ভারতীয় কৃষকরা ভারত ইতিহাসে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সবদিক থেকেই প্রাথমিক পর্যায়ে অবহেলিত হয়েছে, কিন্তু পৃথিবীর অন্যত্র কৃষক সম্পর্কে পশ্চিমী মহলে এই নির্লিপ্ততা দেখা যায় না|
1524-25 খ্রিস্টাব্দে জার্মানির কৃষক যুদ্ধের সম্পর্কেও বহু প্রবন্ধ রচিত হয়েছে| পরবর্তীতে কৃষক আন্দোলন সম্পর্কে সচেতনতা পরিলক্ষিত হয়েছে রাশিয়া, চীন, যুগোস্লাভিয়া, ভিয়েতনাম, কিউবা প্রভৃতি দেশের ক্ষেত্রেও| তা সত্ত্বেও বুদ্ধিজীবী মহলে ভারতীয় কৃষকরা প্রায় অচ্ছুত হয়েছিল|
ভারতীয় কৃষকদের সম্পর্কে বুদ্ধিজীবী মহলে এই নির্লিপ্ততা কিছু কারণ পরবর্তীকালে ভাবনা-চিন্তায় ধরা পড়েছে| এর কারণ হিসেবে প্রথম দিকে বলা হতো যে, ভারতীয় কৃষকরা ছিল নৈতিক বিষয়ে উদাসীন ও হতাশাগ্রস্ত ফলে তাদের উপর ঐতিহাসিকদের দৃষ্টি বিশেষ পড়েনি| এছাড়া ভারতীয় কৃষকদের সম্পর্কে বুদ্ধিজীবী মহলে নির্লিপ্ততার কারণ সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে যে, ভারতীয় কৃষকরা ছিল অতিমাত্রায় অদৃষ্টবাদী এবং ভয়ঙ্কর রকম কুসংস্কারাচ্ছন্ন|
তবে এই কারণগুলিকে অবশ্য আধুনিক ঐতিহাসিকরা সম্পূর্ণ রূপে গ্রহণ করেননি| বস্তুত প্রাথমিক পর্যায়ে কারণ নির্দেশিত ধারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এ. আর. দেশাই|
পরবর্তীতে এ. আর. দেশাই সম্পাদিত "Peasant Struggles in India" গ্রন্থে অধ্যাপক ক্যাথলিন গফ ঐতিহাসিক প্রমাণ সহ দেখিয়েছেন যে, ভারতীয় কৃষকরা মোটেই সামাজিক, অর্থনৈতিক, ও রাজনৈতিক বিষয়ে উদাসীন ছিল না|
অধ্যাপক রণজিৎ গুহ বিখ্যাত "elementary aspects of peasant insurgency in colonial india" গ্রন্থেও একই মত ধ্বনিত হয়েছে| এদের মতে ব্রিটিশ শাসন ও সামাজিক, অর্থনৈতিক আগ্রাসী বিরুদ্ধে ভারতীয় কৃষক মাঝে মাঝেই কখনো শান্তিপূর্ণভাবে, আবার কখনো অস্ত্র হাতে আন্দোলনে সামিল হয়েছে|
ক্যাথলিন গফ ভারতীয় আন্দোলন সম্পর্কে বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা করে এর 5 টি ধাঁচ নির্ধারণ করলেও মার্কসবাদীরাই প্রথম কৃষক সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন| এর পিছনে কারণ ছিল-
1524-25 খ্রিস্টাব্দে জার্মানির কৃষক যুদ্ধের সম্পর্কেও বহু প্রবন্ধ রচিত হয়েছে| পরবর্তীতে কৃষক আন্দোলন সম্পর্কে সচেতনতা পরিলক্ষিত হয়েছে রাশিয়া, চীন, যুগোস্লাভিয়া, ভিয়েতনাম, কিউবা প্রভৃতি দেশের ক্ষেত্রেও| তা সত্ত্বেও বুদ্ধিজীবী মহলে ভারতীয় কৃষকরা প্রায় অচ্ছুত হয়েছিল|
কৃষক |
ভারতীয় কৃষকদের সম্পর্কে বুদ্ধিজীবী মহলে এই নির্লিপ্ততা কিছু কারণ পরবর্তীকালে ভাবনা-চিন্তায় ধরা পড়েছে| এর কারণ হিসেবে প্রথম দিকে বলা হতো যে, ভারতীয় কৃষকরা ছিল নৈতিক বিষয়ে উদাসীন ও হতাশাগ্রস্ত ফলে তাদের উপর ঐতিহাসিকদের দৃষ্টি বিশেষ পড়েনি| এছাড়া ভারতীয় কৃষকদের সম্পর্কে বুদ্ধিজীবী মহলে নির্লিপ্ততার কারণ সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে যে, ভারতীয় কৃষকরা ছিল অতিমাত্রায় অদৃষ্টবাদী এবং ভয়ঙ্কর রকম কুসংস্কারাচ্ছন্ন|
তবে এই কারণগুলিকে অবশ্য আধুনিক ঐতিহাসিকরা সম্পূর্ণ রূপে গ্রহণ করেননি| বস্তুত প্রাথমিক পর্যায়ে কারণ নির্দেশিত ধারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এ. আর. দেশাই|
পরবর্তীতে এ. আর. দেশাই সম্পাদিত "Peasant Struggles in India" গ্রন্থে অধ্যাপক ক্যাথলিন গফ ঐতিহাসিক প্রমাণ সহ দেখিয়েছেন যে, ভারতীয় কৃষকরা মোটেই সামাজিক, অর্থনৈতিক, ও রাজনৈতিক বিষয়ে উদাসীন ছিল না|
অধ্যাপক রণজিৎ গুহ বিখ্যাত "elementary aspects of peasant insurgency in colonial india" গ্রন্থেও একই মত ধ্বনিত হয়েছে| এদের মতে ব্রিটিশ শাসন ও সামাজিক, অর্থনৈতিক আগ্রাসী বিরুদ্ধে ভারতীয় কৃষক মাঝে মাঝেই কখনো শান্তিপূর্ণভাবে, আবার কখনো অস্ত্র হাতে আন্দোলনে সামিল হয়েছে|
কৃষি জমি |
