ইতিহাস শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো "History", যা গ্রিক শব্দ "Historia" থেকে উদ্ভূত, এর অর্থ কোন বিষয়ে অনুসন্ধান বা গবেষণা| সমাজ বিজ্ঞানের এই শাখায় কেবলমাত্র অতীতের ঘটনাবলীকে সংরক্ষণ বা অনুধাবন করা হয় না, বর্তমানে ঘটে চলা বিভিন্ন বিষয়কে এর মধ্যে ধরে রাখা হয়| এই দিক থেকে বিচার করলে ইতিহাসকে "চলমান দর্শন" বলে অভিহিত করা যায়|
সময়ের সাথে সাথে ইতিহাসের পরিধি আরও বিস্তৃত হয়েছে| এটিকে এখন ত্রিমাত্রিক বলা যায়, কেননা এর মূল কাজ হলো-
সময়ের সাথে সাথে ইতিহাসের পরিধি আরও বিস্তৃত হয়েছে| এটিকে এখন ত্রিমাত্রিক বলা যায়, কেননা এর মূল কাজ হলো-
- কি ঘটেছে
- কেমন ভাবে ঘটছে
- কেন ঘটছে তার বর্ণনা দেওয়া
বর্তমানে ইতিহাস সমাজ বিজ্ঞানের এক শাখা হিসেবে স্বাধীন সত্ত্বা লাভ করেছে, যার মূল কাজ হল সমাজের অংশ হিসেবে মানুষের আহরণ করা জ্ঞান, বিশ্বাস, রীতি-নীতি, নৈতিকতা, যা সমাজে এক নতুন সংস্কৃতির জন্ম দেয়|
ইতিহাসের মূলত দুটি কার্যাবলী লক্ষ্য করা যায়- a.তথ্য সংগ্রহ করা, এবং b.তথ্যের ব্যাখ্যা করা| ইতিহাস কোন লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং তাকে ব্যাখ্যা করা হয় বিশদ ভাবে ও মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে| ট্রেভেলিয়ান এর মতে, একজন ঐতিহাসিক মূলত তিন ধরনের কাজ করতে হয়-
- বিজ্ঞানসম্মত
- কল্পনাপ্রসূত
- সাহিত্য ধর্মী
ট্রেভেলিয়ান ইতিহাসের পরিধি থেকে প্রকৃতিকে বাদ দেওয়ার কথা বললেও বর্তমান ইতিহাস রচনায় প্রকৃতির গুরুত্বকে উপেক্ষা করা যায় না| গ্রিসের ইতিহাসে পার্বত্য অঞ্চল, তরাই অঞ্চল, সমুদ্র বেষ্টিত দ্বীপগুলির কথা আছে, যা গ্রীকদের নগর রাষ্ট্র নির্মাণের ভাবনাকে এক সুসংহত রূপ দিয়েছিল| একইভাবে ভারতের ইতিহাসে সিন্ধু ও গঙ্গার ন্যায় নদ-নদী, হিমাচল পর্বত, পলাশীর প্রান্তর, পানিপথের যুদ্ধও বিশেষ উল্লেখযোগ্য দাবি রাখে| সুতরাং বলা যায় যে, মানুষ ও প্রকৃতি মানব জীবন তথা সমাজের বিকাশের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, যা ইতিহাস অস্বীকার করতে পারে না|
মানুষের যাবতীয় কার্যাবলি ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত একজন ঐতিহাসিকের সরকার, আইন-ব্যবস্থা, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ের সাথে সাথে জনসাধারণ, উপকথা, শিল্পকলা সহ সামাজিক জীব হিসাবে মানুষের যাবতীয় বৌদ্ধিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, দার্শনিক আবেগ মূলক বা প্রাক্ষোভিক কার্যাবলীকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত|
বর্তমানে মানুষের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নতুন আবিষ্কার প্রভৃতি ক্ষেত্রের সাফল্যকেও এর অন্তর্ভুক্ত করেছে| কিন্তু ইতিহাসের মূল পরিধি হলো মানুষের সামাজিক জীবন, তার রাজনৈতিক সাফল্য, সাংস্কৃতিক লক্ষ্যে উন্নতি হওয়ার, সাংবিধানিক পরিচালনা এবং আর্থিক অভ্যুদয়- কেননা এই সকল বিষয়ের মধ্যে ও মাধ্যমেই সমাজ ও রাষ্ট্র মানুষ ও রাষ্ট্র তার নিজস্ব পরিচিতি লাভ করে থাকে|
বর্তমানে বিভিন্ন ধারণা ইতিহাস বিজ্ঞান ও শিল্পকলার ইতিহাসে এমনকি সাধারণ মানুষের জীবন চর্চা আজ ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত| যদিও আগে ইতিহাস রচনা কালে মহান মানুষদের সাফল্য ও ব্যর্থতার কাহিনী অন্তর্ভুক্ত হতো| ভারতে বর্তমানে গোষ্ঠীর ইতিহাস চর্চায় সাধারণ মানুষের বিভিন্ন কার্যাবলীকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে| বর্তমানে গ্রামীণ পরিকাঠামোর অধ্যায়ন ও সমাজের প্রতিটি বিষয়ের সুক্ষ্ম অনুসন্ধান, যা "অনু-ইতিহাস" বা "Mico History" নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে|
