স্বাধীনতা পর ভারতবর্ষের একটা অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল দেশীয় রাজ্যগুলির নিযুক্তিকরণ| এই ভাষা ভিত্তিক প্রদেশ গঠনের ধারণা ব্রিটিশ শাসন আমল থেকেই ভারতীয়দের মনে সৃষ্টি করেছিল| কংগ্রেস এবং ব্রিটিশ সরকার উভয়ই বিবেচনা করে ভাষা ভিত্তিক প্রদেশ গঠনের পক্ষে ছিল|
কিন্তু জাতীয় কংগ্রেসের নেতা মতিলাল নেহেরু 1950 সালে একটি কমিশন গঠন করে, যার নাম ছিল "নেহেরু কমিটি"| জাতীয় কংগ্রেস তার কলকাতা ও ওয়ারধা অধিবেশনে একটি প্রস্তাব পেশ করে তাতে বলা হয় যে, ব্রিটিশ অধিকার ভুক্ত দেশগুলোকে ভাষা ভিত্তিক হিসাবে ভাগ করা হবে| ব্রিটিশ পর্যায়ে আসাম, সিকিম, ওড়িশা ইত্যাদি রাজ্যগুলি ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিক প্রদেশ| কিন্তু অন্ধপ্রদেশের তেলেগু ভাষি মানুষেরা তাদের আলাদা রাজ্যের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন|
কিন্তু কিভাবে এই ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠন করা যাবে, এর উপায় খোঁজার জন্য Assembly বা সভায় একটি কমিশন গঠন করা হয়, যার নাম হয় "ধর কমিশন"(1948) এবং এর নেতৃত্ব দেওয়া হয় এস এস ধরকে| এই কমিশনে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনে বিভিন্ন সমস্যাগুলি অনুসন্ধানের কথা বলা হয়| কিন্তু এই কমিশন ভাষা ভিত্তিক রাজ্য গঠনের প্রস্তাব খারিজ করে এবং ভৌগলিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ইত্যাদি দিক থেকে ভাগ করার উপদেশ দেওয়া হয়| যার ফল স্বরূপ ভাষা ভিত্তিক রাজ্য গঠনের প্রস্তাব ত্যাগ করে| কিন্তু এই সময় ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে দক্ষিনে একের পর এক আন্দোলন শুরু হয়| যার ফলে পুনরায় এই ভাষা ভিত্তিক রাজ্য গঠনের প্রক্রিয়াটি উজ্জীবিত হয়|
প্রচণ্ড জনরোষের চাপে কংগ্রেস এই সময় একটি কমিটি গঠন করে| 1948 সালের জওহরলাল নেহেরু, বল্লভভাই প্যাটেল, পট্টভি সীতারামাইয়াকে নিয়ে J.V.P কমিটি গঠিত হয়| এই কমিটির কাজ ছিল ভাষা ভিত্তিক রাজ্য গঠনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা| 1949 সালে 1 লা এপ্রিল J.V.P কমিটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়| এতে বলা হয় যে, "এই মুহূর্তে ভাষা ভিত্তিতে রাজ্য গঠন করা সম্ভব নয়"|
1948 সালে ভাষা ভিত্তিক প্রদেশ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয় যে, "যতদিন না পর্যন্ত ভারত একটি জাতিতে পরিণত হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত ভাষা ভিত্তিক প্রদেশগুলির সংকীর্ণ ঝোঁক গুলিকে অবদমিত রাখতে হবে"|
1952 সালের 20 অক্টোবর তেলেগু ভাষি গান্ধীবাদী নেতা পট্টী শ্রীরামালু মাদ্রাজের তেলেগু ভাষি 11 টি জেলা নিয়ে পৃথক অন্ধপ্রদেশ গঠনের দাবিতে অনশন শুরু করেন| কিন্তু এই অনশন নেহেরুকে বিচলিত করেনি| 1952 সালের 15 ই ডিসেম্বর অনশন রত অবস্থায় তিনি মারা যান| তার মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে তেলেগু ভাষি জেলাগুলিতে দাঙ্গা শুরু হয়| এর ফলে 1952 সালের 18 ই ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অন্ধপ্রদেশ নামক পৃথক রাজ্য গঠন করতে বাধ্য হয়| এই অন্ধ্রপ্রদেশ হচ্ছে ভারত স্বাধীনতার পর প্রথম রাজ্য| এইভাবে তামিলনাড়ুরকেও তামিল ভাষা অনুযায়ী রাজ্য হিসাবে গঠন করা হয়| এই ঘটনার পর অন্যান্য ভাষা-ভাষীর মানুষও ভাষা ভিত্তিক তাদের আলাদা রাজ্যের দাবি করে|
