1857 সালের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদের অন্ত নেই| রিস এর মধ্যে লক্ষ্য করেছেন, ধর্মান্ধ হিন্দু-মুসলিম এর খ্রিস্ট ধর্ম বিরোধী জিহাদ| হোমস এর মতে, এটি ছিল সভ্যতার বনাম বর্বরতা সংঘাত| অনেকের মতে, এটি ছিল নিছক একটি সামরিক বিদ্রোহ| অনেকে আবার একে জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন| আবার কেউ কেউ একে সামন্ততান্ত্রিক বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন|
সিপাহী বিদ্রোহ
স্যার জন লরেন্স, জন সিলি, চার্লস রেকস, চার্লস রবাটস প্রমূখ ইংরেজ ঐতিহাসিকের মতে, এই বিদ্রোহ একটি সামরিক বিদ্রোহ ছাড়া আর কিছুই ছিল না| সমকালীন ভারতীয় ঐতিহাসিকদের মধ্যে প্রায় সকলেই- অক্ষয়কুমার দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, কিশোরী চাঁদ মিত্র, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, দাদাভাই নওরোজি, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ এই বিদ্রোহকে সিপাহী বিদ্রোহ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন, তথা ভারতবাসী বিদ্রোহ নয় বলেছেন| দেশের কোন রাজনৈতিক সংগঠন এই বিদ্রোহ সমর্থন করেনি|
শিক্ষিত সম্প্রদায় বিদ্রোহের নিন্দা করেছেন| ভারতের ব্যাপক অঞ্চলের বিদ্রোহের কোন প্রভাব পড়েনি| দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না| মূলত সিপাহীরাই প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং পরে তাতে অন্যান্য শ্রেণীও কিছু কিছু অংশ নেয়| সিপাহিদের মধ্যেই মূলত এই বিদ্রোহ কেন্দ্রীভূত ছিল| তাই এই বিদ্রোহ পরিপূর্ণভাবেই সিপাহী বিদ্রোহ ছিল| তাই অনেকে তাই একে মহাবিদ্রোহ বা জাতীয় বিদ্রোহ বলা যায় না|
বিশিষ্ট মনীষী কার্ল মার্কস দ্ব্যর্থহীন ভাষায় একে জাতীয় বিদ্রোহ বলেছেন| এরা মনে করেন, ভারতীয় সিপাহীরা এই বিদ্রোহ শুরু করলেও পরবর্তীকালে তা আর নিছক সিপাহিদের বিদ্রোহ ছিল না| ভারতের জাতীয় জনমানসে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল এবং সর্বস্তরের ভারতবাসীর এই বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল, নয়তো সমর্থন জানিয়েছিল| ভারতের বিভিন্ন স্থানের জনসাধারণ বিশেষত অযোধ্যা ও বিহারের জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বিদ্রোহে যোগদান করেন|
ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ, নানা সাহেব, কুনওয়ার সিং প্রমুখ রাজন্যবর্গ, তালুকদার ও জমিদার এই বিদ্রোহে যোগ দেন| বিদ্রোহীরা দিল্লির সম্রাট বাহাদুর শাহকে ভারতের সম্রাট বলে ঘোষণা করে ভারতে বিদেশী প্রভাব মুক্ত এক দেশীয় শাসন ব্যবস্থা স্থাপনের উদ্যোগী হয়| সুতরাং এই বিদ্রোহকে নিছক সিপাহী বিদ্রোহ বলা অযৌক্তিক|
ড. সুরেন্দ্রনাথ সেনের মতে, ইংরেজ শাসনের অধীনে দ্রুত পাশ্চাত্য সভ্যতার বিস্তারে দেশীয় জনসাধারণ ও সামন্তপ্রভুদের মনে এক ভীতির উদ্রেক হয়| প্রাচীন পন্থী এইসব সামন্তপ্রভুদের হাতেই ছিল বিদ্রোহের নেতৃত্ব| সিপাহীরা জয়যুক্ত হলে তারা নিশ্চয়ই পুরনো ভারতীয় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করে ভারতে এক প্রতি বিপ্লবের সূচনা করতেন|
এই বিদ্রোহ সিপাহীরা আরম্ভ করার পর সামন্ত শ্রেণীর একাংশ তাদের ক্ষোভ ও প্রতিহিংসার চরিতার্থ করার জন্য এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন| নানাসাহেব তার ভাতা বন্ধের জন্য, লক্ষ্মীবাঈ তার রাজ্যের অধিগ্রহণের জন্য বিদ্রোহের যোগ দেন| অযোধ্যার তালুকদাররাও একই কারণে যোগ দেয়| ফলে বিদ্রোহ সামন্ত বিদ্রোহে পরিণত হয়| এই বিদ্রোহে সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব ছিল| এই বিদ্রোহের শুরুতে "code of administration" গঠিত হয়| এখানে আর্মি থেকে 6 জন, সিপাহী থেকে 4 জন মোট 10 জন মিলে এটি গঠিত হয়|
