প্রয়োজনীয় বা অপরিহার্য কতগুলি ধারণা সমষ্টি হিসাবে মার্কস ও মার্কসবাদকে বিবেচনা করা একটা দুরহ কাজ| অবশ্য মার্কসের লেখাগুলিকে বিভিন্ন ভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে| মার্কসবাদকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করার জন্য আমাদের মার্কসীয় দর্শনকে যথাযথ ভাবে বোঝা দরকার|
মার্কসবাদী পর্যালোচনার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, যথা-
- ভিত্তি ও উপরি কাঠামো ধারণা|
- শ্রেণী কর্ম, শ্রেণি দ্বন্দ্ব ও শ্রেণী সংগ্রামের ধারণা|
- বিজ্ঞান ও সমালোচক হিসেবে মার্কসবাদের ধারণা|
মার্কসের লেখাতে ভিত্তি ও উপরি কাঠামোকে তিনটি কাঠামোতে বিভক্ত করা হয়েছে, যথা- 1.ক্ষয় ও নিমিত্তবাদী কাঠামো| 2.দ্বন্দ্বমূলক কাঠামো| 3.জৈব কাঠামো|
ক্ষয় ও নিমিত্তবাদী কাঠামো অনুযায়ী বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আইনগত সমস্ত উপাদান ও বিষয়গুলি স্পষ্ট, কিন্তু বাহ্যিক ভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং অর্থনীতির ভিত্তি গঠন করেন| এই কাঠামোর ক্ষেত্রে কোন ঐতিহাসিক ঘটনার তথা ভিত্তি থেকে একটি নির্দিষ্ট অভিমুখে ঊর্ধ্বমুখী যাত্রা শুরু করে| ভিত্তি থেকে নির্দিষ্ট অভিমুখী যাত্রার উপরিকাঠামো ধারণা আসে| আসলে এটি একটি অতি ক্ষয়বাদী কাঠামো| কেননা প্রত্যেকটি পরিবর্তনকে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের পর্যায় ফেলে আলোচনা করা হয়|
দ্বন্দ্বমূলক কাঠামোটি আরো অনেক বেশি জটিল| এক্ষেত্রে কাঠামোগত সমস্ত উপাদানগুলি স্পষ্টতর ও একে অপরের থেকে ভিন্ন, কিন্তু একটি নির্দিষ্ট অভিমুখী ঘটনা প্রবাহে ধারণা বদলে একটি দ্বন্দ্বমূলক ঘটনা প্রবাহে ধারণা করা হয়| মার্কসবাদী যে উপাদানটি কোন সাধারণ অর্থনৈতিক ঘটনা নয়| ফলে এর সঙ্গে নতুন ধারণা ও ভাবনার যুক্ত হয়| সুতরাং উপাদান ক্রিয়া, ধারণা ও চিন্তার একটি মেলবন্ধন|
জৈব কাঠামো অনুযায়ী ভিত্তি ও উপরিকাঠামোর ধারণাগুলি ভিন্ন প্রকৃতির| এক্ষেত্রে সামাজিক উপাদান সমূহগুলি কোন আলাদা ও বিভিন্নতা নিয়ে দেখা দেয় না| কিন্তু অভ্যন্তরীণভাবে এগুলি থেকে অপরের সাথে যুক্ত| এমনটি এই জৈব কাঠামোর ধারণা কোন যুক্তি- তর্কমূলক আলোচনাতে যায় না| সুতরাং উপরে উল্লেখিত দুই কাঠামো ভিত্তি ও উপরিকাঠামোর ধারণা দেখাতে চাই সমাজ হলো জীবদেহের মতো কতগুলি জটিল উপাদানের যারা এককভাবে একে অন্যের উপর নির্ভরশীল|
মার্কসীয় ধারণা অনুযায়ী সমাজ কতগুলি বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত যথা-
ক্ষয় ও নিমিত্তবাদী কাঠামো অনুযায়ী বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আইনগত সমস্ত উপাদান ও বিষয়গুলি স্পষ্ট, কিন্তু বাহ্যিক ভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং অর্থনীতির ভিত্তি গঠন করেন| এই কাঠামোর ক্ষেত্রে কোন ঐতিহাসিক ঘটনার তথা ভিত্তি থেকে একটি নির্দিষ্ট অভিমুখে ঊর্ধ্বমুখী যাত্রা শুরু করে| ভিত্তি থেকে নির্দিষ্ট অভিমুখী যাত্রার উপরিকাঠামো ধারণা আসে| আসলে এটি একটি অতি ক্ষয়বাদী কাঠামো| কেননা প্রত্যেকটি পরিবর্তনকে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের পর্যায় ফেলে আলোচনা করা হয়|
