বস্ত্র বয়ন শিল্প ছিল মুঘল যুগের সর্ব বৃহৎ শিল্প| মোরল্যান্ড লিখেছেন যে, বস্ত্র বয়ন শিল্পে ভারত ছিল স্বনির্ভর| প্রচুর কার্পাস ভারতে উৎপন্ন হতো এবং সেই যুগে পৃথিবীতে ভারতের স্থান ছিল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ| দেশের প্রয়োজন মেটানোর জন্য এবং বিদেশে রপ্তানির জন্য কার্পাস বস্ত্র দেশে সর্বত্র উৎপন্ন হতো|
আবুল ফজল(আরো পড়ুন) সোনারগাঁয়ের মসলিন এবং বেনারস, আগ্রা, মালব, দাক্ষিণাত্য ও গুজরাটে তৈরি কার্পাসের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন| বাংলা, দাক্ষিণাত্য ও গুজরাট ছিল বস্ত্র শিল্পের প্রধান কেন্দ্র| আবার ব্রোচ, কাশিম বাজার প্রভৃতি ছিল সুতো উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র|
বস্ত্র রঙ করার ব্যবস্থা একটি সহায়ক শিল্প হিসাবে গড়ে উঠেছিল এবং বস্ত্র রঙ করার জন্য পেশাদার লোক নিযুক্ত ছিল| মোরল্যান্ড জানিয়েছেন যে, ভারতে প্রায় 150 রকমের তাঁত বস্ত্র উৎপন্ন হতো| এর মধ্যে অতি মিহি মসলিন যেমন ছিল, তেমনি ছিল সাধারণ পরিদেহ মোটা বস্ত্র|
সিন্ধু, গুজরাট, করমন্ডল উপকূল ও বাংলার বন্দর হয়ে এসব বস্ত্র বিদেশে রপ্তানি করা হতো| এসব বস্ত্রের বাজার ছিল আরব, মিশর, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, মালাক্কা, ব্রহ্মদেশ ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ| তবে মুঘল যুগে বস্ত্র বয়ন শিল্প বৃদ্ধি পেলেও এর বন্টন ব্যবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না|
লাহোর, মুলতান, গোলকুন্ডা এবং বুমহামপুরে উন্নতমানের বস্ত্র তৈরি হতো, কিন্তু পরিবহন ব্যবস্থায় অতিরিক্ত খরচা হওয়ার জন্য বস্ত্রের দাম ছিল প্রায় আকাশ ছোঁয়া| মানুষের পরিদেহ বস্ত্র ছাড়া রুমাল, পাগড়ী, সোনা-রুপা কাজ করার কাপড়, লেপ, বিছানা, তাবু ইত্যাদি তৈরি করা হতো|
বাংলা, গুজরাট ও কাশ্মীর ছিল রেশম শিল্পের প্রধান কেন্দ্র| রেশম বস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অর্ধেক ভারতে উৎপন্ন হত, আর বাকি অর্ধেক অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো|
মানুচি, মানরিখ জানিয়েছেন- আগ্রা, ফতেপুর, লাহোর, পাটনা প্রভৃতি শহরে রেশম তৈরির প্রধান কেন্দ্র ছিল| ধর্মীয় সহিষ্ণুতার পূজারী আকবর রেশম শিল্পের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখিয়ে ছিলেন| আবুল ফজল জানিয়েছেন- রেশম শিল্পের উন্নতির জন্য আকবর বিদেশ থেকে কারিগর নিয়ে আনতেন|
মুঘল ভারতে রেশম ও পশমে এক ধরনের মিশ্র বস্ত্র তৈরি করা হতো| আবুল ফজল জানিয়েছেন যে, আকবর নিজের কারখানায় নানা ধরনের পশমী বস্ত্র, লাল কার্পেট, কম্বল ইত্যাদি তৈরির ব্যবস্থা করেন| তবে ভারতীয় পশম খুব উন্নত মানের ছিল না| কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও রাজস্থান এই শিল্প গড়ে উঠে ছিল|
এই যুগে বয়ন শিল্পের মোট উৎপাদন কত ছিল, তা হিসাব করা যায় না| তবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, মুঘল যুগে বয়ন শিল্পের উন্নতি ঘটে ছিল এবং তার সঙ্গে উৎপাদন বেড়ে ছিল|
নতুন নতুন উৎপাদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং তার উন্নয়নের যে বিস্তার লাভ করে ছিল- তা আমরা উপরোক্ত আলোচনা থেকে সহজে অনুমান করতে পারি এবং এই বিষয়ে আমাদের কোন সুন্দর থাকতে পারে না|