ভারতের উত্তর পূর্বাংশে রাজ্য গঠনের ক্ষেত্রে মেঘালয়কে আসাম থেকে পৃথক করে আলাদা রাজ্য হিসেবে গঠন করা হয়| কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মণিপুর ও ত্রিপুরা রাজ্য হিসাবে গঠন করা হয় 1972 সালে| এই রাজ্যগুলি ভারতের 19 তম, 20 তম ও 21 তম রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়| 22 তম রাজ্য হিসাবে 1987 সালের 20 ফেব্রুয়ারি সিকিম নিযুক্ত হয়|
1987 সালের 30 শে মে 23 তম ও 24 তম রাজ্য হিসাবে তামিলনাড়ু প্রদেশ ও মিজোরামকে নিযুক্ত করা হয়| ভারতের আঞ্চলিক রাজ্য গোয়া এই সময় 25 তম রাজ্য হিসাবে নিযুক্ত হয়|
উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার এবং অন্ধপ্রদেশের পাশাপাশি চারটি নতুন রাজ্য উত্তরাঞ্চল(বর্তমানে উত্তরাখণ্ড), ছত্রিশগড়, ঝাড়খন্ড এবং তেলেঙ্গানা ভারতীয় রাজ্যের 26 তম, 27 তম, 28 তম এবং 29 তম রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়|
তাই পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, এই রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন ভাষাভিত্তিক যেভাবে ভারতীয় রাজ্যগুলিকে পুনর্গঠন করেছিল, তা সত্যিই অনস্বীকার্য| ভারত সরকার প্রতিটি রাজ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক বজায় রাখে এবং প্রত্যেকটি রাজ্যেই তার শক্তি প্রয়োগ করে|
জওহরলাল নেহেরু |
কিন্তু কিভাবে এই ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠন করা যাবে, এর উপায় খোঁজার জন্য Assembly বা সভায় একটি কমিশন গঠন করা হয়, যার নাম হয় "ধর কমিশন"(1948) এবং এর নেতৃত্ব দেওয়া হয় এস এস ধরকে| এই কমিশনে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনে বিভিন্ন সমস্যাগুলি অনুসন্ধানের কথা বলা হয়| কিন্তু এই কমিশন ভাষা ভিত্তিক রাজ্য গঠনের প্রস্তাব খারিজ করে এবং ভৌগলিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ইত্যাদি দিক থেকে ভাগ করার উপদেশ দেওয়া হয়| যার ফল স্বরূপ ভাষা ভিত্তিক রাজ্য গঠনের প্রস্তাব ত্যাগ করে| কিন্তু এই সময় ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে দক্ষিনে একের পর এক আন্দোলন শুরু হয়| যার ফলে পুনরায় এই ভাষা ভিত্তিক রাজ্য গঠনের প্রক্রিয়াটি উজ্জীবিত হয়|
বল্লভভাই প্যাটেল |
প্রচণ্ড জনরোষের চাপে কংগ্রেস এই সময় একটি কমিটি গঠন করে| 1948 সালের জওহরলাল নেহেরু, বল্লভভাই প্যাটেল, পট্টভি সীতারামাইয়াকে নিয়ে J.V.P কমিটি গঠিত হয়| এই কমিটির কাজ ছিল ভাষা ভিত্তিক রাজ্য গঠনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা| 1949 সালে 1 লা এপ্রিল J.V.P কমিটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়| এতে বলা হয় যে, "এই মুহূর্তে ভাষা ভিত্তিতে রাজ্য গঠন করা সম্ভব নয়"|
