রুশ বিপ্লবের প্রাণপুরুষ ছিলেন লেনিন| লেনিন এক সঙ্কটজনক মুহূর্তে রুশ বিপ্লবের হাল ধরেছিলেন এবং নিজের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে যোগ্য অনুগামীদের সাহায্যে বিপ্লবকে সফল করেছিলেন| রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও আর্থিক পরিস্থিতিও বহুলাংশে মানসিক দিক থেকে বিপ্লবের অনুকূল ছিল| কিন্তু সেই পরিস্থিতিকে সঠিক সময় সঠিক পথে চালিত করেছিলেন লেনিন|
ঐতিহাসিক ই. এইচ. কার বলেছেন যে, লেলিন ছিলেন মহতের মাঝে মহত্তর| কেবল পূর্বনির্ধারিত পরিস্থিতির সঙ্গে গা ভাসিয়ে তিনি মহত্বের উত্তীর্ণ হননি| তিনি ছিলেন একাধারে ইতিহাস সৃষ্টি এবং ইতিহাসের স্রষ্টা| তার নেতৃত্বে মানব ইতিহাস নতুন মোড় নিয়েছিল| পৃথিবীতে স্থাপিত হয়েছিল প্রথম সাম্যবাদী সরকার|
1917 সালে এপ্রিল মাসে লেলিন যখন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন, তখন ছিল বিপ্লবে চরম মুহূর্ত| জার তন্ত্রের পতনের পর কেরেনস্কির নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত অন্তবর্তী সরকারের ভিত্তি ছিল খুবই দুর্বল| এই অস্থায়ী সরকার দাঁড়িয়েছিল পরস্পর বিরোধী দুটি আদর্শ ও চিন্তার উপর| উদারনৈতিক বুর্জোয়া শ্রেণী ও নরমপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী দল ও গোষ্ঠী চেয়েছিল, একটা গণতান্ত্রিক সংশোধনীয় সরকার গঠন করে সাংবিধানিক শাসনের ছত্রছায়ায় শাসনকার্য পরিচালনা করতে| কিন্তু পেট্রোগার্ডের শ্রমিক সোভিয়েত ও বিদ্রোহী সামরিক নেতারা ভিন্নমত ও আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন| তারা চেয়েছিলেন, যুদ্ধ মিটিয়ে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করে আর্থিক প্রগতি সুনিশ্চিত করতে| যুদ্ধে জার্মানীর হাতে বিপর্যয় রাশিয়ার সমস্যাকে জটিলতর করেছিল|এই অবস্থায় লেলিন তার বিখ্যাত "এপ্রিল থিসিস" প্রচার করেন|
লেলিন তার এপ্রিল থিসিস এ বলেন যে,
লেনিনের ক্ষমতা দখল ছিল বিপ্লবের প্রথম পদক্ষেপ| ক্ষমতা দখলের পর তার প্রধান লক্ষ্য ছিল প্রতিবিপ্লবী শক্তিগুলিকে ধ্বংস করে একটি দেশে অর্থাৎ রাশিয়ার সমাজতন্ত্রী বিপ্লব সফল করা| এর জন্য প্রয়োজন ছিল শান্তিপূর্ণ পরিবেশ| এই নীতি অনুসরণ করেই লেনিন 1998 সালে জার্মানির সাথে অন্তত কঠোর শর্তে অপমানজনক "ব্রেস্ট লিটভস্কের চুক্তি" স্বাক্ষর করেন|এর পাশাপাশি তিনি নজর দেন ভূমি সংস্কারের কাজে| বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদার ও চার্চের সমস্ত জমি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির জাতীয়করণ করা হয়| এরপর স্থানীয় সোভিয়েতের মাধ্যমে এইসব জমি কৃষকদের মধ্যে বন্টন করা হয়| জমিতে বেগার খাটানো ও জমি হস্তান্তর নিষিদ্ধ করা হয়| বিনা ক্ষতিপূরণে কলকারখানা গুলিও রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়| এইভাবে রুশ জনগণ পায় মুক্তির আস্বাদ|
