1815 খ্রিষ্টাব্দে ইউরোপ ছিল এক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মুহূর্ত প্রতীক| ইউরোপের মানুষ যেন তখন দিশেহারা ও দোলাচল চিত্র| ফরাসি বিপ্লব এবং নেপোলিয়ানের শাসন পুরাতন তন্ত্রের উপর আঘাত হানলেও তাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস বা নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি|
আসলে 1815 খ্রিষ্টাব্দের পর ইউরোপের ইতিহাসে দুই পরস্পর বিরোধী ভাবধারাকে সক্রিয় দেখা যায়| একদিকে বিপ্লব পূর্ববর্তী ভাবধারাগুলিকে রক্ষা করার চেষ্টা চলে, অপরদিকে সমাজ যে সকল পরিবর্তন ঘটে, তার ফলে পুরাতন তন্ত্রের রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়|
এই প্রতিক্রিয়াগুলি পুরাতন তন্ত্রকে ধসিয়ে পরিবর্তনের পথ রচনা করেন|
নতুন ও পুরাতনের এই দ্বন্দ্বে অবশ্য শেষ পর্যন্ত নতুনই জয় হয়েছিল| পুরাতন নতুনকে তার সঠিক পথ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল| একটু একটু করে পিছনে যেতে যেতে পুরাতন তন্ত্র শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়| অষ্টাদশ শতকের রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনীতিকে "পুরাতনতন্ত্র" বলা হয়|
পুরাতন তন্ত্রের প্রধান স্তম্ভগুলি ছিল স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র, চার্চ ও সামন্ততন্ত্র| রাজা ঈশ্বরের নির্দেশে বংশানুক্রমিকভাবে শাসন করবেন- এই তথ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল| রাজার এই অধিকারকে ন্যায্য অধিকার বলে অভিহিত করা হয়| নেপোলিয়নের পতনের পর 1815 খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রকে নতুন জীবন দান করা হয়েছিল|
ব্রিটেন ও প্রাশিয়ার মতো প্রোটেস্ট্যান্ট রাষ্ট্রগুলিও ইউরোপে গির্জার ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের সমর্থ জানিয়ে ছিল| ফ্রান্স, স্পেন ও ইতালিতে জেসুইটরা শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে এবং রাজনীতি, প্রশাসন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব অনুভূত হয়| ফ্রান্স পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে গির্জার অত্যাচারকে আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে|
সর্বোপরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি গির্জা কবলিত হওয়ায় স্বাধীন চিন্তা অংকুর পরিস্ফুট হতে বাধা দেয়| পুরাতন তন্ত্রের আরেকটি ভিত্তি ছিল সামন্ততন্ত্র| 1815 খ্রিষ্টাব্দের পর সামন্ততন্ত্র তার হারিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা ফিরে পাবার চেষ্টা চালায়| যদিও ফরাসি বিপ্লব এবং নেপোলিয়ানের ঝড় ফ্রান্সে ও ইউরোপের সামন্ত শ্রেণীর অধিকারকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করেছিল| কিন্তু আবার নেপোলিয়নের পতনের পর এরা আবার বিভিন্ন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে|
এই পরিবর্তনশীলতা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সুদূর প্রসারী উপাদান ছিল ইউরোপের লোকসংখ্যার বিস্ফোরণ| ডেবিট টমসনের বর্ণনা অনুযায়ী জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ইউরোপের সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রচন্ড অস্থিরতা সৃষ্টি করে| পুরাতন বটল যেমন মদ ধরে রাখতে পারে না, সেইরূপ ইউরোপে পুরাতন সমাজ ব্যবস্থার সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতি এই জনসংখ্যার চাপ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়| কাজেই 1815 খ্রিস্টাব্দে ইউরোপের পুরাতন ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনার জন্য যতই চেষ্টা করা হোক না কেন, তা প্রজন্মের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না|
1815 খ্রিষ্টাব্দের পর ইউরোপে বিরাট বিপ্লব ঘটে| শিল্পশিল্প বিপ্লবের ফলে ইউরোপে জীবনধারা, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সমাজকে আমুলভাবে বদলে দিয়েছিল| ইউরোপে পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে 1815 খ্রিষ্টাব্দের পর আদর্শের দিক থেকে জাতীয়তাবাদ, প্রজাতন্ত্র, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের প্রসার হয়|
যাইহোক একদিকে কেন্দ্রীভূত শাসন এবং অন্যদিকে উদারনীতিবাদ ও গণতন্ত্রের প্রসার এবং উভয়ের মধ্যে সংঘাত, এই দুই মিলে উনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপ উত্তাল হয়ে উঠে| শিল্প বিপ্লবের ফলে শ্রমিক শ্রেণীর শশান ঘটে, এই জন্য সমাজতন্ত্রবাদের প্রসার হয়|
বস্তুত কাল মার্কসের আবির্ভাবের আগে পর্যন্ত সমাজতন্ত্র ছিল অপরিণত| তাই সমাজতন্ত্রবাদের দুটি পর্যায় ছিল, যথা- ইউরোপীয় বা বাস্তববিহীন সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ|