1948 সালে ভাষা ভিত্তিক প্রদেশ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয় যে, "যতদিন না পর্যন্ত ভারত একটি জাতিতে পরিণত হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত ভাষা ভিত্তিক প্রদেশগুলির সংকীর্ণ ঝোঁক গুলিকে অবদমিত রাখতে হবে"|
1952 সালের 20 অক্টোবর তেলেগু ভাষি গান্ধীবাদী নেতা পট্টী শ্রীরামালু মাদ্রাজের তেলেগু ভাষি 11 টি জেলা নিয়ে পৃথক অন্ধপ্রদেশ গঠনের দাবিতে অনশন শুরু করেন| কিন্তু এই অনশন নেহেরুকে বিচলিত করেনি| 1952 সালের 15 ই ডিসেম্বর অনশন রত অবস্থায় তিনি মারা যান| তার মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে তেলেগু ভাষি জেলাগুলিতে দাঙ্গা শুরু হয়| এর ফলে 1952 সালের 18 ই ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অন্ধপ্রদেশ নামক পৃথক রাজ্য গঠন করতে বাধ্য হয়| এই অন্ধ্রপ্রদেশ হচ্ছে ভারত স্বাধীনতার পর প্রথম রাজ্য| এইভাবে তামিলনাড়ুরকেও তামিল ভাষা অনুযায়ী রাজ্য হিসাবে গঠন করা হয়| এই ঘটনার পর অন্যান্য ভাষা-ভাষীর মানুষও ভাষা ভিত্তিক তাদের আলাদা রাজ্যের দাবি করে|
বর্তমানে ভারতের মানচিত্র |
ভারতের উত্তর পূর্বাংশে রাজ্য গঠনের ক্ষেত্রে মেঘালয়কে আসাম থেকে পৃথক করে আলাদা রাজ্য হিসেবে গঠন করা হয়| কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মণিপুর ও ত্রিপুরা রাজ্য হিসাবে গঠন করা হয় 1972 সালে| এই রাজ্যগুলি ভারতের 19 তম, 20 তম ও 21 তম রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়| 22 তম রাজ্য হিসাবে 1987 সালের 20 ফেব্রুয়ারি সিকিম নিযুক্ত হয়|
1987 সালের 30 শে মে 23 তম ও 24 তম রাজ্য হিসাবে তামিলনাড়ু প্রদেশ ও মিজোরামকে নিযুক্ত করা হয়| ভারতের আঞ্চলিক রাজ্য গোয়া এই সময় 25 তম রাজ্য হিসাবে নিযুক্ত হয়|
উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার এবং অন্ধপ্রদেশের পাশাপাশি চারটি নতুন রাজ্য উত্তরাঞ্চল(বর্তমানে উত্তরাখণ্ড), ছত্রিশগড়, ঝাড়খন্ড এবং তেলেঙ্গানা ভারতীয় রাজ্যের 26 তম, 27 তম, 28 তম এবং 29 তম রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়|
তাই পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, এই রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন ভাষাভিত্তিক যেভাবে ভারতীয় রাজ্যগুলিকে পুনর্গঠন করেছিল, তা সত্যিই অনস্বীকার্য| ভারত সরকার প্রতিটি রাজ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক বজায় রাখে এবং প্রত্যেকটি রাজ্যেই তার শক্তি প্রয়োগ করে|
তথ্যসূত্র
- সুমিত সরকার, "আধুনিক ভারত"
- Ishita Banerjee-Dube, "A History of Modern India".
সম্পর্কিত বিষয়
- দেশীয় রাজ্যগুলি ভারত ভুক্তি করণের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান (আরো পড়ুন)
- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পটভূমি (আরো পড়ুন)
- ক্রিপস মিশন ব্যর্থতার কারণ (আরো পড়ুন)
- সম্পদের বহির্গমন তত্ত্ব এবং এটি কিভাবে বাংলার অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছিল (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................