মহাবিদ্রোহের ফলে ভারতে কেবল মাত্র কোম্পানির অবসান হয়নি, ভারতের শাসন ব্যবস্থায় বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন ঘটে| ১৮৫৮ সালে যে আইন দ্বারা ভারতের ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক স্থাপিত হয়, তা ছিল ভারতের উন্নত ধরনের শাসন প্রবর্তনের আইন| (Act for the better government in India)
এই আইনের দ্বারা ভারতের শাসনের ব্যাপারে ভারতের সচিব সর্বসেবা হয়ে উঠেন| আইনগত তিনি পার্লামেন্টের কাছে দায় থাকলেও ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারত সম্পর্কে উদাসীন ছিল| কিন্তু এই আইনের দ্বারা বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে, সেগুলো হলো-
- আইন পরিষদে ভারতীয়দের গ্রহণ|
- রাজস্ব বিভাজন |
- স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন প্রবর্তন|
- ভারতে ব্রিটিশ পুজির অনুপ্রবেশের ব্যাপকতা|
- সামরিক বিভাগের পরিবর্তন|
- মহাবিদ্রোহের পরবর্তীকালে সরকারি নীতি অবলম্বন|
- সরকারি ও সমাজ সংস্কার নীতির ক্ষেত্রে উদাসীনতা প্রভৃতি|
১৮৫৮ সালের ১লা নভেম্বর মহারানী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্র মারফত ভারতের শাসনভার গ্রহণ করে এই ঘোষণাপত্র জারি করেন| এই ঘোষণাপত্রে বলা হয় যে-
- ভারতবাসীর ধর্মীয় ও সামাজিক কোন ব্যাপারে কোম্পানি আর হস্তক্ষেপ করবে না|
- প্রত্যেক ভারতবাসী ধর্মীয় স্বাধীনতা গ্রহণ করবে|
- জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যোগ্যতা সম্পূর্ন সকল ভারতবাসী সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত হতে পারবে|
এছাড়াও এই ঘোষণাপত্রে বলা হয় যে-
- স্বত্ববিলোপ নীতি পরিত্যাগ করতে হবে|
- দেশীয় রাজাদের দত্তক গ্রহণের অধিকার দিতে হবে এবং বলা হয় যে, সরকার ভারতে আর সাম্রাজ্য বিস্তারে আগ্রহী নয়|
- দেশীয় রাজাদের বলা হয় যে, কোম্পানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত তাদের সমস্ত চুক্তি ও সন্ধিগুলিকে মেনে চলতে হবে|
বলা বাহুল্য, এই সব প্রতিশ্রুতিগুলি শুধুমাত্র ঘোষণাপত্রে সীমাবদ্ধ ছিল| মহারানীর ঘোষণাপত্রে ভারতীয় ও ইউরোপীয়দের সমান আচরণ ও অধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়, কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি|
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে চাকরি ক্ষেত্রে বড় বড় কথা বলা হলেও উচ্চ পদগুলোতে ভারতবাসীদের সেভাবে সুযোগ দেওয়া হয়নি| ভারতবাসী যেন সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে, সেই জন্য ব্রিটিশ সরকার মহাবিদ্রোহের পরবর্তীকালে বিভেদ নীতি অবলম্বন করেন|
বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের জাতি গোষ্ঠী ও বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষকে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ভাবাপন্ন করে তোলা হয়| শিক্ষিত ভারতীয়দের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ কোন সম্পর্ক স্থাপন না করে, ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় রাজা-মহারাজা, জমিদার, ভূস্বামী প্রভৃতিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব সম্পর্ক তৈরি করেন|
এছাড়াও পরবর্তীকালে ভারতবাসীর সমাজ ও ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে ব্রিটিশদের উদাসীনতা দেখা দেয়| তবে এই উদাসীনতা তারা সর্বদাই বজায় রাখতে পারেনি|
পরিশেষে বলা যায়, ১৮৫৮ সালের আইন বা মহারানীর ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত প্রতিশ্রুতিগুলি মুহূর্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল| এই সব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ফলে, ভারতীয়দের মনে শাসক সম্প্রদায় বিরুদ্ধে হতাশা ও ঘৃণা সঞ্চার হয় এবং ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদী(আরো পড়ুন) চেতনা সঞ্চারিত করেছিল|
তথ্যসূত্র
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "পলাশী থেকে পার্টিশন"
- William Golden Lumley, "The New Sanitary Laws".
- Bipan Chandra, "India's Struggle for Independence: 1857-1947".
সম্পর্কিত বিষয়
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|