ষোড়শ শতকের মধ্যভাগ থেকে অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রায় 200 বছর ধরে মানুষের চেতনায় বিশ্ব চরাচর সম্পর্কে যে নতুন চেতনার স্থান পেয়েছিল তাকে আমরা "বৈজ্ঞানিক বিপ্লব" বলে মনে করি|
আধুনিক ঐতিহাসিকরা যেভাবে বিজ্ঞান বিপ্লবকে একটা ধর্ম বিযুক্ত যুগদর্শনের প্রতীক হিসাবে মনে করেন, সেই অর্থে আধুনিক যুগের প্রারম্ভে এই বৈজ্ঞানিক বা ধর্মের সঙ্গে তাদের বিজ্ঞান জিজ্ঞাসার কোন সংঘাত দেখেনি|
এই পার্থিব জগতের গতি প্রকৃতি তারা ব্যাখ্যা করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু পার্থিব জগৎ তাদের দৃষ্টিতে ছিল ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি| তাই আধুনিক ঐতিহাসিকরা যখন অতীতের বিজ্ঞান সাধনার মধ্যে এক ধরনের ঈশ্বর বিযুক্তির ধারণার উৎস খুঁজেন, তখন তারা তাদের বর্তমান অবস্থা থেকে অতীতের দিকে ফিরে তাকান| কিভাবে চেতনার স্তরে এই পার্থিব জগৎ ধর্মীয় কল্পনার ঐশ্বরিক বিশ্ব চরাচর থেকে বিচ্ছিন্ন হলো, তা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন|
আসলে বিজ্ঞান বিপ্লব ধারণাটি একটি সম্পূর্ণ আধুনিক ধারণা| ধারণাটি সঙ্গে জড়িয়ে আছে ষোড়শ শতক থেকে অষ্টাদশ শতকের বিজ্ঞান চর্চার ধারণার পরিবর্তনের মাধ্যমে|
কয়েকটি স্তরে আমরা এই পরিবর্তনকে লক্ষ্য করে থাকি, যেমন-
আরব দুনিয়ার মাদ্রাসাগুলিতে জ্যোতির বিজ্ঞান ও গণিত চর্চার মাধ্যমে প্রাচীন গ্রিক, গণিত টিকে ছিল- এই কথা অস্বীকার করা যায় না যে, ইউরোপ এই প্রাচীন বিজ্ঞানকে আবিষ্কার করেছিল আরবি অনুবাদের মাধ্যমে|
বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপর ধর্মের প্রভাব থাকলেও সেখানে আইন, নীতি ও প্রকৃতি দর্শন চর্চা করা হতো| মধ্যযুগের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির চেষ্টাতে গ্রিক ও আরবি বিজ্ঞান ইউরোপে আসতে পেরেছিল| এর ফলে পরবর্তী কয়েক শতাব্দি ধরে বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে বিস্তৃত হয়েছিল|
বিশ্ব চরাচরকে কতগুলি নিয়মের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে যে পদ্ধতি এই বিজ্ঞান চর্চার থেকে জন্ম নেই, সেভাবে পৃথিবীকে একটা প্রাকৃতিক যন্ত্র হিসাবে কল্পনা করা হয়েছিল এবং এই যন্ত্রের প্রকৃতি যুক্তি দিয়ে বোঝানোর যে চেষ্টা আমরা দেখি, সেখানে বুঝতে হবে আধুনিক বিজ্ঞানের উৎস|
এরফলে সৃষ্টি হয় বিজ্ঞান ও বিশ্বাসের সংঘাত| স্বাভাবিকভাবেই বিজ্ঞান চর্চার এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি গ্রীক ধর্মবিশ্বাসের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল| একদিকে ছিল ধর্মীয় বিশ্বাসের জগৎ, যার উৎস ছিল ধর্ম শাস্ত্র চর্চা এবং অন্যদিকে ছিল দর্শন|
এরিস্টটলের গ্রন্থ পাঠ করে ছাত্রদের মনে এই ধারণা হয় যে, পৃথিবী কতগুলি প্রাকৃতিক নিয়মে চলে, যেখানে ধর্ম জ্ঞানের কোন প্রাসঙ্গিকতা নেই| এর ফলে ঈশ্বরের নিয়ম সম্পর্কে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে এবং মানুষ প্রাকৃতিক জগতের ঈশ্বরের উপস্থিতি নিয়ে অনেকটাই অবিশ্বাসী হয়ে উঠেন|
