ষোড়শ শতাব্দীতে মারাঠা শক্তির উত্থান ও অগ্রগতি মধ্যযুগীয় ভারতের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। এই মারাঠা শক্তির উত্থানের পশ্চাতে ছিল তাদের জাতীয়তা বোধ। এই মারাঠাদের ঐক্য সম্পূর্ণ হয়েছিল শিবাজীর মত এক বলিষ্ঠ নেতার নেতৃত্বাধীনে।
শিবাজীর শাসন ব্যবস্থা
শিবাজী ছিলেন মহান যোদ্ধা ও সুশাসক। তিনি একাধারে ছিলেন সুদক্ষ সেনানায়ক, সুসংগঠিত ও মহারাষ্ট্র বীর।
শিবাজী সামাজিক সংগঠন তার প্রতিভার অনন্য নিদর্শন। ভাগ্যান্বেষী সৈনিক হিসাবে জনাকীর্ণ ও উপত্যকা বহুল অঞ্চলে যুদ্ধ করার জন্য শিবাজী গেরিলা যুদ্ধ পদ্ধতির উপর জোর দেন।
এই কারণে তার সামরিক শক্তির ভিত্তি ছিল অশ্বারোহী বাহিনী। তার অশ্বারোহী বাহিনী দুই ভাগে বিভক্ত ছিল- বর্গী ও শিলাদার(আরো পড়ুন)। বর্গীরা ছিল স্থায়ী সরকারি সেনা ও শিলাদাররা ছিল অস্থায়ী ভাড়াটে সৈনিক।
শিবাজী নিয়মিত অশ্বারোহী ও পদাতিক সেনাদের ক্রমোচ্চ স্তরে সংগঠিত করেন। 25 জন পাগা বা বর্গী অশ্বারোহীর দায়িত্বে থাকেন একজন হাবিলদার। পাঁচ জন হালদারের উপরে থাকতেন একজন জুমলাদার।
দশ জন জুমলাদারের দায়িত্বে থাকেন একজন হাজারী। পাঁচ জন হাজারী উপরে থাকেন এক পাঁচ হাজারী এবং সর্বোচ্চ ছিলেন সেনাপতি।
পদাতিক বাহিনীর সামরিক সংগঠনের সর্বনিম্ন পদ ছিল পাইক। নয় জন পাইকের উপরে থাকতেন একজন নায়েভ। শিবাজীর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী বাহিনী দুই হাজার বাছায় করা সৈন্য দ্বারা গঠিত ছিল। সেনা নিয়োগের সময় শিবাজী ব্যক্তিগত দক্ষতা ও বিশ্বস্থতা উপর নজর দিতেন এবং নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্মরত সৈন্যের সুপারিশকে গুরুত্ব দিতেন।
প্রিন্সেপ এর বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, শিবাজী তার সেনা বাহিনীকে কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলা ও ন্যায় পরায়নতা পরিচয় দিয়েছিলেন। প্রিন্সেপ লিখেছেন, মারাঠা সেনারা নির্বিচারে লুন্ঠন চালাতো এবং যা তারা বহন করতে পারত না তা পুড়িয়ে শেষ করে দিতো। সভাসদ বখর জানিয়েছেন যে, শিবাজীর নৌবাহিনীতে প্রায় চারশো জলযান ছিল। আবার অধ্যাপক যদুনাথ সরকার বলেছেন, নৌ বাহিনী ও নৌ ঘাঁটি নির্মাণে শিবাজীর আন্তরিকতার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
অধ্যাপক যদুনাথ সরকার শিবাজীর শাসন সংগঠনকে মধ্যযুগের রাজনীতির বিস্ময়কর অভিহিত করে লিখেছেন, তার শাসন পদ্ধতি, সেনা সংগঠন সবই ছিল তার সক্রিয় উদ্ভাবন। তবে এই মূল্যায়ন সর্বাংশে সত্য নয়। শিবাজীর শাসন ব্যবস্থার দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতাগুলি মারাঠা রাজ্যের স্থায়িত্বের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
শিবাজী দায়িত্বশীল মন্ত্রিপরিষদ গঠনের কোন চেষ্টা করেনি। শিবাজীর অষ্টপ্রধানদের(আরো পড়ুন) অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান করার ফলে তারা শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।
পরিশেষে এই কথা বলা যায় যে, শিবাজীর সামরিক বাহিনীতে উক্ত ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও তার সামরিক প্রতিভা ও সাফল্য প্রশংসার দাবি রাখে।
এই কারণে তার সামরিক শক্তির ভিত্তি ছিল অশ্বারোহী বাহিনী। তার অশ্বারোহী বাহিনী দুই ভাগে বিভক্ত ছিল- বর্গী ও শিলাদার(আরো পড়ুন)। বর্গীরা ছিল স্থায়ী সরকারি সেনা ও শিলাদাররা ছিল অস্থায়ী ভাড়াটে সৈনিক।
পদাতিক সেনা |
অশ্বারোহী সেনা |
