মধ্যযুগে তথা আধুনিক ইউরোপের বাণিজ্যিক লেন-দেনে বিভিন্ন দেশের মেলা গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল| ফেরিওয়ালা অল্প সময়ে মালপত্র নিয়ে গৃহস্থের বাড়িতে বিক্রি করত| বিভিন্ন শ্রেণীর কারিগররা তাদের তৈরি জিনিসপত্র ছোটখাট দোকানে কেনা-বেচা করত| কিন্তু পাইকারি ক্রয়-বিক্রয়, আন্তর্জাতিক পণ্য বিনিময় প্রভৃতির জন্য ইউরোপের বিভিন্ন শহরে মেলা বসতো|
ইংল্যান্ডের লন্ডন, স্টুরব্রিজ, ফ্রান্সের প্যারিস, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট, লুব্বক, লিপজিগ এবং কোলন এ মেলার আয়োজন করা হতো| সমসাময়িককালে মেলাগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল|
মেলাগুলো দুই ধরনের প্রকৃতিতে বিরাজ করত, অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্রয়-বিক্রয়ের প্রাচুর্যে মেলাগুলো দৃষ্টি আকর্ষনীয় ছিল| অভ্যন্তরীণ মেলা সমূহে একটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরের পণ্যদ্রব্যের পাইকারি ক্রয়-বিক্রয় করত| অন্যদিকে আন্তর্জাতিক চরিত্রের মেলা সমূহে বৈদেশিক পণ্য সমুহের বিনিময় এবং ক্রয়-বিক্রয় চলতো| ফ্রান্সের শ্যাম্পেইন কাউন্টির চারটি নগরের বছরে দুইবার এই ধরনের আন্তর্জাতিক মেলা বসতো| সেন নদীর তীরবর্তী ত্রোয়াতে সেপ্টম্বর এবং নভেম্বর মাসে, ল্যানী নগরে জানুয়ারি মাসে, বার্গ এ মে মাসে এবং প্রোঁডিস এ দুবার মে ও সেপ্টম্বর মাসে আন্তর্জাতিক মেলা বসতো| আন্তর্জাতিক মেলা গুলিতে ফ্রান্সের রাইন উপত্যকা, স্পেন, ইতালি এমনকি উত্তর আফ্রিকার বণিকরা ও বিভিন্ন প্রকার পণ্য সম্ভার ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য যোগ দিত|
উক্ত এই মেলা সমূহে নানা প্রকার দব্যের ক্রয়-বিক্রয় চলতো| প্লান্ডার্সের বস্ত্র, লুক্কার রেশমি বস্ত্র, স্পেন, উত্তর আফ্রিকা ও প্রোঁডিসের চামড়া দ্রব্যাদি, জার্মানির সুতি বস্ত্রের পাইকারি কেনা-বেচা হত| ইতালির বণিকেরা বিদেশের পণ্যাদি যেমন- মশলা, চিনি, ফিটকিরি, রঞ্জক প্রভৃতির সরবরাহ করতো|
প্রাথমিক অবস্থায় শ্যাম্পেনের মেলাগুলির গুরুত্ব ছিল সীমাবদ্ধ ও আঞ্চলিক| 1174 সালের একটি দলিল থেকে জানা যায় যে, বার্গের মেলাতে অশ্বাদি পশু ক্রয়-বিক্রয় হতো| এই সময় উত্তরাঞ্চলের বস্ত্র ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য সম্ভার ইতালির বিভিন্ন বাণিজ্য কেন্দ্রের নিয়ে যেত| তবে দ্বাদশ শতকের শেষের দিকে ইতালির বণিকদের যোগদানের ফলে শ্যাম্পেনের মেলাগুলির উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়| প্রথমদিকে শ্যাম্পেনের কাউন্টারা এই মেলা গুলো তত্ত্বাবধান করত| কিন্তু দ্বাদশ শতকের শেষের দিকে মেলাগুলির প্রত্যক্ষ দায়িত্ব গ্রহণ করেন ফ্রান্সের রাজা চতুর্থ ফিলিপ| অর্থাৎ আলোচ্য মেলাগুলি সংগঠনের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক উদ্যোগ যেমন নেওয়া হতো, তেমনি মেলা গুলির উপর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণও স্থাপিত হতো|