এই প্রতিক্রিয়াগুলি পুরাতন তন্ত্রকে ধসিয়ে পরিবর্তনের পথ রচনা করেন|
নতুন ও পুরাতনের এই দ্বন্দ্বে অবশ্য শেষ পর্যন্ত নতুনই জয় হয়েছিল| পুরাতন নতুনকে তার সঠিক পথ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল| একটু একটু করে পিছনে যেতে যেতে পুরাতন তন্ত্র শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়| অষ্টাদশ শতকের রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনীতিকে "পুরাতনতন্ত্র" বলা হয়|
পুরাতন তন্ত্রের প্রধান স্তম্ভগুলি ছিল স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র, চার্চ ও সামন্ততন্ত্র| রাজা ঈশ্বরের নির্দেশে বংশানুক্রমিকভাবে শাসন করবেন- এই তথ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল| রাজার এই অধিকারকে ন্যায্য অধিকার বলে অভিহিত করা হয়| নেপোলিয়নের পতনের পর 1815 খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রকে নতুন জীবন দান করা হয়েছিল|
ব্রিটেন ও প্রাশিয়ার মতো প্রোটেস্ট্যান্ট রাষ্ট্রগুলিও ইউরোপে গির্জার ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের সমর্থ জানিয়ে ছিল| ফ্রান্স, স্পেন ও ইতালিতে জেসুইটরা শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে এবং রাজনীতি, প্রশাসন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব অনুভূত হয়| ফ্রান্স পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে গির্জার অত্যাচারকে আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে|
চার্চ |
সর্বোপরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি গির্জা কবলিত হওয়ায় স্বাধীন চিন্তা অংকুর পরিস্ফুট হতে বাধা দেয়| পুরাতন তন্ত্রের আরেকটি ভিত্তি ছিল সামন্ততন্ত্র| 1815 খ্রিষ্টাব্দের পর সামন্ততন্ত্র তার হারিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা ফিরে পাবার চেষ্টা চালায়| যদিও ফরাসি বিপ্লব এবং নেপোলিয়ানের ঝড় ফ্রান্সে ও ইউরোপের সামন্ত শ্রেণীর অধিকারকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করেছিল| কিন্তু আবার নেপোলিয়নের পতনের পর এরা আবার বিভিন্ন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে|
এই পরিবর্তনশীলতা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সুদূর প্রসারী উপাদান ছিল ইউরোপের লোকসংখ্যার বিস্ফোরণ| ডেবিট টমসনের বর্ণনা অনুযায়ী জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ইউরোপের সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রচন্ড অস্থিরতা সৃষ্টি করে| পুরাতন বটল যেমন মদ ধরে রাখতে পারে না, সেইরূপ ইউরোপে পুরাতন সমাজ ব্যবস্থার সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতি এই জনসংখ্যার চাপ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়| কাজেই 1815 খ্রিস্টাব্দে ইউরোপের পুরাতন ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনার জন্য যতই চেষ্টা করা হোক না কেন, তা প্রজন্মের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না|
1815 খ্রিষ্টাব্দের পর ইউরোপে বিরাট বিপ্লব ঘটে| শিল্পশিল্প বিপ্লবের ফলে ইউরোপে জীবনধারা, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সমাজকে আমুলভাবে বদলে দিয়েছিল| ইউরোপে পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে 1815 খ্রিষ্টাব্দের পর আদর্শের দিক থেকে জাতীয়তাবাদ, প্রজাতন্ত্র, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের প্রসার হয়|
যাইহোক একদিকে কেন্দ্রীভূত শাসন এবং অন্যদিকে উদারনীতিবাদ ও গণতন্ত্রের প্রসার এবং উভয়ের মধ্যে সংঘাত, এই দুই মিলে উনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপ উত্তাল হয়ে উঠে| শিল্প বিপ্লবের ফলে শ্রমিক শ্রেণীর শশান ঘটে, এই জন্য সমাজতন্ত্রবাদের প্রসার হয়|
কাল মার্কস |
বস্তুত কাল মার্কসের আবির্ভাবের আগে পর্যন্ত সমাজতন্ত্র ছিল অপরিণত| তাই সমাজতন্ত্রবাদের দুটি পর্যায় ছিল, যথা- ইউরোপীয় বা বাস্তববিহীন সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ|
তথ্যসূত্র
- অধ্যাপক গোপালকৃষ্ণ পাহাড়ি, "ইউরোপের ইতিবৃত্ত"
- Adam Zamoyski, "Rites of Peace: The Fall of Napoleon and the Congress of Vienna".
- George Holmes, "The Oxford History of Medieval Europe".
সম্পর্কিত বিষয়
- ভিয়েনা কংগ্রেসের নীতি ও কাজ, ১৮১৫ (আরো পড়ুন)
- নেপোলিয়ন কে কেন ফরাসি বিপ্লবের শিশু বলা হয় (আরো পড়ুন)
- ইংল্যান্ডের উপর নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
- স্পেন কেন নেপোলিয়নের পতনের কারণ (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................