ভারতীয় স্থাপত্য শিল্পের মতো মুঘল চিত্রকলা ভারতীয় ও পারসিক শিল্পনীতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল| মুঘল চিত্রকলায় ভারতীয় শিল্পনীতির সঙ্গে বৌদ্ধ, বহ্লিক, ইরানি ও চীন শিল্পনীতির এক অপূর্ব সমন্বয় ও সংমিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়|
শিল্পীরা কল্পনা, সম্রাট ও অভিজাত শ্রেণীর ইচ্ছা অনুযায়ী মুঘল চিত্রকলা কখনো আঙ্গিক, কখনো চিত্রের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য, কখনোবা বিষয়বস্তুর প্রকাশকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে|
বিষয়বস্তু হিসেবে রাজনৈতিক ঘটনা, সম্রাটের যুদ্ধযাত্রা, শিকার ও বিচার সভা এবং নানা প্রাকৃতিক দৃশ্য, বৃক্ষ, পশু-পক্ষী ও রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনী নিয়ে মুঘল যুগের চিত্র অঙ্কন করা হতো|
আকবরের আমলের চিত্রকলা
মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতারা ছিলেন আন্তরিকভাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুরাগী| প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ধরে রাখার জন্য আকবর দরবারে বেশ কয়েকজন চিত্রশিল্পীর নিয়োগ করেছিলেন| পারস্যে থাকাকালীন তিনি সৈয়দ আলী ও খাজা আব্দুস সামাদ নামে দুই চিত্রশিল্পীর সঙ্গে পরিচিত হন এবং তাদেরকে হুমায়ুন দিল্লির দরবারে নিয়ে আসেন| এই দুই চিত্রশিল্পীকে কেন্দ্র করেই মুঘল চিত্রকলার বিবর্তন শুরু হয়|
আকবরের আমলে মুঘল চিত্রশিল্প যথেষ্ট প্রসার লাভ করে| আব্দুস সামাদের নেতৃত্বে তিনি একটি পৃথক চিত্রশিল্প বিভাগ স্থাপন করেন| তার আমলে প্রধান 17 জন চিত্রশিল্পীর মধ্যে 13 জন ছিলেন হিন্দু এবং চিত্র শিল্পীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মুকুন্দ, আব্দুস সামাদ, ফারুক বেগ প্রমুখ|
জাহাঙ্গীরের আমলে মুঘল চিত্রশিল্পী আত্মনির্ভর ও পরিপক্ক হয়ে উঠে এবং ভারতীয় শিল্পীরা ইউরোপিয়ান চিত্রকলার সংস্পর্শে আসেন, আর চিত্রের সামনে চিত্রকরের নাম উল্লেখ করা এই সময় থেকেই শুরু হয়| এর ফলে মুঘল চিত্রে পরিপ্রেক্ষিত ব্যঞ্জনা নিসর্গকে বিষয়বস্তু হিসেবে আধুনিক গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়|
তার আমলে বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীরা হলেন আবুল হাসান, মুহাম্মদ ফারুক, মনসুর প্রমুখ এবং হিন্দু শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন মনোহর, বিশোন দাস, কেশব, তুলসী প্রমুখ শিল্পীরা|
শিল্প বিশেষজ্ঞ পার্সী ব্রাউন লিখেছেন, "জাহাঙ্গীরের অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল, কিন্তু তার ছিল শিল্পের দৃষ্টি| যতদিন জীবিত ছিলেন তিনিই ছিলেন মুঘল চিত্রকলার প্রাণ স্বরূপ"|
তাই পার্সী ব্রাউন বলেছেন, "শাহজাহানের আমলে মুঘল চিত্রকলার যে অবক্ষয়ের সূচনা ঘটে, তা আওরঙ্গজেবের আমলে পূর্ণতা পায়"|
আবার এই সময় পাঞ্জাবের কাংড়া এবং জম্মু কাশ্মীরের চিত্রকলার যথেষ্ট উন্নতি হয়|
পরিশেষে মুঘল চিত্রকলা ভারতের ইতিহাসে যে এক উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিল, তার গুরুত্ব এক কথায় অনস্বিকার্য|
জাহাঙ্গীরের আমলের চিত্রকলা
