সমগ্র মুঘল যুগে কৃষক-জমিদাররা মুঘল শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল| তবে এই প্রতিরোধের চরিত্র ছিল যে, কৃষকদের সঙ্গে জমিদাররা হাত মিলিয়ে শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অংশগ্রহণ করেছিল|
কৃষক বিদ্রোহের কারণ
সপ্তদশ শতকে মুঘল শাসনকালে একাধিক কারণে কৃষক বিদ্রোহ ঘটে| এই সম্পর্কে নিম্নলিখিত কারণগুলি আলোচনা করা যায়, যথা-
- ভারতের কৃষক কুল ছিল মুঘল কোষাগারের প্রাণশক্তি| কিন্তু সপ্তদশ শতকে রাজস্বের পরিমাণ এতই বৃদ্ধি পাই যে, কৃষকরা বিদ্রোহী হতে বাধ্য হয়েছিল|
- মুঘল যুগে বিশেষ করে সপ্তদশ শতকে জায়গিরদারি ব্যবস্থায়(আরো পড়ুন) কৃষকদের শোষণ মাত্রা বেড়ে ছিল| বার্নিয়ে বলেছেন, "মুহুর্তের মধ্যে অধিকার থেকে কৃষকরা বঞ্চিত হতে বাধ্য হতো"|
- মুঘল জায়গির ও ফৌজদারেরা গ্রামে শান্তির পরিবর্তে লুঠ করতো| গ্রামে চুরি-ডাকাতি হলে মাল উদ্ধারের অজুহাতে গ্রাম লুঠ করতো| পিটার মান্ডি এই ব্যাপারে লিখেছেন যে, এই ধরনের ঘটনায় পুরুষদের মেরে ফেলা হতো|
- দুর্ভিক্ষ, অনাবৃষ্টি প্রভৃতি ছিল মুঘল যুগে অভাব-অভিযোগের প্রধান কারণ| অভাবের তাড়নায় জীবিত মানুষ কুকুরের মাংস পর্যন্ত খেতে বাধ্য থাকত|
সুবোধ কুমার মুখোপাধ্যায় দুর্ভিক্ষ-পীড়িত এলাকার নিম্নরূপ চিত্র তুলে ধরেছেন,
সময়কাল --------- এলাকা
1.আকবরের রাজত্বের শুরুতে ---> দিল্লি, আগ্রা
2.ষাটের দশকের মাঝামাঝি ---> গুজরাট
3.সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে---> সরহিন্দ ও গুজরাট
4. 1630 - 32 খ্রিস্টাব্দ ---> গুজরাট ও দাক্ষিণাত্য
5. 1659 - 60 খ্রিস্টাব্দ ---> সিন্ধু প্রদেশ
6. 1702 খ্রিস্টাব্দ ---> দক্ষিনে
গোটা মুঘল আমল জুড়ে বহু আঞ্চলিক বিদ্রোহ হয়েছিল, বিশেষত কৃষক ও জমিদার বিদ্রোহ| বাবরের আত্মজীবনী থেকে জানা যায় যে, সমতল ভূমির বিস্তৃত দুর্ভেদ্য কাঁটা ঝোপ-ঝাড়, বন-জঙ্গলের উপর নির্ভর করে জনসাধারণ বিদ্রোহ করে এবং রাজস্ব দিতে অস্বীকার করে| তুজুক-ই-ফিরিস্তাতেই অনুরূপ কথা বলা হয়েছে|
বাবর ও হুমায়ুনের সময় প্রতিরোধ আন্দোলন থাকলেও তা তীব্র ছিল না| কিন্তু আকবরের রাজত্বকাল হল মুঘল রাষ্ট্রের প্রসার ও বিস্তৃতির যুগ| হিন্দু সামন্ত, জমিদার ও কৃষক সম্প্রদায় বহু জায়গাতেই মুঘল রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত হতে অনিচ্ছুক ছিল|
আকবরের রাজত্বের সামন্ত বিদ্রোহ হয়েছিল প্রায় 29 বার, পুরনো সুবিধাভোগী শাসক শ্রেণীর বিদ্রোহ হয়েছিল প্রায় 79 বার| 1562 ও 1577 খ্রিস্টাব্দে আগ্রার কৃষকরা বিদ্রোহ করে, প্রথমবার আকবর ও দ্বিতীয়বার কাশিম খান এদের শায়েস্তা করে|
সপ্তদশ শতকের শেষভাগ থেকেই মুঘল রাজশক্তির ধারক ও বাহক মুঘল শাসক শ্রেণীর অন্তর্নিহিত দুর্বলতা ও দ্বন্দ্বগুলো বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে অত্যন্ত প্রকট আকার ধারণ করলেও বিচ্ছিন্নতাকামী শক্তিগুলো সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বিদ্রোহের উৎসাহ দেয়|
আওরঙ্গজেবের আমলে উত্তর-পূর্ব সীমান্তে কোচ ও অহম জাতি এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ইউ সুফ জাই, আফ্রিদি ইত্যাদি আফগান উপজাতি বিদ্রোহ করে| এছাড়াও আওরঙ্গজেবের আমলে গুজরাটের কোলি কৃষক বিদ্রোহ, আমেখি অঞ্চলের কুমি কৃষক বিদ্রোহ, মারাঠা কৃষক বিদ্রোহ, মথুরায় জাঠ ও রাজনাথ জাঠের নেতৃত্বে জাঠ বিদ্রোহ, মেবারের রানা রাজ সিংহ ও জয় সিংহের(আরো পড়ুন) বিদ্রোহ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য|