আলোচ্য এই মেলা গুলির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল, মেলা গুলির দোকান সমূহের উপর রাজস্ব আদায়| তবে শুধু দোকান গুলির উপর নয়, সাময়িক আবাসনের উপরেও কর স্থাপন করা হয়েছিল| তাছাড়া বিক্রয়ের জন্য আমদানিকৃত পণ্য ও বিক্রিত পণ্যের উপরেও বিভিন্ন হারে শুল্ক বসানো হতো| মেলা গুলির পরিচালক বৃন্দ শান্তি-শৃঙ্খলার দায়িত্ব বহন করতেন এবং মেলার সীলমোহর তাদের দায়িত্বে থাকত| তাছাড়া বহুসংখ্যক রাজকর্মচারী মেলায় পণ্য সম্ভার ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য নিযুক্ত থাকতো|
শ্যাম্পেনের মেলাগুলোর প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধির সিংহভাগ কর্তৃত্ব থাকতো ফরাসি সম্রাটদের| স্বয়ং ফ্রান্সের রাজা বিদেশি বণিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করতেন| 1207 সালে ফরাসি সম্রাট ফিলিপ অগাস্টাস বিদেশি বণিকদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন| মেলা শেষ হয়ে যাওয়ার আরও তিন মাস সময় বণিকদের দেওয়া হতো, যাতে তারা নিরাপদে দেশে প্রত্যাবর্তন করতে পারে|
মেলাগুলোর পরিচালকদের পত্রাবলীও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি যাতে যথাযথভাবে পালিত হয় সে বিষয়ে কর্মচারীদের কর্মচারীদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল| মেলা গুলির শুরু হওয়ার 44 দিন পর্যন্ত মেলা চত্বরে প্রবেশধিকার ছিল| 10 দিনের মধ্যে বস্ত্রাদি, 11 দিনের মধ্যে চর্ম নির্মিত দ্রব্যাদি এবং যেসব দ্রব্যাদি ওজন করতে হত তা 19 দিনের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় শেষ করে হিসাব পত্র পেশ করার নিয়ম প্রচলিত ছিল| মেলা গুলির ক্রয়-বিক্রয়ের যে হিসাব পাওয়া যায় তা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, উত্তরাঞ্চলের বণিকদের বিশেষ সুযোগ দেওয়া হতো, যাতে তারা পশম বস্ত্র ও চর্ম নির্মিত দ্রব্যাদি বিক্রয় করে সুবিধাজনক মূল্যে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও প্রাচ্যের পণ্য সম্ভার ক্রয় করতে পারে| মেলাগুলির জনপ্রিয়তা ক্রয়-বিক্রয় পরিমান, বণিকদের স্বার্থের জন্য বিভিন্ন নগর-রাষ্ট্র "কনসুলেট" গঠন করে| ত্রয়োদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে মধ্যে 15টি ইতালির নগরী শ্যাম্পেনের মেলার তত্ত্বাবধানের জন্য কনসুলেট প্রতিষ্ঠা করেছিল|
এভাবে মধ্যযুগের সায়াহ্ন লগ্নে এবং প্রাক আধুনিক যুগে ইউরোপের মেলা গুলির অর্থনৈতিক দিক থেকে অন্তত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল| আবার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক থেকেও মেলা গুলির গুরুত্ব ছিল| মেলা গুলিকে কেন্দ্র করে শহর ও নগর গড়ে উঠেছিল|
অনেকেই মেলা গুলির গুরুত্ব হ্রাসের জন্য ফরাসি সরকার কর্তৃক ব্যবসায়ীদের উপর অতিরিক্ত কর আরোপ এবং বাণিজ্য কেন্দ্র রূপে লিও এর উত্থানকে দায়ী করেছেন| ঐতিহাসিক উইল ডুরান্ট শ্যাম্পেনের অভিজাত কাউন্টদের হাত থেকে মেলাগুলির ত্ত্বাবধানের দায়িত্ব কেড়ে নিয়ে সরকার মেলায় অংশগ্রহণকারীদের বণিকদের কর ভারে জর্জরিত করে| এজন্য তিনি ফরাসি সম্রাট চতুর্থ ফিলিপকে দায়ী করেছেন|
