাবে মুঘল যুগে কাজ করেছিল| মানিক চাঁদের পালিত পুত্র ফতে চাঁদ ছিল মুশিদাবাদের ব্যাংকারের মালিক| সম্রাট ফারুকশিয়ারের আর্থিক সংকটকালে তিনি তাকে এত টাকা দিয়েছিলেন যে, তাতে খুশি হয়ে ফারুকশিয়ার ফতে চাঁদকে "জগৎ শেট" উপাধিতে ভূষিত করে|
স্থলপথে ও আঞ্চলিক বাণিজ্যে নিয়োজিত বণিকদের নানা শ্রেণী ছিল| গৌতম ভদ্র লিখেছেন ,উত্তর-পশ্চিম ভারতের শিখ ধর্মাবলম্বী লোহানা ও ক্ষত্রিয়, অন্ধের কোমতি, তামিলনাড়ুর চেট্টিয়া, গুজরাটে খোজা ম্যানন ও বিরজি বহরা, পূর্ব ভারতের আরমেনিয়াম, রাজস্থানের বানিয়া প্রভৃতিরা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল|
সর্বশেষ স্তরে বণিক হলো স্থানীয় বাণিজ্যে নিয়োজিত বণিক| এরা গ্রামের নির্দিষ্ট অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে পণ্য কেনা-বেচা করত| তবে এদের মধ্যে নানা স্তর ছিল এবং আর্থিক দিক থেকে লক্ষণীয় প্রভেদ ছিল| কোন কোন জায়গায় মানুষ এদের সওদাগর বলতো|
তথ্যসূত্র
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "অষ্টাদশ শতকের মুঘল সংকট ও আধুনিক ইতিহাস চিন্তা"
- অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস"
সম্পর্কিত বিষয়
- মুঘল মুদ্রা ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
- মুঘল চিত্রকলা (আরো পড়ুন)
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................