নেপোলিয়নের উত্থানের আগে থেকেই ইউরোপে ফ্রান্সের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিল| বিপ্লবী ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডই ছিল অন্যতম প্রধান শক্তি|
ডাইরেক্টরি শাসন কালে নেপোলিয়ন প্রথমে ইতালি অভিযানের সর্বাধিক নায়ক নিযুক্ত হন এবং পরে ইংল্যান্ডের সাথে যুদ্ধের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন| এই সময় তিনি দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন ইংল্যান্ডই হলো ফ্রান্সের প্রধান শত্রু, যে করেই হোক এই শত্রুকে ধ্বংস করতেই হবে|
নেপোলিয়ন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর এই শত্রুতা আরোও বৃদ্ধি পায়| তার শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ইংল্যান্ডের সঙ্গে যে সামরিক যুদ্ধ হয়েছিল সেখানেও নেপোলিয়ন ছিল মধ্যমণি| ইংরেজ আধিপত্য বিনষ্টের জন্যই নেপোলিয়ন মিশর অভিযানে যান| এরপর তিনি সরাসরি ইংল্যান্ড আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়|
নৌ শক্তিতে ইংল্যান্ড ছিল প্রবল শক্তিধর এবং তার সামরিক আধিপত্য নেপোলিয়নের সমস্ত প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়| ফলে ইংল্যান্ড ও নেপোলিয়নের মধ্যে চরম তিক্ততা এবং অবিশ্বাসের পর্যায়ে নেমে আসে|
1806 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নেপোলিয়ন ইউরোপের ভাগ্যবিধাতা হিসেবে উত্তীর্ণ হন| নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডকে সরাসরি আক্রমণ করতে না পারায় নেপোলিয়ন মনে করেন যে, ইংল্যান্ডকে অপদস্থ করার একমাত্র উপায় হলো অর্থনৈতিক অবরোধ|
সেই সময়ই ইংল্যান্ড ছিল প্রধানতম বাণিজ্যিক ও উপনিবেশিক শক্তি| উপরন্ত আবার শিল্প বিপ্লব ইংল্যান্ডকে নতুন শক্তি জুগিয়ে ছিল| সুতরাং শিল্প এবং বাণিজ্য ইংল্যান্ডের প্রধান শক্তি| এই প্রাণ শক্তিকে আঘাত করতে পারলেই ইংল্যান্ডকে পরাভূত করা যাবে বলে নেপোলিয়ন মনে করেন| তা সম্ভব হবে যদি ইউরোপীয় ভূখণ্ডে ইংরেজ বাণিজ্য বন্ধ করা যায়|
ইউরোপের উত্তর উপকূল ভাগের মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ডের ব্যবসা-বাণিজ্য চলত| নেপোলিয়ন মনে করেন যে, এই পথ বন্ধ করে দিলে ইংল্যান্ড যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে, তার প্রতিক্রিয়া ইংল্যান্ড সহ্য করতে পারবে না| এর ফলে ইংল্যান্ড আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে|
নেপোলিয়নের মতে, ইংল্যান্ড ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল, স্বভাবতই এই জাতিকে তিনি হাতে না মেরে ভাতে মারার ব্যবস্থা করেন| এর ফলে তিনি যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, তা ইউরোপীয় ইতিহাসে "মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা" নামে পরিচিত| এর উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ও ইংল্যান্ডের মধ্যে একদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করা, অপরদিকে ইউরোপীয় জনসাধরণ যাতে ইংল্যান্ডের কোন পণ্য কিনতে না পারে সেদিকে নজর রাখা| ইংল্যান্ডের পন্য বর্জন বা বয়কট এই ব্যবস্থার অন্যতম দিক ছিল|
নেপোলিয়ন মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন নীতি জারি করলেও জনসাধারণ তার চক্ষুর অন্তরালে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করতে থাকে| কারণ ইংল্যান্ডের এমন অনেক পণ্য ছিল যেগুলির চাহিদা সমগ্র ইউরোপে বজায় ছিল| ফলে জনসাধারণ তাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থাকে কোন মান্যতাই দেননি|
নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার জন্য সমগ্র ইউরোপের এক বিরাট অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হয়|সাধারণ মানুষ এক মহা বিপর্যয়ের সম্মুখে উপস্থিত হয়| মানুষের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি দুর্লভ এবং দুর্মূল্য হওয়ার ফলে নেপোলিয়নের শাসন এবং বিভিন্ন নীতির প্রতি জনসাধারণের ঘৃণার সৃষ্টি হয়| পর্তুগাল আক্রমণ, পোপের সঙ্গে বিরোধ এবং সেখানে হস্তক্ষেপ এবং রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ- এগুলি সবই মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার জন্য ঘটেছিল|
সুতরাং বলা যায় যে, জাতীয় চেতনা নেপোলিয়নের পতনের জন্য প্রধান কারণ ছিল, সেটি অবশ্যই মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না|
ডাইরেক্টরি শাসন কালে নেপোলিয়ন প্রথমে ইতালি অভিযানের সর্বাধিক নায়ক নিযুক্ত হন এবং পরে ইংল্যান্ডের সাথে যুদ্ধের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন| এই সময় তিনি দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন ইংল্যান্ডই হলো ফ্রান্সের প্রধান শত্রু, যে করেই হোক এই শত্রুকে ধ্বংস করতেই হবে|
