মধ্যযুগে আরবদের সঙ্গে ইতালির বিভিন্ন শহরের প্রচুর বাণিজ্যিক লেন-দেন হয়| আরব বণিকরা ভারত, সিংহল ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে মনি-মুক্তা, রেশম ও নানা সুগন্ধি মশলা সংগ্রহ করে ভূমধ্যসাগরের বন্দরগুলিতে নিয়ে আসত| সেখান থেকে ইতালির বণিকরা সেই পণ্যগুলি ইউরোপের বাজারে চালান দিয়ে প্রচুর লাভ করতো|
কিন্তু 1453 সালে তুর্কিদের হাতে কনস্টান্টিনোপলের অর্থাৎ পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটলে প্রাচ্য দেশগুলিতে যাতায়াতের একমাত্র স্থলপথটি ইউরোপীয়দের কাছে বন্ধ হয়ে যায়| ইউরোপীয় বণিকদের কারবার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে তারা প্রাচ্য যাওয়ার জন্য নতুন নতুন জলপথের সন্ধানে আগ্রহী হন|
তাছাড়া মার্কোপোলোর ভ্রমণ বৃত্তান্ত ইউরোপবাসীদের মনে প্রাচ্য দেশগুলির সম্পর্কে কৌতূহল বৃদ্ধি করেছিল| সর্বোপরি এই সময় নবজাগরণ দেখা দিলে দুঃসাহসিক মানুষের মনে অজানাকে জানবার ও নতুন মহাদেশ আবিষ্কার করার আগ্রহ দেখা দিয়েছিল|
তাছাড়া মার্কোপোলোর ভ্রমণ বৃত্তান্ত ইউরোপবাসীদের মনে প্রাচ্য দেশগুলির সম্পর্কে কৌতূহল বৃদ্ধি করেছিল| সর্বোপরি এই সময় নবজাগরণ দেখা দিলে দুঃসাহসিক মানুষের মনে অজানাকে জানবার ও নতুন মহাদেশ আবিষ্কার করার আগ্রহ দেখা দিয়েছিল|
আবিষ্কারের পর্তুগিজ যাত্রা
নতুন জলপথ ও নতুন জগৎ আবিষ্কারের ব্যাপারে সর্বাগ্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল পর্তুগিজ নাবিকগণ| এই প্রসঙ্গে পর্তুগালের যুবরাজ হেনরির(1394-1460) নাম সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য| তার চেষ্টায় ও উৎসাহে বিভিন্ন ধরনের নৌ-যন্ত্রপাতি ও দিক নির্ণয় করার যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হয়|
নক্ষত্র পরিমাপক যন্ত্র, বিষুবরেখা ও অক্ষরেখা নিরূপণ করার উপযোগী যন্ত্রের আবিষ্কার এবং নানা ধরনের চাট, মানচিত্র ও তালিকা প্রস্তুত করা হলে সমুদ্রপথে দেশ ও মহাদেশ আবিষ্কারের কাজ সহজ হয়|
নৌ বিদ্যা ও ভৌগোলিক আবিষ্কারের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য যুবরাজ হেনরি ইতিহাসে "নাবিক হেনরি"(prince henry the navigator) নামে পরিচিত হন| হেনরির প্রচেষ্টায় আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের অনেকটাই এলাকা আবিষ্কার করা সম্ভবপর হয়েছিল|
আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তে এক প্রবল ঝড়ের সম্মুখীন হতে হয় এবং এই কারণে তিনি আফ্রিকার শেষ প্রান্তের নামকরণ করেন "ঝড়ের অন্তরীপ"(cape of storm), কিন্তু পর্তুগালের রাজা দ্বিতীয় জনের মনে এই বিশ্বাস জন্মায় যে, আফ্রিকা দক্ষিণ উপকূলের পথ বেয়ে প্রাচ্যের দেশগুলোতে পৌঁছানো সম্ভব| এই কারণে তিনি এই অন্তরীপের নামকরণ করেন "উত্তমাশা অন্তরীপ"(cape of God Hope)|
1498 সালে তিনি কালিকট বন্দরে এসে পৌঁছান| তিন মাস থাকার পর 1499 সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন| তিনি ভারত থেকে জাহাজ ভর্তি মশলা ও অন্যান্য অনেক মূল্যবান দ্রব্যাদি সঙ্গে নিয়ে যান|
ইউরোপ থেকে ভারতে আসার এই নতুন জলপথ আবিষ্কার পৃথিবীর ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা| ভাস্কো দা গামা আবিষ্কৃত জলপথ দিয়েই পরবর্তীকালে ওলন্দাজ, ইংরেজি ও ফরাসি বণিকরা ভারতে এসে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেছিল|
1502 সালে ভাস্কো দা গামা দ্বিতীয়বার কালিকট বন্দরে আসেন| তিনি কোচিন ও ক্যানন নামক দুটি জায়গায় পর্তুগিজ বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন|
কিন্তু ভারতে আসতে গিয়ে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে প্রবল বায়ুর প্রভাবে মুখে পড়তে তিনি সোজা পশ্চিম আমেরিকার মূল ভূখন্ডে বাজিলে গিয়ে উপস্থিত হন|
এরপর কাব্রাল পুনরায় যাত্রা শুরু করে উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে ভারতে উপস্থিত হন| তিনি কালিকট ও কোচিনে দুটি পর্তুগিজ বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করেন| কিছুদিন কোচিনে থাকার পর জাহাজ ভর্তি মশলা নিয়ে স্বদেশে ফিরে যান|