তবে একথা অনস্বীকার্য যে, মধ্যযুগের জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতা দেখা যায়| সমাজের রক্ষণশীল মানুষ বিশেষত ধর্মযাজকরা অনেক সময় এর নিন্দা করেছিলেন| তবুও তাদের বাধা দানের অন্তরালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে জ্ঞান চর্চার ধারা অব্যাহত ছিল|
পৃথিবী স্থির না গতিশীল, জ্যোতিষ্কের দেহে তাপ আসে কিনা? অনুসন্ধিৎসা মন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে নতুন বিজ্ঞান তথ্যের সম্মুখীন হয়েছিল| কিন্তু এমন একটা সময় আসে জ্ঞানচর্চার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তখন ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে| এই জ্ঞান চর্চা মানুষকে বুঝিয়ে ছিল, পৃথিবীর সব কিছু যুক্তি দিয়ে বিচার্য| মানুষ এরফলে কতগুলি সীমারেখা টানতে সমর্থ হয়েছিল|
.......................................
আধুনিক ঐতিহাসিকরা যেভাবে বিজ্ঞান বিপ্লবকে একটা ধর্ম বিযুক্ত যুগদর্শনের প্রতীক হিসাবে মনে করেন, সেই অর্থে আধুনিক যুগের প্রারম্ভে এই বৈজ্ঞানিক বা ধর্মের সঙ্গে তাদের বিজ্ঞান জিজ্ঞাসার কোন সংঘাত দেখেনি|
এই পার্থিব জগতের গতি প্রকৃতি তারা ব্যাখ্যা করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু পার্থিব জগৎ তাদের দৃষ্টিতে ছিল ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি| তাই আধুনিক ঐতিহাসিকরা যখন অতীতের বিজ্ঞান সাধনার মধ্যে এক ধরনের ঈশ্বর বিযুক্তির ধারণার উৎস খুঁজেন, তখন তারা তাদের বর্তমান অবস্থা থেকে অতীতের দিকে ফিরে তাকান| কিভাবে চেতনার স্তরে এই পার্থিব জগৎ ধর্মীয় কল্পনার ঐশ্বরিক বিশ্ব চরাচর থেকে বিচ্ছিন্ন হলো, তা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন|
আসলে বিজ্ঞান বিপ্লব ধারণাটি একটি সম্পূর্ণ আধুনিক ধারণা| ধারণাটি সঙ্গে জড়িয়ে আছে ষোড়শ শতক থেকে অষ্টাদশ শতকের বিজ্ঞান চর্চার ধারণার পরিবর্তনের মাধ্যমে|
কয়েকটি স্তরে আমরা এই পরিবর্তনকে লক্ষ্য করে থাকি, যেমন-
- এই সময় বিশ্ব প্রকৃতি সম্পর্কে এক নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটে, যা ছিল বৈপ্লবিক|
- নব উদ্ভূত এই বৈজ্ঞানিক চেতনার ভিত্তি ছিল বিজ্ঞান|
- ধর্মীয় দর্শনের ভূমিকা ছিল অপ্রাসঙ্গিক|
বিজ্ঞান চেতনা ক্ষেত্রেই এই পরিবর্তনই ছিল "বিজ্ঞান বিপ্লব"|
ইউরোপের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব
ষোড়শ শতকের আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার ব্যাখ্যা করতে গেলে এই কথা অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে, পাশ্চাত্যের আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার ভিত্তি তৈরি করেছিল মধ্যযুগের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি| জ্ঞান চর্চার প্রসারের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একটি বিশেষ ভূমিকা ছিল, যা সাধারণত প্রাচ্যদেশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেখা যায় না|আরব দুনিয়ার মাদ্রাসাগুলিতে জ্যোতির বিজ্ঞান ও গণিত চর্চার মাধ্যমে প্রাচীন গ্রিক, গণিত টিকে ছিল- এই কথা অস্বীকার করা যায় না যে, ইউরোপ এই প্রাচীন বিজ্ঞানকে আবিষ্কার করেছিল আরবি অনুবাদের মাধ্যমে|
বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপর ধর্মের প্রভাব থাকলেও সেখানে আইন, নীতি ও প্রকৃতি দর্শন চর্চা করা হতো| মধ্যযুগের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির চেষ্টাতে গ্রিক ও আরবি বিজ্ঞান ইউরোপে আসতে পেরেছিল| এর ফলে পরবর্তী কয়েক শতাব্দি ধরে বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে বিস্তৃত হয়েছিল|
পৃথিবী সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক চেতনা
সৌরমন্ডল ও জীবজগৎ সম্পর্কে যে বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির উত্থান ঘটেছিল তাকেই আমরা বৈজ্ঞানিক চেতনা বলে চিহ্নিত করতে পারি|সৌরমন্ডল |
বিশ্ব চরাচরকে কতগুলি নিয়মের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে যে পদ্ধতি এই বিজ্ঞান চর্চার থেকে জন্ম নেই, সেভাবে পৃথিবীকে একটা প্রাকৃতিক যন্ত্র হিসাবে কল্পনা করা হয়েছিল এবং এই যন্ত্রের প্রকৃতি যুক্তি দিয়ে বোঝানোর যে চেষ্টা আমরা দেখি, সেখানে বুঝতে হবে আধুনিক বিজ্ঞানের উৎস|
এরফলে সৃষ্টি হয় বিজ্ঞান ও বিশ্বাসের সংঘাত| স্বাভাবিকভাবেই বিজ্ঞান চর্চার এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি গ্রীক ধর্মবিশ্বাসের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল| একদিকে ছিল ধর্মীয় বিশ্বাসের জগৎ, যার উৎস ছিল ধর্ম শাস্ত্র চর্চা এবং অন্যদিকে ছিল দর্শন|
এরিস্টটলের গ্রন্থ পাঠ করে ছাত্রদের মনে এই ধারণা হয় যে, পৃথিবী কতগুলি প্রাকৃতিক নিয়মে চলে, যেখানে ধর্ম জ্ঞানের কোন প্রাসঙ্গিকতা নেই| এর ফলে ঈশ্বরের নিয়ম সম্পর্কে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে এবং মানুষ প্রাকৃতিক জগতের ঈশ্বরের উপস্থিতি নিয়ে অনেকটাই অবিশ্বাসী হয়ে উঠেন|
এরিস্টটল |
তবে একথা অনস্বীকার্য যে, মধ্যযুগের জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতা দেখা যায়| সমাজের রক্ষণশীল মানুষ বিশেষত ধর্মযাজকরা অনেক সময় এর নিন্দা করেছিলেন| তবুও তাদের বাধা দানের অন্তরালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে জ্ঞান চর্চার ধারা অব্যাহত ছিল|
পৃথিবী স্থির না গতিশীল, জ্যোতিষ্কের দেহে তাপ আসে কিনা? অনুসন্ধিৎসা মন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে নতুন বিজ্ঞান তথ্যের সম্মুখীন হয়েছিল| কিন্তু এমন একটা সময় আসে জ্ঞানচর্চার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তখন ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে| এই জ্ঞান চর্চা মানুষকে বুঝিয়ে ছিল, পৃথিবীর সব কিছু যুক্তি দিয়ে বিচার্য| মানুষ এরফলে কতগুলি সীমারেখা টানতে সমর্থ হয়েছিল|
ভেষজ চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রভাব
মধ্যযুগের শেষ পর্যায়ে ইউরোপের চিকিৎসা শাস্ত্রের অগ্রগতি অনেকটাই নির্ভরশীল গ্রিক ও আরবি ভেষজ শাস্ত্রের উপর| কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাচর্চার অঙ্গীভূত হওয়ার ফলে এই ভেষজ বিদ্যা এক আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রস্তুত করেছিল|
