অভ্যন্তরীণ সংগঠনের পর জাপান পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর অনুকরণে সাম্রাজ্যবাদী নীতির মাধ্যমে এশিয়া ভূখণ্ডে আধিপত্য বিস্তারের সচেষ্ট হয়| এই সূত্রেই জাপানের সঙ্গে চীনের সংঘর্ষ দেখা দেয়| এই সংঘর্ষের কেন্দ্র ছিল কোরিয়া|
প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
আনুষ্ঠানিকভাবে কোরিয়া ছিল চীনের একটি করদ রাজ্য, কিন্তু কার্যত দেশটি ছিল স্বাধীন| কোরিয়ার ভৌগলিক অবস্থান তথা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই জাপানকে কোরিয়া সম্বন্ধে উদ্বিগ্ন করে তোলে| কোরিয়ার উত্তরে মাঞ্চুরিয়া, ইয়ালু নদীর দ্বারা কোরিয়া মাঞ্চুরিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন জাপান চেয়েছিল কোরিয়াকে কুক্ষিগত করে কোরিয়ার মধ্য দিয়ে এশিয়া ভূ-খন্ডে প্রবেশ করতে| জাপানের ক্ষমতা কোরিয়াতে সম্প্রসারিত হলে মাঞ্চুরিয়া অধিকার জাপানের পক্ষে যেরূপ সহজসাধ্য হবে, সেরূপ অদূর ভবিষ্যতে চীনের রাজধানী পিকিং এর জাপানের কর্তৃক প্রতিষ্ঠা করার সম্ভাবনা থাকবে|
দ্বিতীয়ত, কোরিয়াতে জাপানের অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত ছিল| কোরিয়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল উৎপন্ন হতো, যেটি ছিল জাপানিদের প্রধান খাদ্য| তাছাড়া কোরিয়ার বাজার জাপানি শিল্পপতিদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় ছিল|
রাষ্ট্র হিসাবে কোরিয়া এই সময় দুর্বল হয়ে পড়েছিল, সামন্ততান্ত্রিক অরাজকতাও সেখানে চলছিল| কোরিয়ার এই দুর্বলতা পাশ্চাত্য শক্তিগুলিকে কোরিয়ায় ঘাঁটি স্থাপনের প্রলুব্ধ করে| এব্যাপারে রাশিয়া সর্বাপেক্ষা বেশি তৎপর হয়ে পড়ে, কারণ কোরিয়ায় উত্তর সীমায় রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তক বন্দরটি অবস্থিত| রাশিয়ার দুরভিসন্ধি সম্বন্ধে জাপান আরোও সন্ধিহান হয়ে পড়ে এই কারণে যে, রাশিয়া কোরিয়ার সৈন্যবাহিনীর সংস্কার সাধনের মাধ্যমে তুলনামূলকভাবে বরফমুক্ত ল্যাজারোফ বন্দরটি তার জাহাজের জন্য ব্যবহারের সুযোগ পায়|
বিদেশী শক্তির কবলাস্থিত কোরিয়া জাপানের কাছে বক্ষবিদ্ধ ছুরিকার মতো প্রতীয়মান হতো| তাই চীনের কাছে জাপানের প্রস্তাব ছিল, চীন যেন কোরিয়াকে বিদেশি প্রভাবমুক্ত করে| কোরিয়াকে শক্তিশালী করার জন্য সেখানে প্রশাসনিক সংস্কার প্রবর্তন করে, অন্যথায় কোরিয়াকে যেন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দান করেন| কিন্তু চীন জাপানের এই প্রস্তাবে কর্ণপাত করেনি| তখন জাপান নিরুপায় হয়ে চীন তথা পাশ্চাত্য শক্তির প্রভাব মুক্ত করে সেখানে নিজ রাজনৈতিক অধিকার স্থাপনে বদ্ধপরিকর হয়| কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের পরিবেশ তৈরি করার জন্য জাপান 1876 সালে কোরিয়ার সাথে একটি বাণিজ্যিক ও মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করে| এর ফলে কোরিয়া একটি স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে প্রতিপন্ন হয়, যেটি চীনের স্বার্থ বিরোধী ছিল|
এইভাবে কোরিয়াকে কেন্দ্র করে চীন-জাপান সম্পর্ক তিক্ত হতে থাকে| এমনকি কোরিয়াতে দুটি দলের সৃষ্টি হয়- জাপান সমর্থক সংস্কারপন্থী দল এবং চীন সমর্থক সংস্কার বিরোধী রক্ষণশীল দল| 1884 সালে উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে চীন ও জাপান উভয়ই কোরিয়াতে সৈন্য প্রেরণ করে| উভয় দলের মধ্যে আসন্ন যুদ্ধ শেষ অব্দি প্রশমিত হয়েছিল 1885 সালে স্বাক্ষরিত লি-ইটো-কনভেনশনের(li-eto-convention) মাধ্যমে এই কনভেনশনটি আংশিকভাবে জাপানের কূটনৈতিক সাফল্য পরিচায়ক, কারণ এই কনভেনশনের মাধ্যমে কোরিয়ার উপর প্রকৃত অর্থে চীন ও জাপানের যুগ্ম অভিভাবকতত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়| চীনের একক সার্বভৌমত্বের দাবি নাকচ হয়| ফলে কোরিয়ার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ সীমিত হয়ে পড়ে|
