বারানী ছিলেন সুলতানি যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক|ইতিহাসের বিভিন্ন বিষয় বস্তু ও ইতিহাস দর্শন সম্পর্কে তার স্পষ্ট ধারণা ছিল| তিনি বলতেন, ইতিহাস হলো সত্যানুসন্ধানী| সত্যকে প্রকাশ করা হলো ইতিহাসের ধর্ম বারানীর দৃষ্টিতে|
ইতিহাস হলো মানুষের সামগ্রিক জীবনের উত্থান-পতনের ইতিহাস| অতীতের কাহিনী থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ বর্তমানে ভুল এড়াতে পারে| ঐতিহাসিক লক্ষ্য করেন সাম্রাজ্য ও জাতির কেন উত্থান ও পতন ঘটে ? কেন পরিবর্তন হয়?
ইতিহাস হলো মানুষের সামগ্রিক জীবনের উত্থান-পতনের ইতিহাস| অতীতের কাহিনী থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ বর্তমানে ভুল এড়াতে পারে| ঐতিহাসিক লক্ষ্য করেন সাম্রাজ্য ও জাতির কেন উত্থান ও পতন ঘটে ? কেন পরিবর্তন হয়?
জিয়াউদ্দিন বারানী দুটি উল্লেখযোগ্য রচনা হলো "তারিখ-ই-ফিরোজশাহী" এবং "ফতোয়া-ই-জাহানদারি"| বারানী তার প্রথম গ্রন্থ "তারিখ-ই-ফিরোজশাহী"-তে বলবনের ক্ষমতা লাভ থেকে শুরু করে এবং ফিরোজ শাহের প্রথম ছয় বছর অর্থাৎ মোট আট জন সুলতানের প্রায় 100 বছরের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন| এই গ্রন্থে তিনি মহম্মদ বিন তুঘলক থেকে বিভিন্ন সুলতানদের সাধারণ এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার দিক পর্যালোচনা করেছেন| মোহাম্মদ বিন তুঘলকের অধীনে বারানী রাজসভার লিপিকার হিসাবে নিযুক্ত হন এবং উচ্চ অভিজাত্বের অধিকারী হন| বারানী তার গ্রন্থের ভূমিকাতে একজন ঐতিহাসিকের গুণাবলীর পরিচয় দিয়েছেন|
অন্যদিকে মুঘল যুগের ইতিহাস চর্চাকে উন্নত স্তরে পৌঁছেছিলেন আবুল ফজল| আবুল ফজল ছিলেন একজন বুদ্ধিজীবী রাষ্ট্রনেতা, কূটনীতিবিদ এবং সামরিক অধিকারী| আবুল ফজল আকবরের রাজত্বকালের সাধারণ অবস্থা এবং বিভিন্ন সহায়ক সংস্থাকে অন্তত বিশ্বাসের সঙ্গে তুলে ধরেছেন|
আবুল ফজল ছিলেন একজন কূটনীতিবিদ এবং লেখক| তার দুই বিখ্যাত রচনা হলো "আকবরনামা" ও "আইন-ই-আকবরী"| এই দুটি গ্রন্থ হল ইতিহাসের দুটি অমূল্য সম্পদ| আকবরনামার রচিত হয়েছিল আকবরের উপর বিভিন্ন উপাদান থেকে সংগৃহীত তথ্য থেকে, এই গ্রন্থটি ছিল তিন খন্ডের বিভক্ত|
আবুল ফজলের মুঘল ইতিহাস চর্চার সবচেয়ে বড় অবদান ছিল মুঘল ভূমি ব্যবস্থা এবং অর্থনীতির উপর নির্ভর করে আকবরের আমলে রচিত "আইন-ই-আকবরী"| তার অপর গ্রন্থ "আকবরনামা" ছিল স্মরণীয়| এই গ্রন্থটি 3 টি খন্ডে বিভক্ত| প্রথম খন্ডে হুমায়ূনের মৃত্যু পর্যন্ত মুঘল ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে| দ্বিতীয় খন্ডে 1566 থেকে 1608 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আকবরের রাজত্বকাল সম্পর্কে বর্ণিত আছে|
তৃতীয় খন্ডে সাম্রাজ্যে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক তথ্য সমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে| "আইন-ই-আকবরী" হলো তৃতীয় খন্ড| এতে আকবরের রাজত্বকালের নিয়মাবলী, স্থানিক বর্ণনা, রাজস্ব ব্যবস্থা, সামাজিক অভ্যাস, প্রথা ও রীতি-নীতি সমূহ তুলে ধরা হয়েছে|
"আইন-ই-আকবরী"-তে আকবরের সামরিক এবং বেসামরিক প্রশাসন ও ব্যবস্থা সমূহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে| এটি ছাড়াও আবুল ফজল হিন্দু শাস্ত্র সমূহ যথা- গীতাকে পার্শি ভাষায় অনুবাদ করে| এছাড়াও তিনি "মক্তাবাৎ-ই-আবুলফজল" নামে সরকারি চিঠি-পত্রের সংকলন প্রকাশ করেন|
আবুল ফজল এবং বারানীর মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায় যে, আবুল ফজল ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে তার রচনারকে লিপিবদ্ধ করেছেন| অন্যদিকে বারানী ইতিহাসকে দেখেছেন ইসলামের মানদণ্ড অনুযায়ী|