আবার অনেকে ফরাসি রাজার নিরবিচ্ছিন্ন যুদ্ধ-বিগ্রহকেই দায়ী করেছেন| সামুদ্রিক বাণিজ্য পথের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং উত্তর ইতালির বাণিজ্য কেন্দ্রগুলোর বস্ত্র উৎপাদনে অসামান্য সাফল্য মেলার জনপ্রিয়তা লুপ্তর কারণ বলে মনে করেন| আবার অনেকে রৌপ্য মুদ্রার প্রচলনই ছিল শ্যাম্পেন সহ অন্যান্য বাণিজ্য মেলার অবলুপ্তির কারণ|
তাছাড়া বলা যায় যে, আধুনিক যুগের সূচনায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসে| এসময় নতুন নতুন বাণিজ্য কেন্দ্র ও স্থায়ী বাজার গড়ে উঠতে থাকে, যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নতি হয়| কৃষকেরা বাজার গুলির চাহিদার উপর নির্ভর করে কৃষিপণ্য উৎপাদন শুরু করে| ফলে মেলাগুলো যেভাবে পূর্বের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করত, সেই ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, যা মেলা গুলির গুরুত্বের হ্রাস ঘটায়|
ইংল্যান্ডের লন্ডন, স্টুরব্রিজ, ফ্রান্সের প্যারিস, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট, লুব্বক, লিপজিগ এবং কোলন এ মেলার আয়োজন করা হতো| সমসাময়িককালে মেলাগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল|
কাঠের ঘোড়া বা গাড়ি সমন্বিত ঘূর্ণমান চক্রবিশেষ |
মেলাগুলো দুই ধরনের প্রকৃতিতে বিরাজ করত, অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্রয়-বিক্রয়ের প্রাচুর্যে মেলাগুলো দৃষ্টি আকর্ষনীয় ছিল| অভ্যন্তরীণ মেলা সমূহে একটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরের পণ্যদ্রব্যের পাইকারি ক্রয়-বিক্রয় করত| অন্যদিকে আন্তর্জাতিক চরিত্রের মেলা সমূহে বৈদেশিক পণ্য সমুহের বিনিময় এবং ক্রয়-বিক্রয় চলতো| ফ্রান্সের শ্যাম্পেইন কাউন্টির চারটি নগরের বছরে দুইবার এই ধরনের আন্তর্জাতিক মেলা বসতো| সেন নদীর তীরবর্তী ত্রোয়াতে সেপ্টম্বর এবং নভেম্বর মাসে, ল্যানী নগরে জানুয়ারি মাসে, বার্গ এ মে মাসে এবং প্রোঁডিস এ দুবার মে ও সেপ্টম্বর মাসে আন্তর্জাতিক মেলা বসতো| আন্তর্জাতিক মেলা গুলিতে ফ্রান্সের রাইন উপত্যকা, স্পেন, ইতালি এমনকি উত্তর আফ্রিকার বণিকরা ও বিভিন্ন প্রকার পণ্য সম্ভার ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য যোগ দিত|
উক্ত এই মেলা সমূহে নানা প্রকার দব্যের ক্রয়-বিক্রয় চলতো| প্লান্ডার্সের বস্ত্র, লুক্কার রেশমি বস্ত্র, স্পেন, উত্তর আফ্রিকা ও প্রোঁডিসের চামড়া দ্রব্যাদি, জার্মানির সুতি বস্ত্রের পাইকারি কেনা-বেচা হত| ইতালির বণিকেরা বিদেশের পণ্যাদি যেমন- মশলা, চিনি, ফিটকিরি, রঞ্জক প্রভৃতির সরবরাহ করতো|