জাপানের সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি চীন-জাপান যুদ্ধ অনিবার্য করে তুলেছিল| এই সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইটোর প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিরোধী দল সংঘবদ্ধ হয়| সেজন্য ইটো তার সরকারকে বিরোধী দলের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য এবং জাপানকে তার প্রশাসনের অধীনে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য যুদ্ধ নীতি অনুসরণ করতে সচেষ্ট হন| এপ্রসঙ্গে ঐতিহাসিক ভিনাক বলেছেন, জাপানের রাজনৈতিক অবস্থা, কোরিয়ায় বৈদেশিক শক্তির ঘাঁটি স্থাপন, কোরিয়ায় তোরণ দিয়ে এশিয়া ভূখণ্ডে জাপানের সম্প্রসারণ নীতি এবং সর্বোপরি কোরিয়ার খনিজ-সম্পদ ও ক্রয়-বিক্রয়ের বাজার অধিকারে জাপানের ব্যস্ততা- এইসব কারণে চীন-জাপান যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে|
চীন-জাপান যুদ্ধের সূত্রপাত জাপানের সিংহভাগ দায়িত্ব থাকলেও চীন এব্যাপারে একেবারে নির্দোষ ছিল না|জাপানের ক্রিয়াকলাপে শংকিত হয়ে চীন কোরিয়াতে তার সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার জন্য সেখানকার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে থাকলে যুদ্ধের সম্ভাবনা অনিবার্য হয়ে পড়ে| তাছাড়া জাপানের মতো চীনেরও এই সময় কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যা ছিল| চৈনিক ভাই-সরয় লীর বিরোধী গোষ্ঠি তার কোরিয়া সংক্রান্ত নীতি দুর্বল বলে সমালোচনা করতে থাকলে তিনি তার ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করার জন্য জাপানের বিরুদ্ধে দূর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন|
এইরূপ পটভূমিকায় টংহ্যাক/তংহাক নামক এক ধর্মীয় সম্প্রদায় কোরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে| এই বিদ্রোহ দমনের জন্য কোরিয়ার অনুরোধে চীন সেখানে সৈন্যবাহিনী পাঠালে জাপান পাল্টা চীন থেকে বেশি সৈন্য পাঠায়| কিন্তু এই বিদ্রোহ দমনের পর কেউই কোরিয়া থেকে সৈন্য অপসারণে রাজি ছিল না| এইভাবে উত্তেজনা যখন ক্রমশ বেড়েই চলছিল, তখন চীনের একটি সৈন্যবাহিনী জাহাজের উপর জাপান গুলিবর্ষণ করলে যুদ্ধ শুরু হয়| চীন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে 1895 সালে শিমোনোসেকির সন্ধি(Treaty of Shimonoseki) স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন|
দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, চীনের আর্থিক বিকাশের হার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল| অন্যদিকে জাপানে এসেছিল শিল্পায়নের টেউ| শিল্পসমৃদ্ধ জাপানকে চীনের পক্ষে পরাজিত করা সম্ভব হয়নি|
তৃতীয়ত, সামরিক দিক থেকেও জাপান চীনের চেয়ে অনেক বেশি পাশ্চাত্য জগতের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল| বৈজ্ঞানিক অস্ত্রশস্ত্র, যুদ্ধের উপকরণ প্রভৃতির দিক দিয়ে চীন জাপানের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে ছিল|
অন্যদিকে ইউরোপীয় আদর্শ অনুসরণ করে জাপান তার সেনাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, কিন্তু তা পারিনি| এইসব কারণে চীন-জাপান যুদ্ধে চীন জাপানের কাছে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়েছিল এবং ফলাফল স্বরূপ জাপানের সাম্রাজ্যবাদী আত্মবিশ্বাস অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছিল|
.................................