নক্ষত্র পরিমাপক যন্ত্র, বিষুবরেখা ও অক্ষরেখা নিরূপণ করার উপযোগী যন্ত্রের আবিষ্কার এবং নানা ধরনের চাট, মানচিত্র ও তালিকা প্রস্তুত করা হলে সমুদ্রপথে দেশ ও মহাদেশ আবিষ্কারের কাজ সহজ হয়|
মানচিত্র |
নৌ বিদ্যা ও ভৌগোলিক আবিষ্কারের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য যুবরাজ হেনরি ইতিহাসে "নাবিক হেনরি"(prince henry the navigator) নামে পরিচিত হন| হেনরির প্রচেষ্টায় আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের অনেকটাই এলাকা আবিষ্কার করা সম্ভবপর হয়েছিল|
বার্থোলোমিউ দিয়াজ
নাবিক হেনরির মৃত্যুর প্রায় 25 বছর পর বার্থোলোমিউ দিয়াজ নামে অপর এক পর্তুগিজ নাবিক 1486 সালে বিষুবরেখা অতিক্রম করে আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল দিয়ে ভারতবর্ষে দিকে অগ্রসর হতে সচেষ্ট হন|আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তে এক প্রবল ঝড়ের সম্মুখীন হতে হয় এবং এই কারণে তিনি আফ্রিকার শেষ প্রান্তের নামকরণ করেন "ঝড়ের অন্তরীপ"(cape of storm), কিন্তু পর্তুগালের রাজা দ্বিতীয় জনের মনে এই বিশ্বাস জন্মায় যে, আফ্রিকা দক্ষিণ উপকূলের পথ বেয়ে প্রাচ্যের দেশগুলোতে পৌঁছানো সম্ভব| এই কারণে তিনি এই অন্তরীপের নামকরণ করেন "উত্তমাশা অন্তরীপ"(cape of God Hope)|
ভাস্কো দা গামা
প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে ইউরোপ থেকে সরাসরি ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কারের কর্তৃত্ব হলো অপর এক পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা| তিনি 1497 সালের পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে ভারতের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত কালিকট বন্দরে এসে উপস্থিত হন|1498 সালে তিনি কালিকট বন্দরে এসে পৌঁছান| তিন মাস থাকার পর 1499 সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন| তিনি ভারত থেকে জাহাজ ভর্তি মশলা ও অন্যান্য অনেক মূল্যবান দ্রব্যাদি সঙ্গে নিয়ে যান|
পর্তুগালের রাজধানী লিসবন |
ইউরোপ থেকে ভারতে আসার এই নতুন জলপথ আবিষ্কার পৃথিবীর ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা| ভাস্কো দা গামা আবিষ্কৃত জলপথ দিয়েই পরবর্তীকালে ওলন্দাজ, ইংরেজি ও ফরাসি বণিকরা ভারতে এসে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেছিল|
1502 সালে ভাস্কো দা গামা দ্বিতীয়বার কালিকট বন্দরে আসেন| তিনি কোচিন ও ক্যানন নামক দুটি জায়গায় পর্তুগিজ বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন|
পেদ্রো আলভারেজ কাব্রাল
1500 সালে পর্তুগালের রাজা প্রথম ম্যানুয়েলের নির্দেশে পেদ্রো আলভারেজ কাব্রাল নামে এক পর্তুগিজ নাবিক লিসবন থেকে 13 টি জাহাজ নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হন, সঙ্গে তিনি 1200 পর্তুগিজ সৈন্য ও প্রচুর বাণিজ্য সামগ্রিক নিয়েছিলেন|কিন্তু ভারতে আসতে গিয়ে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে প্রবল বায়ুর প্রভাবে মুখে পড়তে তিনি সোজা পশ্চিম আমেরিকার মূল ভূখন্ডে বাজিলে গিয়ে উপস্থিত হন|
এরপর কাব্রাল পুনরায় যাত্রা শুরু করে উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে ভারতে উপস্থিত হন| তিনি কালিকট ও কোচিনে দুটি পর্তুগিজ বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করেন| কিছুদিন কোচিনে থাকার পর জাহাজ ভর্তি মশলা নিয়ে স্বদেশে ফিরে যান|
তথ্যসূত্র
- অধ্যাপক গোপালকৃষ্ণ পাহাড়ি, "ইউরোপের ইতিবৃত্ত"
- C. Warren Hollister, "Medieval Europe: A Short History".
সম্পর্কিত বিষয়
- ষোড়শ শতকের ইউরোপের মানচিত্র অঙ্কনের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা (আরও পড়ুন)
- ভাস্কো ডা গামা কে ছিলেন (আরও পড়ুন)
- ভারতে পর্তুগীজদের ইতিহাস (আরও পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................