খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতে বৈদিক ধর্মের বিরুদ্ধে নানা প্রতিবাদ দেখা যায় এবং বহু নতুন নতুন ধর্মের উদ্ভব হয়। এই ধর্মমত গুলির মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ও জনপ্রিয় ছিল "আজীবিক ধর্মমত"। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গোশাল। সামান্য একটি পরিবারে জন্ম গোশাল প্রথম জীবনে মহাবীরের বন্ধু ছিলেন। গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক এই গোশালের মৃত্যু হয় সম্ভবত খ্রি:পূ: ৪৮৪ অব্দে।
প্রথমে আজীবিকদের প্রধান কর্মস্থান অঙ্গ ও অবন্তীর মধ্যবর্তী অঞ্চল ছিল। মৌর্য সম্রাট অশোক ও পরে দশরথ এই ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। অশোক তাঁর শিলালিপিতে আজীবকদের প্রতি সৎ আচারনের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া আজীবিকদের উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায় মিলিন্দ পনহো গ্রন্থেও।
আজীবিকদের নিজস্ব কোন ধর্মীয় গ্রন্থ ছিল না। এঁরা পুরোপুরি নাস্তিক ছিলেন। এরা ব্রাক্ষণবাদের বিরোধী করতেন। পূজা-অর্চনার ও যাগযজ্ঞের কোন নিয়ম এরা মানতেন না। এরা বিশ্বাস করত, নিয়তি মানুষের ভবিষ্যতকে ঘিরে রেখেছে। এদের বিশ্বাস ছিল, মানুষ সৎভাবে কয়েকটি জন্ম কাটালে মানুষ নিয়তি বা কর্মফলের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে।
এই আজীবিকরা সন্নাস ও তপস্যার উপর জোর দিতেন। এদের ধর্মমত ছিল, হতাশা থেকে জাত ও নেতিবাচক। এতে নিয়তিবাদ বড়োই প্রবল ছিল। মানুষের উদম ও কর্ম এতে শিথিল হয়ে যেত। গোশাল এবং আজীবিক সন্নাসীরা যে ধর্মমত প্রচার করতেন, তা নিয়তিবাদ নামেও পরিচিত।
নগ্নদেহী এই আজীবিকরা পাএ নিয়ে ভিক্ষায় বের হতেন এবং দু'হাতে ভিক্ষা গ্রহন করতেন। আজীবিকরা স্বহস্তে চুল উপড়ে ফেলা এবং উত্তপ্ত ধাতু পিন্ডকে হাতে ধারন করার মতো কঠিন কাজ করে আজীবিক ধর্মমতের দিক্ষা গ্রহন করতেন। অনেক সময় এরা উপবাসের মধ্যে দিয়ে স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরন করতেন। আজীবিকদের হাতে বাঁশের লাঠি থাকত, তাই এদের একদন্ডিও বলা হত। কিছু কিছু বনিক এবং মহিলারাও এই ধর্মমতের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।
জাতিভেদ ও শ্রেণীভেদের সমালোচনা করায় শূদ্র ও অস্পৃশ্যরা এই ধর্মমতের প্রতি আনুগত্য হয়ে পড়েন।আজীবিকরা নাস্তিকবাদী থাকায় মানুষের কর্মফল ও জন্মান্তর সমস্যা সমাধানের পথ নির্দেশ না করায় এর জনপ্রিয়তা কমে যায় এবং পরে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম এই ধর্মমতের বিরোধীতা করায় এই ধর্মের অবলুপ্তি ঘটে।
তথ্যসূত্র
- সুনীল চট্টোপাধ্যায় "প্রাচীন ভারতের ইতিহাস" (প্রথম খন্ড)
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India"
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century"
সম্পর্কিত বিষয়
- ঋক বৈদিক যুগ এবং পরবর্তী বৈদিক যুগের ধর্মীয় ভাবনা (আরো পড়ুন)
- প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য (আরো পড়ুন)
Author of this post
Name- Tanuara khatun About- তিনি বর্তমানে ইতিহাসের ছাত্র Read more- (click here) |
.......................................