দ্বিতীয়ত, কোরিয়াতে জাপানের অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত ছিল| কোরিয়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল উৎপন্ন হতো, যেটি ছিল জাপানিদের প্রধান খাদ্য| তাছাড়া কোরিয়ার বাজার জাপানি শিল্পপতিদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় ছিল|
রাষ্ট্র হিসাবে কোরিয়া এই সময় দুর্বল হয়ে পড়েছিল, সামন্ততান্ত্রিক অরাজকতাও সেখানে চলছিল| কোরিয়ার এই দুর্বলতা পাশ্চাত্য শক্তিগুলিকে কোরিয়ায় ঘাঁটি স্থাপনের প্রলুব্ধ করে| এব্যাপারে রাশিয়া সর্বাপেক্ষা বেশি তৎপর হয়ে পড়ে, কারণ কোরিয়ায় উত্তর সীমায় রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তক বন্দরটি অবস্থিত| রাশিয়ার দুরভিসন্ধি সম্বন্ধে জাপান আরোও সন্ধিহান হয়ে পড়ে এই কারণে যে, রাশিয়া কোরিয়ার সৈন্যবাহিনীর সংস্কার সাধনের মাধ্যমে তুলনামূলকভাবে বরফমুক্ত ল্যাজারোফ বন্দরটি তার জাহাজের জন্য ব্যবহারের সুযোগ পায়|
ভ্লাদিভস্তক বন্দর |
বিদেশী শক্তির কবলাস্থিত কোরিয়া জাপানের কাছে বক্ষবিদ্ধ ছুরিকার মতো প্রতীয়মান হতো| তাই চীনের কাছে জাপানের প্রস্তাব ছিল, চীন যেন কোরিয়াকে বিদেশি প্রভাবমুক্ত করে| কোরিয়াকে শক্তিশালী করার জন্য সেখানে প্রশাসনিক সংস্কার প্রবর্তন করে, অন্যথায় কোরিয়াকে যেন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দান করেন| কিন্তু চীন জাপানের এই প্রস্তাবে কর্ণপাত করেনি| তখন জাপান নিরুপায় হয়ে চীন তথা পাশ্চাত্য শক্তির প্রভাব মুক্ত করে সেখানে নিজ রাজনৈতিক অধিকার স্থাপনে বদ্ধপরিকর হয়| কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের পরিবেশ তৈরি করার জন্য জাপান 1876 সালে কোরিয়ার সাথে একটি বাণিজ্যিক ও মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করে| এর ফলে কোরিয়া একটি স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে প্রতিপন্ন হয়, যেটি চীনের স্বার্থ বিরোধী ছিল|
এইভাবে কোরিয়াকে কেন্দ্র করে চীন-জাপান সম্পর্ক তিক্ত হতে থাকে| এমনকি কোরিয়াতে দুটি দলের সৃষ্টি হয়- জাপান সমর্থক সংস্কারপন্থী দল এবং চীন সমর্থক সংস্কার বিরোধী রক্ষণশীল দল| 1884 সালে উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে চীন ও জাপান উভয়ই কোরিয়াতে সৈন্য প্রেরণ করে| উভয় দলের মধ্যে আসন্ন যুদ্ধ শেষ অব্দি প্রশমিত হয়েছিল 1885 সালে স্বাক্ষরিত লি-ইটো-কনভেনশনের(li-eto-convention) মাধ্যমে এই কনভেনশনটি আংশিকভাবে জাপানের কূটনৈতিক সাফল্য পরিচায়ক, কারণ এই কনভেনশনের মাধ্যমে কোরিয়ার উপর প্রকৃত অর্থে চীন ও জাপানের যুগ্ম অভিভাবকতত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়| চীনের একক সার্বভৌমত্বের দাবি নাকচ হয়| ফলে কোরিয়ার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ সীমিত হয়ে পড়ে|
জাপানের সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি চীন-জাপান যুদ্ধ অনিবার্য করে তুলেছিল| এই সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইটোর প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিরোধী দল সংঘবদ্ধ হয়| সেজন্য ইটো তার সরকারকে বিরোধী দলের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য এবং জাপানকে তার প্রশাসনের অধীনে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য যুদ্ধ নীতি অনুসরণ করতে সচেষ্ট হন| এপ্রসঙ্গে ঐতিহাসিক ভিনাক বলেছেন, জাপানের রাজনৈতিক অবস্থা, কোরিয়ায় বৈদেশিক শক্তির ঘাঁটি স্থাপন, কোরিয়ায় তোরণ দিয়ে এশিয়া ভূখণ্ডে জাপানের সম্প্রসারণ নীতি এবং সর্বোপরি কোরিয়ার খনিজ-সম্পদ ও ক্রয়-বিক্রয়ের বাজার অধিকারে জাপানের ব্যস্ততা- এইসব কারণে চীন-জাপান যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে|