শিল্প বিশেষজ্ঞ আনন্দ কুমার স্বামী জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালকে মুঘল চিত্রকলার ইতিহাসে "সুবর্ণ যুগ" বলে আখ্যায়িত করেছেন|জাহাঙ্গীরের আমলে মুঘল চিত্রশিল্পী আত্মনির্ভর ও পরিপক্ক হয়ে উঠে এবং ভারতীয় শিল্পীরা ইউরোপিয়ান চিত্রকলার সংস্পর্শে আসেন, আর চিত্রের সামনে চিত্রকরের নাম উল্লেখ করা এই সময় থেকেই শুরু হয়| এর ফলে মুঘল চিত্রে পরিপ্রেক্ষিত ব্যঞ্জনা নিসর্গকে বিষয়বস্তু হিসেবে আধুনিক গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়|
তার আমলে বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীরা হলেন আবুল হাসান, মুহাম্মদ ফারুক, মনসুর প্রমুখ এবং হিন্দু শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন মনোহর, বিশোন দাস, কেশব, তুলসী প্রমুখ শিল্পীরা|
শিল্প বিশেষজ্ঞ পার্সী ব্রাউন লিখেছেন, "জাহাঙ্গীরের অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল, কিন্তু তার ছিল শিল্পের দৃষ্টি| যতদিন জীবিত ছিলেন তিনিই ছিলেন মুঘল চিত্রকলার প্রাণ স্বরূপ"|
শাহজাহানের আমলের চিত্রকলা
শাহজান চিত্রকলার তুলনায় স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের প্রতি ছিলেন বিশেষ আগ্রহী| তার আমলে কোন কোন আমির ওমরাহ ব্যক্তিগতভাবে চিত্রকলার পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন| এতদুর সত্বেও তার রাজত্বকালকে মুঘল চিত্রকলার "Beginning of the end" বলে অভিহিত করা যায়|
যুদ্ধ পতাকা, সাম্রাজ্য সীল, জাতীয় পতাকা
Author- Santosh.mbahrm
Date- 26 September 2015
Source- wikipedia (check here)
License- GNU Free Documentation License
|
আওরঙ্গজেবের আমলে মুঘল চিত্রকলার অবক্ষয়
আওরঙ্গজেব চিত্রকলার ঘোর বিরোধী ছিলেন| তিনি চিত্র সংস্থা বন্ধ করে দিয়েছিলেন| দরবারের শিল্পীরা প্রাদেশিক দরবারে আশ্রয় নেয়|তাই পার্সী ব্রাউন বলেছেন, "শাহজাহানের আমলে মুঘল চিত্রকলার যে অবক্ষয়ের সূচনা ঘটে, তা আওরঙ্গজেবের আমলে পূর্ণতা পায়"|
মুঘল চিত্রকলার বৈশিষ্ট্য
এই যুগে মুঘল দরবারে বাইরে ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে লোক শিল্পের বিকাশ ঘটে| মুঘল ধারা থেকে স্বতন্ত্র হলেও এই সময়ে রাজস্থান ও মধ্য ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং দক্ষিণ ভারতের বিজাপুর ও গোলকুন্ডায় ভারতীয় চিত্রকলা চর্চা যথেষ্ট গুরুত্ব সঙ্গে পালন করা হয়েছিল|আবার এই সময় পাঞ্জাবের কাংড়া এবং জম্মু কাশ্মীরের চিত্রকলার যথেষ্ট উন্নতি হয়|
পরিশেষে মুঘল চিত্রকলা ভারতের ইতিহাসে যে এক উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিল, তার গুরুত্ব এক কথায় অনস্বিকার্য|
তথ্যসূত্র
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "অষ্টাদশ শতকের মুঘল সংকট ও আধুনিক ইতিহাস চিন্তা"
- অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস"
সম্পর্কিত বিষয়
- ভারতবর্ষে মুঘল বা মোগল সাম্রাজ্যের প্রকৃতি ও কার্যাবলীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা (আরো পড়ুন)
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................