দ্বন্দ্বমূলক কাঠামোটি আরো অনেক বেশি জটিল| এক্ষেত্রে কাঠামোগত সমস্ত উপাদানগুলি স্পষ্টতর ও একে অপরের থেকে ভিন্ন, কিন্তু একটি নির্দিষ্ট অভিমুখী ঘটনা প্রবাহে ধারণা বদলে একটি দ্বন্দ্বমূলক ঘটনা প্রবাহে ধারণা করা হয়| মার্কসবাদী যে উপাদানটি কোন সাধারণ অর্থনৈতিক ঘটনা নয়| ফলে এর সঙ্গে নতুন ধারণা ও ভাবনার যুক্ত হয়| সুতরাং উপাদান ক্রিয়া, ধারণা ও চিন্তার একটি মেলবন্ধন|
জৈব কাঠামো অনুযায়ী ভিত্তি ও উপরিকাঠামোর ধারণাগুলি ভিন্ন প্রকৃতির| এক্ষেত্রে সামাজিক উপাদান সমূহগুলি কোন আলাদা ও বিভিন্নতা নিয়ে দেখা দেয় না| কিন্তু অভ্যন্তরীণভাবে এগুলি থেকে অপরের সাথে যুক্ত| এমনটি এই জৈব কাঠামোর ধারণা কোন যুক্তি- তর্কমূলক আলোচনাতে যায় না| সুতরাং উপরে উল্লেখিত দুই কাঠামো ভিত্তি ও উপরিকাঠামোর ধারণা দেখাতে চাই সমাজ হলো জীবদেহের মতো কতগুলি জটিল উপাদানের যারা এককভাবে একে অন্যের উপর নির্ভরশীল|
মার্কসীয় ধারণা অনুযায়ী সমাজ কতগুলি বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত যথা-
- আদি সাম্যবাদী সমাজ
- দাস সমাজ
- সামন্ত সমাজ
- পুঁজিবাদী সমাজ
- সাম্যবাদী সমাজ
মার্কস উৎপাদনের ভিত্তিতে এই বিভাজনগুলি করেছে| মার্কসীয় দর্শন অনুযায়ী ইতিহাস রচনা মোটামুটিভাবে শুরু হয় 1930 ও 1934 এর দিকে| এই সময় ইতিহাস লেখার মূল ভিত্তি গড়ে উঠেছিল রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ও প্রযুক্তি নির্ভর অর্থনৈতিক উর্বর মৃত্তিকার ওপর| বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই মিলন আধুনিক মার্কসবাদ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে উঠেছিল| কিছু কিছু বৈজ্ঞানিক দল কমিউনিস্ট দলে যোগদান করেন এবং ইতিহাস লেখায় মনোনিবেশ করেন, এর ফলে বিজ্ঞানের ধারা মার্কসবাদকে ছুঁয়ে গেলে গেল এবং মার্কসবাদকে একটা বিজ্ঞান হিসেবে দেখা শুরু হয়|
1950 এর দশক থেকে কালক্রমে অর্থনৈতিক আলোচনার পর্যায় পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত হল সাংস্কৃতিক আলোচনা পর্যায়| এই নয়া মার্কসবাদী ইতিহাসকে অনেক সময় মানুষের ইতিহাস হিসাবে চিহ্নিত করা হয়| প্রকৃত অর্থে মানুষের ইতিহাসে সূত্রপাত 1950-এর শুরু হয়েছিল| উনিশ শতকের আসার পর থেকে নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রভাবে প্রভাবিত হয় রূপ নেই মানুষের বা জনগণের ইতিহাস হিসাবে|
এই ইতিহাস রচনা প্রসঙ্গে জনপ্রিয় ধারণাটি হলো যে জনগণের ঐতিহ্য অপরিহার্যভাবে স্বশাসিত| উঁচু স্তরের মানুষের সংস্কৃতি ও নিচু স্তরের স্বপ্নগুলি হল দুটি ভিন্ন অস্তিত্ব, যারা একে অপরের বিরোধী| আবার এই বিরোধীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, উঁচু স্তরের মানুষের সংস্কৃতি নিচু স্তরের মানুষের সংস্কৃতির উপর শেষ পর্যন্ত কর্তৃত্ব করে বা প্রভাব বিস্তার করে, আসলে এই দুটি সংস্কৃতির মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার বিষয়টি অবহেলিত হয়েছিল|