ক্যাথলিন গফ ভারতীয় আন্দোলন সম্পর্কে বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা করে এর 5 টি ধাঁচ নির্ধারণ করলেও মার্কসবাদীরাই প্রথম কৃষক সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন| এর পিছনে কারণ ছিল-
- প্রথমত, কৃষক সম্পর্কে কাল মার্কস এর ধারণা সংশোধন করেছিল লেনিন ও মাও-সে-তুং| ফলে বিপ্লবের ক্ষেত্রে কৃষক অভ্যুত্থানের ধারণা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় মার্কসবাদীরা কৃষক সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠে|
- দ্বিতীয়ত, পৃথিবীর সর্বত্র কৃষক আন্দোলন নিয়ে গবেষণা শুরু হলে মার্কসবাদী ঐতিহাসিকরা ভারত সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন| 1995 খ্রিস্টাব্দে ক্যাথলিন গফের প্রবন্ধ এবং 1966 খ্রিস্টাব্দে বারিংটন মুর জুনিয়র চীনের কৃষকদের সাথে ভারতীয় কৃষকদের তুলনা ভারতীয় ও বিদেশী পন্ডিত মহলে উৎসাহের সৃষ্টি করে| এর পরেই ভারতীয় কৃষকদের নিয়ে গবেষণার জোয়ার এসে যায়|
কিভাবে ভারতীয় ইতিহাসে ভারতীয় কৃষক গুরুত্বপূর্ণ
ভারতীয় কৃষকের আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠার দিকটিও ইতিহাস দর্শনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট আকর্ষনীয়| বস্তুত কয়েকটি দিক থেকে এই বিষয়টাকে ব্যাখ্যা করা যায়-
- প্রথমত, স্বাধীন ভারতে সমস্যা দেখা দিয়েছিল যে, ইংরেজ আমলে কৃষকরা যেভাবে শোষিত হয়েছে তার পরবর্তী ব্যবস্থা কিভাবে আনা যায়| এই অবস্থায় ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে কৃষকদের সম্পর্কে আলোচনার প্রয়োজনীয় হয়ে উঠে|
- দ্বিতীয়ত, 1860 খ্রিস্টাব্দে নীল বিদ্রোহ প্রমাণ করেছিল যে, বাণিজ্যিক ফসল উৎপাদনের জন্য ইংরেজ মালিকরা কৃষকদের উপর নিদারুণ অত্যাচার চালিয়েছিল| পরবর্তীতে পাট, চা, তুলো, আখ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ইংরেজরা চুক্তিবদ্ধ কৃষি শ্রমিক নিয়োগ করে এদের উপর অত্যাচার করেছে| এর পাশাপাশি কাল মার্কস তার "দাস ক্যাপিটাল" গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এই পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করলে ভারতীয় বুদ্ধিজীবী মহলেও ভারতীয় কৃষকদের নিয়ে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন|
- তৃতীয়ত, 1875 খ্রিষ্টাব্দের দাক্ষিণাত্যের কৃষক বিদ্রোহ রায়তওয়ারী অঞ্চলে মহাজন ও ইংরেজদের শোষণের চিত্র পরিষ্কার করে দেয়| মহাজন ও ইংরেজ বণিকরা শোষণ করে কিভাবে ধনী হচ্ছে, এই বিষয়টি কার্ল মার্কসের "primitive accumulation" তত্ত্বের আলোকে ভারত ইতিহাসে যাচাই করার প্রয়োজনীয়তা পন্ডিত মহলে অনুভূত হয়|
- চতুর্থত, 1855-56 খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল বিদ্রোহ, 1870 এর পাবনার কৃষক বিদ্রোহ বুদ্ধিজীবী মহলকে জমিদার ও রাতের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় উদ্বুদ্ধ করে| অধ্যাপক কালীকিঙ্কর দত্ত, বিনয় ভূষণ চৌধুরী প্রমূখ এই আলোচনায় উৎসাহী হয়ে উঠে| এই ভাবেই ভারতীয় কৃষক ক্রমশ পন্ডিত মহলের আলোচনার মানচিত্রে উঠে আসে আসে|
ইদানিং বুদ্ধিজীবী মহল কৃষকদের নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী হলেও একথা ঠিক যে, প্রথমদিকে মার্কসবাদীরাই একাজে অগ্রসর হয়েছিলেন| তবে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের আলোচনা ছিল বিক্ষিপ্ত| পরবর্তীতে শাহিদ আমিন, গৌতম ভদ্র প্রমুখ পন্ডিতের আগমন নিঃসন্দেহে ভারত ইতিহাসে ভারতীয় কৃষকের অবস্থানকে সুসংগত রূপ দান করেছে|
তথ্যসূত্র
- A. R. Desai, "Peasant Struggles in India".
- Sho Kuwajima, "peasants and peasant leaders in contemporary history".
সম্পর্কিত বিষয়
- কৃষক কাকে বলে (আরো পড়ুন)
- ভারতের শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলন এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (আরো পড়ুন)
- ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ভাবাদর্শ (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................