পরিশেষে অধ্যাপক গৌতম ভদ্র বলেন, বিদ্রোহগুলির চরিত্র সবসময় একরকম ছিলো না| স্থান, কাল, পাত্র ভেদে এর চরিত্র বদলায়| সংগঠন ও নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটে, তবে বিদ্রোহের কারণগুলির মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলিকে প্রধান বলা হয়ে থাকে| মুঘল শাসকের অর্থনৈতিক সমতা বজায় রাখতে পারেনি, ফলে এসেছে বিপর্যয়|
সময়কাল --------- এলাকা
1.আকবরের রাজত্বের শুরুতে ---> দিল্লি, আগ্রা
2.ষাটের দশকের মাঝামাঝি ---> গুজরাট
3.সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে---> সরহিন্দ ও গুজরাট
4. 1630 - 32 খ্রিস্টাব্দ ---> গুজরাট ও দাক্ষিণাত্য
5. 1659 - 60 খ্রিস্টাব্দ ---> সিন্ধু প্রদেশ
6. 1702 খ্রিস্টাব্দ ---> দক্ষিনে
কৃষক বিদ্রোহ
মুঘল শাসনকাল ব্যাপী কৃষক বিদ্রোহ ঘটেছিল, এতে সন্দেহ নেই| অধ্যাপক গৌতম ভদ্রের "মুঘল কৃষি অর্থনীতি ও কৃষক বিদ্রোহ", "তুজুক-ই-জাহাঙ্গীরী" ও অন্যান্য উপাদান থেকে মুঘল যুগে কৃষক বিদ্রোহের চিত্র পাওয়া যায়|গোটা মুঘল আমল জুড়ে বহু আঞ্চলিক বিদ্রোহ হয়েছিল, বিশেষত কৃষক ও জমিদার বিদ্রোহ| বাবরের আত্মজীবনী থেকে জানা যায় যে, সমতল ভূমির বিস্তৃত দুর্ভেদ্য কাঁটা ঝোপ-ঝাড়, বন-জঙ্গলের উপর নির্ভর করে জনসাধারণ বিদ্রোহ করে এবং রাজস্ব দিতে অস্বীকার করে| তুজুক-ই-ফিরিস্তাতেই অনুরূপ কথা বলা হয়েছে|
কৃষক |
বাবর ও হুমায়ুনের সময় প্রতিরোধ আন্দোলন থাকলেও তা তীব্র ছিল না| কিন্তু আকবরের রাজত্বকাল হল মুঘল রাষ্ট্রের প্রসার ও বিস্তৃতির যুগ| হিন্দু সামন্ত, জমিদার ও কৃষক সম্প্রদায় বহু জায়গাতেই মুঘল রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত হতে অনিচ্ছুক ছিল|
আকবরের রাজত্বের সামন্ত বিদ্রোহ হয়েছিল প্রায় 29 বার, পুরনো সুবিধাভোগী শাসক শ্রেণীর বিদ্রোহ হয়েছিল প্রায় 79 বার| 1562 ও 1577 খ্রিস্টাব্দে আগ্রার কৃষকরা বিদ্রোহ করে, প্রথমবার আকবর ও দ্বিতীয়বার কাশিম খান এদের শায়েস্তা করে|
সপ্তদশ শতকের শেষভাগ থেকেই মুঘল রাজশক্তির ধারক ও বাহক মুঘল শাসক শ্রেণীর অন্তর্নিহিত দুর্বলতা ও দ্বন্দ্বগুলো বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে অত্যন্ত প্রকট আকার ধারণ করলেও বিচ্ছিন্নতাকামী শক্তিগুলো সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বিদ্রোহের উৎসাহ দেয়|
আওরঙ্গজেবের আমলে উত্তর-পূর্ব সীমান্তে কোচ ও অহম জাতি এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ইউ সুফ জাই, আফ্রিদি ইত্যাদি আফগান উপজাতি বিদ্রোহ করে| এছাড়াও আওরঙ্গজেবের আমলে গুজরাটের কোলি কৃষক বিদ্রোহ, আমেখি অঞ্চলের কুমি কৃষক বিদ্রোহ, মারাঠা কৃষক বিদ্রোহ, মথুরায় জাঠ ও রাজনাথ জাঠের নেতৃত্বে জাঠ বিদ্রোহ, মেবারের রানা রাজ সিংহ ও জয় সিংহের(আরো পড়ুন) বিদ্রোহ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য|
পরিশেষে অধ্যাপক গৌতম ভদ্র বলেন, বিদ্রোহগুলির চরিত্র সবসময় একরকম ছিলো না| স্থান, কাল, পাত্র ভেদে এর চরিত্র বদলায়| সংগঠন ও নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটে, তবে বিদ্রোহের কারণগুলির মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলিকে প্রধান বলা হয়ে থাকে| মুঘল শাসকের অর্থনৈতিক সমতা বজায় রাখতে পারেনি, ফলে এসেছে বিপর্যয়|
তথ্যসূত্র
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "অষ্টাদশ শতকের মুঘল সংকট ও আধুনিক ইতিহাস চিন্তা"
- অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস"
সম্পর্কিত বিষয়
- মুঘল মুদ্রা ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
- মুঘল চিত্রকলা (আরো পড়ুন)
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
- মুঘল ভারতের ব্যাংকার এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায় (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................