1904-1914 সাল পর্যন্ত ইউরোপের ইতিহাসকে "সশস্ত্র শান্তির যুগ" বলা হয়| প্রধান শিবিরে বিভক্ত হওয়া একদিকে জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরি "Triple alliance" বা "ত্রিশক্তি মৈত্রী" গঠন করেছিল| এই চুক্তিতে পরে বুলগেরিয়া ও রোমানিয়া যোগ দিয়েছিল| অন্যদিকে ফ্রান্স, রাশিয়া ও গ্রেট ব্রিটেন গঠন করেছিল "Triple Entente" বা "ত্রিশক্তি জোট"|
1890 সালে চ্যান্সেলর পদ থেকে বিসমার্কের বিদায়ের পর তার উত্তরাধিকারীরা রাশিয়ার সঙ্গে রিইন্সিওরেস্ম চুক্তি(Reinsurance Treaty) বাতিল করেন| কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম ব্রিটেনের সাথে মিত্রতা স্থাপনের আগ্রহ দেখানোই রাশিয়া আতঙ্কিত হয়| 1890 সালের 1লা জুলাই ইঙ্গ-জার্মান চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো|
ইতিমধ্যে জার্মানি রাশিয়াকে আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দিলে রাশিয়ার আর্থিক সংকট দেখা দেয়| এই অবস্থায় ফ্রান্স রাশিয়াকে উদার হাতে ঋণ দিতে শুরু করে| রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ফরাসী ও রুশ চুক্তির বন্ধনের আগ্রহী হলেন| 1891 সালে ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে একটি রাজনৈতিক চুক্তি সম্পাদিত হলো| কিন্তু ফ্রান্স উপলব্ধি করেছিলেন যে সামরিক চুক্তি ছাড়া রাজনৈতিক চুক্তি মূল্যহীন| ফলে 1893-1894 সালে উভয় দেশের মধ্যে একটি সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়|
এর পরবর্তী ঘটনা হলো ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে সমঝোতা| ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের একাংশ ইঙ্গ-জার্মান মিত্রতায় আগ্রহ প্রকাশ করলেও শীঘ্রই তা তিক্ত হয়ে উঠে| 1897 সালের জার্মান নৌ আইনের দ্বারা জার্মানির নৌ শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্রিটেন আতঙ্কিত হয়েছিল| জার্মানির ক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা ব্রিটেনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল| 1903 সালে ব্রিটেনের রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড ফ্রান্স পরিদর্শনে এসে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলেন| কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে ফরাসি রাষ্ট্রপতিও আসেন| আলোচনায় প্রায় এক বছর ধরে চলে| 1904 সালে স্বাক্ষরিত হয় "ইঙ্গ-ফরাসি আঁতাত", এটি ছিল উপনিবেশ সংক্রান্ত চুক্তি|
তিন বছর পরে একটি আপস রফার দ্বারা ইঙ্গ-রুশ বিবাদ মিটিয়ে ফেলা হয়| সে ঘটনা ইঙ্গ-রুশ সমঝোতার পথ প্রশস্ত করে দিল তা হল, দূর প্রাচ্যে জাপানের হাতে রাশিয়ার পরাজয় এবং জার্মানি কর্তৃক/দ্বারা বার্লিন-বাগদাদ রেলপথ তৈরির পরিকল্পনা| এই পরিস্থিতিতে জার্মানিকে প্রতিরোধ করার জন্য রাশিয়া ব্রিটেনের সাথে মিত্রতা চেয়েছিল| অন্যদিকে জার্মানির নৌ শক্তি বৃদ্ধিতে আতঙ্কিত ব্রিটেন রাশিয়ার সঙ্গে মিত্রতা চেয়েছিল| এই পরিস্থিতিতে 1907 সালে ইঙ্গ-রুশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো| এর দ্বারা পারস্যকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হলো- ব্রিটিশ অঞ্চল, রুশ অঞ্চল ও নিরপেক্ষ অঞ্চল|
ব্রিটেন |
তিন বছর পরে একটি আপস রফার দ্বারা ইঙ্গ-রুশ বিবাদ মিটিয়ে ফেলা হয়| সে ঘটনা ইঙ্গ-রুশ সমঝোতার পথ প্রশস্ত করে দিল তা হল, দূর প্রাচ্যে জাপানের হাতে রাশিয়ার পরাজয় এবং জার্মানি কর্তৃক/দ্বারা বার্লিন-বাগদাদ রেলপথ তৈরির পরিকল্পনা| এই পরিস্থিতিতে জার্মানিকে প্রতিরোধ করার জন্য রাশিয়া ব্রিটেনের সাথে মিত্রতা চেয়েছিল| অন্যদিকে জার্মানির নৌ শক্তি বৃদ্ধিতে আতঙ্কিত ব্রিটেন রাশিয়ার সঙ্গে মিত্রতা চেয়েছিল| এই পরিস্থিতিতে 1907 সালে ইঙ্গ-রুশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো| এর দ্বারা পারস্যকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হলো- ব্রিটিশ অঞ্চল, রুশ অঞ্চল ও নিরপেক্ষ অঞ্চল|
1894 সালে ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে মিত্রতা চুক্তি স্বাক্ষরিত করা হয়েছিল| ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে মিত্রতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল| 1904 সালে এবং ফ্রান্সের পূর্বতন মিত্র রাশিয়ার সঙ্গে ব্রিটেনের মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল| 1907 সালে এইভাবে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে গঠিত হয়েছিল ত্রিশক্তি আঁতাত|
এ. জে. পি. টেইলর এর ভাষায় এই ভাবে ঠিক প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে সমগ্র ইউরোপে দুটি পরস্পর বিরোধী সশস্ত্র শিবিরে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল| এক পথ অন্য পথকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করলো| এর স্বরূপ ধীরে ধীরে এগিয়ে চললো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংস লীলার দিকে|
তথ্যসূত্র
- Pavneet Singh, "International Relations".
- B. H. Liddell Hart, "A History of the First World War".
সম্পর্কিত বিষয়
- ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থানের ইতিহাস (আরো পড়ুন)
- অষ্টাদশ শতকের ইউরোপের আলোকিত যুগ (আরো পড়ুন)
- ষোড়শ শতকের ইউরোপের মানচিত্র অঙ্কনের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা (আরো পড়ুন)
- ভিয়েনা কংগ্রেসের নীতি ও কাজ, ১৮১৫ (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|