নেপোলিয়ন |
নেপোলিয়ন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর এই শত্রুতা আরোও বৃদ্ধি পায়| তার শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ইংল্যান্ডের সঙ্গে যে সামরিক যুদ্ধ হয়েছিল সেখানেও নেপোলিয়ন ছিল মধ্যমণি| ইংরেজ আধিপত্য বিনষ্টের জন্যই নেপোলিয়ন মিশর অভিযানে যান| এরপর তিনি সরাসরি ইংল্যান্ড আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়|
নৌ শক্তিতে ইংল্যান্ড ছিল প্রবল শক্তিধর এবং তার সামরিক আধিপত্য নেপোলিয়নের সমস্ত প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়| ফলে ইংল্যান্ড ও নেপোলিয়নের মধ্যে চরম তিক্ততা এবং অবিশ্বাসের পর্যায়ে নেমে আসে|
1806 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নেপোলিয়ন ইউরোপের ভাগ্যবিধাতা হিসেবে উত্তীর্ণ হন| নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডকে সরাসরি আক্রমণ করতে না পারায় নেপোলিয়ন মনে করেন যে, ইংল্যান্ডকে অপদস্থ করার একমাত্র উপায় হলো অর্থনৈতিক অবরোধ|
সেই সময়ই ইংল্যান্ড ছিল প্রধানতম বাণিজ্যিক ও উপনিবেশিক শক্তি| উপরন্ত আবার শিল্প বিপ্লব ইংল্যান্ডকে নতুন শক্তি জুগিয়ে ছিল| সুতরাং শিল্প এবং বাণিজ্য ইংল্যান্ডের প্রধান শক্তি| এই প্রাণ শক্তিকে আঘাত করতে পারলেই ইংল্যান্ডকে পরাভূত করা যাবে বলে নেপোলিয়ন মনে করেন| তা সম্ভব হবে যদি ইউরোপীয় ভূখণ্ডে ইংরেজ বাণিজ্য বন্ধ করা যায়|
নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য |
ইউরোপের উত্তর উপকূল ভাগের মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ডের ব্যবসা-বাণিজ্য চলত| নেপোলিয়ন মনে করেন যে, এই পথ বন্ধ করে দিলে ইংল্যান্ড যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে, তার প্রতিক্রিয়া ইংল্যান্ড সহ্য করতে পারবে না| এর ফলে ইংল্যান্ড আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে|
নেপোলিয়নের মতে, ইংল্যান্ড ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল, স্বভাবতই এই জাতিকে তিনি হাতে না মেরে ভাতে মারার ব্যবস্থা করেন| এর ফলে তিনি যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, তা ইউরোপীয় ইতিহাসে "মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা" নামে পরিচিত| এর উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ও ইংল্যান্ডের মধ্যে একদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করা, অপরদিকে ইউরোপীয় জনসাধরণ যাতে ইংল্যান্ডের কোন পণ্য কিনতে না পারে সেদিকে নজর রাখা| ইংল্যান্ডের পন্য বর্জন বা বয়কট এই ব্যবস্থার অন্যতম দিক ছিল|
ইউরোপের মানচিত্র |
নেপোলিয়ন মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন নীতি জারি করলেও জনসাধারণ তার চক্ষুর অন্তরালে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করতে থাকে| কারণ ইংল্যান্ডের এমন অনেক পণ্য ছিল যেগুলির চাহিদা সমগ্র ইউরোপে বজায় ছিল| ফলে জনসাধারণ তাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থাকে কোন মান্যতাই দেননি|
নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার জন্য সমগ্র ইউরোপের এক বিরাট অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হয়|সাধারণ মানুষ এক মহা বিপর্যয়ের সম্মুখে উপস্থিত হয়| মানুষের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি দুর্লভ এবং দুর্মূল্য হওয়ার ফলে নেপোলিয়নের শাসন এবং বিভিন্ন নীতির প্রতি জনসাধারণের ঘৃণার সৃষ্টি হয়| পর্তুগাল আক্রমণ, পোপের সঙ্গে বিরোধ এবং সেখানে হস্তক্ষেপ এবং রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ- এগুলি সবই মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার জন্য ঘটেছিল|
সুতরাং বলা যায় যে, জাতীয় চেতনা নেপোলিয়নের পতনের জন্য প্রধান কারণ ছিল, সেটি অবশ্যই মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না|
তথ্যসূত্র
- অধ্যাপক গোপালকৃষ্ণ পাহাড়ি, "ইউরোপের ইতিবৃত্ত"
- Adam Zamoyski, "Rites of Peace: The Fall of Napoleon and the Congress of Vienna".
- George Holmes, "The Oxford History of Medieval Europe".
সম্পর্কিত বিষয়
- ভিয়েনা কংগ্রেসের নীতি ও কাজ, ১৮১৫ (আরো পড়ুন)
- নেপোলিয়ন কে কেন ফরাসি বিপ্লবের শিশু বলা হয় (আরো পড়ুন)
- স্পেন কেন নেপোলিয়নের পতনের কারণ (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................