কিন্তু ইতিহাসের এই গঠন পদ্ধতির মূল সমস্যা হলো যে, নিচু স্তরের মানুষের সংস্কৃতিকে সবসময় উঁচু স্তরের মানুষের সংস্কৃতি বিরোধী হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে বা একটি বিরোধী সংস্কৃতি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে| এক্ষেত্রে অনেক বিরোধী যুক্তি প্রদর্শন করতে পারে এই বলে যে, একটি সংস্কৃতি অপর সংস্কৃতির তুলনায় যে "হীন" বলে সর্বদাই বিরোধী হবে এমন নয়| এছাড়া অনেক শ্রেণী কখনোবা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরোধী হতে পারে, তবে এটা ভুললে চলবে না যে, জনপ্রিয় সংস্কৃতির মধ্যে ফ্যাসিবাদী বীজ বপন করা ছিল|
1950 এর দশক থেকে কালক্রমে অর্থনৈতিক আলোচনার পর্যায় পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত হল সাংস্কৃতিক আলোচনা পর্যায়| এই নয়া মার্কসবাদী ইতিহাসকে অনেক সময় মানুষের ইতিহাস হিসাবে চিহ্নিত করা হয়| প্রকৃত অর্থে মানুষের ইতিহাসে সূত্রপাত 1950-এর শুরু হয়েছিল| উনিশ শতকের আসার পর থেকে নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রভাবে প্রভাবিত হয় রূপ নেই মানুষের বা জনগণের ইতিহাস হিসাবে|
এই ইতিহাস রচনা প্রসঙ্গে জনপ্রিয় ধারণাটি হলো যে জনগণের ঐতিহ্য অপরিহার্যভাবে স্বশাসিত| উঁচু স্তরের মানুষের সংস্কৃতি ও নিচু স্তরের স্বপ্নগুলি হল দুটি ভিন্ন অস্তিত্ব, যারা একে অপরের বিরোধী| আবার এই বিরোধীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, উঁচু স্তরের মানুষের সংস্কৃতি নিচু স্তরের মানুষের সংস্কৃতির উপর শেষ পর্যন্ত কর্তৃত্ব করে বা প্রভাব বিস্তার করে, আসলে এই দুটি সংস্কৃতির মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার বিষয়টি অবহেলিত হয়েছিল|
কিন্তু ইতিহাসের এই গঠন পদ্ধতির মূল সমস্যা হলো যে, নিচু স্তরের মানুষের সংস্কৃতিকে সবসময় উঁচু স্তরের মানুষের সংস্কৃতি বিরোধী হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে বা একটি বিরোধী সংস্কৃতি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে| এক্ষেত্রে অনেক বিরোধী যুক্তি প্রদর্শন করতে পারে এই বলে যে, একটি সংস্কৃতি অপর সংস্কৃতির তুলনায় যে "হীন" বলে সর্বদাই বিরোধী হবে এমন নয়| এছাড়া অনেক শ্রেণী কখনোবা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরোধী হতে পারে, তবে এটা ভুললে চলবে না যে, জনপ্রিয় সংস্কৃতির মধ্যে ফ্যাসিবাদী বীজ বপন করা ছিল|
তথ্যসূত্র
- Karl Marx, "Capital (Das Capital)".
- Sherman Sutherland, "Understanding Literary Theory".
সম্পর্কিত বিষয়
- অষ্টাদশ শতকের ইউরোপের আলোকিত যুগ (আরো পড়ুন)
- ষোড়শ শতকের ইউরোপের মানচিত্র অঙ্কনের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা (আরো পড়ুন)
- ইউরোপের স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের প্রকৃতি এবং বিতর্ক (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................