মুঘল যুগে কৃষি অর্থনীতি কাঠামো আলোচনার বিষয়টি এবং ভূমির মালিকানার প্রশ্নটি অন্তত গুরুত্বপূর্ণ| তৎকালীন ও আধুনিক কালের ঐতিহাসিকরা এবং ইউরোপীয়ও বৈদেশিক ভ্রমণকারীরা মুঘল যুগের সম্পত্তির মালিকানার ছিল, এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন|
এই প্রসঙ্গে বৈদেশিক পর্যটক বার্নিয়ে বলেছেন যে, "মুঘল যুগে সমস্ত জমির মালিক ছিলেন সম্রাট"| আবুল ফজল(আরো পড়ুন) তার আইন-ই-আকবরি গ্রন্থে লিখেছেন, "সম্রাট হলেন দেশের সার্বভৌমত্বের ক্ষমতার অধিকারী"| আবার কাফি খানের রচনা থেকে জানা যায় যে, "মুঘল যুগের চাষী যে জমি চাষ করতো, সেই জমির উপর তার স্থায়িত্ব বংশানুক্রমিকভাবে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল"|
অন্যদিকে মোহাম্মদ আসিফের ফরমানে বলা হয়েছে যে, "জমির মালিক যদি জমি চাষ করতে না পারে, তাহলে চাষ করতে রাজি বা চাষ করতে সক্ষম ঐরকম লোককে চাষ করার জন্য জমি দেওয়া হয়েছিল"|
আকবর ও জাহাঙ্গীর আমলে দুটি সরকারি নির্দেশে চাষীদের স্বত্ব স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল| আইন-ই-আকবরিতে রাজস্ব আদায়কারী কর্মচারীদের সাবধান করে দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন চাষীদের মালিকাধীন জমি নিজের নামে নথিভুক্ত না করে|
তবে গৌতম ভদ্র লিখেছেন যে, কৃষকের স্বত্ব একদিকে অসম্পূর্ণ ছিল, কৃষকরা ইচ্ছা করলে নিজের জমি খুশি মতো কাউকে বিক্রি করতে পারতেন না এবং কৃষক জমি ছেড়ে যাওয়ার অধিকারী ছিলেন না, অর্থাৎ কৃষকের অবস্থা সেই দিক থেকে প্রায় ভূমিদাসের সমান ছিল| মুঘল যুগে নির্বাচিত রাজ শক্তি আপ্রাণ চেষ্টা করত যে, কৃষকরা এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে না যেতে পারে|
শুধু গ্রামীণ জমির ক্ষেত্রে নয়, শহরের জমি ক্ষেত্রেও ব্যক্তিগত মালিকানার কথা জানা যায়| মুঘল যুগে ঐতিহাসিক উপাদানগুলি প্রমাণ করে ছিল যে, শহরের প্রজা তার ব্যক্তিগত জমি বিক্রি করেছেন, এমনকি জমির উপর তার অধিকার নিয়ে বাদশাহের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হয়েছেন|
আইন-ই-আকবরিতে অত্যন্ত সুষ্ঠ ভাষায় জমির উপর কৃষকের অধিকার উল্লেখ করেছেন| আবুল ফজল(আরো পড়ুন) লিখেছেন যে- এটা খুবই স্পষ্ট যে, সমস্ত কর্ষিত সম্পত্তির অংশ মালিকের পাওনা| সুতরাং মুঘল শাসন কালে কৃষকের দলিল বংশানুক্রমিকভাবে স্বীকৃত ছিল|
কিন্তু যেহেতু কৃষক স্বেচ্ছায় জমি ভাগ করতে পারতেন না, সেহেতু মালিকানা সম্পূর্ণভাবে বজায় ছিল না| নানা ধরনের গোষ্ঠীগত ও রাষ্ট্রীয় নিষেধের মধ্যে তার অধিকার সীমিত ছিল|
পরিশেষে অধ্যাপক গৌতম ভদ্রের ভাষায় বলা যায়, জমি ও তার উন্নয়নের প্রতি সরকার জমিদার বা রায়তের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অধিকার প্রদান করে ছিল| এই ক্ষেত্রে বলা যায়, একচেটিয়া বা একক মালিকানা কারো ছিল না|