ক্রমশ চিকিৎসকদের উৎকর্ষতা যাচাই করার জন্য তাদের স্বাধীন বিদ্যা চর্চার গুরুত্ব দেওয়া হতো| এরফলে সাধারণ চর্চার স্থান থেকে উত্তীর্ণ হয়ে চিকিৎসা পদ্ধতি বিজ্ঞানের মর্যাদা লাভ করেছিল|
ইউরোপীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল শব ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে| যদিও ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের উভয়ই শব ব্যবচ্ছেদকে ধর্মবিরোধী বলে নিন্দা করেছিল| কিন্তু ক্রমশ চতুর্দশ শতকের পর থেকে শব ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে অঙ্গ-পতঙ্গ সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান চিকিৎসা শাস্ত্রের আয়ত্তে এসেছিল|
মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ করার পদ্ধতি শুরু হয়েছিল চতুর্দশ শতকের পর থেকে| শুধু তাই নয়, নব জাপানের যুগে যে সকল শিল্পীরা মানবদেহ সম্পর্কে চিত্র অঙ্কন করতেন, তারাও শব ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করেন- এই চিকিৎসা পদ্ধতি আধুনিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যুগান্তর এনেছিল|
গণিতশাস্ত্র বলে যে বিষয় পড়ানো হতো যার মধ্যে ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞান, আলোক তত্ত্ব, বলবিদ্যা এবং ভূগোল|
ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি থেকে Cosmography বলে যে বিষয়ে জনপ্রিয়তা বেড়ে ছিল তার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল ভূগোল এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান| এরফলে প্রকৃতি, গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান, তাদের প্রভাব সম্পর্কে মানুষের চেতনা ছিল|
সাধারণত মানুষের মধ্যে যেভাবে বিদ্যা চর্চার প্রসার হয়েছিল এবং মুদ্রণ যন্ত্র যেভাবে বিদ্যাচর্চা প্রচারে সাহায্য করেছিল, তার ফলে বিদ্যাচর্চার জগতে যাজকদের প্রাধান্য কমতে শুরু করেছিল|
শুধু তাই নয়, পঞ্চদশ শতক থেকে বিজ্ঞান চর্চাকে সাংগঠনিক করার জন্য নানা ধরনের প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব হয়েছিল, আমরা যাদের Society বা Academy বলে থাকি| পরে এধরনের একই Society ইংল্যান্ডে একটি Royal society এর জন্ম হয়েছিল|
তবে জীবন থেকে ধর্মকে উৎখাত করা হয়েছিল, তা বলা যায় না| যদিও তারা স্বীকার করেছিলেন যে, প্রকৃতি তার নিয়মে চলে এবং যেখানে কোন ঐশ্বরিক উৎসের অনুসন্ধান বাঞ্ছনীয় নয়, তবুও বিশ্ব চরাচরকে ঈশ্বরের সৃষ্টি হিসাবে দেখা হতো|
তাই বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের যুগে ধর্মবোধ থেকে বিজ্ঞান সাধনা সম্পূর্ণ বিযুক্ত হয়েছিল, এমন কথা বলা যায় না| তবে বিযুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, কিন্তু তখনও সেটা সম্পূর্ণ শুরু হয়নি| তাই বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে এই দোলাচল আধুনিক যুগের প্রারম্ভে বিজ্ঞান সাধনায় প্রধান বৈশিষ্ট্য|
মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ করার পদ্ধতি শুরু হয়েছিল চতুর্দশ শতকের পর থেকে| শুধু তাই নয়, নব জাপানের যুগে যে সকল শিল্পীরা মানবদেহ সম্পর্কে চিত্র অঙ্কন করতেন, তারাও শব ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করেন- এই চিকিৎসা পদ্ধতি আধুনিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যুগান্তর এনেছিল|