সেই সময় ওয়াহাবী নেতা ছিলেন জেনারেল ভকত খান| দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ওয়াহাবী আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে| ইফতার আলম খান সিপাহিদের সাংগঠনিক বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন|
এরিক স্টোকস এর "The peasant and the raj" এবং "The peasant armed the indian revolt of 1857" - এই বইতে তিনি 1857 সালের বিদ্রোহকে গণবিদ্রোহ বলে উল্লেখ করেছেন| এই বই শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা থাকছে না, পরিবেশ-সংস্কৃতি ও মানসিকতার মধ্যে দিয়ে বিদ্রোহের কারণকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন| কৃষকেরা পুরোপুরি সৈনিক হয়ে গিয়েছিল| অযোধ্যাতে যে বিদ্রোহ হয়েছিল, তা একটা গণবিদ্রোহের রূপ নিয়েছিল| অযোধ্যাতে যত সংখ্যক কৃষক ছিল, তার মধ্যে 4/3 ভাগ বিদ্রোহে যোগদান করেছিল|
অধ্যাপক রমেশ চন্দ্র মজুমদার "প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ"-এটি স্বীকার করেনি| তার মতে, এই বিদ্রোহে ভারতের সব অঞ্চলের জনসাধারণ অংশগ্রহণ করেনি| কয়েকটি ক্ষুদ্র অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল| ভারতের বেশ কিছু রাজা বিদ্রোহ দমনে ইংরেজদের সাহায্য করেন| শিখ, রাজপুত, মারাঠা প্রভৃতি জাতিসমূহ ইংরেজদের পক্ষে ছিল| শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় এই বিদ্রোহে পক্ষে ছিল না| সুতরাং এই বিদ্রোহকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম বলা যায় না|
শিক্ষিত সম্প্রদায় বিদ্রোহের নিন্দা করেছেন| ভারতের ব্যাপক অঞ্চলের বিদ্রোহের কোন প্রভাব পড়েনি| দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না| মূলত সিপাহীরাই প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং পরে তাতে অন্যান্য শ্রেণীও কিছু কিছু অংশ নেয়| সিপাহিদের মধ্যেই মূলত এই বিদ্রোহ কেন্দ্রীভূত ছিল| তাই এই বিদ্রোহ পরিপূর্ণভাবেই সিপাহী বিদ্রোহ ছিল| তাই অনেকে তাই একে মহাবিদ্রোহ বা জাতীয় বিদ্রোহ বলা যায় না|
জাতীয় বিদ্রোহ
ইংল্যান্ডের টোরি পার্টির নেতা ডিসরোলি এই বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন| সমকালীন ইংরেজ ঐতিহাসিক জে. বি. নটন, আলেকজান্ডার ডাফ, হোমস, জন কে প্রমূখ 1857 সালের বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন|কার্ল মার্কস |
বিশিষ্ট মনীষী কার্ল মার্কস দ্ব্যর্থহীন ভাষায় একে জাতীয় বিদ্রোহ বলেছেন| এরা মনে করেন, ভারতীয় সিপাহীরা এই বিদ্রোহ শুরু করলেও পরবর্তীকালে তা আর নিছক সিপাহিদের বিদ্রোহ ছিল না| ভারতের জাতীয় জনমানসে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল এবং সর্বস্তরের ভারতবাসীর এই বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল, নয়তো সমর্থন জানিয়েছিল| ভারতের বিভিন্ন স্থানের জনসাধারণ বিশেষত অযোধ্যা ও বিহারের জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বিদ্রোহে যোগদান করেন|
ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ, নানা সাহেব, কুনওয়ার সিং প্রমুখ রাজন্যবর্গ, তালুকদার ও জমিদার এই বিদ্রোহে যোগ দেন| বিদ্রোহীরা দিল্লির সম্রাট বাহাদুর শাহকে ভারতের সম্রাট বলে ঘোষণা করে ভারতে বিদেশী প্রভাব মুক্ত এক দেশীয় শাসন ব্যবস্থা স্থাপনের উদ্যোগী হয়| সুতরাং এই বিদ্রোহকে নিছক সিপাহী বিদ্রোহ বলা অযৌক্তিক|