চীন-জাপান যুদ্ধের সূত্রপাত জাপানের সিংহভাগ দায়িত্ব থাকলেও চীন এব্যাপারে একেবারে নির্দোষ ছিল না|জাপানের ক্রিয়াকলাপে শংকিত হয়ে চীন কোরিয়াতে তার সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার জন্য সেখানকার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে থাকলে যুদ্ধের সম্ভাবনা অনিবার্য হয়ে পড়ে| তাছাড়া জাপানের মতো চীনেরও এই সময় কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যা ছিল| চৈনিক ভাই-সরয় লীর বিরোধী গোষ্ঠি তার কোরিয়া সংক্রান্ত নীতি দুর্বল বলে সমালোচনা করতে থাকলে তিনি তার ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করার জন্য জাপানের বিরুদ্ধে দূর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন|
এইরূপ পটভূমিকায় টংহ্যাক/তংহাক নামক এক ধর্মীয় সম্প্রদায় কোরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে| এই বিদ্রোহ দমনের জন্য কোরিয়ার অনুরোধে চীন সেখানে সৈন্যবাহিনী পাঠালে জাপান পাল্টা চীন থেকে বেশি সৈন্য পাঠায়| কিন্তু এই বিদ্রোহ দমনের পর কেউই কোরিয়া থেকে সৈন্য অপসারণে রাজি ছিল না| এইভাবে উত্তেজনা যখন ক্রমশ বেড়েই চলছিল, তখন চীনের একটি সৈন্যবাহিনী জাহাজের উপর জাপান গুলিবর্ষণ করলে যুদ্ধ শুরু হয়| চীন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে 1895 সালে শিমোনোসেকির সন্ধি(Treaty of Shimonoseki) স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন|
বিদ্রোহ |
সৈন্যবাহিনী জাহাজ |
শিমোনোসেকির সন্ধির শর্ত
সন্ধি শর্তানুসারে চীন সরকার কোরিয়াকে স্বাধীনতা প্রদান করেন| জাপানকে ফরমোসা, পেসকাডোরেস দ্বীপপুঞ্জ, লিয়াওটুর উপদ্বীপ সমর্পণ করেন এবং চীনে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ দান করেন| সেই উদ্দেশ্যে চীনের চারটি বন্দর জাপানী জাহাজের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়, যথাক্রমে- শাসি, চুংকিং, সুচাও এবং হ্যাং-চাও| সর্বোপরি যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ চীন সরকার জাপানকে 200 মিলিয়ন টিল/টেইল বা প্রায় 1 লক্ষ 75 হাজার মিলিয়ন ডলার দিতে প্রতিশ্রুত হন| জাপানি নাগরিকরা চীনে কারখানার নির্মাণ ও শিল্প গড়ে তোলার অধিকার লাভ করে|প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধে চীনের পরাজয়ের কারণ
প্রথমত, চীন-জাপান যুদ্ধে চীনের পরাজয়ের কারণ ছিল তার চূড়ান্ত দুর্বলতা| মাঞ্চু বংশের অপশাসনে চীন ভেতরে ভেতরে দুর্বল হয়ে পড়েছিল| তাই বলা যায়, দ্বীপরাষ্ট্র জাপানের কাছে চীনের পরাজয় ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা| এতদিন ধরে ব্রিটিশ জনমত চীনের স্বপক্ষে ছিল, তারাই হঠাৎ চীনের চূড়ান্ত অদক্ষতা ও অযোগ্যতার দরুন জাপানের পক্ষে চলে গিয়েছিল|দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, চীনের আর্থিক বিকাশের হার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল| অন্যদিকে জাপানে এসেছিল শিল্পায়নের টেউ| শিল্পসমৃদ্ধ জাপানকে চীনের পক্ষে পরাজিত করা সম্ভব হয়নি|
তৃতীয়ত, সামরিক দিক থেকেও জাপান চীনের চেয়ে অনেক বেশি পাশ্চাত্য জগতের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল| বৈজ্ঞানিক অস্ত্রশস্ত্র, যুদ্ধের উপকরণ প্রভৃতির দিক দিয়ে চীন জাপানের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে ছিল|
অন্যদিকে ইউরোপীয় আদর্শ অনুসরণ করে জাপান তার সেনাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, কিন্তু তা পারিনি| এইসব কারণে চীন-জাপান যুদ্ধে চীন জাপানের কাছে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়েছিল এবং ফলাফল স্বরূপ জাপানের সাম্রাজ্যবাদী আত্মবিশ্বাস অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছিল|
তথ্যসূত্র
- অমিত ভট্টাচার্য, "চীনের রূপান্তরের ইতিহাস 1840-1969"
- Jonathan Fenby, "The Penguin History of Modern China".
- Charles River Editors, "The First Sino-Japanese War".
সম্পর্কিত বিষয়
- প্রথম আফিম যুদ্ধ (আরও পড়ুন)
- টং হ্যাক বিদ্রোহ (আরো পড়ুন)
- কনফুসিয়ানিজম কি (আরো পড়ুন)
- হুং সিউ চুয়ান (আরও পড়ুন)
Author of this post
Name- Elora Saha About- বর্তমানে তিনি একজন গৃহবধূ Read more- (click here) |
.................................