লোকার্নো চুক্তির উদ্দেশ্য ও পটভূমি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ইউরোপীয় রাজনীতির প্রধান সমস্যা ছিল জার্মানির ভবিষ্যৎ আক্রমণের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের নিরাপত্তা বিধান| ফরাসি নিরাপত্তা উদ্দেশ্য জাতিসংঘের উদ্যোগে 1923 সালে পারস্পরিক সহায়তায় চুক্তি এবং 1924 সালে জেনেভা প্রটোকল এর খসড়া তৈরি করা হয়| উভয়ই ইংল্যান্ডের আপত্তিতে বাতিল হয়ে যায়| এমতবস্থায় নিজ নিরাপত্তার স্বার্থে ফ্রান্স নিজ উদ্যোগে পৃথক রাষ্ট্র জোট গঠনের চিন্তা করতে থাকে| এদিকে জার্মানি ও ফ্রান্সের সাথে মিত্রতা স্থাপনের উৎসাহিত ছিল|
এই অবস্থায় 1925 সালের অক্টোবর মাসে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া, ইতালি ও জার্মানি- এই সাতটি দেশের প্রতিনিধিগণ সুইজারল্যান্ডের লোকার্নো নামক স্থানে এক সম্মেলনে মিলিত হন| প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম বিজেতা ও বিজিত রাষ্ট্রগুলির সমঝোতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে মিলিত হয়ে আলোচনায় চালায়, এটি "লোকার্নো স্পিরিট" নামে পরিচিত| এখানে মোট সাতটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়| এই সাতটি চুক্তি একত্রে "লোকার্নো চুক্তি" সমূহ নামে পরিচিত|
লোকার্নো চুক্তির শর্ত
সাতটি চুক্তির মধ্যে প্রথম চুক্তিটি অর্থাৎ জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম ও ইতালির মধ্যে স্বাক্ষরিত পরস্পর প্রতিশ্রুতি চুক্তিটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ| এই চুক্তি অনুসারে স্বাক্ষরকারী দেশ সমূহ-
- ভার্সাই চুক্তি দ্বারা স্থিরকৃত জার্মানি ও বেলজিয়াম এবং জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যবর্তী সীমারেখার মেনে নেয়|
- পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে না|
- রাইন অঞ্চলে কারো কোন সেনা থাকবে না|
- জার্মানিকে জাতিরাষ্ট্রের সদস্য ভুক্ত করা হবে|
লোকার্নো চুক্তির গুরুত্ব
ঐতিহাসিক ল্যাংসাম লোকার্নো চুক্তিকে বিশ্ব ইতিহাসে "নবযুগের অগ্রদুট" বলে অভিহিত করেছেন| দীর্ঘদিনের বিবাদ-বিসম্বাদের পর এই চুক্তি পৃথিবীতে এক সোহার্দ্য পরিবেশ গড়ে তুলে| বিজিত জার্মানিকে জাতিসংঘের সদস্য পদ দেওয়া হয়| তাই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেন এই চুক্তিকে যুদ্ধ ও শান্তির প্রকৃত সীমারেখা বলে অভিহিত করেছেন|
.......................................
তথ্যসূত্র
- Peter Watson, "The German Genius".
- Ghosh Peu, "International Relations".
সম্পর্কিত বিষয়
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময় উপনিবেশবাদের পতন তথা এর গুরুত্ব (আরো পড়ুন)
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মানির বিভাজন তথা বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব (আরো পড়ুন)
- ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থানের কারণ (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|