পুনঃপ্রতিষ্ঠিত আন্দোলন
অধ্যাপক রমেশ চন্দ্র মজুমদার, বিশিষ্ট মার্কসবাদী চিন্তাবিদ রজনী পাম দত্ত, কেমব্রিজ ঐতিহাসিক এরিক স্টোকস প্রমূখ এই বিদ্রোহকে সামন্ত শ্রেণীর বিদ্রোহ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন| তাদের মতে এই বিদ্রোহ হল ভারতীয় সনাতনপন্থীদের শেষ বিদ্রোহ| অধ্যাপক মজুমদার এর মতে, এই বিদ্রোহ হলো ক্ষয়িষ্ণু অভিজাততন্ত্র ও মৃতপ্রায় সামন্ত শ্রেণীর মৃত্যুকালীন আর্তনাদ| তাঁর মতে এই বিদ্রোহ ছিল স্পষ্ট প্রতিক্রিয়াশীল|
ড. সুরেন্দ্রনাথ সেনের মতে, ইংরেজ শাসনের অধীনে দ্রুত পাশ্চাত্য সভ্যতার বিস্তারে দেশীয় জনসাধারণ ও সামন্তপ্রভুদের মনে এক ভীতির উদ্রেক হয়| প্রাচীন পন্থী এইসব সামন্তপ্রভুদের হাতেই ছিল বিদ্রোহের নেতৃত্ব| সিপাহীরা জয়যুক্ত হলে তারা নিশ্চয়ই পুরনো ভারতীয় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করে ভারতে এক প্রতি বিপ্লবের সূচনা করতেন|
ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ এর মূর্তি |
এই বিদ্রোহ সিপাহীরা আরম্ভ করার পর সামন্ত শ্রেণীর একাংশ তাদের ক্ষোভ ও প্রতিহিংসার চরিতার্থ করার জন্য এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন| নানাসাহেব তার ভাতা বন্ধের জন্য, লক্ষ্মীবাঈ তার রাজ্যের অধিগ্রহণের জন্য বিদ্রোহের যোগ দেন| অযোধ্যার তালুকদাররাও একই কারণে যোগ দেয়| ফলে বিদ্রোহ সামন্ত বিদ্রোহে পরিণত হয়| এই বিদ্রোহে সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব ছিল| এই বিদ্রোহের শুরুতে "code of administration" গঠিত হয়| এখানে আর্মি থেকে 6 জন, সিপাহী থেকে 4 জন মোট 10 জন মিলে এটি গঠিত হয়|
ষড়যন্ত্র বনাম সংগঠিত বিদ্রোহ
ব্রিটিশ সরকার বলেছিলেন 1857 সালের বিদ্রোহ ছিল মুসলিমদের ষড়যন্ত্র| সৈয়দ আহমেদ খান এর বিরোধিতা করেন| কে. এম. আসরফ তিনি 1857 সালে সালের বিদ্রোহ ও ওয়াহাবী আন্দোলনের মধ্যে সম্পর্ক আছে কিনা খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন এবং বলেন, এর মধ্যে পুনরুত্থানবাদী উপাদান ছিল| তিনি বলেছিলেন শহরের মৌলভীরা জেহাদ ও ফতোয়া ডিক্রিজারি করেছিলেন|সেই সময় ওয়াহাবী নেতা ছিলেন জেনারেল ভকত খান| দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ওয়াহাবী আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে| ইফতার আলম খান সিপাহিদের সাংগঠনিক বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন|
গণ বিদ্রোহ
যদিও এই বিদ্রোহ প্রথমে সিপাহী বিদ্রোহ হিসাবে আরম্ভ হয়েছিল, কিন্তু পরে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে ব্যাপক অঞ্চলে এক গণ বিদ্রোহের চরিত্র ধারণ করে| কার্ল মার্কস "ভারতীয় বিদ্রোহ, ভারতীয় প্রশ্ন" প্রবন্ধে লিখেছেন যে, সিপাহীরা ছিল খন্ডমাত্র এবং মূলত কৃষকেরা ছিল 1857 সালের বিদ্রোহের প্রধান চালিকাশক্তি| মার্কসের মতে, 1857 সালের বিদ্রোহ ছিল ভারতের জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম| উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ ও গণ বিক্ষোভ সংগঠিত হয়|গণ বিক্ষোভ |
কৃষক |