আবুল ফজল(আরো পড়ুন) সোনারগাঁয়ের মসলিন এবং বেনারস, আগ্রা, মালব, দাক্ষিণাত্য ও গুজরাটে তৈরি কার্পাসের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন| বাংলা, দাক্ষিণাত্য ও গুজরাট ছিল বস্ত্র শিল্পের প্রধান কেন্দ্র| আবার ব্রোচ, কাশিম বাজার প্রভৃতি ছিল সুতো উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র|
মুঘল সাম্রাজ্যের মানচিত্র
Author- Santosh.mbahrm
Date- 26 September 2015
|
বস্ত্র রঙ করার ব্যবস্থা একটি সহায়ক শিল্প হিসাবে গড়ে উঠেছিল এবং বস্ত্র রঙ করার জন্য পেশাদার লোক নিযুক্ত ছিল| মোরল্যান্ড জানিয়েছেন যে, ভারতে প্রায় 150 রকমের তাঁত বস্ত্র উৎপন্ন হতো| এর মধ্যে অতি মিহি মসলিন যেমন ছিল, তেমনি ছিল সাধারণ পরিদেহ মোটা বস্ত্র|
বস্ত্র বুনন |
সিন্ধু, গুজরাট, করমন্ডল উপকূল ও বাংলার বন্দর হয়ে এসব বস্ত্র বিদেশে রপ্তানি করা হতো| এসব বস্ত্রের বাজার ছিল আরব, মিশর, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, মালাক্কা, ব্রহ্মদেশ ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ| তবে মুঘল যুগে বস্ত্র বয়ন শিল্প বৃদ্ধি পেলেও এর বন্টন ব্যবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না|
লাহোর, মুলতান, গোলকুন্ডা এবং বুমহামপুরে উন্নতমানের বস্ত্র তৈরি হতো, কিন্তু পরিবহন ব্যবস্থায় অতিরিক্ত খরচা হওয়ার জন্য বস্ত্রের দাম ছিল প্রায় আকাশ ছোঁয়া| মানুষের পরিদেহ বস্ত্র ছাড়া রুমাল, পাগড়ী, সোনা-রুপা কাজ করার কাপড়, লেপ, বিছানা, তাবু ইত্যাদি তৈরি করা হতো|
বাংলা, গুজরাট ও কাশ্মীর ছিল রেশম শিল্পের প্রধান কেন্দ্র| রেশম বস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অর্ধেক ভারতে উৎপন্ন হত, আর বাকি অর্ধেক অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো|
রেশমগুটি |
মানুচি, মানরিখ জানিয়েছেন- আগ্রা, ফতেপুর, লাহোর, পাটনা প্রভৃতি শহরে রেশম তৈরির প্রধান কেন্দ্র ছিল| ধর্মীয় সহিষ্ণুতার পূজারী আকবর রেশম শিল্পের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখিয়ে ছিলেন| আবুল ফজল জানিয়েছেন- রেশম শিল্পের উন্নতির জন্য আকবর বিদেশ থেকে কারিগর নিয়ে আনতেন|
মুঘল ভারতে রেশম ও পশমে এক ধরনের মিশ্র বস্ত্র তৈরি করা হতো| আবুল ফজল জানিয়েছেন যে, আকবর নিজের কারখানায় নানা ধরনের পশমী বস্ত্র, লাল কার্পেট, কম্বল ইত্যাদি তৈরির ব্যবস্থা করেন| তবে ভারতীয় পশম খুব উন্নত মানের ছিল না| কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও রাজস্থান এই শিল্প গড়ে উঠে ছিল|
এই যুগে বয়ন শিল্পের মোট উৎপাদন কত ছিল, তা হিসাব করা যায় না| তবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, মুঘল যুগে বয়ন শিল্পের উন্নতি ঘটে ছিল এবং তার সঙ্গে উৎপাদন বেড়ে ছিল|
নতুন নতুন উৎপাদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং তার উন্নয়নের যে বিস্তার লাভ করে ছিল- তা আমরা উপরোক্ত আলোচনা থেকে সহজে অনুমান করতে পারি এবং এই বিষয়ে আমাদের কোন সুন্দর থাকতে পারে না|
তথ্যসূত্র
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "অষ্টাদশ শতকের মুঘল সংকট ও আধুনিক ইতিহাস চিন্তা"
- অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস"
সম্পর্কিত বিষয়
- ভারতবর্ষে মুঘল বা মোগল সাম্রাজ্যের প্রকৃতি ও কার্যাবলীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা (আরো পড়ুন)
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................