শিবাজী নিয়মিত অশ্বারোহী ও পদাতিক সেনাদের ক্রমোচ্চ স্তরে সংগঠিত করেন। 25 জন পাগা বা বর্গী অশ্বারোহীর দায়িত্বে থাকেন একজন হাবিলদার। পাঁচ জন হালদারের উপরে থাকতেন একজন জুমলাদার।
দশ জন জুমলাদারের দায়িত্বে থাকেন একজন হাজারী। পাঁচ জন হাজারী উপরে থাকেন এক পাঁচ হাজারী এবং সর্বোচ্চ ছিলেন সেনাপতি।
পদাতিক বাহিনীর সামরিক সংগঠনের সর্বনিম্ন পদ ছিল পাইক। নয় জন পাইকের উপরে থাকতেন একজন নায়েভ। শিবাজীর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী বাহিনী দুই হাজার বাছায় করা সৈন্য দ্বারা গঠিত ছিল। সেনা নিয়োগের সময় শিবাজী ব্যক্তিগত দক্ষতা ও বিশ্বস্থতা উপর নজর দিতেন এবং নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্মরত সৈন্যের সুপারিশকে গুরুত্ব দিতেন।
প্রিন্সেপ এর বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, শিবাজী তার সেনা বাহিনীকে কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলা ও ন্যায় পরায়নতা পরিচয় দিয়েছিলেন। প্রিন্সেপ লিখেছেন, মারাঠা সেনারা নির্বিচারে লুন্ঠন চালাতো এবং যা তারা বহন করতে পারত না তা পুড়িয়ে শেষ করে দিতো। সভাসদ বখর জানিয়েছেন যে, শিবাজীর নৌবাহিনীতে প্রায় চারশো জলযান ছিল। আবার অধ্যাপক যদুনাথ সরকার বলেছেন, নৌ বাহিনী ও নৌ ঘাঁটি নির্মাণে শিবাজীর আন্তরিকতার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
অধ্যাপক যদুনাথ সরকার শিবাজীর শাসন সংগঠনকে মধ্যযুগের রাজনীতির বিস্ময়কর অভিহিত করে লিখেছেন, তার শাসন পদ্ধতি, সেনা সংগঠন সবই ছিল তার সক্রিয় উদ্ভাবন। তবে এই মূল্যায়ন সর্বাংশে সত্য নয়। শিবাজীর শাসন ব্যবস্থার দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতাগুলি মারাঠা রাজ্যের স্থায়িত্বের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
শিবাজী দায়িত্বশীল মন্ত্রিপরিষদ গঠনের কোন চেষ্টা করেনি। শিবাজীর অষ্টপ্রধানদের(আরো পড়ুন) অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান করার ফলে তারা শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।
পরিশেষে এই কথা বলা যায় যে, শিবাজীর সামরিক বাহিনীতে উক্ত ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও তার সামরিক প্রতিভা ও সাফল্য প্রশংসার দাবি রাখে।
FAQ’s (শিবাজীর সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর)
১. শিবাজী কোথাকার রাজা ছিলেন ?
উত্তর- পুনা।
২. শিবাজীর অভিষেক কোথায় হয়েছিল ?
উত্তর- রায়গড় দুর্গে।
৩. শিবাজীর অভিষেক কবে হয়েছিল ?
উত্তর- 1674 খ্রিস্টাব্দে।
৪. শিবাজীর রাজ্যাভিষেক কোথায় হয় ?
উত্তর- রায়গড় দুর্গে।
৫. শিবাজীর ঘোড়ার নাম কি ?
উত্তর- চৈতক ।
৬. শিবাজী উৎসব কে চালু করেন ?
উত্তর- বাল গঙ্গাধর তিলক।
৭. শিবাজীর বাবার নাম কি ?
উত্তর- শাহজী ভোঁসলে।
৮. শিবাজী জন্মগ্রহণ করেছিলেন কোথায় ?
উত্তর- 19 ফেব্রুয়ারী, 1630, শিবনেরি ফোর্ট, কুসুর।
তথ্যসূত্র
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"
- অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস"
- Ranjit Desai, "Shivaji: The Great Maratha"
সম্পর্কিত বিষয়
- ভারতবর্ষে মুঘল বা মোগল সাম্রাজ্যের প্রকৃতি ও কার্যাবলীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা (আরো পড়ুন)
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
- বর্গী ও শিলাদার (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................