সম্প্রীতি বিশ্ব রাজনীতিতে বিশ্বায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়| বিশ্বায়ন বলতে এক নতুন ধরনের নীতি বা কৌশলকে বোঝায়, যার মাধ্যমে সাবেকী সাম্রাজ্যবাদী এবং পুঁজিবাদী দেশগুলি নিজেদের অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক আধিপত্য ও শোষণ বজায় রাখার প্রচেষ্টা করে চলেছে|
বিশ্বায়ন হলো সাবেকী সাম্রাজ্যবাদী শোষণের পুনঃপ্রতিষ্ঠা| কাজেই পুঁজিবাদী দেশগুলো নিজেদের অর্থনৈতিক শোষণ বজায় রাখার জন্য নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে নিত্য-নতুন কৌশল অবলম্বন করে চলেছে| এরফলে কেবল মাত্র শোষণের কৌশলগত দিক পরিবর্তন হয়েছে| এই নতুন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক শোষণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে প্রচেষ্টা, তাকে বিশ্ব রাজনীতির পরিভাষায় "Economic integration of the world" নামে পরিচিত|
পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিপতি দেশগুলি বিংশ শতকের চল্লিশের দশকে এবং বিংশ শতকের শুরুতে গণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, উদারীকরণ নীতি অবলম্বন করে চলেছে, ইহাই বিশ্বায়ন|
কোন কোন বিশেষজ্ঞগণ এই নয়া আর্থিক নীতি বা নয়া উদারীকরণ নীতি বা নয়া আর্থিক ব্যবস্থাকে "নয়া উপনিবেশবাদ" বলে অভিহিত করেছেন| এই দৃষ্টিভঙ্গিতে বলা যায়- "Globalisation is similar to New-colonialism in its most sophisticated form".
পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিপতি দেশগুলি বিংশ শতকের চল্লিশের দশকে এবং বিংশ শতকের শুরুতে গণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, উদারীকরণ নীতি অবলম্বন করে চলেছে, ইহাই বিশ্বায়ন|
কোন কোন বিশেষজ্ঞগণ এই নয়া আর্থিক নীতি বা নয়া উদারীকরণ নীতি বা নয়া আর্থিক ব্যবস্থাকে "নয়া উপনিবেশবাদ" বলে অভিহিত করেছেন| এই দৃষ্টিভঙ্গিতে বলা যায়- "Globalisation is similar to New-colonialism in its most sophisticated form".
তৃতীয় বিশ্বের উপর বিশ্বায়নের প্রভাব
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বিশ্বায়নের দুটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যথা-
- পাশ্চাত্য উন্নতশীল দেশগুলির উদারীকরণ নীতি, সুপরিকল্পিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, উপকরণ বন্টন এর জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি (I.M.F) থেকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে আর্থিক ঋণ দান| এক্ষেত্রে বিশ্বায়নের পরিকাঠামো ব্যবস্থা ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য|
- তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে দারিদ্রতা দূরীকরণে কৃষি অর্থনীতিকে শিল্প অর্থনীতিতে পরিণত করা| বিজ্ঞান ও কারিগরি শিল্পের উন্নতি সাধন, আধুনিক শিল্প সম্ভার গড়ে তোলা, দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি বিকাশ সাধন করার তাগিদে মুলধনের প্রয়োজন অনুভূত হয়|ভারতবর্ষ সহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো I.M.F এবং বিশ্ব ব্যাংকের মাধ্যমে পাশ্চাত্য পুঁজিবাদী দেশগুলির কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে নিজেদের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের অগ্রসর হচ্ছে| তবে একই সঙ্গে পুঁজিবাদী স্বাভাবিকভাবে পুঁজি লগ্নিকারী দেশগুলির অর্থ বিনিয়োগের জন্য তৃতীয় বিশ্বের বাজার দখল করে চলেছে| তারা হাতিয়ার হিসাবে গ্রহণ করেছেন বিশ্বায়ন, উদারীকরণ নীতি এবং সেই সাথে প্রতিষ্ঠা করেছে বহুজাতিক সংস্থা|
সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর নিজেদের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছে-
- শিল্প বাণিজ্য সংস্থা (All trade organization)
- সূচক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তি সংস্থা (General trade territory & trade)
- বহু পণ্য বাণিজ্য সংস্থা (Multi national trade organization)
- তেল উৎপাদনকারী দেশ সমূহকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে ওপেক (Organization of petroleum exporting Countries)
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি বলতে বোঝায় এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার অনুন্নত দেশগুলি| এই দেশগুলিতে বিশ্বায়নের প্রভাব সর্বাত্মক| যেমন- সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়| রাজনৈতিক দিক দিয়ে দেশগুলি সরাসরি পুঁজিবাদী দেশগুলির উপনিবেশ না হলেও বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে তারা সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো অসহায় দর্শকের মতো তা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে| তাই স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বায়নের নাম হয়েছে "নয়া উপনিবেশবাদ" বা "নয়া ঔপনিবেশিকতাবাদ"|