অন্যদিকে মোহাম্মদ আসিফের ফরমানে বলা হয়েছে যে, "জমির মালিক যদি জমি চাষ করতে না পারে, তাহলে চাষ করতে রাজি বা চাষ করতে সক্ষম ঐরকম লোককে চাষ করার জন্য জমি দেওয়া হয়েছিল"|
মুঘল সাম্রাজ্যের মানচিত্র
Author- Santosh.mbahrm
Date- 26 September 2015
|
আকবর ও জাহাঙ্গীর আমলে দুটি সরকারি নির্দেশে চাষীদের স্বত্ব স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল| আইন-ই-আকবরিতে রাজস্ব আদায়কারী কর্মচারীদের সাবধান করে দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন চাষীদের মালিকাধীন জমি নিজের নামে নথিভুক্ত না করে|
তবে গৌতম ভদ্র লিখেছেন যে, কৃষকের স্বত্ব একদিকে অসম্পূর্ণ ছিল, কৃষকরা ইচ্ছা করলে নিজের জমি খুশি মতো কাউকে বিক্রি করতে পারতেন না এবং কৃষক জমি ছেড়ে যাওয়ার অধিকারী ছিলেন না, অর্থাৎ কৃষকের অবস্থা সেই দিক থেকে প্রায় ভূমিদাসের সমান ছিল| মুঘল যুগে নির্বাচিত রাজ শক্তি আপ্রাণ চেষ্টা করত যে, কৃষকরা এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে না যেতে পারে|
শুধু গ্রামীণ জমির ক্ষেত্রে নয়, শহরের জমি ক্ষেত্রেও ব্যক্তিগত মালিকানার কথা জানা যায়| মুঘল যুগে ঐতিহাসিক উপাদানগুলি প্রমাণ করে ছিল যে, শহরের প্রজা তার ব্যক্তিগত জমি বিক্রি করেছেন, এমনকি জমির উপর তার অধিকার নিয়ে বাদশাহের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হয়েছেন|
কৃষক |
আইন-ই-আকবরিতে অত্যন্ত সুষ্ঠ ভাষায় জমির উপর কৃষকের অধিকার উল্লেখ করেছেন| আবুল ফজল(আরো পড়ুন) লিখেছেন যে- এটা খুবই স্পষ্ট যে, সমস্ত কর্ষিত সম্পত্তির অংশ মালিকের পাওনা| সুতরাং মুঘল শাসন কালে কৃষকের দলিল বংশানুক্রমিকভাবে স্বীকৃত ছিল|
কিন্তু যেহেতু কৃষক স্বেচ্ছায় জমি ভাগ করতে পারতেন না, সেহেতু মালিকানা সম্পূর্ণভাবে বজায় ছিল না| নানা ধরনের গোষ্ঠীগত ও রাষ্ট্রীয় নিষেধের মধ্যে তার অধিকার সীমিত ছিল|
পরিশেষে অধ্যাপক গৌতম ভদ্রের ভাষায় বলা যায়, জমি ও তার উন্নয়নের প্রতি সরকার জমিদার বা রায়তের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অধিকার প্রদান করে ছিল| এই ক্ষেত্রে বলা যায়, একচেটিয়া বা একক মালিকানা কারো ছিল না|
তথ্যসূত্র
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "অষ্টাদশ শতকের মুঘল সংকট ও আধুনিক ইতিহাস চিন্তা"
- অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস"
সম্পর্কিত বিষয়
- ভারতবর্ষে মুঘল বা মোগল সাম্রাজ্যের প্রকৃতি ও কার্যাবলীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা (আরো পড়ুন)
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................