বিদেশি আক্রমণ প্রতিহত ও প্রতিবিপ্লবী শক্তিগুলিকে দমন করার পরও কিন্তু বিপ্লবের কাজ ফুরিয়ে যায়নি| লেনিন মনে করেছিলেন যে, বিপ্লবকে পুরোপুরি উপলব্ধি করতে হলে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে| এই অবস্থায় অর্থনৈতিক সংকট মোচনের জন্য লেলিন তার নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ঘোষণা করেন| এই পরিকল্পনা "নতুন অর্থনৈতিক নীতি"(New Economic policy) নামে পরিচিত| এই নীতি অনুযায়ী ছোট ছোট জমির মালিক ও ব্যবসায়ীর সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া হয়| কৃষকেরা তাদের খেতের ফসল বাজার দরে বিক্রি করার সুযোগ পায়| গ্রামের সমবায় প্রথাকে উৎসাহিত করা হয়| বিদেশ থেকে মূলধন এনে শিল্প প্রসারের নীতি গ্রহণ করা হয়| ছোট শিল্প মালিকদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া হয়| এই নতুন অর্থনৈতিক নীতির জন্য রাশিয়ার কৃষি ও শিল্পের দ্রুত উন্নতি ঘটে| জনগণ পায় মুক্তির আস্বাদ| রাশিয়াতে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়|
1924 সালের প্রথম দিকেই রাশিয়াতে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল| তবে লেলিন রাশিয়াতে নতুন সাম্যবাদী ব্যবস্থার পরিপূর্ণতা দেখে যেতে পারেনি| কিন্তু তিনি জেনে গিয়েছিলেন যে, রুশ বিপ্লব এক নতুন আশার আলো দেখিয়েছিল রাশিয়ায় দরিদ্র পীড়িত মানুষকে| লেনিনের দরিদ্র মানসিকতা ছিলো বিপ্লবী সত্ত্বার অংশ| এই সত্ত্বার সাথে মিশ্রিত ছিল তীক্ষ্ণ বাস্তববোধ| উদ্দেশ্যের নিবিষ্ট অথবা স্থানীয় আদর্শবাদ এবং লেনিনের অকুণ্ঠ দেশপ্রেমই বিপ্লবকে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যের দিকে নিয়েগেছিল|
.......................................
- বিপ্লব সফল করতে হলে পুঁজিবাদের সম্পূর্ণ বিলোপ করতে হবে|
- অস্থায়ী সরকারের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে সোভিয়েত গুলিকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে এবং তার জন্য সোভিয়েত গুলির উপর কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করতে হবে|
- সংশোধনীয় প্রজাতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে জমি ও ব্যাংকের জাতীয়করণ করতে হবে|
- সোভিয়েত গুলিকে উৎপাদন ও বন্টনের দায়িত্ব নিতে হবে|
- সেই সঙ্গে দ্বিতীয় International - এর জায়গায় নতুন এক International প্রতিষ্ঠার উপর জোর দেওয়া হবে|
লেনিনের এপ্রিল থিসিসের অনেকেরই মনঃপুত হয়নি| কিন্তু এর বক্তব্য ছিল সুস্পষ্ট| এর মূল কথা হলো, বুর্জোয়া বিপ্লবের পরিসমাপ্তি ঘটেছে, কাজেই এখনই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কাজ সম্পন্ন করতে হবে ও তার জন্য তিনি যে আওয়াজ তুলেছিলেন তা হল - "All power to the Soviets"
লেলিনের আরও একটি শ্লোগান হলো- শান্তি, রুটি ও জমি (peace, bread and land)| কিন্তু জুলাই মাসে বলশেভিকরা বৈপ্লবিক যে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন, তা সফল হয়নি| লেনিন দেশ ছেড়ে ফিনল্যান্ড পালিয়ে গিয়েছিলেন| কিন্তু এই সময় জার্মানির হাতে অস্থায়ী সরকার পরাজিত হয় এবং রুশ সেনাবাহিনীতে ভাঙ্গন দেখা দেয়| লেনিন এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বিপ্লবকে সফল করতে সচেষ্ট হন| কেরেনস্কি সরকারের দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করে এবং শেষ পর্যন্ত লেনিন বল প্রয়োগের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাত করে রুশ বিপ্লব সম্পন্ন করেন|
