মুঘল আমলে একটি বহুল আলোচিত ঘটনা হলো কৃষক বিদ্রোহ| প্রবল শক্তির অধিকারী মুঘল সম্রাট ও তাদের একটি কেন্দ্রীয় স্বৈরাচারী সারা রাজ্য জুড়ে ছড়ানো অসংখ্য প্রশাসনিক কর্তা ও গুপ্তচরের জাল ছিন্ন করে অতি সাধারণ অসংহত ও দীন-দরিদ্র কৃষকদের বিদ্রোহের লিপ্ত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই বিস্ময়ের উদ্যোগ সৃষ্টি করে| কিন্তু এই ঘটনা আমাদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হলেও এই কথা সত্য|
বাবরনামা, তুজুক-ই-জাহাঙ্গীরী, আইন-ই-আকবরি, বিভিন্ন সরকারি নির্দেশ ও পর্তুগিজ দলিলপত্রে কৃষক বিদ্রোহের বহু তথ্য পাওয়া যায়|
এই যুগে কৃষক বিদ্রোহের প্রধান কারণ ছিল অত্যাধিক রাজস্বের চাপ| জাহাঙ্গীর আমলে জনৈক সুবেদারের নিয়োগপত্রে একটি স্থানে বলা হয়েছে যে, "কৃষকদের সাথে এমন ভাবে বন্দোবস্ত করবেন যে তারা খুশি থাকবে, নিশ্চিত ও নিরাপদে বসবাস করবে এবং বাণিজ্যিক পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত হবে"|
কিন্তু আইনে এবং বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে অনেক ফারাক ছিল, ফলে প্রচলিত রাজস্ব নির্ধারণ ও সংগ্রহের ব্যবস্থা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কৃষকদের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল| ভূমি রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করার জন্য মাঠ থেকে ফসল নগদ মূল্যের সংগ্রহ করা হয়| পিটার মান্ডি এই ব্যবস্থাকে চাষের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক ও দুর্দশার কারণ বলে উল্লেখ করেছেন|
কৃষক |
আকবর থেকে জাহাঙ্গীর পর্যন্ত ভূমি রাজস্বের হার ছিল 1-3 অংশ, কিন্তু শাহজাহানের সময় থেকে তা অনেক গুন বাড়তে থাকে| এই জন্য মুঘল যুগে ঘন ঘন কৃষক বিদ্রোহ ঘটতে থাকে| ভূমি রাজস্ব ছাড়াও কৃষককে ব্যবসা-বাণিজ্য, বাজার ও মাল পরিবহনের ক্ষেত্রে কর দিতে হতো| মানুচি বলেছেন, রাজস্ব আদায়ের জন্য কৃষকদেরকে গাছে বেঁধে ছুড়ি মারা হত|
এই আমলে কৃষক বিদ্রোহের আরেকটি বড় কারণ ছিল, জায়গির ব্যবস্থার ত্রুটি(আরো পড়ুন) ও জায়গিরদারদের সীমাহীন শোষণ| মুঘল শাসকরা দেশের একটা বড় অংশ জায়গিরদারদের হাতে তুলে দিতেন| এই জায়গিরদারা আবার মনসবদার(আরো পড়ুন) নামেও পরিচিত ছিলেন|
মনসবদারদের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জায়গির দাবিও বৃদ্ধি পায়, কিন্তু জায়গির দেওয়ার জমি কোথায়? একজন জায়গিরদারে ভালো জায়গির পেতে চুল-দাড়ি সাদা হয়ে যেত| জমির এই অভাব কৃষক ও মনসবদারদের মধ্যে একটি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সৃষ্টি হয়|
পরিশেষে তৎকালীন সময়ের দিল্লির অবস্থান সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা বলেছেন, শ্রমিকের অভাবে উর্বর জমির একাংশ অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে এবং মুঘল শাসকদের ব্যাপক অরাজকতা সৃষ্টির ফলে বহু কৃষক হতাশ হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে|
এই আমলে কৃষক বিদ্রোহের আরেকটি বড় কারণ ছিল, জায়গির ব্যবস্থার ত্রুটি(আরো পড়ুন) ও জায়গিরদারদের সীমাহীন শোষণ| মুঘল শাসকরা দেশের একটা বড় অংশ জায়গিরদারদের হাতে তুলে দিতেন| এই জায়গিরদারা আবার মনসবদার(আরো পড়ুন) নামেও পরিচিত ছিলেন|
মনসবদারদের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জায়গির দাবিও বৃদ্ধি পায়, কিন্তু জায়গির দেওয়ার জমি কোথায়? একজন জায়গিরদারে ভালো জায়গির পেতে চুল-দাড়ি সাদা হয়ে যেত| জমির এই অভাব কৃষক ও মনসবদারদের মধ্যে একটি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সৃষ্টি হয়|
পরিশেষে তৎকালীন সময়ের দিল্লির অবস্থান সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা বলেছেন, শ্রমিকের অভাবে উর্বর জমির একাংশ অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে এবং মুঘল শাসকদের ব্যাপক অরাজকতা সৃষ্টির ফলে বহু কৃষক হতাশ হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে|
তথ্যসূত্র
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "অষ্টাদশ শতকের মুঘল সংকট ও আধুনিক ইতিহাস চিন্তা"
- অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস"
সম্পর্কিত বিষয়
- ভারতবর্ষে মুঘল বা মোগল সাম্রাজ্যের প্রকৃতি ও কার্যাবলীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা (আরো পড়ুন)
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................