1922 খ্রিস্টাব্দে 5 ই ফেব্রুয়ারি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার, এই আন্দোলনের ব্যর্থতা, গান্ধীজীর কারাবাস, খিলাফত আন্দোলনের বন্ধের ফলে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির অভাব এবং সরকারি দুর্নীতির ফলে জাতীয় জীবনে এক চরম হতাশা নেমে আসে| এই সময় চিত্তরঞ্জন দাশ, মতিলাল নেহেরু প্রমূখ নেতৃবৃন্দ গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনের বিকল্প রাজনৈতিক কর্মসূচি পেশ করেন|
গান্ধীজী পূর্ণ অসহযোগ নীতির পরিবর্তে চিত্তরঞ্জন দাশ 1919 খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং আইন সভায় উপস্থিত থেকে প্রতি পদে পদে সরকারের সকল কাজে বাধা সৃষ্টি করে শাসন সংস্কারকে বিপর্যস্ত করে দেওয়ার কথা বলেন|
হাকিম আজমল খান, মদনমোহন মালব্য, শ্রীনিবাস আয়েঙ্গার, এন. সি. কেলকার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ এই মতের সমর্থক ছিলেন এবং তারা পরিবর্তন পন্থী নামে পরিচিত ছিলেন| অন্যদিকে বল্লভভাই পটেল, রাজেন্দ্র প্রসাদ, চক্রবর্তী গোপালাচারী প্রমুখ নেতারা গান্ধীজীর অসহযোগ নীতির সমর্থক ছিলেন এবং তারা পরিবর্তন বিরোধী নামে পরিচিত ছিলেন|
এর ফলে তিনি কংগ্রেসের সভাপতির পদ ত্যাগ করেন এবং 1923 খ্রিস্টাব্দে 1 লা জানুয়ারি জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে কংগ্রেস খিলাফত স্বরাজ্য দল প্রতিষ্ঠা করেন, যা স্বরাজ বা স্বরাজ্য দল নামে পরিচিত| চিত্তরঞ্জন দাশ এই নবগঠিত দলের সভাপতি এবং মতিলাল নেহেরু অন্যতম সম্পাদক হিসাবে নিযুক্ত হন|
সরদার বল্লভভাই পটেল |
স্বরাজ্য দলের প্রতিষ্ঠা
1922 খ্রিস্টাব্দে গয়া কংগ্রেস অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে চিত্তরঞ্জন দাশ আইন সভায় প্রবেশ নীতি গ্রহণের আহ্বান জানায়, কিন্তু তার এই প্রস্তাব বিপুল ভোটে (পক্ষে 890 জন এবং বিপক্ষে 1748 জন) বাতিল হয়ে যায়|এর ফলে তিনি কংগ্রেসের সভাপতির পদ ত্যাগ করেন এবং 1923 খ্রিস্টাব্দে 1 লা জানুয়ারি জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে কংগ্রেস খিলাফত স্বরাজ্য দল প্রতিষ্ঠা করেন, যা স্বরাজ বা স্বরাজ্য দল নামে পরিচিত| চিত্তরঞ্জন দাশ এই নবগঠিত দলের সভাপতি এবং মতিলাল নেহেরু অন্যতম সম্পাদক হিসাবে নিযুক্ত হন|
স্বরাজ্য দলের কর্মসূচি
উপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন অর্জন করাই ছিল স্বরাজ্য দলের চরম লক্ষ্য, এই কারণে তাদের বক্তব্য ছিল-
- আইন সভায় প্রবেশ করে ভেতর থেকে সুসংবদ্ধ, নিয়মিত ও নিরন্তর বাধা সৃষ্টি করে সরকারকে অকেজো করে দেওয়া|
- সরকারি কাজে প্রত্যাখ্যান করা|
- সুনির্দিষ্ট অর্থনীতি অংশগ্রহণ করে বিদেশি শাসন বন্ধ করা|
ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্র উল্লেখ করেছেন যে, পরিবর্তন সমর্থক ও পরিবর্তন বিরোধী কয়েকটি ক্ষেত্রে সহমত পোষণ করতেন|
বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসন মূলক সংস্কারগুলির নির্বাচনে স্বরাজ্য দল ব্যাপক সাফল্য লাভ করে এবং চিত্তরঞ্জন দাস কলকাতার কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন| বাংলায় হিন্দু-মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তিনি বেঙ্গল প্যাক্ট চুক্তি স্বাক্ষর করে|