লেনিনের ক্ষমতা দখল ছিল বিপ্লবের প্রথম পদক্ষেপ| ক্ষমতা দখলের পর তার প্রধান লক্ষ্য ছিল প্রতিবিপ্লবী শক্তিগুলিকে ধ্বংস করে একটি দেশে অর্থাৎ রাশিয়ার সমাজতন্ত্রী বিপ্লব সফল করা| এর জন্য প্রয়োজন ছিল শান্তিপূর্ণ পরিবেশ| এই নীতি অনুসরণ করেই লেনিন 1998 সালে জার্মানির সাথে অন্তত কঠোর শর্তে অপমানজনক "ব্রেস্ট লিটভস্কের চুক্তি" স্বাক্ষর করেন|এর পাশাপাশি তিনি নজর দেন ভূমি সংস্কারের কাজে| বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদার ও চার্চের সমস্ত জমি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির জাতীয়করণ করা হয়| এরপর স্থানীয় সোভিয়েতের মাধ্যমে এইসব জমি কৃষকদের মধ্যে বন্টন করা হয়| জমিতে বেগার খাটানো ও জমি হস্তান্তর নিষিদ্ধ করা হয়| বিনা ক্ষতিপূরণে কলকারখানা গুলিও রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়| এইভাবে রুশ জনগণ পায় মুক্তির আস্বাদ|
কৃষক |
বিদেশি আক্রমণ প্রতিহত ও প্রতিবিপ্লবী শক্তিগুলিকে দমন করার পরও কিন্তু বিপ্লবের কাজ ফুরিয়ে যায়নি| লেনিন মনে করেছিলেন যে, বিপ্লবকে পুরোপুরি উপলব্ধি করতে হলে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে| এই অবস্থায় অর্থনৈতিক সংকট মোচনের জন্য লেলিন তার নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ঘোষণা করেন| এই পরিকল্পনা "নতুন অর্থনৈতিক নীতি"(New Economic policy) নামে পরিচিত| এই নীতি অনুযায়ী ছোট ছোট জমির মালিক ও ব্যবসায়ীর সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া হয়| কৃষকেরা তাদের খেতের ফসল বাজার দরে বিক্রি করার সুযোগ পায়| গ্রামের সমবায় প্রথাকে উৎসাহিত করা হয়| বিদেশ থেকে মূলধন এনে শিল্প প্রসারের নীতি গ্রহণ করা হয়| ছোট শিল্প মালিকদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া হয়| এই নতুন অর্থনৈতিক নীতির জন্য রাশিয়ার কৃষি ও শিল্পের দ্রুত উন্নতি ঘটে| জনগণ পায় মুক্তির আস্বাদ| রাশিয়াতে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়|
1924 সালের প্রথম দিকেই রাশিয়াতে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল| তবে লেলিন রাশিয়াতে নতুন সাম্যবাদী ব্যবস্থার পরিপূর্ণতা দেখে যেতে পারেনি| কিন্তু তিনি জেনে গিয়েছিলেন যে, রুশ বিপ্লব এক নতুন আশার আলো দেখিয়েছিল রাশিয়ায় দরিদ্র পীড়িত মানুষকে| লেনিনের দরিদ্র মানসিকতা ছিলো বিপ্লবী সত্ত্বার অংশ| এই সত্ত্বার সাথে মিশ্রিত ছিল তীক্ষ্ণ বাস্তববোধ| উদ্দেশ্যের নিবিষ্ট অথবা স্থানীয় আদর্শবাদ এবং লেনিনের অকুণ্ঠ দেশপ্রেমই বিপ্লবকে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যের দিকে নিয়েগেছিল|
তথ্যসূত্র
- Frank McDonough, "Conflict, Communism and Fascism".
- Ghosh Peu, "International Relations".
সম্পর্কিত বিষয়
- ইঙ্গ - ফরাসি তোষণ নীতি বলতে কী বোঝায় ? (আরো পড়ুন)
- কিউবার মিসাইল সংকট ১৯৬২ (আরো পড়ুন)
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মানির বিভাজন তথা বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব (আরো পড়ুন)
- ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থানের কারণ (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|