দক্ষিণ ভারতের রাজন্যবর্গের রাজতন্ত্র এবং তাদের উত্থানের ইতিহাস জানতে হলে বিভিন্ন লিপি সমূহের পাশাপাশি পৌরাণিক সাহিত্যের উপর নির্ভর করতে হয়। মূলত চতুর্থ শতাব্দী থেকে প্রাগ মধ্যযুগ পর্যন্ত সময়কালের বিভিন্ন শিলালিপি গুলিতে তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর সময়কালের ইতিহাস জানা যায়।
এর পাশাপাশি এই সময়কালের ভারতের ইতিহাস জানার জন্য পৌরাণিক সাহিত্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই অঞ্চলের ব্রাহ্মণ্য রাজতন্ত্র এবং তাদের ধর্মীয় আদর্শ পৌরাণিক আদর্শের পরিচালিত হতো, যা তাদের ক্ষমতার আরোহণকে মান্যতা দেওয়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের সহায়তা করেছিল।
এর পাশাপাশি এই সময়কালের ভারতের ইতিহাস জানার জন্য পৌরাণিক সাহিত্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই অঞ্চলের ব্রাহ্মণ্য রাজতন্ত্র এবং তাদের ধর্মীয় আদর্শ পৌরাণিক আদর্শের পরিচালিত হতো, যা তাদের ক্ষমতার আরোহণকে মান্যতা দেওয়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের সহায়তা করেছিল।
ব্রাহ্মণ |
ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি ও অন্ধ্রের সমভূমি অঞ্চলের শাসক গোষ্ঠী ছিল মূলত ব্রাহ্মণ। রাজ পরিবারের বিভিন্ন লিপি থেকে তাদের ব্রাহ্মণ্য উৎসের কথা জানা যায়। এর পাশাপাশি "ব্রহ্মক্ষত্র" এবং "ব্রহ্ম-ক্ষত্রিয়" বলে দুটি শব্দ লিপিগুলিতে উৎকীর্ণ হয়েছে, যা বিষ্ণুকুন্ডি এবং পল্লব রাজারা নিজেদের বুঝাতে ব্যবহার করতেন। এথেকে মনে করা হতো যে, তারা বাহ্মণ হলেও ক্ষত্রিয় রাজাদের মতো রাজ্য শাসন করতেন। তারা উত্তর ভারতের ধর্মশাস্ত্রের আদর্শে প্রভাবিত হয়েছিলেন বলে মনে করা হয়।
পুরাণ গুলি বংশানুচরিত বিভাগে বিভিন্ন গোত্রগুলিকে ইক্ষ্বাকু বা ইল গোষ্ঠীর বংশধর বলে বর্ণনা করা হয়েছে। পুরাণ এবং মহাকাব্য গুলি থেকে "ক্ষত্রনেতা দ্বিজ" এবং "ব্রাহ্ম ক্ষত্রিয়" শব্দের বেশ কয়েকবার উল্লেখ রয়েছে।
পুরান গুলি থেকে জানা যায় যে, "ক্ষত্রনেতা দ্বিজ" গণ হলেন মূলত ব্রাহ্মণ এবং তাদের মধ্যে ক্ষত্রিয়দের গুণাবলী বর্তমান ছিল। প্রথম শতাব্দীর মধ্যভাগ এবং প্রাক মধ্যযুগীয় শিলালিপি গুলিতে এদেরকেই "ব্রাহ্ম ক্ষত্রিয়" বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কারণে দেখা যায় যে, ব্রাহ্মক্ষত্রিয় গণ মূলত ব্রাহ্মণ বংশের হলেও সময়ের সাথে সাথে তারা ক্ষত্রিয়ের পেশা ও পদমর্যাদা গ্রহণ করেছিলেন।
অনেকের মতে, ক্ষত্রিয় এবং ব্রাহ্মণদের মধ্যে বিবাহ বন্ধনের ফলেই ব্রাহ্ম-ক্ষত্রিয় গণ উদ্ভব হয়েছিল। ব্রাহ্ম-ক্ষত্রিয়গণ তাদের ব্রাহ্মণ্য পেশা পরিত্যাগ করে ক্ষত্রিয় পেশা ধারণ করলেও তাদের সামাজিক মর্যাদা অক্ষুন্ন ছিল। এইভাবে দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসে কোন ব্রাহ্মণ গণ ক্ষত্রিয়ের পেশা অবলম্বন করে এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আধিপত্য স্থাপন করেছিলেন।
আবার অনেকের মতে, দাক্ষিণাত্যের অব্রাহ্মণ গণ ব্রাহ্মণ-ধর্ম অবলম্বন করে সামাজিক মর্যাদার উন্নতিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। সাতবাহন উত্তর যুগে এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
ব্রাহ্মণ |
প্রায় সকল ঐতিহাসিক একথা মেনে নিয়েছিলেন যে, দাক্ষিণাত্যে এবং দক্ষিণ ভারতে ব্রাহ্মক্ষত্রিয়গণ দীর্ঘদিন শাসক পথে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এই ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে কর্নাটকের বিষ্ণু কুন্ডি গণ নিজেদের "ব্রহ্ম ক্ষত্রিয়" বলে দাবি করতেন।
কর্ণাটক, কদম্ব, পহ্লব ছিলেন ভার্গবংগিরস গোষ্ঠীর ব্রাহ্মণ। মহাভারতে ব্রাহ্মণ যোদ্ধাদের উল্লেখ হিসাবে অশ্বত্থামার নাম পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে কদম্বগণ ছিলেন মূলত মানব্য গোত্রীয় ব্রাহ্মণ।
এভাবে দেখা যায় যে, খ্রিস্টীয় তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে দক্ষিণ ভারতের রাজন্যবর্গের সামাজিক উৎস সন্ধানে ক্ষেত্রে তাদের ব্রাহ্মণ পরিচয় সর্বাগ্রে উঠে আছে। আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তারা পৌরাণিক ও বৈদিক রীতি-নীতি অনুসরণ করে শাসন ক্ষমতার শীর্ষে উঠে আসেন এবং ক্ষত্রিয়দের ন্যায় শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকেন। এর ফলে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় গোষ্ঠী মিলনের ফলে "ব্রাহ্ম-ক্ষত্রিয়" গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে।
তথ্যসূত্র
- সুনীল চট্টোপাধ্যায় "প্রাচীন ভারতের ইতিহাস" (প্রথম খন্ড)।
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India".
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century".
সম্পর্কিত বিষয়
- ঋক বৈদিক যুগ এবং পরবর্তী বৈদিক যুগের ধর্মীয় ভাবনা (আরো পড়ুন)
- বৈদিক এবং ঋক বৈদিক যুগে প্রশাসনিক ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
- প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................