প্রাথমিক অবস্থায় শ্যাম্পেনের মেলাগুলির গুরুত্ব ছিল সীমাবদ্ধ ও আঞ্চলিক| 1174 সালের একটি দলিল থেকে জানা যায় যে, বার্গের মেলাতে অশ্বাদি পশু ক্রয়-বিক্রয় হতো| এই সময় উত্তরাঞ্চলের বস্ত্র ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য সম্ভার ইতালির বিভিন্ন বাণিজ্য কেন্দ্রের নিয়ে যেত| তবে দ্বাদশ শতকের শেষের দিকে ইতালির বণিকদের যোগদানের ফলে শ্যাম্পেনের মেলাগুলির উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়| প্রথমদিকে শ্যাম্পেনের কাউন্টারা এই মেলা গুলো তত্ত্বাবধান করত| কিন্তু দ্বাদশ শতকের শেষের দিকে মেলাগুলির প্রত্যক্ষ দায়িত্ব গ্রহণ করেন ফ্রান্সের রাজা চতুর্থ ফিলিপ| অর্থাৎ আলোচ্য মেলাগুলি সংগঠনের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক উদ্যোগ যেমন নেওয়া হতো, তেমনি মেলা গুলির উপর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণও স্থাপিত হতো|
আলোচ্য এই মেলা গুলির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল, মেলা গুলির দোকান সমূহের উপর রাজস্ব আদায়| তবে শুধু দোকান গুলির উপর নয়, সাময়িক আবাসনের উপরেও কর স্থাপন করা হয়েছিল| তাছাড়া বিক্রয়ের জন্য আমদানিকৃত পণ্য ও বিক্রিত পণ্যের উপরেও বিভিন্ন হারে শুল্ক বসানো হতো| মেলা গুলির পরিচালক বৃন্দ শান্তি-শৃঙ্খলার দায়িত্ব বহন করতেন এবং মেলার সীলমোহর তাদের দায়িত্বে থাকত| তাছাড়া বহুসংখ্যক রাজকর্মচারী মেলায় পণ্য সম্ভার ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য নিযুক্ত থাকতো|
শ্যাম্পেনের মেলাগুলোর প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধির সিংহভাগ কর্তৃত্ব থাকতো ফরাসি সম্রাটদের| স্বয়ং ফ্রান্সের রাজা বিদেশি বণিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করতেন| 1207 সালে ফরাসি সম্রাট ফিলিপ অগাস্টাস বিদেশি বণিকদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন| মেলা শেষ হয়ে যাওয়ার আরও তিন মাস সময় বণিকদের দেওয়া হতো, যাতে তারা নিরাপদে দেশে প্রত্যাবর্তন করতে পারে|
পশম বস্ত্র |
চর্ম নির্মিত দ্রব্যাদি |
মেলাগুলোর পরিচালকদের পত্রাবলীও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি যাতে যথাযথভাবে পালিত হয় সে বিষয়ে কর্মচারীদের কর্মচারীদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল| মেলা গুলির শুরু হওয়ার 44 দিন পর্যন্ত মেলা চত্বরে প্রবেশধিকার ছিল| 10 দিনের মধ্যে বস্ত্রাদি, 11 দিনের মধ্যে চর্ম নির্মিত দ্রব্যাদি এবং যেসব দ্রব্যাদি ওজন করতে হত তা 19 দিনের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় শেষ করে হিসাব পত্র পেশ করার নিয়ম প্রচলিত ছিল| মেলা গুলির ক্রয়-বিক্রয়ের যে হিসাব পাওয়া যায় তা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, উত্তরাঞ্চলের বণিকদের বিশেষ সুযোগ দেওয়া হতো, যাতে তারা পশম বস্ত্র ও চর্ম নির্মিত দ্রব্যাদি বিক্রয় করে সুবিধাজনক মূল্যে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও প্রাচ্যের পণ্য সম্ভার ক্রয় করতে পারে| মেলাগুলির জনপ্রিয়তা ক্রয়-বিক্রয় পরিমান, বণিকদের স্বার্থের জন্য বিভিন্ন নগর-রাষ্ট্র "কনসুলেট" গঠন করে| ত্রয়োদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে মধ্যে 15টি ইতালির নগরী শ্যাম্পেনের মেলার তত্ত্বাবধানের জন্য কনসুলেট প্রতিষ্ঠা করেছিল|