কেন্দ্রীয় আইন সভায় 101 টি আসনের মধ্যে স্বরাজ্য দল 42 টি আসন পায় এবং নরমপন্থী ও মুসলিম মুসলিম সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হয়ে এই দলের নেতৃবৃন্দ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করে এবং দমনমূলক আইন প্রত্যাহার, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ইত্যাদি দাবি জানায়|
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল 1925 খ্রিস্টাব্দে 16 ই জুন দেশবন্ধুর মৃত্যু হলে স্বরাজ্য দল প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে|
অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতার পর জাতীয় জীবন যখন গভীর হতাশায় নিমজ্জিত, তখন স্বরাজ্য দলের প্রতিষ্ঠা ও কার্যকলাপ ভারতীয় জাতীয় জীবনকে প্রাণ সঞ্চার ও গতিশীল করে তোলে|
.......................................
কার্যাবলী ও চিত্তরঞ্জন দাশের ভূমিকা
1919 খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু চেমসফোর্ড শাসন সংস্কারের অনুসারে 1923 খ্রিস্টাব্দে নির্বাচনে ব্যাপক সফলতা অর্জন করে বাংলায় এই দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়| এই দলের নেতা হিসাবে চিত্তরঞ্জন দাশকে মন্ত্রিসভা গঠনের আহ্বান জানানো হয়, কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করে সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা নীতি গ্রহণ করে|চিত্তরঞ্জন দাশ Source- wikipedia (check here) Date- Between 1885 and 16 June 1925 License- creative commons Modified- colour and background |
বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসন মূলক সংস্কারগুলির নির্বাচনে স্বরাজ্য দল ব্যাপক সাফল্য লাভ করে এবং চিত্তরঞ্জন দাস কলকাতার কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন| বাংলায় হিন্দু-মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তিনি বেঙ্গল প্যাক্ট চুক্তি স্বাক্ষর করে|
কেন্দ্রীয় আইন সভায় 101 টি আসনের মধ্যে স্বরাজ্য দল 42 টি আসন পায় এবং নরমপন্থী ও মুসলিম মুসলিম সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হয়ে এই দলের নেতৃবৃন্দ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করে এবং দমনমূলক আইন প্রত্যাহার, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ইত্যাদি দাবি জানায়|
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল 1925 খ্রিস্টাব্দে 16 ই জুন দেশবন্ধুর মৃত্যু হলে স্বরাজ্য দল প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে|
মূল্যায়ন
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত স্বরাজ্য দল ব্যর্থ হলেও জাতীয় জীবনে, তথা ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম|অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতার পর জাতীয় জীবন যখন গভীর হতাশায় নিমজ্জিত, তখন স্বরাজ্য দলের প্রতিষ্ঠা ও কার্যকলাপ ভারতীয় জাতীয় জীবনকে প্রাণ সঞ্চার ও গতিশীল করে তোলে|
তথ্যসূত্র
- সুমিত সরকার, "আধুনিক ভারত"
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "পলাশি থেকে পার্টিশন"
- Dennis Kincaid, "British Social Life In India, 1608–1937".
সম্পর্কিত বিষয়
- 1946 সালের নৌ বিদ্রোহ (আরো পড়ুন)
- সম্পদের বহির্গমন তত্ত্ব এবং এটি কিভাবে বাংলার অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছিল (আরো পড়ুন)
- ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|