আর্থিক ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে উদারীকরণের নীতি পরিচালিত হয়| বিভিন্ন ইতিবাচক শর্ত থেকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো ঋণ নেওয়ার সুযোগ পেয়ে বিশ্ব ব্যাংক এবং I.M.F. এর বরাদ্দ অর্থ দিয়ে তারা নিজেদের দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার রূপায়নের সক্ষম হয়েছে| তবে একই সঙ্গে পুঁজিবাদী শক্তিগুলির বিভিন্ন কৌশলে তারা আরো বেশি বেশি করে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এবং প্রদত্ত সুদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে| তাছাড়া পাশ্চাত্য দ্রব্য সামগ্রী সম্ভারে তৃতীয় বিশ্বের বাজারের দখল করে ফেলায় তৃতীয় বিশ্বে স্বল্প অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে| ফলে তারা আরও বেশি করে পুঁজিবাদী দেশগুলির উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে|
তৃতীয় বিশ্বের সর্বাপেক্ষা জনবহুল দেশ বিশ্বায়নের শর্ত মেনে 1990 এর দশকে ভারত আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থা ও বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে কাঠামোগত সংস্কারের শর্ত মেনে বিপুল পরিমাণে ঋণ নিয়েছিল| 1990-2003 এর মধ্যে বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারত যে অর্থনৈতিক সংস্কার করতে হয় তার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো পাঁচটি, যথা-
আর্থিক ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে উদারীকরণের নীতি পরিচালিত হয়| বিভিন্ন ইতিবাচক শর্ত থেকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো ঋণ নেওয়ার সুযোগ পেয়ে বিশ্ব ব্যাংক এবং I.M.F. এর বরাদ্দ অর্থ দিয়ে তারা নিজেদের দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার রূপায়নের সক্ষম হয়েছে| তবে একই সঙ্গে পুঁজিবাদী শক্তিগুলির বিভিন্ন কৌশলে তারা আরো বেশি বেশি করে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এবং প্রদত্ত সুদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে| তাছাড়া পাশ্চাত্য দ্রব্য সামগ্রী সম্ভারে তৃতীয় বিশ্বের বাজারের দখল করে ফেলায় তৃতীয় বিশ্বে স্বল্প অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে| ফলে তারা আরও বেশি করে পুঁজিবাদী দেশগুলির উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে|
বর্তমানে ভারতের মানচিত্র |
তৃতীয় বিশ্বের সর্বাপেক্ষা জনবহুল দেশ বিশ্বায়নের শর্ত মেনে 1990 এর দশকে ভারত আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থা ও বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে কাঠামোগত সংস্কারের শর্ত মেনে বিপুল পরিমাণে ঋণ নিয়েছিল| 1990-2003 এর মধ্যে বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারত যে অর্থনৈতিক সংস্কার করতে হয় তার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো পাঁচটি, যথা-
- আণবিক ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কয়েকটি ক্ষেত্রে ছাড়া আর সকল উৎপাদনে বিদেশি পুঁজির অবাধ বিনিয়োগ|
- বড় বড় ভোজ্য পণ্য ছাড়া শিল্পে লাইসেন্স প্রথার অবসান|
- বহুজাতিক সংস্থাগুলির নিজস্ব পণ্য বিক্রির অনুমতি দান|
- উৎপাদন ক্ষেত্রে কাঁচামাল, ভেষজ এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহারে বাধ্যবাধকতার বিলুপ্তি সাধন|
- ভারতে উৎপাদিত বিদেশী সংস্থার ভর শতাংশ বেশি অংশ দায়িত্বের অনুমতি|
এইসব সংস্কারের ফলে ইতিমধ্যে বাটা, কলগেট, ফিলিপস প্রভৃতি উৎপাদিত সংস্থাগুলির হাতে ভর শতাংশের বেশি শেয়ার চলে গিয়েছিল| সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শুরু হয়েছে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ|
বিশ্বায়ন এবং নতুন সংস্কারের আর একটি ফল হলো মুদ্রাস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি| এই মুদ্রাস্ফীতি 1993-1994 সালে ও 1994-1995 সালে হয়| যথাক্রমে 10.8 শতাংশ ও 12 শতাংশের কাছাকাছি জায়গায় নেমে এসেছিল| তবে নিয়ন্ত্রণ তৃতীয় বিশ্বের কোন একটি দেশের হাতে নেই তা বিশ্বায়ন চক্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে|
তবে এই প্রবণতা ঠেকানোর ক্ষমতা ভারতবর্ষ বা তৃতীয় বিশ্বের কোন একটি দেশের হাতে নেই| বাজার নিয়ন্ত্রণ, কৃষি, বস্ত্র, বাণিজ্য, পরিষেবা, বিনিয়োগ প্রাথমিক নিয়ম প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের শোষিত বহু বাণিজ্য সংস্থা W.T.O. এর প্রচেষ্টায় স্থাপিত হয়েছে| ফলে কোন স্বাধীন দেশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কমে এসেছে|
জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, শ্রেণীর ধারণা সংকুচিত হয়েছে| তাই এই বিশ্বকে এখন মনে হয়েছে Global Village বা বিশ্ব গ্রাম| আমাদের সামাজিক এবং সকল সম্পদ তৈরি হয় ইন্টারনেট এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে| এইভাবে বহু পণ্য বাণিজ্য সংস্থাগুলি নিয়ন্ত্রণ করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি এবং উদারীকরণের নামে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে পুঁজি বিনিয়োগ করে সুদের মুনাফার পাহাড় জমাচ্ছে|
তথ্যসূত্র
- Manfred B. Steger, "Globalization: A Very Short Introduction".
- BAYLIS ET AL, "The Globalization of World Politics 2nd".
সম্পর্কিত বিষয়
- ওপেক কি ? | What is OPEC ? (আরো পড়ুন)
- বিশ্বায়নের অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক কীভাবে আজকাল কাজ করে (আরো পড়ুন)
- বিশ্বায়নের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক আলোচনা (আরো পড়ুন)
- বহুজাতিক সংস্থার বৈশিষ্ট্য (আরো পড়ুন)
- GATT কি (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................