এভাবে মধ্যযুগের সায়াহ্ন লগ্নে এবং প্রাক আধুনিক যুগে ইউরোপের মেলা গুলির অর্থনৈতিক দিক থেকে অন্তত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল| আবার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক থেকেও মেলা গুলির গুরুত্ব ছিল| মেলা গুলিকে কেন্দ্র করে শহর ও নগর গড়ে উঠেছিল|
মেলা গুলির অবলুপ্তির কারণ
কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই মেলা গুলির গুরুত্ব হ্রাস পেতে থাকে| মেলা গুলির গুরুত্ব হ্রাসের তথা অবলুপ্তির বিভিন্ন কারণ দায়ী ছিল|অনেকেই মেলা গুলির গুরুত্ব হ্রাসের জন্য ফরাসি সরকার কর্তৃক ব্যবসায়ীদের উপর অতিরিক্ত কর আরোপ এবং বাণিজ্য কেন্দ্র রূপে লিও এর উত্থানকে দায়ী করেছেন| ঐতিহাসিক উইল ডুরান্ট শ্যাম্পেনের অভিজাত কাউন্টদের হাত থেকে মেলাগুলির ত্ত্বাবধানের দায়িত্ব কেড়ে নিয়ে সরকার মেলায় অংশগ্রহণকারীদের বণিকদের কর ভারে জর্জরিত করে| এজন্য তিনি ফরাসি সম্রাট চতুর্থ ফিলিপকে দায়ী করেছেন|
আবার অনেকে ফরাসি রাজার নিরবিচ্ছিন্ন যুদ্ধ-বিগ্রহকেই দায়ী করেছেন| সামুদ্রিক বাণিজ্য পথের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং উত্তর ইতালির বাণিজ্য কেন্দ্রগুলোর বস্ত্র উৎপাদনে অসামান্য সাফল্য মেলার জনপ্রিয়তা লুপ্তর কারণ বলে মনে করেন| আবার অনেকে রৌপ্য মুদ্রার প্রচলনই ছিল শ্যাম্পেন সহ অন্যান্য বাণিজ্য মেলার অবলুপ্তির কারণ|
তাছাড়া বলা যায় যে, আধুনিক যুগের সূচনায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসে| এসময় নতুন নতুন বাণিজ্য কেন্দ্র ও স্থায়ী বাজার গড়ে উঠতে থাকে, যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নতি হয়| কৃষকেরা বাজার গুলির চাহিদার উপর নির্ভর করে কৃষিপণ্য উৎপাদন শুরু করে| ফলে মেলাগুলো যেভাবে পূর্বের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করত, সেই ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, যা মেলা গুলির গুরুত্বের হ্রাস ঘটায়|
মূল্যায়ন
এতসত্ত্বেও মেলা গুলির গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না| এই বাণিজ্যিক মেলা গুলির জন্য প্রাক আধুনিক যুগের বহু নগরই আর্থিক দিক থেকে বিশেষ করে উপকৃত হয়েছিল| দূর-দূরান্তের বণিকদের এক জায়গায় সম্মিলিত করে বাণিজ্যিক মেলাগুলি ভূমধ্যসাগর ও উত্তর সাগরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের ভূমিকা গ্রহণ করেছিল| এই মেলাগুলির মাধ্যমে ইউরোপের বিভিন্ন শিল্প কেন্দ্রের সঙ্গে বাণিজ্য কেন্দ্র গুলি যুক্ত হতে সমর্থ হয়েছিল|তথ্যসূত্র
- অধ্যাপক গোপালকৃষ্ণ পাহাড়ি, "ইউরোপের ইতিবৃত্ত"
- Benjamin Sax, "Western Civilization: From Early Modern Europe to the Present".
সম্পর্কিত বিষয়
- ষোড়শ শতকের ইউরোপের মানচিত্র অঙ্কনের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা (আরও পড়ুন)
- ভারতে ইউরোপীয়দের আগমনের ইতিহাস (আরও পড়ুন)
- ভারতে পর্তুগীজদের ইতিহাস (আরও পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................