মানব জীবনের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বর্তমানে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে| সাম্যবাদী রাষ্ট্রগুলিতে মার্কসবাদী চিন্তা ভাবনার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে| শ্রমিক আন্দোলন, শ্রেণী সংগ্রাম, অন্তর্দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প, কৃষক আন্দোলন প্রভৃতির প্রতি ঐতিহাসিকদের আগ্রহ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে| পাশাপাশি ইতিহাসের গবেষকদের কাছে সমাজ সংস্কার, জাতি ও শ্রেণী বৈষম্য, পরিবার, নারীর মর্যাদা বা অবস্থা প্রভৃতি আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে| পাশাপাশি বিশ্ব ইতিহাস এবং সামগ্রিক ইতিহাসও আজ বিশেষ জনপ্রিয়|
আরব ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন ছিলেন "Universal History"-র জনক| ভলতেয়ার এর সময় থেকে "ইতিহাসের দর্শন" বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে| পরবর্তীকালে হেগেল, কাল মার্কস প্রমুখেরা এই ধারণাকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন| তাদের রচনা মানব সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয় সমন্বিত সমাজের উত্থান-পতন বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে|
সুতরাং বলা যায় যে, ইতিহাসের পরিধি স্থাবর নয়, তা ক্রমবর্ধমান| হেরোডোটাস এর রচনার বিজ্ঞান মনস্কতার অভাব থাকলেও, তার পরবর্তী থুসিডাইডিস(আরো পড়ুন) এর রচনায় জাতীয় চেতনা ও রাজনৈতিক উদারবাদের সঙ্গে সরকার ও মহান মানুষদের জড়গাথা রচিত হত| বিংশ শতাব্দীর ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সামাজিক ও আর্থিক বিষয়ের প্রতি বিশেষ ঝোঁক পরিলক্ষিত হয়| ইউরোপীয় ঐতিহাসিকগণ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল যেমন- আফ্রিকা, ভারত, চীন দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ইতিহাস রচনায় উদ্যোগী হন|
আদিম মানুষের বিবর্তন ও তাদের জীবনযাত্রাকে কেন্দ্র করে নৃতত্ববিদ্যা ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে| পাশাপাশি ইতিহাস রচনায় নিরস বর্ণনার বদলে কোন ঘটনার সূচনা লগ্ন থেকে তার উত্থান-পতন এবং বিবর্তন বিশেষ প্রাসঙ্গিকতা লাভ করে| আমেরিকার ফ্রয়েড ও আইনস্টাইন-এর উদ্যোগে ঐতিহাসিক বিকাশ ও উন্নয়নকে আরও নিবিড়ভাবে অধ্যায়ন করার ফলে ইতিহাসের পরিধি আরও বিস্তৃত হয়ে এক নতুন ধারণার জন্ম দেয়, যা "Historical Relativism" নামে পরিচিত লাভ করে| উনবিংশ শতাব্দী থেকে ইতিহাস চর্চার পরিধি বিস্তৃত হতে থাকে| তাই এই শতাব্দীর ইতিহাসের শতাব্দি নামে পরিচিত হয়|
বর্তমানে মানুষের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নতুন আবিষ্কার প্রভৃতি ক্ষেত্রের সাফল্যকেও এর অন্তর্ভুক্ত করেছে| কিন্তু ইতিহাসের মূল পরিধি হলো মানুষের সামাজিক জীবন, তার রাজনৈতিক সাফল্য, সাংস্কৃতিক লক্ষ্যে উন্নতি হওয়ার, সাংবিধানিক পরিচালনা এবং আর্থিক অভ্যুদয়- কেননা এই সকল বিষয়ের মধ্যে ও মাধ্যমেই সমাজ ও রাষ্ট্র মানুষ ও রাষ্ট্র তার নিজস্ব পরিচিতি লাভ করে থাকে|