এরিক স্টোকস এর "The peasant and the raj" এবং "The peasant armed the indian revolt of 1857" - এই বইতে তিনি 1857 সালের বিদ্রোহকে গণবিদ্রোহ বলে উল্লেখ করেছেন| এই বই শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা থাকছে না, পরিবেশ-সংস্কৃতি ও মানসিকতার মধ্যে দিয়ে বিদ্রোহের কারণকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন| কৃষকেরা পুরোপুরি সৈনিক হয়ে গিয়েছিল| অযোধ্যাতে যে বিদ্রোহ হয়েছিল, তা একটা গণবিদ্রোহের রূপ নিয়েছিল| অযোধ্যাতে যত সংখ্যক কৃষক ছিল, তার মধ্যে 4/3 ভাগ বিদ্রোহে যোগদান করেছিল|
প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ
1857 সালের বিদ্রোহকে অনেকেই ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলেছেন| সাভারকার, সুশোভন সরকার প্রমুখ এই বিদ্রোহকে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলার পক্ষপাতী ছিলেন| ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্তি পেতে সমগ্র ভারতবাসী এই প্রথম জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠে এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে|অধ্যাপক রমেশ চন্দ্র মজুমদার "প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ"-এটি স্বীকার করেনি| তার মতে, এই বিদ্রোহে ভারতের সব অঞ্চলের জনসাধারণ অংশগ্রহণ করেনি| কয়েকটি ক্ষুদ্র অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল| ভারতের বেশ কিছু রাজা বিদ্রোহ দমনে ইংরেজদের সাহায্য করেন| শিখ, রাজপুত, মারাঠা প্রভৃতি জাতিসমূহ ইংরেজদের পক্ষে ছিল| শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় এই বিদ্রোহে পক্ষে ছিল না| সুতরাং এই বিদ্রোহকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম বলা যায় না|
মূল্যায়ন
1857 সালের বিদ্রোহকে প্রকৃতিগতভাবে নিছক সিপাহী বিদ্রোহ, সামন্ত বিদ্রোহ বা সনাতন বিদ্রোহ বলে অভিহিত করা ঠিক হবে না| কেবল ধর্মীয় কারণ বা এনফিল্ড রাইফেল এর জন্যই এই বিদ্রোহ সংগঠিত হয়নি|
এই বিদ্রোহ হল মানুষের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ| বিদ্রোহের অংশকারীদের অধিকাংশই ছিল সাধারণ মানুষ| নানা ত্রুটি, নানা বিদ্বেষ থাকা সত্ত্বেও এই বিদ্রোহের চরিত্রকে কখনোই অস্বীকার করা যায় না বা একে স্বাধীনতা সংগ্রাম বলল অত্যুক্তি হয় না| আসলে এই মহাবিদ্রোহ নানা জনের কাছে প্রতিভাত হয়েছে নানাভাবে|
এরিক স্টোকস বলেছেন, এই বিদ্রোহ এক সুরে বাধা ছিল না| এর মধ্যে নানা ধারা-উপধারা যেমন কৃষকদের প্রতিরোধ, তেমনি ছিল জাতীয় প্রতিরোধ| নানান তরঙ্গ ইংরেজদের বিরুদ্ধে সামরিক ভাবে একত্রিত হয়েছিল|
একথা সত্য যে, 1857 সালের বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য পূরণে সফলতা পায়নি| কিন্তু ভবিষ্যতে এই মহাবিদ্রোহ ভারতবাসীর মনে দেশ প্রেমের আদর্শ ও উদ্দীপনার সঞ্চার করেছিল| তাই 1857 সালের মহাবিদ্রোহ সফল না হলেও মহাবিদ্রোহের স্মৃতি ও আদর্শ ইংরেজদের পক্ষে বেশি ক্ষতিকারক হয়েছিল|
.......................................
তথ্যসূত্র
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "পলাশি থেকে পার্টিশন"
- Julian Spilsbury, "The Indian Mutiny"."
- G. B. Malleson, "The Indian Mutiny of 1857".
সম্পর্কিত বিষয়
- দাদাভাই নওরোজি মতে, ব্রিটিশ ভারতের জাতীয় আয় নির্ণয় (আরো পড়ুন)
- অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ বা Economic Nationalism (আরো পড়ুন)
- সম্পদের বহির্গমন তত্ত্ব এবং এটি কিভাবে বাংলার অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছিল (আরো পড়ুন)
- ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|