আবুল ফজল ইতিহাস লিখেছেন উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, যেখানে ইতিহাস রচনা করা হলো জ্ঞান তৈরির শিল্প| সেই কারণে আবুল ফজলকে ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ বলে বিবেচনা করা হয়, যিনি তার যুগ ও সময়ের সমস্ত বাধাগুলিকে অতিক্রম করতে পেরেছিলেন|
অন্যদিকে মুঘল যুগের ইতিহাস চর্চাকে উন্নত স্তরে পৌঁছেছিলেন আবুল ফজল| আবুল ফজল ছিলেন একজন বুদ্ধিজীবী রাষ্ট্রনেতা, কূটনীতিবিদ এবং সামরিক অধিকারী| আবুল ফজল আকবরের রাজত্বকালের সাধারণ অবস্থা এবং বিভিন্ন সহায়ক সংস্থাকে অন্তত বিশ্বাসের সঙ্গে তুলে ধরেছেন|
আবুল ফজল ছিলেন একজন কূটনীতিবিদ এবং লেখক| তার দুই বিখ্যাত রচনা হলো "আকবরনামা" ও "আইন-ই-আকবরী"| এই দুটি গ্রন্থ হল ইতিহাসের দুটি অমূল্য সম্পদ| আকবরনামার রচিত হয়েছিল আকবরের উপর বিভিন্ন উপাদান থেকে সংগৃহীত তথ্য থেকে, এই গ্রন্থটি ছিল তিন খন্ডের বিভক্ত|
আবুল ফজল এবং জিয়াউদ্দিন বারানী
মধ্যযুগের এই দুই বিখ্যাত ঐতিহাসিকের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করতে গেলে দেখা যায় যে, মধ্যযুগের ইতিহাস চর্চার এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল যে, ইতিহাস তখন বিজ্ঞান ভিত্তিক, নির্ভূল এবং প্রাথমিক উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তিশীল ছিল| জিয়াউদ্দিন বারনী থেকে তথ্যপূর্ণ ইতিহাস রচনার সূত্রপাত ঘটে এবং মুঘল যুগে আবুল ফজলের সময় তা উৎকর্ষে পৌঁছায়|মুঘল সাম্রাজ্যের মানচিত্র
Author- Santosh.mbahrm
Date- 26 September 2015
|
তৃতীয় খন্ডে সাম্রাজ্যে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক তথ্য সমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে| "আইন-ই-আকবরী" হলো তৃতীয় খন্ড| এতে আকবরের রাজত্বকালের নিয়মাবলী, স্থানিক বর্ণনা, রাজস্ব ব্যবস্থা, সামাজিক অভ্যাস, প্রথা ও রীতি-নীতি সমূহ তুলে ধরা হয়েছে|
"আইন-ই-আকবরী"-তে আকবরের সামরিক এবং বেসামরিক প্রশাসন ও ব্যবস্থা সমূহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে| এটি ছাড়াও আবুল ফজল হিন্দু শাস্ত্র সমূহ যথা- গীতাকে পার্শি ভাষায় অনুবাদ করে| এছাড়াও তিনি "মক্তাবাৎ-ই-আবুলফজল" নামে সরকারি চিঠি-পত্রের সংকলন প্রকাশ করেন|
আবুল ফজল এবং বারানীর মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায় যে, আবুল ফজল ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে তার রচনারকে লিপিবদ্ধ করেছেন| অন্যদিকে বারানী ইতিহাসকে দেখেছেন ইসলামের মানদণ্ড অনুযায়ী|
আবুল ফজল ইতিহাস লিখেছেন উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, যেখানে ইতিহাস রচনা করা হলো জ্ঞান তৈরির শিল্প| সেই কারণে আবুল ফজলকে ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ বলে বিবেচনা করা হয়, যিনি তার যুগ ও সময়ের সমস্ত বাধাগুলিকে অতিক্রম করতে পেরেছিলেন|
তথ্যসূত্র
- সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "অষ্টাদশ শতকের মুঘল সংকট ও আধুনিক ইতিহাস চিন্তা"
- অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস"
সম্পর্কিত বিষয়
- আবুল ফজল এবং বদাউনি (আরো পড়ুন)
- ভারতবর্ষে মুঘল বা মোগল সাম্রাজ্যের প্রকৃতি ও কার্যাবলীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা (আরো পড়ুন)
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
......................................................