বর্তমানে বিভিন্ন ধারণা ইতিহাস বিজ্ঞান ও শিল্পকলার ইতিহাসে এমনকি সাধারণ মানুষের জীবন চর্চা আজ ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত| যদিও আগে ইতিহাস রচনা কালে মহান মানুষদের সাফল্য ও ব্যর্থতার কাহিনী অন্তর্ভুক্ত হতো| ভারতে বর্তমানে গোষ্ঠীর ইতিহাস চর্চায় সাধারণ মানুষের বিভিন্ন কার্যাবলীকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে| বর্তমানে গ্রামীণ পরিকাঠামোর অধ্যায়ন ও সমাজের প্রতিটি বিষয়ের সুক্ষ্ম অনুসন্ধান, যা "অনু-ইতিহাস" বা "Mico History" নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে|
মানব জীবনের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বর্তমানে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে| সাম্যবাদী রাষ্ট্রগুলিতে মার্কসবাদী চিন্তা ভাবনার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে| শ্রমিক আন্দোলন, শ্রেণী সংগ্রাম, অন্তর্দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প, কৃষক আন্দোলন প্রভৃতির প্রতি ঐতিহাসিকদের আগ্রহ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে| পাশাপাশি ইতিহাসের গবেষকদের কাছে সমাজ সংস্কার, জাতি ও শ্রেণী বৈষম্য, পরিবার, নারীর মর্যাদা বা অবস্থা প্রভৃতি আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে| পাশাপাশি বিশ্ব ইতিহাস এবং সামগ্রিক ইতিহাসও আজ বিশেষ জনপ্রিয়|
কাল মার্কস |
আরব ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন ছিলেন "Universal History"-র জনক| ভলতেয়ার এর সময় থেকে "ইতিহাসের দর্শন" বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে| পরবর্তীকালে হেগেল, কাল মার্কস প্রমুখেরা এই ধারণাকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন| তাদের রচনা মানব সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয় সমন্বিত সমাজের উত্থান-পতন বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে|
সুতরাং বলা যায় যে, ইতিহাসের পরিধি স্থাবর নয়, তা ক্রমবর্ধমান| হেরোডোটাস এর রচনার বিজ্ঞান মনস্কতার অভাব থাকলেও, তার পরবর্তী থুসিডাইডিস(আরো পড়ুন) এর রচনায় জাতীয় চেতনা ও রাজনৈতিক উদারবাদের সঙ্গে সরকার ও মহান মানুষদের জড়গাথা রচিত হত| বিংশ শতাব্দীর ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সামাজিক ও আর্থিক বিষয়ের প্রতি বিশেষ ঝোঁক পরিলক্ষিত হয়| ইউরোপীয় ঐতিহাসিকগণ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল যেমন- আফ্রিকা, ভারত, চীন দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ইতিহাস রচনায় উদ্যোগী হন|
আদিম মানুষের বিবর্তন ও তাদের জীবনযাত্রাকে কেন্দ্র করে নৃতত্ববিদ্যা ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে| পাশাপাশি ইতিহাস রচনায় নিরস বর্ণনার বদলে কোন ঘটনার সূচনা লগ্ন থেকে তার উত্থান-পতন এবং বিবর্তন বিশেষ প্রাসঙ্গিকতা লাভ করে| আমেরিকার ফ্রয়েড ও আইনস্টাইন-এর উদ্যোগে ঐতিহাসিক বিকাশ ও উন্নয়নকে আরও নিবিড়ভাবে অধ্যায়ন করার ফলে ইতিহাসের পরিধি আরও বিস্তৃত হয়ে এক নতুন ধারণার জন্ম দেয়, যা "Historical Relativism" নামে পরিচিত লাভ করে| উনবিংশ শতাব্দী থেকে ইতিহাস চর্চার পরিধি বিস্তৃত হতে থাকে| তাই এই শতাব্দীর ইতিহাসের শতাব্দি নামে পরিচিত হয়|
তথ্যসূত্র
- Frank Thilly, "A History of philosophy".
- Frederick Copleston, "A History of Philosophy", Volume 2.
- Johann Gottfried Herder, "ideas for the philosophy of history of humanity".
সম্পর্কিত বিষয়
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
........................................