চিকিৎসা ও বিভিন্ন বিষয়
চতুর্দশ শতক থেকে চিকিৎসা বিদ্যার ছাত্রদের পড়তে হতো শরীর বিদ্যা বা Anatomy এবং শরীর বিদ্যা বা Surgery. ষোড়শ শতক থেকে উদ্ভিদ বিদ্যা চর্চার প্রসার লাভ করতে শুরু করেছিল|নক্ষত্র |
গণিতশাস্ত্র বলে যে বিষয় পড়ানো হতো যার মধ্যে ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞান, আলোক তত্ত্ব, বলবিদ্যা এবং ভূগোল|
ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি থেকে Cosmography বলে যে বিষয়ে জনপ্রিয়তা বেড়ে ছিল তার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল ভূগোল এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান| এরফলে প্রকৃতি, গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান, তাদের প্রভাব সম্পর্কে মানুষের চেতনা ছিল|
বিদ্যা চর্চার বিভিন্ন মাধ্যম
বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি ধর্ম শাস্ত্রের জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছিল- জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে এই আধুনিক প্রবণতা সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল নবজাগরণের যুগে|সাধারণত মানুষের মধ্যে যেভাবে বিদ্যা চর্চার প্রসার হয়েছিল এবং মুদ্রণ যন্ত্র যেভাবে বিদ্যাচর্চা প্রচারে সাহায্য করেছিল, তার ফলে বিদ্যাচর্চার জগতে যাজকদের প্রাধান্য কমতে শুরু করেছিল|
ছাপাখানা |
শুধু তাই নয়, পঞ্চদশ শতক থেকে বিজ্ঞান চর্চাকে সাংগঠনিক করার জন্য নানা ধরনের প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব হয়েছিল, আমরা যাদের Society বা Academy বলে থাকি| পরে এধরনের একই Society ইংল্যান্ডে একটি Royal society এর জন্ম হয়েছিল|
উপসংহার
একথা স্পষ্ট যে, এইভাবে ধর্ম জ্ঞান ও বিজ্ঞানের মধ্যে একটা ভেদরেখা ক্রমশ স্বীকৃতি পাচ্ছিল এবং প্রাকৃতিক জগত সম্পর্কে ও তার গতি প্রকৃতি সম্পর্কে মানুষের চেতনা বৃদ্ধি পেলে ঈশ্বর ভাবনা সম্পর্কে ধারণা আলগা হচ্ছিল|তবে জীবন থেকে ধর্মকে উৎখাত করা হয়েছিল, তা বলা যায় না| যদিও তারা স্বীকার করেছিলেন যে, প্রকৃতি তার নিয়মে চলে এবং যেখানে কোন ঐশ্বরিক উৎসের অনুসন্ধান বাঞ্ছনীয় নয়, তবুও বিশ্ব চরাচরকে ঈশ্বরের সৃষ্টি হিসাবে দেখা হতো|
তাই বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের যুগে ধর্মবোধ থেকে বিজ্ঞান সাধনা সম্পূর্ণ বিযুক্ত হয়েছিল, এমন কথা বলা যায় না| তবে বিযুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, কিন্তু তখনও সেটা সম্পূর্ণ শুরু হয়নি| তাই বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে এই দোলাচল আধুনিক যুগের প্রারম্ভে বিজ্ঞান সাধনায় প্রধান বৈশিষ্ট্য|
তথ্যসূত্র
- William E. Burns, "The Scientific Revolution: An Encyclopedia".
- Margaret C. Jacob, "The Scientific Revolution: A Brief History with Documents".
- Ar Hall, "The Scientific Revolution 1500 1800".
সম্পর্কিত বিষয়
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|